নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চেতনায় জেগে উঠুক আগুনের পরশমনি

জীবনের প্রত্যেক প্রবাহ অমৃত চায়।

কবীর হুমায়ূন

কেমন করে বাঁজাও বাঁশি সুর যেন গো সর্বনাশী থাকতে আমায় দেয়না গৃহ কোনে , ওঝা যেমন বীনের টানে গর্ত থেকে সর্প আনে তেমনি করে টানছো তোমার পানে।

কবীর হুমায়ূন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বীরাঙ্গনা

২৬ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:১৩



সদ্য যুবতী আমি- কলেজের চৌকাঠ পেড়িয়েছি,

বিশ্ববিদ্যালয়িক জীবনে পা দিয়েছি মাত্র এক বছর।

আমার ভাই ‘ইকবাল হল’-এর ছাত্র- তুখোর ছাত্রনেতা;

যেদিন ইকবাল হলে হায়েনারা ঝাঁপিয়ে পড়ে,

আমাদের স্বপ্নের চাঁদকে গিলে খেতে চায় রাহু-রূপ পশুরা;

সেদিনই অভীক ভাই আমার সূর্যের অন্বেষনে ঘর ছেড়ে যায়।



এর কয়েকদিন পর-

কিছু পশু আমাদের বাড়িতে আসে ভাই-এর খোঁজে,

জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমরা,

স্কুল শিক্ষক আমার বাবা, তাঁর জ্ঞানের অহমিকা নিয়ে বললঃ

গণতন্ত্রের কথা, ন্যায়ের কথা, ভালোবাসার কথা।



পশুদের সাথের শেয়ালগুলো দু’টি ইতিউতি করছে ,

একসময় দরজার পাল্লার পেছনে পর্দার আড়ালে আমাকে দেখে।

ভয়ে থরথর করে কাঁপছে আমার শরীর,

ঘৃণায় এক কলসী থুতু জমে মুখে;

হঠাৎ, একটি হায়েনা আমার বাবাকে গুলি করে-

পেটে, বুকে, মাথায়- অজস্র গুলি;

আমার মা পাশের ঘর থেকে ছুটে আসেন- তীব্র ঝড়ে আক্রান্তা, ভীত সন্ত্রস্ত;

বাবাকে বাঁচানোর ফুসরতই পেলেন না,

লুটিয়ে পড়লেন বাবার পায়ের কাছে, বড়ো লক্ষ্মী ছিলো মা আমার।

আমার চোখের সামনে ঘটে গেলো- পৃথিবী পরিবর্তনের ধ্বংসাত্মক লহরী,

নির্বাক আমি চেতনবিদ্ধতাহীন অচিন দেশের যুবতী।



যখন হুঁস হলো নিজেকে আবিস্কার করি

অয়োময় খাঁচায় বন্দী বিধ্বস্ত পাখি এক ;

প্রচন্ড ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে সমস্ত শরীর,

নারীত্বের অহংকারে জ্বলছে হাবিয়ার তীব্র আগুন।

সারা মেঝেতে রক্ত- যেন অজস্র অশোক ছড়িয়ে ছিটিয়ে;

গবাক্ষ গলে পড়া একটি আলোর রেখা ছাড়া

আর কিছুই দেখছি না; অন্ধকার জতুগৃহের দোজখে

কতো লক্ষ বছর ছিলেম! আমি কিছুই জানি না।



একদিন অনুভবে বুঝতে পারলাম আমি ,

সব সুনসান- নেকড়ে, হায়েনা, কুকুর, শেয়ালের

কোন আনাগোনা নেই, চিৎকার নেই;

কাঁদার ভেতরে শুয়োরের ঘোঁৎঘোঁৎ নেই;

শুঁকতে শুঁকতে আসে না কোন পশু, শুয়োরের বাচ্চা,

আমার দেহের কাছে, আমার ঘৃণার নাগালে।



কোথাও দূর থেকে ভেসে আসছে সমুদ্রের গর্জনের মতো

জলোদ্ভবিত হিরন্ময় শ্লোগান- ‘জয় বাংলা’ ...।

আমার রক্তে ঝড় ওঠে, কন্ঠ মেলাতে চাই;

অক্ষম আমি, নিস্তেজ হয়ে পড়ি নিষ্প্রভতায়।

অনুভবে ধরা পড়ে আমার ভেতরে আরেকটা ‘আমি’।



এমনি সময় , অন্ধকার ভেদ করে সমস্ত ঘরে

ছড়িয়ে পড়ে তীব্র সূর্যালোক রশ্মি ;

আলোর আঘাতে চোখে জ্বলে, কিছুতেই চোখ খুলতে পারছি না।

শরীরের সমস্ত শক্তি নিংড়ে ধীরে ধীরে দাঁড়ালাম আমি-

সূর্যের পানে যাওয়ার প্রচন্ড শক্তি নিয়ে।



চোখের সামনে দেখি আমার ভাই!

দাঁড়িয়ে আছে শশ্রুমন্ডিত, রাইফেল কাঁধে।

এই সে-ই ভাই-

যে আমাকে আদর করতো পুতুলের মতো,

ভর দুপুরে সবচেয়ে উঁচু ডালের পাকা আমটি পেড়ে দিতো,

নিজের শরীর রক্তাক্ত করে পেড়ে আনতো বেতস ফল,

বৈশাখী মেলা হতে আমারই জন্য কিনে আনতো-

চুলের রঙিন ফিতা, কাঁচের বেলোয়ারি চুড়ি,

মাটির পুতুল, সোলার পাখি, আলতার বড়ি।

তাকে চিনতেই আমি অবশ হয়ে গেলাম,

নিংড়ে তোলা শরীরখানি হারিয়ে গেলো।



একসময় দেখলাম, আমি শুয়ে আছি- প্রেমময় ভাইয়ের কোলে,

তাঁর মমতার হাতখানি আমার জট-পাকানো চুলে বিলি কাটছে।

দু’চোখে তাঁর অশ্রুর নদী নেমে আসছে- বরফ গলা জলের ধারা।

বিহ্বল আমি তাকিয়ে রই অনিমেষ- আমার সূর্য সন্তান ভাইয়ের প্রতি।



পাশে তাঁর সংসপ্তক বন্ধু দাঁড়িয়ে আছে;

যে আমাকে তুলে নিয়েছিলো ‘যুদ্ধশিশু’সহ

লাল সবুজের মাঝে হলুদের টিপ পড়া পতাকাকে স্বাক্ষী রেখে ...

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:১৭

তাসজিদ বলেছেন: শুধু অসাধারন বললে এ কবিতাকে অপমান করা হবে।

হৃদয়ের ভেতর যদি কিছু থেকে থাকে তবে তা স্পর্শ করা কবিতা।

২৬ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৪৪

কবীর হুমায়ূন বলেছেন: ধন্যবাদ তাসজিদ আমার লেখা কবিতা পড়ার জন্য।
ভালো থাকুন সব সময়।

২| ২৬ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৩৩

কাকতড়ুয়া007 বলেছেন: তাসজিদ বলেছেন: শুধু অসাধারন বললে এ কবিতাকে অপমান করা হবে।

হৃদয়ের ভেতর যদি কিছু থেকে থাকে তবে তা স্পর্শ করা কবিতা।

সহমত !

২৬ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৪৫

কবীর হুমায়ূন বলেছেন: ধন্যবাদ কাকতড়ুয়া০০৭।
ভালো থাকুন।

৩| ২৬ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৫৯

রেজোওয়ানা বলেছেন: খুবই অসাধারন, অসাধারন এবং অসাধারন....

২৬ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৪৫

কবীর হুমায়ূন বলেছেন: ধন্যবাদ রেজোওয়ানা।
ভালো থাকুন নিরন্তর।

৪| ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:৩২

পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: কী বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।
কবিতাটি পড়ার পর কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে গোটা ব্যাপারটাকে অনুভব করলাম। এ তো শুধু কবির কথা নয়, লাখ লাখ বীরাঙ্গনার হৃদয়ের কথা, কষ্টের কথা..........।।

৫| ২৭ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:১৩

ছিরা কবি বলেছেন: sotti oshaadharon...............

৬| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:১৬

কামরুল হাসান জনি বলেছেন: দুঃখ করুনা বীরাঙ্গনা
তোমায় নিয়ায় নিয়া আমরা গর্বে আত্মহারা!

৭| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:২৩

শায়েরী বলেছেন: অসাধারন

৮| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৩১

হুমায়ুন তোরাব বলেছেন: sundor.

birangona der niye ekta post ase amar.poRar unurodh roilo.

Click This Link

৯| ২৯ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৫২

মাহমুদা সোনিয়া বলেছেন: ছবিটার দিকে তাকাতে পারছিলাম না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.