![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ ‘ধর্ষণ’কে সংস্কৃতি হিসাবে উল্লেখ করেছে। বলেছে, ‘ধর্ষণের সংস্কৃতি’। এতে এখন আর আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। ধর্ষণের মতন হত্যা, গুমও আজ সংস্কৃতির ব্র্যাকেটে আবদ্ধ। একেবারে বক্ষবন্ধনীর মতন। যাক গে, কী আর করা যেখানে যে ‘ভাউ’। অতএব ভারতের সেই পুলিশ আধিকারিকের মতন বলি, ‘বন্ধ করা না গেলে উদযাপন করাই ভালো’। কী বলেন?
মূল লেখা :
বিস্মিত হয়েছি দেশের অন্যতম একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একটি বিজ্ঞপ্তি দেখে। আমার এক সহকর্মী সামাজিকমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিটি পোস্ট করেছেন। বিজ্ঞপ্তিটিতে লেখা রয়েছে, ‘ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে একটি মানববন্ধন আয়োজন করা হয়েছে’। খেয়াল করুন এখানে ব্যবহৃত দুটো শব্দের প্রতি। প্রথমত ‘সংস্কৃতি’। শব্দটিকে ধর্ষণের পাশে ব্যবহার করে ধর্ষণকে সংস্কৃতির সাথে যুক্ত করা হয়েছে।
‘সংস্কৃতি’র আভিধানিক অর্থের ব্যপ্তি হলো, ‘অনুশীলনের দ্বারা লব্ধ বিদ্যাবুদ্ধি রীতিনীতি ইত্যাদির উৎকর্ষ, সভ্যতাজনিত উৎকর্ষ’। সংক্ষিপ্ত হলো, সংস্কার বা উন্নয়ন। তবে কি ধর্ষণও উন্নয়নের মধ্যে পড়ে! না হলে ধর্ষণের সাথে সংস্কৃতির যোগ ঘটে কিভাবে?
সম্ভবত উন্নয়ন আর উন্নতি বিষয়ক শব্দ সমূহের সাম্প্রতিক ক্রম-উচ্চারণে অনেকেরই মস্তিষ্কে বিভ্রম ঘটেছে। আর তেমন বিভ্রান্তিতে আমরা সবকিছুকেই হয়তো উন্নতি হিসাবে পরিমাপ করছি। সে অর্থেই সম্ভবত এমন কান্ডটি ঘটেছে। আমার যে সহকর্মী বিজ্ঞপ্তিটি সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট করেছেন, সেও সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগেরই ছাত্র। তারও প্রশ্নটি ছিলো এমন, ‘সংস্কৃতি শব্দটি ধর্ষণের সঙ্গে কেন জুড়ে দেওয়া হলো, ঠিক বুঝে আসছে না...’।
আরেকটি শব্দ নিয়ে কথা রয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে ‘আয়োজন’ শব্দটি। অনেকেই ‘পালিত’ ও ‘উদযাপিত’ শব্দ দুটির ব্যবহার নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন। মূলত ‘উদযাপন’ জড়িত আনন্দের সাথে, ‘পালন’ শোকের সাথে যায়। ‘আয়োজন’ শব্দটিও তেমনি। এখানে মূলত ব্যবহৃত হওয়া উচিত ছিলো, ‘আহ্বান’ শব্দটির।
অনেকে বলবেন, শব্দ নিয়ে কেনো পড়লাম, ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে এটাইতো বড় কথা। কথাটা বড় হলেও, বিষয়টির সাথে জড়িত ইচ্ছা এবং সংকল্পের প্রশ্ন। আর বিষয়টিতে আপনার মনোযোগ কতটুকু তা ফুটে উঠে বিভিন্ন ব্যবহারিক উপকরণে। বিজ্ঞপ্তিটিও সেই উপকরণের অংশ। আমি বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের সংকল্প আর চিন্তার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলছি না। তোলার অবকাশও নেই। তবে এমন শব্দগুলো বিভ্রান্তি ও সংশয়ের সৃষ্টি করে, ভুল মেসেজ পৌছায়।
দুই.
আমাদের সমাজ সাম্প্রতিকতায় ভীষণ একটা ‘ক্রুশিয়াল’ অবস্থা পার করছে। ধর্ষণ, খুন, গুম, নিখোঁজের ঘটনা এখন প্রতিদিনকার, প্রতি সময়ের। কখন কে খুন হবেন, কে হবেন ধর্ষিতা, বাড়ি ফিরতে গিয়ে নিখোঁজ হবেন কে, কাকে কালো কাচের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে, তা কেউই বলতে পারেন না। যেন সারাদেশ জুড়ে তামিল ছবি চলছে। চলছে ভিলেনদের তুমুল উল্লাস। আর অসহায় আমজনতা নিরব দর্শক। তামিল ছবির সেই ভিলেনরা যেন জয় নিনাদে আওরাচ্ছে শঙ্খ ঘোষের কবিতার শেষাংশ-
যে মরে মরুক, অথবা জীবন
কেটে যাক শোক করে-
আমি আজ জয়ী, সবার জীবন
দিয়েছি নরক করে।
তিন.
শঙ্খ ঘোষের কবিতা ‘সবিনয় নিবেদন’ সময়ের সাম্প্রতিকতায় পড়াটা জরুরি। এর শেষাংশটি আজ অবধি সত্যি। কিন্তু এই সত্যিটাকে বাড়তে দেয়া যাবে না। মানুষের জীবন যাতে নরক না হয়ে উঠে সে চিন্তা আমাদের করতে হবে। যে যেখানে আছেন, যেভাবে আছেন, সেখান থেকেই- সেভাবেই বলুন, আমাদের জীবনকে আর নরকে পরিণত হতে দেয়া যাবে না। ‘যে মরে মরুক, অথবা জীবন কেটে যাক শোক করে’, এ অবস্থা কোনভাবেই মেনে নেয়ার মত নয়। যারা আমাদের জীবনকে নরক বানাতে চায়, তাদেরকে নরকে পাঠাতেই আমাদের সবাইকে জাগতে হবে। মজলুমের প্রার্থনাকে পরিণত করতে হবে, শ্লোগানে-বিপ্লবে।
©somewhere in net ltd.