নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
পাঠপ্রতিক্রিয়া.....
বাঙ্গালা রুবাইয়াৎঃ এ টি এম মোস্তফা কামাল।
আমরা জানি, ফারসি শব্দ ‘রুবাই’। শব্দটি ফারসি ভাষার এক বচন। ‘রুবাইয়াৎ’ হচ্ছে বহুবচন। রুবাই হচ্ছে মূলত চতুষ্পদী কবিতা, চার চরণের মধ্যে একটিমাত্র ভাবকে হৃদয়গ্রাহী করে উপস্থাপন করা। প্রেম, দ্রোহ, আনন্দ, বিষাদ, আধ্যাত্মিকতা, মানব হৃদয়ের আশা, আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনের চিত্র অঙ্কিত হয় রুবাইয়াতের ছত্রে ছত্রে। আশাবাদ, নৈরাশ্যবাদ, সুফিবাদ, মরমিবাদ, দেহবাদ, নিয়তিবাদ এবং দর্শন তত্ত্বের উদ্ভব ঘটে রুবাইয়াতের চরণে। "রুবাইয়াতের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো- প্রথম, দ্বিতীয় এবং চতুর্থ ছত্রে থাকে অন্ত্যমিল আর তৃতীয় ছত্রে থাকে অন্ত্যমিলের ক্ষেত্রে অন্যান্য চরণের ব্যতিক্রম।"
রুবাইয়াতের সমার্থক কাব্য হচ্ছে- চীনা চতুষ্পদী কবিতা, জাপানি হাইকু। রুবাই ফারসি সাহিত্যকে শুধু সমৃদ্ধই করেনি, পৃথিবীতে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা দিয়েছে। ফারসি সাহিত্য কাব্যকে প্রধানত চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যথাঃ-
(১) কাচ্চিদা (রঙ্গ বা ব্যঙ্গ কাব্য),
(২) গজল (প্রেমগীত),
(৩) মসনবি (দীর্ঘ কাব্যগাথা),
(৪) রুবাই বা রুবাইয়াৎ।
রুবাইয়াৎ কাব্যের উত্থান ঘটেছে ইরানের বিখ্যাত কবি ওমর খৈয়ামের হাত ধরে। ওমর খৈয়াম বুখারায় পড়াশোনার সময় একই সঙ্গে দুই তরুণীর সঙ্গে প্রেমে মজেছিলেন। একজন রুবাই আরেকজন রুবাইয়াৎ। দু’জনই জানতেন ওমর খৈয়াম দু’জনকে এক সঙ্গে ভালোবাসতেন। ওমর খৈয়ামের গজলে মুগ্ধ হয়ে রুবাই এবং রুবাইয়াৎ দু’জনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন একত্রে তারা বিয়ে করবে। পরবর্তীতে ওমর খৈয়াম দুর্বিপাকে তুরস্কে চলে গেলে একজনকেও বিয়ে করা সম্ভব হয়নি। অন্য নারীকে তিনি বিয়ে করেন। কিন্তু মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত রুবাই এবং রুবাইয়াৎকে নিয়ে লিখেছেন অমর গাথা। কাজেই রুবাইয়াৎ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে ওমর খৈয়াম হয়ে ওঠেন মূল প্রতিপাদ্য।
'বাংলা' বা 'বাঙ্গালা' শব্দটির সঠিক উৎপত্তিটি অজানা। সম্ভবত ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি এ অঞ্চলে বসবাসকারী দ্রাবিড় গোষ্ঠী 'বঙ' থেকে 'বঙ্গ' শব্দটির উদ্ভব হয়েছে। অন্যান্য সূত্র থেকে ধারণা করা হয় যে অস্ট্রিক জাতির সূর্যদেবতা "বোঙ্গা" থেকে বঙ্গ কথাটির উদ্ভব হয়েছে।
এ টি এম মোস্তফা কামাল এর বাঙ্গালা রুবাইয়াৎ- র প্রথম প্রকাশ ২০০৯ সালের একুশের বই মেলায়। বইটি আমি তখনই মেলা থেকে কিনেছিলাম। চলতি বছর মেলায় এ টি এম মোস্তফা কামাল এর বই দেখেই সম্প্রতি অন লাইনে বইটি কিনে দেখি- এটা সেই আগের বইটিই! তবে আগের বই হলেও এবারে অনেক পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত। বাঙ্গালা রুবাইয়াৎ- এর পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণও বের হয়েছিল গত বছর একুশের বই মেলায়।
প্রিয় বন্ধু, আমার পরম সুহৃদ স্নেহভাজন এ টি এম মোস্তফা কামাল রুবাইয়াতের ব্যাকরণ-প্রকরণ ঠিক রেখে হৃদয়গ্রাহী ছন্দ, অন্ত্যমিলের দ্যোতনায়, কাব্যিক শব্দ বিন্যাসে অর্থবহ উপায়ে মস্তিস্ক নিংড়ানো ভাবাবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন জুতসই বয়ানে। তিনি লিখেছেনঃ-
"ফজর নামাজ হয় না পড়া এমন গভীর ঘুম আমার!
আসর-এশাও ঘুমের শিকার, কাজের নামে জোহর পার!
ঘুম ও কাজের চাপ থাকেনা, বাদ পড়ে তাও মাগরিবও!
ঘুম জাগরণ এক কাতারে, হিসাব বড়োই চমৎকার!"
ব্লগ জীবনের শুরু থেকেই এ টি এম মোস্তফা কামাল শুধু আমার প্রিয় বন্ধুই নন, প্রিয় স্বজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর এবং এলএলবি ডিগ্রীধারী কামাল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপদস্থ আমলা। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরীরত থেকেও প্রবল সাহিত্যানুরাগী, প্রখর চিন্তাশীল, বিশ্ব সাহিত্য ভাণ্ডার সম্পর্কে পঠন-পাঠনে ঋদ্ধ কাব্যের কারুকার্য সম্পর্কে যত্নশীল, নান্দনিকতার প্রজ্বলনে আলোকিত প্রাণ। কাজেই চিন্তা, চেতনা, ভাবের গভীরতা একটু গভীর হওয়াই স্বাভাবিক। কবিতার শৈল্পিক গুণ বিচারে সে নিজেই নিজের উদাহরণ। মানবিক মূল্যবোধ, সুফিবাদ ও মরমীয় সাধক তিনি।
তার রুবাই রচনায় কোথাও কবি চরম আশাবাদে উজ্জ্বল, আবার নৈরাশ্যবাদে বিবর্ণ। কখনো কবি অদৃষ্টবাদে উৎকণ্ঠিত আবার কখনো তিনি আজ্ঞেয়বাদে বিব্রত। মোস্তফা কামাল সুফিদের মরমিবাদ প্রচার করতে চেয়েছেন নাকি এপিকিউরিয়াম দর্শন অনুসারে দেহবাদের পক্ষে ওকালতি করেছেন তা তেমন বোঝা যায় না, তবে সুখ-দুঃখে নিরাসক্তি সবন্ধেই তার পক্ষপাতিত্ব তাতে কোনো সন্দেহ নাই।
ছোট ছোট সহজ শব্দে, ছোট ছোট চার লাইনের বাক্যে প্রকাশ করেছেন এক একটা কাব্য কাহিনী- এ যেনো বিন্দু বিন্দু পানিতে গড়া মহাসিন্ধু! মোস্তফা কামালের একটি রুবাইয়াৎ ঠিক এ রকমঃ-
"চোখ ধাঁধানো হুরের রূপের হুজুর করেন বর্ণনা,
হৃদয় শোনে মন বাড়িয়ে, শোনার বাহন কর্ণ না।
তোমায় দেখে বুঝতে পারি হুরের রূপের মরতবা!
খোদার গড়া রুপই খাঁটি এরচে' খাঁটি স্বর্ণ না।"
আবার তিনি লিখেছেনঃ-
"সুরায় ভরা কুঁজোর গায়ে গোলাপ আভা ফুটলো কি?
দ্রাক্ষারসের ছদ্মবেশে ফুলের মধু জুটলো কি?
হঠাৎ মনে সন্দেহ হয়, গড়তে মাটির এই কুঁজো
কুমার বেটা আমার প্রিয়ার গোরের মাটি লুটলো কি?"
এটিএম মোস্তফা কামালের রুবাইয়াৎ পাঠ করে বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করলে ভিন্ন রকম মন্তব্য করা যেতে পারে কিন্তু অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণের দাবি রাখে। সুরা ও সাকি রোমান্টিকতায় স্রষ্টার প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা, ছন্দ আর আধ্যাত্মিক কথা বার্তার মধ্য দিয়ে স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে, প্রেম বিরহকে, সুরার সুধায় আনন্দে বিভোর হয়ে দিব্যজ্ঞান খুঁজে পেয়ে 'আমি এবং আমার আমিত্ব'কে অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ভাবে তুলে ধরেছেন। সব চাইতে বিস্ময়কর লাগে, যখন দেখি- তিনি রুবাইয়ের ফারসি ভাবধারার প্রতি সৎ নিষ্ঠ থেকে রচনা করেছেন অনবদ্য বাংলা রোমান্টিক রুবাই!
তার বাঙ্গালা রুবাইয়াৎ গ্রন্থে একশত পঞ্চাশটি রুবাই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রতিটি রুবাইয়ের অর্থ আলাদা ভাবের দ্যোতনা সৃষ্টি করেছে, যা সুখপাঠ্য হিসেবে পাঠক আনন্দে উদ্বেলিত হবেন বলে আমার বিশ্বাস। কবি মোস্তফা কামালও ওমর খৈয়ামের রুবাইয়ের প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে বেশ কিছু রুবাই লিখেছেন, যার মধ্য থেকে একটি লেখা এ আলোচনায় পাঠকের উদ্দেশে তুলে ধরা প্রাসঙ্গিক বলে প্রতিভাত হচ্ছেঃ-
"খোদার ঘরে কাল ঢুকেছি ডাকতে খোদার নাম
পেছন থেকে সাকির সরাই ডাকছে অবিরাম।
অশেষ পাপের ভার কমাতে কাঁদতে লুটাই, হায়!
চমকে দেখি বিলাপ করে নিচ্ছি সুরার নাম!"
বাঙ্গালা রুবাইয়াৎ গ্রন্থের সাইজ রুবাইয়ের মতো ছোটো। বইয়ের প্রচ্ছদ বিমূর্ত সৌন্দর্য প্রকাশ করে। বইয়ে ভালো কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু বইয়ের বাঁধাই মানসম্মত নয়।
আমি বিশ্বাস করি- ভালো মানুষ না হলে, সুন্দর মনের মানুষ না হলে এমন সুন্দর সৃষ্টি সম্ভব না। একজন ভালো মানুষ, একজন সুন্দর মনের মানুষ এ টি এম মোস্তফা কামালের কাব্য দর্শন পাঠকের তৃষিত হৃদয়ে শীতল পরশ বইয়ে দেবে। নিঃসন্দেহে বলা যায় কাব্যবিচারে গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যকেই শুধু অলঙ্কৃত করবে না, আমাদের সাহিত্যাঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করবে সেই প্রত্যাশা করছি।
(রুবাইয়া সম্পর্কে তথ্যউপাত্ত নিয়েছি গুগল থেকে)
২৩ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ১১:৩০
জুল ভার্ন বলেছেন: অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা বাঙ্গালা রুবাইয়াৎ এর লেখক ব্লগার এ টি এম মোস্তফা কামাল এর প্রাপ্য।
২| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১:১৫
কালো যাদুকর বলেছেন: আপনি কিভাবে অনলাইনে বইটি কিনেছেন?
কবিকে অভিনন্দন |
২৩ শে এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১:৩০
জুল ভার্ন বলেছেন: আপনি কিনতে চাইলে বই প্রকাশকের এই নম্বরে ০১৯৩০৮৭৯৭৯৪ যোগাযোগ করবেন। ওরা আপনাকে বিকাশ নম্বর দিবে। কুরিয়ার সার্ভিস চার্জ সহ ১৮০/- বিকাশ করলে ওরা কুরিয়ার করে আপনার ঠিকানায় বই পাঠাবে।
৩| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ২:৩৮
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আপনার উপস্থাপনা সুন্দর হয়েছে।
বইটিও চমৎকার হবে বুঝা যাচ্ছে।
২৪ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৯:১৭
জুল ভার্ন বলেছেন: অবশ্যই একটি ভালো বই নিয়ে আমি লিখেছি।
৪| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ৮:১৭
আহমেদ জী এস বলেছেন: জুল ভার্ন,
ধন্যবাদ আপনাকে, আমাদের একজন কৃতি ব্লগারকে তুলে আনলেন রুবাইয়ের ছন্দে।
রুবাইয়ের মতো কঠিন কিছু লেখার জন্যে এ টি এম মোস্তফা কামালকে আন্তরিক অভিনন্দন ও তার বইটির জন্যে শুভকামনা।
আপনার এই অনবদ্য পাঠ প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি রুবাই লেখক "এ টি এম মোস্তফা কামাল"কে যে ভাবে তুলে ধরলেন, ব্লগের এই দুঃসময়েও তা ব্লগীয় শিষ্টাচার আর সৌন্দর্য্যের জন্যে শিক্ষনীয় হয়ে রইলো।
২৪ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৯:২২
জুল ভার্ন বলেছেন: জী এস ভাই, যে কোনো ভালো মানুষ সম্পর্কে আমি স্বতস্ফুর্ত ভাবে ভালো বলি। কামাল কোনো গ্যাঞ্জামের মধ্যে নাই। কোনো দিন কারোর বিরুদ্ধে একটা বাজে মন্তব্য করেনি। রাস্ট্রের অনেক বড়ো পদে অধিষ্ঠিত হয়েও কোনোদিন নিজেকে প্রকাশ/প্রচার করেনি। সৎ মানুষ, ভালো মানুষ।
আপনার মনখোলা মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
৫| ২৭ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৯:৪৬
এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ব্যস্ততার জন্য ব্লগে আসতে পারিনি বলে কৃতজ্ঞতা জানারত বিলম্ব হলো। আপনাদের সবার দোয়া প্রার্থী। ভালো থাকবেন। আগাম ঈদ মোবারক।
২৭ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ১০:০৬
জুল ভার্ন বলেছেন: অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও আমার পোস্টে মন্তব্য করেছো- সেজন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। তুমি অনেক অনেক ভালো রুবাই লিখেছো- যা আমি সঠিক সুন্দর ভাবে এতো ছোট পরিশরে তুলে ধরতে পারিনি। মনে হচ্ছিল- ১৫০ টি রুবাই নিয়েই বহুমাত্রিক অর্থবোধক প্রকাশ নিয়ে আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ লিখি- যা লেখা সম্ভব হয়, সেটা একান্তই আমার ব্যার্থতা।
শুভ কামনা নিরন্ত্রর।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ১১:২৪
আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: অনেক অনেক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই