![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
করোনাকালের শুরুতেই যখন কয়েকজনের মৃত্যু ঘটেছে আমাদের দেশে। সেই মৃতদের দাফন নিয়ে ঘটিত কান্ডগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে লিখেছিলাম মৃতদেহ থেকে ভাইরাস ছড়ায় না। সাথে মৃতদেহের অমার্যাদাকারীদের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের শাস্তিও চেয়েছিলাম। সে সময় দায়িত্বশীল দু’একজন ঈষৎ গোস্বা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘আপনিতো ডাক্তার না, না জেনে না বুঝে এসব লিখেন কেনো।’ দেরিতে হলেও দেখলাম বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে মৃতদেহ থেকে করোনা ভাইরাস না ছড়ানোর কথা। এ কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ অনেক আগেই জানান দিয়েছিলো। আর আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ‘এতক্ষণে- অরিন্দম কহিলা বিষাদে’!
মৃতদেহ ভাইরাস ছড়ায় না, এটা বুঝতে হলে ড্রোন বিজ্ঞানী হতে হয় না। যাদের বোধ-বুদ্ধি আছে তাদের জন্য এটুকু বোঝা খুব কঠিন কর্ম নয়। ভাইরাসের জন্য প্রয়োজন জীবন্ত ক্যারিয়ার। সেটা মানুষ হোক, প্রাণি হোক। সেই মানুষ বা প্রাণি মারা গেলে, ভাইরাসও মারা যায়। এছাড়া ভাইরাস ছড়ানোর কারণ হলো ড্রপলেট। যা মানুষের হাঁচি, কাশি বা কথা বলা থেকে ছড়ায়। মৃত মানুষ, হাঁচি-কাশি দেয় না, কথাও বলে না। সুতরাং মৃতদেহ ড্রপলেট না ছড়ালে ভাইরাস ছড়ানোর প্রশ্নও আসে না।
আমাদের দেশে মৃতদেহের কম অমর্যাদা করা হয়নি। এক শ্রেণির সামাজিক পান্ডারা সারাদেশেই লাশ দাফনে বাধা দিয়েছে। এক পোশাককর্মীর লাশ তিস্তা নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। কবরস্থানে লাশ না দাফন করতে দেবার ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। অথচ চলমান এসব ঘটনা সত্বেও দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এতদিনে জানালো মৃতদেহ থেকে ভাইরাস ছড়ায় না। এতদিন তারা কী করলেন! এই যে এতদিন মৃতদেহের অমর্যাদা ঘটলো। মৃতদের পরিবার হেনস্থা হলো। এসবের দায়-দায়িত্ব কে নেবে। এর দায় কিছুটা হলেও কি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাঁধে বর্তায়, না কি?
আমার বর্তানো বিষয়ক প্রশ্নটা মূলত বোকার মতন হয়ে গেলো। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এত কান্ড-কীর্তি দেখার পরও এমন প্রশ্নটা নির্ঘাত বোকামি। এতকিছুর পরও সুরক্ষা সামগ্রী তথা চোখের জন্য গগলস এবং শরীরের জন্য পিপিই এর যে ব্যয় ধরার কথা গণ ও সামাজিকমাধ্যমে চাউর হয়েছে তাতে চক্ষু চড়কগাছ এবং শরীর ঠান্ডা হবার জোগাড়। তারোপর রয়েছে সফটওয়্যার বিষয়ক ব্যয়। জানি না, এরা পিঠে কুলো আর কানে তুলো দিয়েছেন কী-না।
মানুষকে সম্মান দিতে না পারেন, তাকে অসম্মান-অমর্যাদা করার অধিকার কারো নেই। ইসলাম মৃতদেহের অসম্মানকে কঠোর ভাবে নিষেধ করেছে। নৈতিকতাও তাই বলে। আমাদের দেশে জীবিত অবস্থায় সম্মান না জানাতে পারলেও মরার পর সম্মান জানাবার রীতি প্রচলিত। বেঁচে থাকতে খোঁজ নেই, মরে গেলে শহীদ মিনারে কফিন রেখে নানা কসরৎ আমাদের চোখে দেখা। আর এ নিয়ে ক্ষোভও রয়েছে।অথচ করোনাকালে এই রীতিটিও অগ্রাহ্য হচ্ছে। অসাধারণদেরই যখন এই অবস্থা তখন সাধারণের কথা চিন্তা করুন। সাধারণের মৃতদেহের অমর্যাদার কারণ হচ্ছে সামাজিক পান্ডারা। এদের জন্যেই অসম্মান হচ্ছে মৃতদের। নিগৃহিত হচ্ছেন মৃতের স্বজনরা। এই পান্ডাদের শাস্তির আওতায় আনা জরুরি।
অথচ শাস্তিতো দূরের কথা উল্টো আরো করোনাকালীন স্বেচ্ছাসেবী হিসাবেও নিয়োগ পাচ্ছে এই পান্ডারাই। মূর্খ এসব পান্ডাদের লিডার হচ্ছেন কিছু জ্ঞানপাপী, ধান্ধাবাজ। পান্ডারা এটাকে নিচ্ছে তাদের হোমড়া-চোমড়া হিসাবে প্রমান করার মানসে। আর জ্ঞানপাপী লিডার নিচ্ছেন সামাজিক কন্ট্রোল হাতে নেয়ার বাসনায়। পান্ডাদের পান্ডামির কথা বলি। সম্প্রতি সামাজিকমাধ্যমে এক ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে লকডাউন কায়েমের নামে একজন এলোপাথারি মানুষদের পিটাচ্ছেন। দেখা গেছে, পিটাতে গিয়ে নিজেই আরেকজনের কাছাকাছি চলে আসছেন। কাউকে হাত দিয়ে ধাক্কা দিচ্ছেন। অর্থাৎ নিজেও সামাজিক বা শারীরিক দূরত্বটা মানছেন না। মূলত তার দূরত্ব বিষয়ে সঠিক জ্ঞানটাই নেই। যারা তাদের স্বেচ্ছাসেবী নামের হোমড়া-চোমড়া বানিয়েছেন তারা তাদের সেই জ্ঞানটা দেননি। কারণ তাদের সাামজিক দায়িত্ববোধ নেই, তারা শুধু লিডার হতে চেয়েছেন। নিতে চেয়েছেন সামাজিক কন্ট্রোল। আর দুর্যোগকাল হলো এই কন্ট্রোল হাতে নেয়ার উৎকৃষ্ট সময়। অতীতে ঝড়, বন্যা যে কেনো দুর্যোগেই তাদের এই চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটে, ঘটেছে। এই মহামারিতেও তারা অভ্যাসের বাইরে যেতে পারেননি!
কদিন আগে এমনই সামাজিক পান্ডাদের একটি গ্রুপ ফটো দেখলাম সামাজিকমাধ্যমে। হাতে গ্লোভস, মুখে মাস্ক, যার বেশিরভাগই নাকের নিচে এবং পরস্পর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দূরত্ব বিষয়টাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তোলা সেই ছবি। হ্যাঁ, এরাই করোনা মোকাবেলায় স্বেচ্ছাসেবী। এদের এই ছবি দেখে সাধারণ মানুষ কী বার্তা পাবে, এটা ভেবে দেখেছেন কী? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীলরা কী বলেন? এখনতো জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা। আইন প্রয়োগের ক্ষমতা আপনাদেরও রয়েছে। এসব পান্ডাদের পান্ডামি বন্ধ করার ক্ষমতাতো আপনাদের রয়েছে। যারা দলবেঁধে সেবার নামে মানুষকে হয়রানী করে বেড়াচ্ছে। নিজেরাই স্বাস্থ্যবিধি না বুঝে অন্যকে বোঝানের জবরদস্তি করছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া অবশ্য উচিত। এদের বাড়ি ফেরানো জরুরি। স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে নিয়ে আসুন, শিক্ষিত, সচেতন তরুণদের। যারা নিজেরা বোঝে এবং অন্যদের বোঝানোর ক্ষমতা রাখে।
এমনিতেই করোনা মোকাবেলা ও তার প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের খুব সুনাম নেই। আমাদের প্রস্তুতি কেমন তাও জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের ভাষ্য অনুযায়ী এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঠেরোটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে করোনা সংকটে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এই ভাষ্যকে মাথায় রেখে আমাদের সংকট উত্তরণের চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে এটা কোনো পলিটিক্যাল ক্রাইসিস নয়, এটা একটা ডিজাস্টার। এই বিপর্যয়কে রুখতে সঠিক পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই। অনেক ভুল পদক্ষেপের কারণে ইতোমধ্যেই আমাদের ভুগতে হচ্ছে। ক্রমেই বাড়ছে আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আমাদের অবস্থা গাণিতিক ব্যাখ্যায় সবচেয়ে খারাপ। সুতরাং সময় নষ্ট করার সময় আমাদের নেই। আর এরমধ্যে ‘গোঁদের উপর বিষ ফোঁড়া’র মতন হচ্ছে এসব সামাজিক পান্ডারা। সঠিক সিদ্ধান্তের মধ্যে এসব সামাজিক পান্ডাদের দমনও একটা। সব বিবেচনায় দেরি করার আর সময় আমাদের হাতে নেই।
©somewhere in net ltd.