![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
-আম্মা, আমারে ছাইড়া দেন, আম্মা। আমি আর আপনার ধারে থাকুম না, আম্মা। আমারে আপনে মাইরেন না। পায়ে পড়ি আম্মা।
রহিমা বুয়া অঝোর ধারায় কাঁদছে আর রিমির সহানুভূতি অর্জনের ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রহিমা বুয়া যতোই চিৎকার চেঁচামিচি করুক না কেন, রিমি কিন্তু একেবারে নির্বিকার। মনের আনন্দে কাঁচের জানালার অন্যপাশে বসে বসে চুল আঁচরাচ্ছে আর বুয়ার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে।
একটু পরেই এগারোটা বাজবে। তখনই ঘটনা শুরু হবে। ছাদের পানির ট্যাংকি খুলে দিয়ে আসবে সে। পাইপ বেয়ে বেয়ে রাহিমা বুয়াকে আটকে রাখা ঘরে সে ঘরে পানি ঢুকতে থাকবে। পুরো রুমটা এমন বিশেষ ভাবে তৈরী যে পানি চুঁইয়ে বের হয়ে যাবার কোন উপায় নেই। রহিমা বুয়া কতোক্ষণ পানির সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে পারে দেখা যাক। রিমির ধারণা বুয়া ১৫ মিনিটের বেশি টিকতে পারবে না। সবচে বেশি সময় টিকেছিল সবুজ ভাইয়া। ঘড়ি দেখে কাঁটায় কাঁটায় ১ ঘন্টা। পুরো ঘরটা পানিতে ভরতে সময় লেগেছিল ৫০ মিনিট। তারপর আরো ১০ মিনিট সময় সবুজ ভাইয়া টিকে ছিল। নিয়মিত জিম করাতেই বোধহয় এতোটা সময় টিতে থাকতে পেরেছিলেন সবুজ ভাইয়া। পানি ভরতে শুরু হলেই সবার মনে প্যানিক শুরু হয়ে যায়। হাত-পা ছুঁড়তে শুরু করে মানুষ। মূলত সবাই কিন্তু পানি নয়, প্যানিক থেকেই মারা যায়। যখন ওরা বুঝতে পারে এখান থেকে বেরুবার আর কোন উপায় নেই, তখন ভয়টাই কাজ করে বেশি।
-আম্মা আম্মাগো, পায়ে পড়ি আম্মা, ছাইড়া দেন আমারে।
কথাবার্তা চালানোর জন্য কাঁচের জানালায় ছোট্ট একটা ফাঁকা জায়গা রেখেছে রিমি। পানির উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে এটা বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে বন্দীর সাথে কথাবার্তা বলে শুরুটা ক্লাসিক্যাল করে তোলা যায়।
-না, বুয়া। কেঁদে কোন লাভ নাই। তোমাকে ছেড়ে দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। এই রুমে যাকে একবার বন্দী করি আমি, মৃত্যুতেই তার মুক্তি।
-আমারে মাইরা আপনের লাভ কী, আম্মা। আমারে মাইরা লাভ কী আপনের?
রিমি দেখেছে ভয় ঢুকলেই মানুষ একই কথা দুইবার করে বলা শুরু করে।
-সেটা তুমি বুঝবে না, বুয়া। আদার ব্যাপারি জাহাজের খবর নিয়ে কী করবে?
-জানি আম্মা, তবু বলেন আমারে। আমি শুনুম। আমারে আপনি মারবেন ক্যা?
-কেন মারবো? সত্যিই শুনতে চাও?
-হ।
-তাহলে শুনো। আমার বাবা আমার মাকে এভাবেই মেরেছিলেন। আমি তখন খুব ছোট। আমাদের এ বাড়িটা তখন নতুন। এ রুমটা বাবা খুব পরিকল্পনা করে বানিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল মাকে মেরে ফেলা। কাক পক্ষী কেউ জানবে না, অথচ একটা মানুষকে যন্ত্রণা দিতে দিতে মেরে ফেলা যাবে কতোটা নিশ্চিন্তে! কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমি সেটা দেখে ফেলি। বাবা সবার থেকে কাজটা গোপন করতে পারলেও আমার থেকে পারে নি।
-কেন আপনের বাবা এ কাজ করসিল?
-জানি না।
-তেনিও তো শুনসি মারা গেলেন কয়েক বছর পরেই।
-হ্যা। আমিই তাকে মেরেছিলাম। ঠিক যেভাবে তিনি আমার মাকে মেরেছিলেন ঠিক সেভাবে। আর কি জান বুয়া, বাঘ যখন একবার মানুষের মাংস খায়, তখন সে এর প্রেমে পড়ে যায়। একবার যখন কেউ খুন করে তখন খুন করার মজা পেয়ে বসে তাকে। তাই স্রেফ মজার জন্যই আমি তোমাকে খুন করব। সবাইকে খুন করি আমি। তুমি যখন ঘুমে থাকো, তখনই আমি তাদের খুন করি। তুমি টেরই পাও না। ওহহো! এগারোটা বেজে গেল বলে! দাড়াও, আমি পানিটা ছেড়ে দিয়ে আসি।
-না আম্মা, না!!!
রিমি বুয়ার ডাক না শুনেই দৌড়ে সিড়ি ভেঙে উঠা শুরু করল। আর তখনই ঘটল ঘটনাটা। একটা মাকড়সা ছাদ থেকে ঝুলে পড়ল রিমির ঠিক চোখের সামনে। বুয়ার মতোই তীব্র চিৎকার বের হয়ে এল রিমির মুখ থেকে-
-বুয়াআআ..., মাকড়সা!
রিমি দৌড়ে চলে এল তার নিজের রুমে ঠিক আগের জায়গায়। বুয়া রিমির মাকড়সা ভীতির কথা জানে দীর্ঘদিন থেকে। সে গ্লাসের সেই ছিদ্রটির পাশে দৌড়ে চলে এল।
-দরজা খুইলা দেন, আম্মা। মাকড়সাটারে আমি দেখতাসি। বললাম তো, আমারে ছাড়া এই বাড়িতে আপনি একা একা থাকবেন ক্যামনে। তাড়াতাড়ি দরজা খুলেন।
আশু মুক্তির চিন্তায় বুয়ার চোখ তখন চকচক করতে থাকে।
-দরজা খুলবো? ওকে। প্লিজ বুয়া, মাকড়সাটা মেরে ফেলো কিন্তু। কী বিশাল আর বিশ্রি ওটা!
-হ আম্মা, দরজাটা খুলে দেন।
রিমি দরজাটা খুলে দিল। বুয়া ধীর পায়ে বের হয়ে এল। তারপর হঠাৎ করে কিছু বুঝে উঠার আগেই সজোরে ধাক্কা দিয়ে রিমিকে ফেলে দিল বিশেষ সেই রুমটির ভেতর। মুহুর্তের মধ্যে ক্ষিপ্র গতিতে দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিল সে।
রিমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তার বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট করতে হচ্ছে।
-বুয়া, তুমি এটা কী করছো?
-একটু আগে আপনি যা করসিলেন আম্মা।
-আমি বুঝতে পারছি না, তুমি কী করতে চাও?
-আমি অখন ছাদে গিয়া পানির কলটা ছাইড়া দিয়া আসুম, আম্মা। তারপর বইয়া বইয়া দেখুম আপনার মরনের দৃশ্য।
-তুমি কেন এ কাজ করবা, বুয়া? আমি তো মজা পেতাম বলে করতাম।
-আমিও মজা পামু, আম্মা। আপনি যেদিন সবুজ ভাইরে মারছিলেন, সেদিন আমিও আপনার পেছন খাড়াইয়া খাড়াইয়া দেখছি, আম্মা। আপনের মতো আমিও মানুষের মরনের দৃশ্য দেখতে মজা পাই। নইলে কবেই আপনারে ছাইড়া পালাইতাম আমি। যাই আম্মা। কলটা ছাইড়া দিয়া আহি।
রিমি ফ্যাল ফ্যাল করে বুয়ার যাওয়ার দৃশ্য দেখতে লাগল। সে জানে এখন হাজারো অনুরোধ করে কোন লাভ হবে না।
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:১৩
কয়েস সামী বলেছেন: হুম..
২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:০৭
হাতুড়ে লেখক বলেছেন: মোটামুটি লাগলো। শুভ কামনা।
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৬
কয়েস সামী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৯
সুমন কর বলেছেন: কথাবার্তা চালানোর জন্য কাঁচের জানালায় ছোট্ট একটা ফাঁকা জায়গা রেখেছে রিমি। < ফাঁকা জায়গা থাকলে, পানি বের হয়ে যাবে না !
আপনের মতো আমিও মানুষের মরনের দৃশ্য দেখতে মজা পাই। নইলে কবেই আপনারে ছাইড়া পালাইতাম আমি। যাই আম্মা। কলটা ছাইড়া দিয়া আহি। < বুয়ার এ কথায় মজা পাইলাম।
ভালো হয়েছে।
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৭
কয়েস সামী বলেছেন: ওহহো!! একটা লাইন মিস গেছে!! গ্র্যাট লেখক সাথে সাথে অাপনি গ্র্যাট পাঠকও বটে!!
৪| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:০৮
কালীদাস বলেছেন: ফিনিশিংটা সেরকম লাগল পুরাই কম্যুনিস্ট টাইপের
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:১৬
কয়েস সামী বলেছেন: হাহাহা। ঠিক বলেছেন!! আমি লেখার সময় কিন্তু এটা ভাবিনি।
৫| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৪৭
আলভী রহমান শোভন বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:২৬
কয়েস সামী বলেছেন: ধন্যবাদ।
৬| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩১
জেন রসি বলেছেন: কালীদাস ভাইয়ের মন্তব্য পড়ে মজা পেলাম! এই প্লট দিয়ে বড় গল্প লিখে ফেলতে পারেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:০৮
আবুল খায়ের সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: এরা সাইকি!