![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মুক্তচিন্তার একজন মানুষ , আমি বিশ্বাস করি জ্ঞান ও যুক্তির অনুপস্হিতিতে দাবিকৃত কোন মতকেই সত্য হিসাবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করা উচিৎ নয় ।
প্রথম কিস্তিঃ-
মুসলমানদের নিকট ইসলাম একটি ঐশ্বরিক ধর্ম আর এর কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হচ্ছে ‘আবু আল-কাশিম মুহাম্মদ ইবনে আব্দাল্লাহ ইবনে আব্দ আল-মুত্তালিব ইবনে হাসিম’ যিনি সংক্ষেপে মুহাম্মদ(সঃ) নামে পরিচিত । ইসলামী বিশ্বাস মতে আল্লাহ বা ঈশ্বর কতৃক প্রেরিত সর্বশেষ নবী যার উপর আল-কুরআন অর্বতীর্ণ হয়েছে । অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে মুহাম্মদ ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা । ইতিহাসের আলোকে ইসলামের এই মহান নেতার সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিই মুলত আমার লিখার বিষয়বস্তু ।
মরুভূমির বাসিন্দারা সাধারণত হয়ে থাকে যাযাবর শ্রেণীর তাই তারা কোথাও স্থায়ী আবাসন তৈরি করে না । তবে কোন কোন ক্ষেত্রে স্থায়ী পানির উৎসকে কেন্দ্র করে কিছু কিছু জনপদ গড়ে উঠে । প্রাক-ইসলামী যুগে আরবের মক্কা নগরীও ছিল এমন একটি ছোট জনপদ যা গড়ে উঠেছিল জমজম কুপ ও ক্বাবা নামক প্রাচীন এক মন্দিরকে কেন্দ্র করে । ভৌগলিক কারণে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই জনপদে বসবাসকারীদের মধ্যে কিছু লোকের আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকলেও বেশীর ভাগ জনগোষ্টিই ছিলো দরিদ্র আর নিরক্ষর । তাদের প্রধান জীবিকা ছিল মরুভূমিতে পশু চরানো, অবশ্য কেউ কেউ ব্যবসা বাণিজ্য করেও জীবিকা নির্বাহ করতো । ব্যবসার কারণে সে সময়কার আরব বণিকদের বিশ্বের নানান প্রান্তে যাতায়েত ছিলো।
কুরাইশ বংশের লোকজনই ছিলো মূলত এই মক্কা নগরের নিয়ন্ত্রক । কুরাইশ শব্দের আভিধানিক অর্থ সওদাগর এবং এটি একজন ব্যক্তির নাম , তিনিই মক্কায় কুরাইশ বংশের প্রতিষ্ঠাতা । আরবরা নিরক্ষর হলেও তাদের ছিলো অসাধারণ সৃতিশক্তি, বাগ্নিতা এবং কবিতা চর্চার সহজাত ক্ষমতা । তাদের কাব্য চর্চার বিষয় ছিলো নারী প্রেম, বংশ গৌরব, বীরত্বপূর্ণ কাহিনী ও যুদ্ধবিগ্রহের ঘটনা । সে যুগের বিখ্যাত আরব কবিদের মধ্যে ছিলেন ইমরুল কায়েস, তারাকা, আমর, উম্মে কুলছুম ও হারিস প্রমুখ । অসাধারণ সৃতিশক্তির কারণেই আরবরা হাজার বছরের ইতিহাস শুধু শ্রবনের মাধ্যমেই বংশ পরস্পরায় মনে রাখতে পারতো ।
জাহেলিয়া যুগে আরবে মোটামোটি চার প্রকার ধর্মালম্বি লোকজন বসবাস করতো । ইহুদী, খৃস্টান, প্রকৃতি পূজক ও মূর্তি উপাসক এবং হানিফ সম্প্রদায় । এই হানিফ সম্প্রদায় ছিলো আবার একাত্ববাদে বিশ্বাসী , বিবি খাদিজার চাচাতো ভাই ওবাকর বিন নওফাল ছিলেন এই মতের অনুসারী । প্রাক ইসলামী যুগে আরব মূর্তি উপাসকরা আল-লাত, উজ্জা ও মানাত নামক দেবী ও হুবাল নামক দেবতার পুজা করতো । মানাতের মূর্তি মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী স্থানের সমুদ্র উপকুলে অবস্থিত ছিল । আরবগণ তাকে অর্চনা করতো এবং তার সম্মানে পশু বলী দিত আর পুজার স্থানে তারা নিদৃষ্ট দিন অবস্থান করতো ও নিজেদের মস্তক মুন্ডন করতো । হুবালের মূর্তি স্থাপিত ছিল মক্কা নগরীর কাবা ঘরে আর তার আকৃতি ছিল মানুষের মত, এই হুবালের ভার ন্যস্ত ছিল মক্কার কুরাইশ বংশের উপর ।
৬৩০ খৃস্টাব্দে মুহাম্মদের মক্কা বিজয়ের পর কাবাঘর থেকে হুবাল সহ ৩৬০টি মূর্তি সরিয়ে ফেলা হয় একই সময় তাঁর নির্দেশে মানাতের মূর্তিটিও ধ্বংস করা হয়।
ইসলামের ইতিহাসে সে সময়কার আরবদের যে ধরণের বর্বর হিসাবে চিন্নিত করা হয়েছে আদতে তারা অতটা বর্বর ছিলো না । অনেক আগে থকেই আরবদের মধ্যে উন্নত সাহিত্য আর সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ধারা বিরাজমান ছিলো যা ইসলামী যুগে আরও বেগবান হয়ে উঠতে দেখা যায় । সে যুগের আরব বেদুঈনদের মধ্যে ছিল বংশ পরস্পরায় শত্রুতা তাই সব সময় তাদের নিজেদের মধ্যে লেগে থাকতো যুদ্ধ বিগ্রহ । এই যুদ্ধের কারণেই বিশেষ করে বেদুঈন সমাজে পুত্র সন্তানের প্রতি ছিলো বিশেষ দুর্বলতা । কারণ পুত্র মানেই একজন ভবিষত যৌদ্ধা, তাই অনেক সময় কন্যাসন্তানের পিতা হওয়াকে অসম্মানজনক মনে করে কোন কোন পিতা তাদের নবজাতক কন্যা শিশুকে হত্যা করতেও দ্বিধা করতো না । আরব বেদুঈনদের নিজেদের মধ্যে যত ঝগড়া বিবাদই লেগে থাকুক না কেন, তারা ছিলো আরব জাতিয়তাবাদে গর্বিত এমন এক স্বাধীন জাতি, যারা কোনদিন অন্য কোন জাতির কাছে বশ্যতা স্বীকার করেনি । সে যুগের প্রতাপশালী রোমান ও পার্সিয়ান সম্রাজ্যের পক্ষেও কখনো সম্ভব হয়নি আরব ভূখণ্ড অধিকার করা । একমাত্র আরবই হচ্ছে এমন একটি ভুখন্ড যা কোন বিদেশী শক্তি কোন দিন দখল করতে পারেনি । এ থেকেই আরব জাতির সত্যিকার শৌর্য বীর্যের পরিচয় পাওয়া যায়। সে সময় কাবাগৃহের রক্ষণাবেক্ষণ ও মক্কার কর্তৃত্ব মূলত কুরাইশ বংশের বিভিন্ন গোত্র প্রধানদের হাতেই ন্যস্ত ছিলো । কোন ধরণের নিয়মাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা না থাকায় এবং নিজেদের মধ্যে প্রচণ্ড ভাবে গোত্রীয় রেষারেষি লেগে থাকার কারনে তখনকার মক্কা নগরীতে কোন প্রকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় ছিল না বললেই চলে। একটা বিশৃঙ্খল নগরে যত ধরনের অরাজগতা থাকতে পারে তার সব উপকরণই উপস্থিত ছিলো সে সময়কার মক্কায় ।
এমন এক পরিবেশেই এই নগরের কুরাইশ বংশের বনু হাসিম গোত্রে আনুমানিক ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে এপ্রিল ইসলামের নবী মুহাম্মদ(দঃ) জন্ম গ্রহণ করেন । তাঁর পিতা আবদুল্লাহ ছিলেন দাদা আবদুল মুত্তালিবএর সিরিয়ায় অবস্থানকারী ইহুদী ধর্মাবলম্বী স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান। খুব অল্প বয়সেই তিনি পিতা আবদুল মত্তালিব এর কাছে মক্কায় চলে আসেন । যেহেতু তিনি মক্কায় জন্মগ্রহণ করেননি তাই মক্কার স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে আবদুল্লার তেমন কোন সখ্যতাও কখনও গড়ে উঠেনি । তিনি প্রধানত পিতা আবদুল মুত্তালিবের ব্যবসায় সহায়তা করতেন এবং অল্প বয়সেই মৃত্যুবরন করেন । জন্মের আগেই পিতা আবদুল্লার মৃত্যু হওয়ায় এবং চাচা আবু তালিবের অনুগ্রহে লালিতপালিত হওয়ায় মুহাম্মদও ব্যক্তিগত জীবনে কোন প্রকার সহায়-সম্পদের উত্তরাধিকারি হতে পারেননি । তাই তিনি অনেকটা ধনী পরিবারের একজন দীনহীন সন্তান হিসাবেই জীবনযাপন করতেন ।
সে কালে কুরাইশ বংশের নিয়ম অনুযায়ী নবজাতক পুত্র সন্তানদের কে মরুভূমির পরিবেশে বেড়ে উঠার জন্য একজন দাইমার হাতে তুলে দেওয়া হতো । জন্মের পর মুহাম্মদকেও হালিমা নামক জনৈক দাইমার হাতে তুলে দেওয়া হয় । নিয়মটি যদিও একজন মা এর জন্য বেদনাদায়ক ও পরিবারের জন্য ব্যয়বহুল তবু তারা এ নিয়মটি অনুসরণ করতো । কারণ যাতে করে তাদের ছেলে সন্তানরা মরুভূমির কঠিন পরিবেশের মাঝে শক্ত সমর্থ যুবক হিসাবে বেড়ে উঠার সুযোগ পায় । আরবদের হাজার বছরের বংশগৌরব এবং বংশ পরম্পরায় চলেআসা শত্রুতা ও তাদের বীরত্বের ইতিহাস আর সাংস্কৃতির সাথে যেন তাদের পরিচয় ঘটে । যাতে করে পরিণত বয়সে তারা তাদের জ্ঞাতি শত্রুদের উপর তাদের পর্ব-পুরুষদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে পারে ।
আরব বেদুইনরা সে সময় মুখে মুখেই তাদের পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে সমগ্র আরব বিশ্বের ইতিহাস শ্রবণ করতো এবং তাদের অসাধারণ সৃতিশক্তির বলে তার প্রায় সব কিছুই তারা মনে রাখতো । মুহম্মদও অন্যান্য আরব শিশুদের মতই মরুভূমির রুক্ষ পরিবেশে আরব ঐতিহ্যের ধারা অনুযায়ীই বেড়ে উঠেন । এই বেড়ে উঠার মধ্যদিয়েই অন্যান্য আরব শিশুদের মত তিনিও সমগ্র আরব ভূখণ্ডের হাজার বছরের ইতিহাস তাঁর সৃতির মণিকোঠায় ধারণ করবেন এটা খুবই স্বাভাবিক । তাই মুহাম্মদ নিরক্ষর হয়েও যথাসময়ে নিজেকে একজন স্বশিক্ষিত ও অগ্রসর চিন্তার অধিকারী সৎ বিশ্বাসী তরুণ হিসাবে প্রমাণ করতে পেরেছিলেন । সে সময় মক্কায় ‘ হিলফুল ফুজুল ‘ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে উঠে আর মুহাম্মদ তাতে যোগদান করেন এবং এই সংগঠন এর মাধ্যমে তিনি নগরবাসীকে মানবিক সেবা প্রদান থেকে শুরু করে নানা ধরণের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিরোধের মীমাংসা পর্যন্ত করে দিতেন । তাঁর এই জাতীয় সামাজিক কর্ম , উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ ও মুক্তচিন্তার কারণে খুব অল্পসময়ের মধ্যেই তিনি মক্কা নগরের একজন নির্ভীক ব্যক্তি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলাম পূর্ব সময়ের মুহাম্মদে এর ভূমিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সে সময় তিনিই ছিলেন ৭ম শতাব্দীর একজন শ্রেষ্ঠতম মুক্তচিন্তার মানুষ । তাঁর এই মুক্তচিন্তার কারনেই তিনি চ্যলেঞ্জ করতে পেরেছিলেন আরবদের হাজার বছরের লালিত ধর্ম বিশ্বাস আর সামাজিক কুসংস্কারকে । তাঁর এই অগ্রসর চিন্তার কারণেই সে সময়কার মৌলবাদী ও ক্ষমতাসীনদের দ্ধারা বর্তামান সময়ের মতই তিনি নিজেকে হত্যাকারিদের টার্গেটে পরিণত করেছিলেন ।
ততকালীন মক্কা নগরের জনপ্রিয় এই তরুণের সাথে মক্কাবাসীর বিরোধের সূত্রপাত ঘটে তখনই, যখন মুহাম্মদ আরবদের প্রচলিত ধর্ম ব্যবস্থা ও কতিপয় অন্ধ বিশ্বাস এবং অ-নৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলা শুরু করেন । তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি তখনকার কাবা ঘরের প্রধান পুরোহিত এবং মক্কার প্রভাবশালী পরিবারগুলোর মহাশত্রুতে পরিণত হন । মুহাম্মদ নানা ভাবে মক্কাবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করার এবং মক্কার সমাজ ব্যবস্থাকে একটি নৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড় করাবার চেষ্টা করতে থাকেন । মুহাম্মদ এর এ জাতীয় কর্মকাণ্ডে মক্কার গোত্র প্রধানরা তাদের পূর্ব পুরুষদের ধর্মবিশ্বাস , নিজেদের দীর্ঘ দিনের অর্জিত অর্থ, যশ ও প্রতিপত্তি হারাবার ভয়ে বিচলিত হয়ে পড়েন । তাই তারা মুহাম্মদ কে বিপদে ফেলার জন্য নানান ধরনের ষড়যন্ত্র করতে থাকেন ।
মুহাম্মদ নিজে একটি প্রভাবশালী গোত্রের সদস্য হওয়ায় সব ধরনের বাধা এবং ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে তাঁর নিজ লক্ষ্যের দিকে নির্ভয়ে অগ্রসর হতে থাকেন । তারপরও তিনি মক্কার প্রভাবশালী পরিবার গুলোর তিব্র বিরোধিতার সাথে পেরে উঠছিলেন না । এমন কি একসময় তিনি বেশ হতাগ্রস্তও হয়ে পড়েছিলেন । এমন একটি পরিস্থিতিতে তিনি মক্কার অদূরে হেরা নামক পর্বতের গুহায় গভীর ধ্যনে
মগ্ন হন এবং এর মধ্য দিয়ে তিনি আগামীর কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে সমর্থ হন । তিনি হয়তো উপলব্ধি করেন সুনির্দিষ্ট কোন দর্শন ব্যতীত কোন ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের পক্ষে ব্যপক জনগণকে সম্পৃক্ত করা সম্ভব নয় । তাই তিনি মুক্তচিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে, সে সময়কার বাস্তবতায় স্থানীয় জনগণের তীব্র ধর্মীয় বিশ্বাসকে একটি নৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে, সেটিকেই পরিবর্তনের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে, সমগ্র আরব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন । এখন প্রশ্ন হল মুহাম্মদ(দঃ) ৭ম শতাব্দীর একজন আধুনিক চিন্তার মানুষ হয়েও কেন ধর্মের মত একটা বিষয়কে সামনে নিয়ে আসলেন ? এর কারণ হতে পারে শত শত বছর ধরে মানুষের মনজগতে বাসা বেঁধে থাকা ধর্মীয় ভাইরাস । যার কারণে সে সময়কার মানুষকে স্বয়ং ঈশ্বরের বাণী ছাড়া নিরক্ষর মুহাম্মদের পক্ষে কোন কথা বিশ্বাস করানো সম্ভব ছিলো না । তাই মুহাম্মদ এর পক্ষে তাঁর সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ধর্মীয় কনসেপ্ট কে মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করা ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিলো বলে আমার মনে হয় না । যার ফলে ইসলাম একটি নতুন ধর্মমত হিসাবে বিশ্বে আবির্ভূত হয়।
আমরা যদি ইসলাম পূর্ববর্তি অন্য নবীদের জীবন কাহিনী পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাব তাঁরা প্রায় প্রত্যকেই নবী হিসাবেই এই বিশ্বে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । অথচ সেখানে মুহাম্মদ(দঃ) হচ্ছেন এক মাত্র ‘নবী ‘ যিনি ৪০ বছর বয়সে নিজেকে একজন নবী হিসেবে ঘোষণা করেন। অন্যান্য নবীগণ যেখানে বিরুদ্ধবাদীদের দ্বারা নানা ভাবে নিগৃহীত হয়েছেন এবং কেউ কেউ নির্মম ভাবে হত্যাকাণ্ডের স্বীকার পর্যন্ত হয়েছেন। সেখানে এক মাত্র নবী মুহাম্মদ(দঃ) তাঁর বিরোধিদের মোকাবেলায় সস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছিলেন ।
মুহাম্মদ নিজেকে ‘ নবী ‘ হিসাবে ঘোষণা দেওয়ায় মক্কাবাসী যখন আরও অধিক হিংস্র হয়ে উঠে এবং এক পর্যায়ে তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে । তখন এটা যানতে পেরে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা গোপনে মক্কা থকে উত্তরে অবস্থিত ‘ইয়াসরির’ শহরে গমন করেন । ৬২২ সালের এই ঘটনাটি পৃথিবীর ইতিহাসে বিখ্যাত হিজরি সাল হিসাবে পরিচিত । নবীর এই ইয়াসরির শহরে আগমনের ফলে অচিরেই এই শহরটির নাম বদলে হয়ে যায় ‘মদিনাত-উন-নবী ‘ অর্থাৎ নবীর শহর ।
মদিনাবাসী মুহাম্মদকে নেতা মেনে তাঁকে মদিনার প্রশাসক হওয়ার আহবান জানালে তিনি মদিনায় বসবাসরত সব ধর্ম এবং গোত্রের জনগণকে নিয়ে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন। যার প্রধানতম শর্ত ছিলো তারা নিজেরা কোন কারণেই একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করবে না, সবাই স্বাধীন ভাবে যার যার ধর্ম ও প্রথা অনুসরণ করবে এবং যেকোন ধরনের শত্রুর আক্রমন সকলে সমবেতভাবে প্রতিরোধ করবেন। এই চুক্তিপত্রটিই ইতিহাসে বিখ্যাত ‘মদিনা সনদ’ নামে পরিচিত যা পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধানও। এর মধ্যদিয়েই বিশ্বের প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সূচনা ঘটে । অবশ্য পরবর্তীতে রাজনৈতিক কারণেই মদিনা রাষ্ট্র তার ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাদ দিয়ে ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত হয় ।
নবপ্রতিষ্ঠিত এই রাষ্ট্র বহুবার মক্কাবাসী দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং মুহাম্মদ অতিদক্ষতার সাথে এজন অভিজ্ঞ সেনাপতির মত প্রতিবারই এসব যুদ্ধে জয়লাভ করেন । একপর্যায়ে নবী মুহাম্মদ সারা বিশ্বে ইসলাম ধর্ম প্রচারে মনোযোগী হন এবং সে উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রাজ্যের রাজাদের নিকট ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে পত্র লিখেন । অনেক রাজ্যের রাজা এবং সম্রাট এটি প্রত্যাখ্যান করেন, তখন নবী মুহাম্মদ সে সমস্ত রাজ্যে সেনাবাহিনী প্রেরণের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন । কিন্তু সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ৮ই জুন মাত্র ৬২ বৎসর বয়সে ইতিহাসের এই মহানায়ক মৃত্যুবরণ করেন । মুহাম্মদ ধর্মীয় জীবনে যেমন সফল তেমনই রাজনৈতিক জীবনে, সমগ্র আরব বিশ্বের জাগরণের প্রথিকৃত হিসাবে অগ্রগণ্য । বিবাদমান আরব জনতাকে একীভূতকরণ তাঁর জীবনের অন্যতম সফলতা ।
-----চলবে
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৯
জ্ঞান ক্ষুধা বলেছেন:
দারুন পোষ্ট
ইসলাম শুধু রাজনৈতিক মতবাদ না .. জীবন ব্যবস্থা
আপনি বললেন নবী ছিল মুক্তচিন্তার অধিকারী নিরিক্ষর বিধায় পরে সে মুক্তচিন্তা বাদ দিয়ে ধর্ম নামে সে তার মতবাদ চালাল যেহেতু তৎকালীন সমাজ ধর্ম কেদ্রিক।
পৃথিবীতে মতবাদ প্রচার করতে যে পরিমার কষ্ট তাকে করতে হয়েছে আর কোন মতবাদ প্রচার করায় এতো কষ্ট করা হয়নি তারপরেও এই মতবাদ সবচেয়ে জনপ্রিয় বর্তমান পৃথিবিতে
যেহেতু ধর্ম অনেক আগেই ছিল যা কিনা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। সেহেতু তার মতবাদ ছিল একইশ্বর কেন্দ্রিক এবং এইটাই প্রচার করা ছিল তার কাজ। একই কাজ সে আসার আগে অনেক ব্যাক্তি করে গেছে এবং সবাই পরে নবী হয়েছে জন্মনিয়েই ধর্ম প্রচার করেনি তাই আপনার লেখায় ভুল দেখতে পাচ্ছি।