![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেশ ছেড়ে যান মূলত দুই রকম মানুষ। এক রকম যান ‘খ্যাপে’, আরেক রকম আক্ষেপে।
‘খ্যাপে’ যারা যান তারা আবার দুই রকমের। এক রকম হলেন, যারা বাধ্য হয়ে যান। যান পরিবার পরিজনকে ভালো রাখতে। যাদের পাঠানো অর্থে আমাদের অর্থনীতির দৈন্যদশা’র উপর চাদর চড়ানো যায়। ঢেকে রাখা যায় লুটপাটের প্রাবল্য। কেউ কেউ যান আরো ভালো করার আশায় এবং তা থেকে দেশকে সম্মানিত করার চিন্তায়। যাদের কাছ থেকে দেশের রয়েছে প্রাপ্তিযোগ।
আরেক রকম হলেন যারা দেশে সকল সুবিধা থাকা সত্বেও বিশেষ উদ্দেশ্য এবং নিজ প্রাপ্তির চিন্তায় বৈদেশগামী হন। এরা চরিত্রেও বহুগামী, যাপনেও তাই। এদের দেশ ছাড়ার পেছনের অজুহাত হলো নিরাপত্তাহীনতা। অথচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের কারণেই দেশের অনেক লোক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছেন। এমনকি তাদের দেশ ছাড়ার পরও ভুগছেন। বৈদেশ গিয়েও তারা নানা ভাবে দেশে থাকা মানুষের নিরাপত্তাহীনতার কারণ হচ্ছেন।
আর কেউ কেউ আছেন সত্যিই যাদের উপায় ছিলো না। সত্যিকার তাদের নিরাপত্তা ছিলো চরমভাবে বিঘ্নিত। তারাই গিয়েছেন আক্ষেপে। বিদেশ গিয়েও তাদের প্রতিটা কথায় থাকে দেশের প্রতি মমতা, ভালোবাসার টান। তারা কথায় কথায় বিদেশের সাথে দেশের মানুষের তুলনা করে তাদের ছোট করতে চান না। তারা হয়তো সিস্টেম নিয়ে কথা বলেন, আর সে বলাও দেশের মানুষের জন্য। দেশের কল্যাণের জন্য।
আর যারা ঠগী, ভূয়া ‘খ্যাপে’ যান, তাদের কাজই হলো নানা ভাবে দেশের মানুষকে ছোট করা। সিস্টেমের দোষ না ধরে মানুষের দোষ ধরা। অথচ তাদের নিজেদের মনে একবারও জাগে না, সিস্টেম যদি ভালোই হতো, তাহলে তাদের দেশ ছাড়ার অজুহাত সর্বৈব মিথ্যা। তারা নিজেদের নিরাপত্তার কথা বলে দেশ ছেড়েছেন, সিস্টেম যদি ঠিক থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবার কথা নয়। বিদেশেওতো মানুষ আক্রান্ত হয়। নিউজিল্যান্ডের মতন দেশেও আক্রান্ত হবার ঘটনা ঘটে। অথচ সে দেশের মানুষতো দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে না। অর্থাৎ তারা তাদের সিস্টেমের উপর বিশ্বাস করেন। আর ‘খ্যাপ’ মারতে যারা বিদেশ গেছেন, তারা যদি সিস্টেমকেই ভরসা করেন, ভালো জানেন, তবে ‘খ্যাপ’ মারা কেনো? অর্থাৎ না দেশ, না সিস্টেম, না দেশের মানুষ, কোনো কিছুতেই তাদের ভরসা নেই। তাদের রয়েছে বৈদেশি অনুগামীতা, উদ্দেশ্য।
যন্ত্র যেমন প্রডাকশন তেমন। উন্নত বিশ্বে থুথুও নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হয়। আমাদের ওখানে? এই করোনাকালে যে হাঁচি-কাশি শিষ্টাচারের কথা বলা হচ্ছে, তার প্র্যাকটিস কি আমাদের দেশে রয়েছে? কেন নেই, এ প্রশ্নের উত্তর একটাই সিস্টেম আমাদের বাধ্য করেনি। আমরা জানি না, রাস্তায় কফ ঝাড়া যাবে না, থুথু ফেলা যাবে না। এই যে মাস্ক পড়ার আইন আমাদের দেশে করা হয়েছে। লাখ টাকা জরিমানা, জেলের বিধান রাখা হয়েছে। রাস্তায় বের হয়ে দেখুনতো কয় জনের মুখে মাস্ক রয়েছে। জেল-জরিমানার বিধানের পরও কেনো মানা হচ্ছে না মাস্ক পড়ার নির্দেশটি? এই প্রশ্নের উত্তরও একটা, সিস্টেম বাধ্য করেনি।
একটা স্ক্রু বানানো যন্ত্রের কাজ কী? তার ভেতর সোজা লোহার টুকরা দেয়া হবে, সেটা প্যাঁচ কষে স্ক্রু হয়ে বের হবে, তাইতো? সিস্টেমটাও তেমনি, যা থেকে সোজা লোহা প্যাঁচ কষে বের করা যায়। তাহলে মাস্ক পড়তে বাধ্য করা যাবে না কেনো? সামান্য আইন মানাতে ব্যর্থ একটা সিস্টেম, এটা কি বিদেশের ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য? ‘খ্যাপ’ মারনেওয়ালারা কি বলেন?
আচ্ছা মাস্ক না পড়লে লাখ টাকা জরিমানা, এমন আইন বাস্তবতার সাথে কতটুকু যায়? একজন রিকশাওয়ালার কি এত টাকা জরিমানা দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে? না দিতে পারলে যে জেলের বিধান তাও কি বাস্তবসম্মত? একজন রিকশাওয়ালাকে দু’দিন জেলে রাখলেইতো তার পরিবার না খেয়ে থাকবে। আর সেটা বেড়ে ছয় মাস হলেতো পরিবারের লোকজনের মৃত্যুই হয়ে উঠবে নিয়তি। আমাদের আইন যারা বানান, তারা কি এটা ভেবে দেখেছেন?
পঞ্চাশ টাকা জরিমানা করলে এবং তা দিতে বাধ্য করা হলে, প্রতিদিন একজন মানুষ কি জরিমানার পঞ্চাশ টাকা পকেটে নিয়ে বের হবেন? নিশ্চিত হবেন না। মানানোর প্রক্রিয়া চালু থাকলে তারা মাস্ক পড়ার আইনটা মানতে বাধ্য হবেন। আমাদের চারিপার্শ্বে চেয়ে দেখুনতো মানানোর কোনো প্রক্রিয়া চোখে পড়ে কিনা? পড়বে না। সুতরাং শাস্তি যতটা বড়, তারচেয়ে বড় হলো শাস্তি প্রদানটাকে নিশ্চিত করা।
যারা দেশের মানুষকে অযথা দোষারোপ করেন, তাদের আবার বলি, সিস্টেম যেমন তার প্রডাকশনও তেমন। অহেতুক বৈদেশ থেকে দেশের মানুষকে গালিগালাজ করার মানে হলো উপর দিকে থুথু ফেলা। আর দেশে থেকে যারা নিজ দেশের মানুষকে গালি দেন, তাদের থুথুতো বুমেরাং হয়ে নিজের মুখেই নিশ্চিত ফিরে আসে।
©somewhere in net ltd.