![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ধুমপান স্বাথ্যের জন্য ক্ষতিকর, ধুমপান হৃদরোগের কারণ, ধুমপান মৃত্যু ঘটায়, ধুমপানে বিষপান ইত্যাদি নানাবিধ সতর্কীকরন বার্তা উপেক্ষা করে আমরা যারা ধুমপায়ী তারা ধুমপান করে চলেছি। সেই প্রথম সিগারেট ধরানো, লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে লুকিয়ে সিগারেট টানা, কেউ দেখে ফেললে তারে কনভেন্স করার প্রানান্ত চেষ্টা, অবশেষে ধরা খেয়ে প্রচন্ড বকুনি, প্রেমিকার হাত ধরে ধুমপান ছাড়ার শপথ এই জাতীয় বিড়ম্বনার শিকার বোধকরি সকল ধুমপায়ীই হয়েছেন। তবুও ধুমপানের নেশার কথা শুধু মাত্র ধুমপায়ীরাই জানে। যাইহোক আমার বিষয়বস্তু ধুমপান কে উৎসাহিত করা নয় বরং আমার জীবনে ঘটে যা্ওয়া ধুমপানের পেছনের কিছু মজার ঘটনাচক্র নিয়ে।
ঘটনাচক্র-১
তখন ক্লাস ৬ এ পড়ি। বাবা ছিলেন একজন চেইন স্মোকার। আর ঐ বয়সে যা হয় আর কি আমি ছিলাম প্রচন্ড ধুমপান বিদ্বেষী। একদিন বাবা দুপুরের খাবারের পর হন্তদন্ত হয়ে তার প্রিয় সিগারেটের প্যাকেট খুজছেন। কিছুতেই কোথাও পাচ্ছেন না।(পাবেন কি করে ওটা আমি পুকুরে ফেলে দিয়েছি) অনেকক্ষন খোজাখুজির পর বাবা নিশ্চিত হলেন এটা তার সুপুত্র মানে আমার কাজ।
ব্যস বাবা অগ্নিমুর্তি, “আমার সিগারেটের প্যাকেট কোথায়?”
বাবা সামনে কথা বলতে গেলে এমনিতেই প্যান্ট খারাপ হবার উপক্রম হয় তার পরে আবার আমি অপরাধী।
ভয়ে ভয়ে বললাম, “ফেলে দিয়েছি”
“কেন” (বাবা রাগে গড় গড় করছে)
কিছুক্ষন চুপকরে থাকার পর, মনে মনে সাহস নিয়ে বলে ফেললাম, “বাবা তুমি সিগারেট খাও এটা আমার পছন্দ নয়, তুমি সিগারেট খেলে আমিও খাব”
একনাগাড়ে কথাগুলো কলে ফেললাম এবং চোখ বন্ধ করে গাল পেতে রইলাম।(বিঃদ্রঃ আমি কখনই বাবার মার খেতে আগ্রহী ছিলাম না। কিন্তু বাবার উত্যম মধ্যম এর সময় হলে, অনিচ্ছাকৃতবাবে ঠিকই আমি গাল পেতে দিতাম)
বাবা এবারে মারলেন না। কিন্তু রাগে গড় গড় করতে করতে বেরিয়ে গেলেন। এরপর বাবা অনেক দিন ঘরে সিগারেট খেতেন না। এমনকি বাইরে সিগারেট খেতে খেতে আমাকে দেখেলে লুকিয়ে ফেলতেন অথবা ফেলে দিতেন। নিজেকে খুব হিরো হিরো লাগত তখন।
ঘটনাচক্র-২
এর পর অনেকগুলি বছরপার হয়ে গেছে। আমিও বড় হচ্ছি। ঠোটের উপরে হালকা গোফের রেখা দেখো দিয়েছে। সিগারেট ধরেছি একটু একটু করে। কিন্তু আমার কাছের বন্ধুরা ছাড়া কেউ জানেনা বিষয়টা। সুন্দরী একটা মেয়ের প্রেমেও পড়েছিলাম। বছর খানেক পর আমাদের আবার ব্রেকআপও হয়ে যায়। একদিন শিল্পকলায় বসে আছি। হেডফোনে মনোযাগ সহকারে বিলি জোয়েলের গান শুনছি আর ভাবছি একটা সিগারেট খেলে মন্দ হয়না। পেছন থেকে যে থেকে আমার দিকে কেউ একজন এগিয়ে আসছে খেয়াল করিনি। সিগারেটটা ধরাতে যাব এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন আমাকে ডাকল মনে হল। হেডফোন নামিয়ে পেছন ফিরতেই দেখি, পৃথিবীর সবথেকে সুন্দরী মানুষটি আমার দিকে বিস্ফোরক ও অবাক দৃষিটিতে তাকিয়ে আছে।
“তুমি সিগারেট ধরেছ?” অবাক প্রশ্ন তার।
“আরে ধুর, আমি আগে থেকেই খায়” নিলিপ্ত উত্তর আমার।
“তুমি আমাকে দেখে সিগারেট খাচ্ছ, আমাকে দেখানোর জন্য এটা তুমি করছ, যদি ভাব এতে তুমি আমার সহানুভূতি পাবে সেটা তোমার ভূল ধারনা”
“আমি সিগারেটটা এখনো ধরায়নি। আমি তোমাকে দেখিইনি, আর তোমাকে দেখানোর জন্য সিগারেট খাবার দরকার কি?” আবারও নিলিপ্ত আমি।
“তুমি একটা মিথ্যাবাদি, ভন্ড” রাগে গড় গড় করছে সে।
“হুম” সহজ উত্তর আমার।
“আমার দেখা পৃথিবীর সব থেকে খারাপ মানুষ তুমি। তোমার কোন দায়িত্ববোধ নেই। তুমি সকাল বেলা যেই মশারির মধ্যে থেকে বের হও রাতে সেই মশারির মধ্যে ঢুকে ঘুমাও। তুমি ছেড়া চটি পায়ে দিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘোর। তোমার জিন্স ছেড়া। আজ ১৫ দিন তুমি আমাকে ফোন করনা”
“তুমিও তো করনি”
“তাতে তো তোমার সময় খারাপ যায়নি, তুমিতো আছ তোমার বন্ধুদের নিয়ে আর ছবি আঁকা নিয়ে”
“হুমম, আমি একজন শিল্পী আর সবার আগে আমি একজন মানুষ। আর তাছাড়া গত পনের দিনে আমি একটাও ছবি আঁকিনি, ছবি পায়নি”
“থাক তুমি তোমার শিল্পকলা আর বন্ধুদের নিয়ে। আমাকে আর কখন আমাকে ফোন দেবে না”
“It’s Dosent Work Anymore” স্মার্ট সাজার চেষ্টা আমার।
রাগে খটমট করতে করতে সে চলে যায়। সিগারেটটা ধরায় আমি। এইমূর্তে তার শতচুম্বনের থেকেও সিগারেট এর চুম্বনেরে ভাল লাগছে আমার। হঠাত পা টায় টান লাগে। ব্যাথায় কুচকিয়ে উঠি আমি। প্যান্টের ছেড়া যায়গাটার দিকে তাকায় আমি। কিছক্ষন আগেই বাইক নিয়ে পড়ার ফসল ওটা। সিগারেটের ধোয়া ছাড়তে থাকি আমি। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে আমার।
ঘটনাচক্র-৩
আমি সিগারেট টানি এটা খুব কম লেকেই জানত। গ্রামের লোক তো আরও কম। কারন চাচা দের ভয়ে লুকিয়ে খেতে হত। একদিন দুপুরে পুকুর পাড়ের গোয়াল ঘরে গিয়ে লুকিয়ে সিগারেট খাচ্ছি। এমন সময় দেখি আমার চাচা।(বাবার চাচতো ভাই) মোবাইলে কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছে। আমি তখন মহা বিপদে, বের হতে গেলেই চাচার মুখোমুখি। অগত্যা ভিতরদিকে একদম গোবরের স্তুপের দিকে গিয়ে অন্ধকারে দাড়িয়ে রইলাম। আর বাধ্য হয়ে চাচার ব্যাক্তিগত ফোনালাপ শুনতে হল প্রায় ২৫ মিনিট ধরে। জানতে পারলাম চাচা গোপনে বিয়ে করেছে এবং তার সাথেই কথা হচ্ছে। বেচারা কাউকে জানাতে পারছেনা আর খুব বিপদে আছে বুঝতে অসুবিধা হলো না। কিছুদিন পরে আমি আমর চাচতো ভাই গিয়ে চাচীকে নিয়ে আসি এবং চাচার সমস্যা সমাধান হয়।
সেদিন রাতে চাচা আমাকে পুকুর পাড়ে নিয়ে গিয়ে একটা সিগারেট ধরায় এবং আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে একটা সিগারেট এগিয়ে দেয়।
“ইয়ে মানে, এ্যা এ্যা চাচা আমি তো সিগারেট খায়না” ইতস্তত আমি।
“সেদিন গোয়ালে আমি তোকে দেখেছি” চাচা মুচকি হাসে।
“ভয়নেই ধর কাউকে বলবনা।”
এরপর থেকে আমি ও চাচা বন্ধু হয়ে যাই। চাচার সাথে এরপরে অনেক মজার স্মৃতি আছে।
ঘটনাচক্র-৪
এক বিয়ের অনুষ্ঠানে গ্রামে হই হই ব্যাপার। বাড়িতে প্রচুর লোকের সমাগম। ঘরে ঢোকার আগে চুরি করে সিগারেট খেতে গেলাম পুকুর ঘাটে। প্যাকেট থেকে শেষ সিগারেট টা বের করে ধরাতে গিয়ে তড়াহুড়ায় সিগারেটের মোথা পুড়িয়ে ফেললাম। খুব মন খারাপ হয়ে গেল। মোথাটা একটু টানাটানি করতে গিয়ে পুরো ফিল্টারটা বের হয়ে আসল। পরে ম্যাচের কাঠি দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে ফিল্টর ভিতরে ঢুকিয়ে কোন রকমে টেনে ফিরে আসলাম রুমে।
ঘটনাচক্র-৫
গ্রামে এক বন্ধুর মুদি দোকান ছিল। সে বলল রাতে কখনো সিগারেট দরকার হলে ওর জানালায় গিয়ে টোকা দিয়ে ডাকতে। ওদের বাসায় আমার তেমন যাতায়াত ছিল না। দোকানের পাশেই ওদের বাড়ী। এক রাতে বাধ্য হয়ে সিগারেটের জন্য ওদের বাড়ীতে গেলাম। ঠিক কোন ঘরটা বন্ধুর সেটা বুঝে উঠতে পাছিলাম না।
বুকে সাহস নিয়ে জানালায় টোকা দিলাম। ভেতর থেকে আওয়াজ এল
“কে?”
“আমি, একটা সিগারেট দে”
“এতরাতে!!! ” ভেতর থেকে জাললা খুলে ঘুম জড়িত কন্ঠে বলল,
“নে ধর”
বাপরে এ তো দেখি বন্ধুর বাপ। খিচ্চা দৌড় দিলাম। ভাগ্যিস শীতের কারনে মাফলার পেচিয়েছিলাম বলে চাচা চিনতে পারেনাই।
ঘটনাচক্র-৬
কিছুদিন আগের ঘটনা। একটা ছবি পেয়েছে মাথায়। মনোযোগ সহকারে ছবি আঁকছি। একটা সিগারেট ধরালাম। এত টানি তবুও ধোয়া আসে না। পরে খেয়াল করলাম সেটা পেন্সিল ছিল।
পুনশ্চঃ সিগারেট নিয়ে আরও অনেক স্মৃতি আছে। আসলে প্রত্যেক ধুমপায়ীরই খাকে। আশাকরছি আপনাদের মজা লেগেছে ঘটনাগুলি।
০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৮
ক্ষ্যাপাপাগলা বলেছেন: হ ভাই।
২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩১
আঁধার রাত বলেছেন: আমার দেশে সিদ্ধিকে কেউ নেশা মনে করে না- আফসোস। ভাল লাগল অভিজ্ঞতা পড়ে।
০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৬
ক্ষ্যাপাপাগলা বলেছেন: এক্কে এইডা কি কন। গাঁজা খায় রাজা।
৩| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৭
লিন্কিন পার্ক বলেছেন:
০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৭
ক্ষ্যাপাপাগলা বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৭
ক্ষ্যাপাপাগলা বলেছেন: কি বলেছেন?
৪| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪০
ধানের চাষী বলেছেন: হা হা হা ..... বেশ মজার অভিজ্ঞতা
০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১৪
ক্ষ্যাপাপাগলা বলেছেন: ধন্যবাদ ধানের চাষী। ধান কাটা শেষ?
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৬
পথহারা সৈকত বলেছেন: এত টানি তবুও ধোয়া আনে না। পরে খেয়াল করলাম সেটা পেন্সিল ছিল।