নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গণমাধ্যমকর্মী, লেখক।

কাকন রেজা

গণমাধ্যমকর্মী, লেখক ।

কাকন রেজা › বিস্তারিত পোস্টঃ

দিল্লিতে বিজেপি’র নয় ধর্মীয় উগ্রতার ধ্বস

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:১৫



ধর্মীয় রাজনীতি এই উপমহাদেশে হালে খুব একটা পানি পাবে না, তা ইতিহাস প্রমান দেয়। ‘দিল্লি দূর অস্ত’তে পাঁচ মুসলিম প্রার্থীর বিজয় তারই সদ্য সাম্প্রতিক উদাহরণ। দিল্লি’র নির্বাচনে বিজেপি’র মুখ থুবড়ে পড়া বুঝিয়ে দিয়েছে মানুষের উপর ধর্মকে ঠাঁই দিতে গিলে মানুষের রোষাণলে পড়তে হয়। বাংলাদেশেও ধর্মীয় রাজনীতি হালে পানি পায়নি স্বাধীনতার এত বছরেও। পাকিস্তানের বিষয়টা কিছুটা আলাদা। সেখানে মূলত রাজনীতির চালিকাশক্তি ধর্মতে নয়, শক্তিতে। সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণে সেখানের রাজনীতির স্টিয়ারিং। সে অর্থে ধর্মীয় রাজনীতি বা উগ্রপন্থার চেঁচামেচি অনেকটাই নিরর্থক।

বাংলাদেশের কথাই বলি, এখানে নব্বই শতাংশের উপর মুসলমান। সে হিসাবে ধর্মীয় রাজনীতির অনুসারীরাই এদেশে ক্ষমতায় থাকার কথা। কিন্তু থেকেছি কি? বরং, উল্টোটা ঘটেছে, কথিত সেকুলারিজমের তত্ত্ব ক্ষমতার মূল ‘ফ্যাক্টর’ হিসাবে কাজ করেছে। ভিনদেশের সহযোগিতা, আভ্যন্তরীন শোর সবই গেছে ধর্মীয় রাজনীতির বিপক্ষে। আর ধর্মীয় রাজনীতিও তাদের সমান্তরালে বিরোধীতা করতে গিয়ে মানুষের কাছে আরো ‘র্যা ডিকেল’ হিসাবে প্রমানিত হয়েছে।

তবে ক্ষমতার অনুসারীরা ধর্মীয় মানুষদের উত্তেজনা কমাতে, ধর্মের কিছু ফর্ম ব্যবহার করেছেন। যেমন বিএনপি ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ যোগ করেছে। জাতীয় পার্টি ‘রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম’। আর আওয়ামী লীগতো এখন ‘কওমী সনদ’ খ্যাত। এসবই মূলত মানুষকে শান্ত রাখার আগাম কৌশল। অনেকে বলতে পারেন, শান্ত রাখার কৌশল নয়, ক্ষমতায় টিকে থাকার কৌশল। তাদের বলি, এটা যদি ক্ষমতায় টিকে থাকা বা যাওয়ার কৌশল হতো তবে ইসলামপন্থী হিসাবে দাবিকৃত দলগুলো আগে ক্ষমতায় যেতো। কোনো মৌলভী বা পীর সাহেব এখন ক্ষমতায় থাকতেন। কিন্তু তা হয়নি।

কেনো হয়নি, এর কয়েকটি কারণ ও তার ব্যাখ্যা রয়েছে। এক, বাংলাদেশে প্রকৃত ইসলামপন্থীরা ক্ষমতার লোভ করেননি। তারা প্রকৃত অর্থেই রাজনীতিতে জড়াতে চাননি। যে অংশ জড়াতে চেয়েছেন তারা পুঁজিবাদী রাজনীতির সাথে তাল মেলাতে গিয়ে ধর্মের তাল হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে তারা হয়েছেন ‘না ঘরকা, না ঘাটকা’ টাইপ। মানুষ তাদের ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কোনো ধরণের নেতা হিসাবেই গ্রহণ করেনি। ফলে ক্ষমতা থেকে গেছে তাদের অধরা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা ক্ষমতার প্রভাবক হিসাবে কাজ করেছে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও তারা ধর্মীয় আদর্শ থেকে বেড়িয়ে জাগতিক রাজনীতির সাথে তাল মিলিয়েছে, যা তাদের আরো পিছিয়ে দিয়েছে মূল ক্ষমতার মসনদ থেকে।
ভারতে বিজেপি’র ক্ষমতায় যাওয়াটাকে অনেকে বিপর্যয় মনে করেন। আমি মনে করি তার উল্টোটা। আমার মতে বিজেপি ক্ষমতায় না গেলে ভারতের মানুষ বুঝতো না সাম্প্রদায়িক রাজনীতি এবং উগ্রপন্থা দেশের জন্য কতটা বিপর্যয়ের কারণ। আজকের ভারত সেই অনুভব-অনভূতির মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে। তরুণরা বুঝতে পারছে হিন্দুত্ববাদীদের চরিত্রটা। তারা খোলশের আড়ালে হিন্দুত্ববাদের আসল রূপটা দেখতে পাচ্ছে। যে রূপ আর চরিত্র পুরো ভারতের অখন্ডতাকেই প্রশ্নের সমুখে ফেলে দিয়েছে।

১৯৪৭ দেশ ভাগের পেছনে যে এই উগ্র হিন্দুত্ববাদই দায়ি ছিলো তাও কেউ কেউ অনুধাবন করতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন, এই যে এনআরসি বা সিএএ এর ফলে মুসলমানরা কোনঠাসা হয়ে পড়বে। শেষ পর্যন্ত হয়তো অবস্থা এমন দাঁড়াবে যে, তারা আরেকটা পাকিস্তান সৃষ্টি করতে চাইবে। এবং তা তারা করবে বাধ্য হয়েই, নিজেদের জান-মাল আর অস্তিত্বের স্বার্থে।
আর দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের অবস্থা দেখে ভারতের অন্য ধর্মালম্বীরাও নিজেদের নিরাপত্তার প্রশ্নে সংকট অনুভব করবে, কিংবা করতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই সেই অনুভবের অনুভূতি ব্যক্ত হতে শুরু করেছে। শিখরা কথা বলছেন। তারা কাশ্মির প্রশ্নে কাশ্মিরিদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। আর এটাই স্বাভাবিক যে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি সংক্রামক।

দিল্লিতে পাঁচ মুসলিম প্রার্থীর জয় সেই নিরাপত্তা বিষয়ক অনুভূতিরই প্রকাশ। জামিয়াতে পুলিশের অত্যাচার এবং শাহিনবাগ ইস্যু সবই বিজেপির বিপক্ষে গিয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে যেভাবে দিল্লিতে বিজেপির উত্থান ঘটেছিলো, সাতটি উপনির্বাচনের সাতটিতেই জয় পেয়েছিলো বিজেপি। ধারণা করা হচ্ছিল তৃতীয়বারের মতন আম আদমি’র উত্থান অনেকটাই অসম্ভব। বিজেপি’র হিন্দুত্ববাদী উগ্রতা সব গনেশ উল্টে দিয়েছে। দিল্লির সত্তরটি আসনের মধ্যে তেষট্টিতেই জয় পেয়েছে আম আদমি। এই জয় শুধু জয় নয়, ভারতের রাজধানী জয় করা এই বিজয় হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে একটি ঘোষণা। ভারত যে এখনো গড্ডালিকায় গা ভাসায়নি এটা তারই সক্রিয় বার্তা। ভারতে উগ্র গেরুয়াদের সাথে দৌড়ে শান্তির সাদা কপোতরাও যে কম যায় না, তারই প্রমান এটা।

আমাদের দেশ এই প্রমান দীর্ঘদিন দিয়েই দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের নরম পলিমাটি উগ্রপন্থাকে সবসময় উপেক্ষা করেছে, অপছন্দ করেছে। উগ্রপন্থার যে কথা আমাদের এখানে বর্ণিত হয়, তা সৃষ্টিকৃত। রাজনৈতিক সিনেমার এক একটি সিকোয়েন্স এসব উগ্রতার দৃশ্যায়ন। এটা যারা করে তারা না বুঝলেও আমজনতা বোঝে। যার ফলেই এ দেশের উগ্রপন্থা হালে পানি পায়নি, পায় না। যারা এটাকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করতে চান তাদের হালের নিচের পানিও শুকিয়ে যায়।

এই উপমহাদেশের মুসলমানরা, সারাবিশ্বের প্রকৃত মুসলমানরা বিশ্বাস করে ধর্মে কোনো জোর জবরদস্তি নেই। তারা অন্তরে লালন করে, ‘লাকুম দিনুকুম অলিয়া দিন’, সুরা কাফিরুনের এই আয়াতটি। সুতরাং সর্বশেষ কথাও তাই, সব ধর্মের প্রকৃত বিশ্বাসীদের তাই বিশ্বাস, যার যার ধর্ম তার তার কাছে। ধর্ম ঘৃণা ছড়ায় না, ভালোবাসা ছড়ায়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.