নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গণমাধ্যমকর্মী, লেখক।

কাকন রেজা

গণমাধ্যমকর্মী, লেখক ।

কাকন রেজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা আর কোথায় যাবো?

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৩


ছাত্র পেটায় শিক্ষককে। ডাক্তার পেটান রোগীর স্বজনকে। কাঁচা ধান কাটতে নেমে আকর্ণ হাসিতে ফটোসেশন করে একপাল সুবেশী মানুষ। অন্যদিকে হতাশায়, ক্ষোভে কৃষক নিজ ধানক্ষেতে আগুন দেন। শরীর না দেয়ায় নুসরাতের শরীর পোড়ে আগুনে। বাসে ধর্ষিতা হয় তানিয়া, তাকে খুন করা হয়। চারিদিকে নিঃশব্দে ঘুরে বেড়ায় আততায়ী ছায়া। ঘরে পাওয়া যায় মায়ের দেহ, ডোবায় শিশুর। রেললাইনের পাশে সন্তানের। বাবা কাঁদেন, মায়ের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠে। ব্যবসায়ী নিখোঁজ হন, ফিরে আসে তার লাশ। গায়ের উপর বাস উঠে যায়, কখনো বা ট্রাক, লরি। ছেলের জন্য দুধ চুরি করেন অসহায় বাবা। আত্মহত্যা করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে।

এমনটা কোন কানাডায় হয়! কোন সিঙ্গাপুরে কিংবা লসএঞ্জেলসে! পশ্চিম থেকে বন্ধুরা প্রশ্ন করে দেশে জিনিসের এত দাম, আমাদের চেয়েও বেশি। আমাদের মাথাপিছু আয় সর্বনিম্ন আট হাজার, ওদের দুই লাখ। সাংবাদিক গোলাম মোর্তাজা তার এক লেখায় পুরোটাই তুলনা করে দেখিয়েছেন। আমরা গরুর মাংস কত করে কিনি, আর কানাডায় কত।

এত নিম্ন আয়ে এত বাহুল্য ব্যয়ে মানুষ চলে কিভাবে সেটাই গবেষণার বিষয়। মূলত আমরা মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে নিশ্চিত কানাডা, সিঙ্গাপুর, লসএঞ্জেলসকে ছাড়িয়ে। সব কিছুর সাথে মানিয়ে নেয়ার এবং মেনে নেয়ার মতন ফ্লেক্সিবিলিটি বোধহয় আর কারো নেই। সে হিসাবে ভদ্রতার কথিত সূত্রতেও আমরা এগিয়ে। ওই যে, এক গালে চড় দিলে আরেক গাল পেতে দেয়ার অমন সূত্রে।

আমরা হলাম সুকুমার বড়ুয়ার অসময়ের মেহমান। ‘অসময়ের মেহমান ঘরে এসে বসে যান/ দেখালাম ঝামেলার যত কটা দিক আছে/ তিনি হেসে বললেন ঠিক আছে ঠিক আছে। মেঘ দেখে মেহমান চাইলেন ছাতাখান/ দেখালাম ছাতাটার ভাঙা কটা শিক আছে/ তিনি হেসে বললেন ঠিক আছে ঠিক আছে। আমরা এমনি অসময়ের মেহমান। আমাদের সব ঠিক আছে।

ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা যায় ছেলে। মা কাঁদেন, বাবা নিথর। প্রতিবেশিরা বলে, ‘এত টাকা কামানোর লোভ ক্যা, অহন ডুইবা মরছস না’। এও আমরা সয়ে নিই। বলি, ঠিক আছে। রাস্তায় লাঠির বাড়ি। বাসায় ফিরলে মা বলেন, ‘গেলি কেনো’। বাবা বলেন, ‘নেতা হইছে’। আমরা মেনে নিই, বলি ঠিক আছে। মাথা নিচু করে চলা অভ্যাস করি এবং ক্রমে অভ্যস্ত হয়ে যাই। আর খুব দুঃখ পেলে মরে যাই। লোকে বলে আত্মহনন। ‘ও, ফাঁস নিছে, আত্মহত্যা করছে, নিশ্চিত নরকে যাইব।’
বাতাস ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করে, ‘আমরা আর কোথায় যাব। আমরা আর কতদূর যেতে পারি!'

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.