নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চক্ষু ডাক্তার

খোমেনী

স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই ......।

খোমেনী › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৬ই ডিসেম্বর সারেন্ডার অনুষ্ঠানে জে. ওসমানী কেন উপস্থিত ছিলেন না? চাঞ্চল্যকর তথ্য

২৫ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৯





ভারতীয় ‘গুন্ডে’ ছবি নিয়ে বাংলাদেশের একশ্রেণীর পত্রপত্রিকায় ঘোর প্রতিবাদ চলছিল। আরেক শ্রেণীর পত্রপত্রিকা এই ব্যাপারে মোটামুটি খামোশ মেরে ছিলো। ওরা হয়তো সরাকারের খয়ের খাঁ। তখনই কথা উঠেছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনী আসলে কোন বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেছে? ভারতের তরফ থেকে প্রথম থেকে বলা হচ্ছিলো যে, পাকবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ বলছিলো যে, ভারতীয় বাহিনী নয়, যৌথবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেছে পাকিস্তান বাহিনী। আসলে কোনটি সত্য? গুন্ডে ছবিতেও বলা হয়েছে যে, ভারতীয় বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেছে পাকিস্তান বাহিনী। সেজন্যই এত প্রতিবাদ।



প্রকৃত সত্য জানার জন্য সারেন্ডার ডকুমেন্টটি দেখতে হবে। তাই ইন্টারনেটে ওই ডকুমেন্টটি দেখলাম। সেখানে ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরা ডকুমেন্টের নিচে সই করেছেন। তার পদবি দেয়া হয়েছে নিম্নরূপ : ‘General Officer Commanding in Chief/India and BANGLADESH Forces in the Eastern Theater/ 16th December 1971.’ বাংলা অনুবাদ : জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ(অধিনায়ক)/পূর্বাঞ্চলস্থ ভারত ও বাংলাদেশের যৌথবাহিনী। বাংলাদেশের তরফ থেকে যুদ্ধ করেছে মুক্তিবাহিনী। এই বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন, জে. এমএজি ওসমানী। তিনি ছিলেন যৌথ বাহিনীর উপপ্রধান। তৎকালীন সেনা বাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (তৎকালীন ইপিআর), বর্তমান বাংলাদেশের বিডিআর বা বিজিবি এবং দেশের জন্য যুদ্ধ করতে আগ্রহী দেশপ্রেমিক যুব সমাজ থেকে রিক্রুট করা সদস্য সমবায়ে মুক্তি বাহিনী গঠিত হয়েছিলো। পাকিস্তান বাহিনীর অধিনায়ক লে. জে. এএকে নিয়াজি ডকুমেন্টের নিচে সই করেছেন। তার পদবি দেয়া হয়েছে নিম্নরূপ : ‘Martial Law Administrator Zone B and/ Commander Eastern Command. (Pakistan)/ 16th December 1971.’। বাংলা অনুবাদ : খ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক এবং পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল কমান্ডের অধিনায়ক।



প্রিয় পাঠক, আমরা মূল ডকুমেন্ট থেকে এখানে ইংরেজিটি উদ্ধৃত করলাম। ইন্টারনেটে মূল হাতের লেখা রয়েছে। টেকনিক্যাল কারণে সেই হাতের লেখাটি কপি ও পেস্ট করে দেয়া সম্ভব হলো না। তবে যারা এই ব্যাপারে আগ্রহী তারা ইন্টারনেটে গিয়ে গুগলে ‘Instrument Of Surrender’ শিরোনামে Log On করবেন। শুধু এই তথ্য নয়, এ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় আরো অনেক তথ্য পাবেন। প্রিয় পাঠক, আমার সাথে আপনারাও নিশ্চয়ই একমত যে, যে ডকুমেন্ট ওপরে দেয়া হলো এরপর এর ব্যাপারে বিভ্রান্তির আর কোন অবকাশ থাকবে না।





॥ দুই ॥

কিন্তু তারপরও একটি বিরাট প্রশ্ন থেকে যায়। প্রশ্নটি হলো, যদি যৌথবাহিনীর নিকটেই পাকবাহিনী সারেন্ডার করে থাকে তাহলে সেই সারেন্ডার অনুষ্ঠানে ভারতের তরফ থেকে জে. আরোরা উপস্থিত থাকলেন, বাংলাদেশের তরফ থেকে যৌথ বাহিনীর উপ প্রধান জে. ওসমানী কেন উপস্থিত থাকলেন না? এই নিয়ে অনেক জ্বলন্ত প্রশ্ন মানুষের মনকে সেইদিন থেকেই আলোড়িত করছে এবং আজো আলোড়িত করেই চলেছে। আমরা এ সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছি। সেসব কথা বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। আজো ভেসে বেড়াচ্ছে। কিন্তু নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাবে সেসব কথা লেখা যায় না। হয়তো এ সম্পর্কে তথ্য আছে। কিন্তু সব তথ্য কি জোগাড় করা সম্ভব? এ ব্যাপারে একটি তথ্য আমার হাতে এসেছে। সেটি আপনাদের খেদমতে পেশ করছি।



গত ৬ মার্চ ‘দৈনিক যুগান্তরে’ ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশীর একটি লেখা ছাপা হয়েছে। লেখাটির শিরোনাম, ‘গুন্ডে ছবির রাজনীতি’। লেখার এক স্থানে একটি সাব হেডিং রয়েছে। সেটি হলো, ‘পাকবাহিনী কার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে?’। এই সাব-হেডিংয়ের নিচে বলা হয়েছে, ‘মুক্তিবাহিনী এবং সারাদেশের মুক্তিকামী মানুষের নিরন্তর আঘাতে যখন পাকবাহিনী সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত, তখনি ভারত তাতে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। গঠিত হয় ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে ‘যৌথ কমান্ড’। ভারতীয় বাহিনীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ যুদ্ধের সমাপ্তি ত্বরান্বিত করেছে এবং বিজয় নিশ্চিত করেছে, তাতে সন্দেহ নেই।



স্বাভাবিক নিয়মেই ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান জেনারেল আরোরাই যৌথ বাহিনীর প্রধান হয়েছেন। উপপ্রধান হয়েছেন বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনীর প্রধান জে. ওসমানী। ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল আরোরা পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেছেন কোন পরিচয়ে? ‘যৌথ বাহিনীর প্রধান’ হিসেবে, নাকি ভারতের ‘ইস্টার্ন কমান্ডে’র প্রধান হিসেবে? এ প্রশ্নের সুস্পষ্ট জবাব আমার কাছে নেই (যৌথ বাহিনীর প্রধান হিসেবেই তার স্বাক্ষর করার কথা। যদি তা না হয় থাকে তাহলে তো বিষয়টিকে সহজভাবে নেয়ার উপায় নেই)।’





॥ তিন ॥

এরপর লেখা হয়েছে, ‘ওসমানী তখন কোথায় ছিলেন?’ অতঃপর বলা হয়েছে, ‘এ ব্যাপারে জেনারেল ওসমানীর সঙ্গে আলাপচারিতার একটি দিনের কথা মনে পড়ে। ১৯৭৮ সালের একদিন তার সঙ্গে সিলেট থেকে সড়ক পথে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলাম। একটা জিপের সামনের আসনে দুজন পাশাপাশি বসা। জেনারেল খুব আলাপি মানুষ ছিলেন। সারা পথ তার জীবনের নানা ঘটনা সরস ভাষায় বলে যাচ্ছেন। আমি নিবিষ্ট মনে শুনছি।



জিপটা যখন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের পাশ দিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ করে বলে উঠলাম : ‘স্যার, একটা বিষয় খুব জানতে ইচ্ছে করে, একাত্তর সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন পাকবাহিনী রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে তখন আপনি সেখানে উপস্থিত থাকেননি কেন?’



জেনারেল সাহেব প্রশ্নটি শুনে একটু যেন চমকে উঠলেন। কথা থামিয়ে চুপ হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর যখন বলতে শুরু করলেন তখন তার গলার স্বর পাল্টে গেছে। একটু ধীরে তার স্বভাবগত ভাবগম্ভীর স্বরে ঠোঁট চেপে চিবিয়ে চিবিয়ে বলতে শুরু করলেন (প্রায় দু’বছর প্রায় সর্বক্ষণ তার কাছাকাছি থাকার সুবাদে ততদিন বুঝে নিয়েছি রেগে গেলে তিনি এভাবে কথা বলেন)। বললেন, ‘ইট ওয়াজ এ ডার্টি কনসপিরেসি। আই ওয়াজ গোয়িং টু অ্যাটেন্ড দ্যাট সারেন্ডার সেরিমনি। ইট ওয়াজ ইন দ্যা প্রোগ্রাম। মাইসেলফ অ্যান্ড জেনারেল রব। উই স্টারটেড ফ্রম দিস ভেরি প্লেস কুমিল্লা। বাট ইউ নো অন দ্য ওয়ে উই আয়ার সাডেনলি আস্কড নট টু প্রসিড। ব্যাটারা অয়্যারলেসে বলেছে, পথে নাকি অসুবিধা আছে। আমরা যেন সিলেটের দিকে চলে যাই। পাইলট হেলিকপ্টার ঘুরিয়ে দিলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে। তার কিছুক্ষণ পরেই আমরা পড়ে গেলাম গান ফায়ারে। আমার পাশে জেনারেল রব গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত হয়ে গেলেন। আল্লাহর রহমতে শাহ জালালের দোয়ায় আমার গায়ে একটা গুলিও লাগেনি...।’ বলেই আবার চুপ হয়ে গেলেন (স্মৃতি থেকে যথা সম্ভব তার কথাগুলো তার বাচন ভঙ্গিতে হুবহু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কিছু ডট ডট আছে। সব কথা বলা যায় না)। লক্ষ্য করলাম, রাগে তিনি গর গর করছেন। আমি চুপ করে থেকে মনে মনে সেই হেলিকপ্টারের দৃশ্যটা কল্পনা করতে থাকলাম।



ফেরদৌস কোরেশী, জেনারেল ওসমানীর উদ্ধৃতিতে, তার (জেনারেলের) সারেন্ডার অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকার কারণ বর্ণনা করেছেন। জেনারেলকে বহনকারী হেলিকপ্টারে গুলি বর্ষণ করা হয়। ওই হেলিকপ্টারের আরেকজন আরোহী জেনারেল আব্দুর রব আহত হন এবং রক্তাক্ত হন। সৌভাগ্যক্রমে ওসমানীর গায়ে কোন গুলি লাগেনি। এখানে কিছু ফাঁক রয়েছে। সেই ফাঁকগুলো ফেরদৌস কোরেশী পূরণ করেননি। যে হেলিকপ্টারটি ঢাকার উদ্দেশ্যে কুমিল্লা থেকে উড্ডয়ন করেছিল সেটিকে সিলেটে যাওয়ার জন্য কে বা কারা নির্দেশ দেয়? নির্দেশ অনুযায়ী গতিপথ পরিবর্তন করে হেলিকপ্টারটি সিলেটের দিকে যাচ্ছিল। তাহলে মাঝপথে কে বা কারা ওই হেলিকপ্টারে গুলি বর্ষণ করে? এই ঘটনাটি বাংলাদেশ সরকার আজ পর্যন্ত চেপে রেখেছে কেন? এই সব আমাদের কোন প্রশ্ন নয়। যারা পঞ্চাশোর্ধ্ব, তাদের সকলের মনকে এই প্রশ্নটি দারুণভাবে আলোড়িত করে এবং আগামী দিনগুলোতেও আলোড়িত করতেই থাকবে।



উৎসঃ মোবায়েদুর রহমান, ইনকিলাব।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৪২

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।

২৫ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:১৫

খোমেনী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

২| ২৫ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৪২

মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন বলেছেন: পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।

২৫ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:১৬

খোমেনী বলেছেন: অভিযোগ এডমিন এই পোষ্টটি ডিলেট করে দিয়েছিল কি এক অজ্ঞাত কারনে। ব্লগ পাড়ার ছেলে পেলেরা বলাবলি করছে।

৩| ২৫ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:২৮

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: তথ্য সমৃদ্ধ পোস্ট

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.