ভিআইপি সংস্কৃতি, অভিযুক্তগণ এবং করোনাকালের চিকিৎসা

২৮ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৩৭

বিবিসি’র একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম দিয়েই শুরু করি। শিরোনামটি ছিলো, মহামারিতেও পরিবর্তন হয়নি বাংলাদেশের ‘ভিআইপি সংস্কৃতি’। প্রতিবেদনটিতে কয়েকটি কেস স্টাডি ছিলো। যেগুলোতে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে, চিকিৎসা পেতে কীভাবে প্রভাবশালীদের রেফারেন্স লাগে এই দুর্যোগের কালেও। বিবিসি’র ঘুম ভেঙেছে অনেক দেরিতে। অনেক আগেই আমাদের মতন নাদানেরা বিষয়টি নিয়ে লেখা শুরু করেছিলো। জানানো হয়েছিলো, সাধারণ মানুষের চিকিৎসা এই মহামারিতে দুষ্প্রাপ্য হয়ে দাঁড়াবে। এমনকি আইসিউ ‘দূর কা বাত’, অক্সিজেন পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়বে। এগুলোতে ভাগ বসাবে কথিত ‘ভিআইপি’রা। এমনকি শেষ পর্যন্ত সে সব ‘ভিআইপি’রাও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হতে শুরু করবেন। তাদের হঠিয়ে জায়গা দখল করে নেবেন কথিত ‘ভিভিআইপি’রা। তাইতো হয়েছে, হচ্ছে। নয় কি?

তবে ইদানিং ‘ভিআইপি’ বা ‘ভিভিআইপি’ বিষয়টি নিয়ে বেশ বিভ্রান্তি হয়। কুয়েতে মানবপাচারের অভিযোগে ধরা খাওয়া এমপি পাপুল কি ভিআইপি না ভিভিআইপি? কারণ, তারাতো ঘরে বাইরে এমপি। মানে তার স্ত্রীও এমপি। একটা যুগল, যার তেমন কোনো সমৃদ্ধ রাজনৈতিক ইতিহাস নেই। যিনি রাজনীতিবিদও নন, তার স্ত্রীও সম্ভবত নন। তাহলে এমন পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই এমপি বনে যান কীভাবে! এমন ঘটনা কি দুর্লভ নয়? অভিযুক্ত মানবপাচারকারীও যে দেশে ভিআইপি বা ভিভিআইপি সেখানে মূলত ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ’ এর সংজ্ঞাটি নির্ধারণ জটিল হয়ে দাঁড়ায়।

পাপুল এর মতন অনেকের বিরুদ্ধেই অভিযোগ রয়েছে। সেই অভিযোগগুলোও ভিত্তিহীন বলে বাতিল করে দেয়া যাবে না। ‘কেনো দেয়া যাবে না’, এমন আপত্তির ভিত্তিতে পাচার করা টাকার কথা বলা যায়। জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা সুইস ব্যাংকগুলিতে জমা রয়েছে। শুধু তাই নয়, এমন টাকা জমা রয়েছে কানাডা, মালয়েশিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশের ব্যাংকগুলিতেও। ক্যাসিনোকান্ডের আলোয় যা অনেক আগেই উদ্ভাসিত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাবার বৈধ প্রক্রিয়ার সাথে এসব টাকার হিসাব দৃষ্টিকটু ভাবে বেমানান। কানাডার ‘বেগমপাড়া’র ব্যাপারটিও নজরআন্দাজ করা কঠিন। সম্প্রতি কানাডা নিয়ে কথা উঠায় ‘বেগমপাড়া’র বিষয়ে অনেক কিছুই জানা সম্ভব হয়েছে সাধারণের। মানুষের টাকা লোপাট করে ভিআইপি হয়ে উঠা বোধহয় বিশ্ব-ব্রহ্মান্ডে আর কোথাও এত সহজ নয়। এখানে অবশ্য অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সফলতার সংজ্ঞাটা টানা যায়। তিনি বলেছেন, ‘সফল অনেকেই হতে পারেন। অনেক সময় চোর-বাটপাররাও সফল হয়ে যায়।’ আমাদের ‘বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ’দের কেউ কেউ যে এমন সংজ্ঞায়নের বাইরে নন, তা বুকে হাত দিয়ে বলা যায় না। সে হিসাবে বিবিসি’র খবরে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণদের সংজ্ঞায়নে ক্ষেত্রেও বিশেষ বিশেষণ বা শনাক্তকরণ শব্দ যোগ করা উচিত। যার মধ্যে অভিযুক্ত যোগ করে মানবপাচারকারী, জবরদখলকারী, কমিশনখোর, চোর’ এসবও হতে পারে। কী বলেন, হতে পারে না কি?

০ টি +০/-০