![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পশ্চিমবঙ্গ
কি বাংলাদেশী সন্ত্রাসীদের
নিরাপদ
ঘাঁটিতে পরিণত
হতে চলেছে
মেহেদী হাসান পলাশ :
বর্ধমানের খাগড়াগড়ের
বোমা বিস্ফোরণে জড়িত
সন্দেহে অভিযুক্ত
বাংলাদেশী সন্ত্রাসীদের
সম্পর্কে অধিকতর
তদন্তে ভারতীয়
গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল
ইনভেস্টিগেশন
এজেন্সি এনআইএ’র
একটি তদন্ত দল এখন
বাংলাদেশ সফর করেছে।
সফরকালে তারা বাংলাদেশী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও
গোয়েন্দা সংস্থার
সদস্যদের সাথে বৈঠক
করেছেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য
মোতাবেক জানা গেছে,
এসব বৈঠকে দুই দেশের
গোয়েন্দা সংস্থা ও
বাংলাদেশী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দুই
দেশের বেশকিছু ওয়ান্টেড
ও সন্দেহভাজন আসামিদের
ব্যাপারে তথ্য বিনিময়
করেছে। ভারতীয়
গণমাধ্যমের রিপোর্ট
অনুযায়ী, তদন্ত সংস্থার
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,
গত ২ অক্টোবর বর্ধমানের
খাগড়াগড়ের
একটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের
ঘটনায় শাকিল আহমেদ ও
সুবহান ম-ল নামের দুজন
মারা যান ও একজন আহত হন।
এনআইএ এই ঘটনার
তদন্তে নেমে রাজিয়া বিবি ও
আমেনা বিবি নামের দুই
নারীকে গ্রেফতার
করেছে। তাদের
দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ৭
নভেম্বর আসামের
রাজধানী গুয়াহাটি থেকে সুজানা নামের
আরও এক নারীকে গ্রেফতার
করা হয়। ৮ নভেম্বর কলকাতার
দমদম বিমানবন্দরের কাছ
থেকে সাজিদ নামের এক
ব্যক্তিকে আটক করে এনআইএ।
জিজ্ঞাসাবাদে সাজিদ
জানান, তার আসল নাম শেখ
রহমত উল্লাহ মাসুম। বাবার
নাম সিদ্দিকুর রহমান।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার
ফরাজিকান্দায় বাড়ি।
খাগড়াগড়ে বোমা হামলার
পরপরই ভারতীয় বিভিন্ন
গণমাধ্যম এই ঘটনার
সাথে বাংলাদেশের
সন্ত্রাসীরা জড়িত
বলে ঢালাও রিপোর্ট
ছাপতে শুরু করে। এই
প্রোপাগান্ডায় নেতৃত্ব
দেয়
কলকাতা থেকে প্রকাশিত
আনন্দবাজার পত্রিকা।
আনন্দবাজার
পত্রিকা খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের
পর থেকেই প্রতিদিন
৫-৮টি করে এ সংক্রান্ত
রিপোর্ট ছাপতে শুরু
করে যা এখনো অব্যাহত
আছে। চাঞ্চল্যকর তথ্য
সম্বলিত এ রিপোর্টের
অনেককিছুই পরে খোদ
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার,
ভারতীয়
গোয়েন্দা সংস্থা ও
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অস্বীকার
করে। বাংলাদেশের
গণমাধ্যমগুলোর একাংশ
প্রতিদিনই কোনোরূপ
পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই
আনন্দাবাজারের এসব
রিপোর্ট রিপ্রিন্ট
করে যাচ্ছে। এর
ফলে ভারতের
বোমা বিস্ফোরণে বাংলাদেশের
সংশ্লিষ্টতার
খবরে বাংলাদেশের
গণমাধ্যমের পৃষ্ঠাও
ভরে থাকছে। এর পরিণাম
যে সুখকর হয়নি তার প্রমাণ
সর্বশেষ
জিআইটি বা বৈশ্বিক
সন্ত্রাসবাদ
সূচকেবাংলাদেশের
অবস্থান।
খাগড়াগড়ের এই
বোমা বিস্ফোরণে বাংলাদেশীদের
সংশ্লিষ্টতার খবর ভারতীয়
গণমাধ্যম ও তার
বরাতে স্থানীয়
গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার
পর বাংলাদেশ সরকার
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের
কাছে তথ্য চেয়ে অনুরোধ
পাঠায়। কিন্তু ভারত সরকার
সে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান
করে বাংলাদেশে তাদের
গোয়েন্দা সংস্থা পাঠানোর
পাল্টা প্রস্তাব পাঠায়।
বাংলাদেশ সরকারও
সে প্রস্তাব
মেনে নিয়ে ভারতীয়
গোয়েন্দা সংস্থাকে বাংলাদেশে স্বাগত
জানায়।
সচেতন ব্যক্তিমাত্রই
জানেন, সম্প্রচার
বিশ্বে ভারতীয়
গণমাধ্যমগুলোর একটি বিরাট
প্রভাব রয়েছে।
ফলে জঙ্গী তথ্য
অনুসন্ধানে ভারতীয়
গোয়েন্দা সংস্থার
বাংলাদেশে আগমনের
খবরটিও বৈশ্বিক সম্প্রচার
জগতে ফলাও করে প্রচার হয়।
আর এসব প্রচার
যে সন্ত্রাসবাদ
সূচকে বাংলাদেশের
অবস্থান নাজুক
করে তোলে তার
সাম্প্রতিক প্রমাণ
আন্তর্জাতিক
গবেষণা প্রতিষ্ঠান
ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমকিস
অ্যান্ড পিস (আইইপি) গত ১৮
নভেম্বরে প্রকাশিত
প্রতিবেদন। এ
রিপোর্টে বৈশ্বিক
সন্ত্রাসবাদ
সূচকে ১৬২টি দেশের
মধ্যে বাংলাদেশের
অবস্থান ২৩তম হয়েছে। এর
আগে ২০১২ সালে প্রথমবার
বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচক
প্রকাশ করে আইইপি।
সেবারের
প্রতিবেদনে ১৫৮টি দেশের
মধ্যে বাংলাদেশের
অবস্থান ছিল ৩৯তম। এ
কথা বলা বাহুল্য,
আন্তর্জাতিক এসব
প্রতিষ্ঠান কোনো দেশের
ক্ষেত্রে এ ধরনের সূচক
তৈরির বেলায় সে দেশের
গণমাধ্যমে সংশ্লিষ্ট
বিষয়ে প্রকাশিত
রিপোর্টগুলোর উপর
ব্যাপকভাবে নির্ভর
করে থাকে।
খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণে বাংলাদেশীদের
নাম উচ্চারিত হওয়ায় এটাই
স্বাভাবিক ছিল যে,
বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট
প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ
তা পরীক্ষা-
নিরীক্ষা করার জন্য ভারত
সফর করবেন। অথচ এ
ক্ষেত্রে উল্টো ঘটনাই ঘটল।
বাংলাদেশের তরফ
থেকে এ ঘটনা তদন্তে সব
ধরনের তথ্য সহযোগিতার
কথা বারবার বলা সত্ত্বেও
ভারতীয় তরফ
থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে এসে ভারতীয়
এনআইএ প্রতিনিধিদল যেসব
নাম ও তথ্য
বাংলাদেশী পক্ষের
হাতে তুলে দিয়েছে এটা ভারত
থেকেও পাঠানো যেত।
বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ
তা পরীক্ষা-
নিরীক্ষা করে ভারতকে জানাতে পারতো।
এ বিষয়ে দুই দেশের
মধ্যে যেমন আইনগত
কোনো সমস্যা যেমন নেই
তেমনি গত ৭
বছরে নানা ঘটনা ও
কাজে বাংলাদেশ সরকার
তার সদিচ্ছার প্রমাণও
রেখেছে। তা সত্ত্বেও
ভারতীয়
গোয়েন্দা সংস্থার
সদস্যদের
বাংলাদেশে আগমন
বাংলাদেশের
আন্তরিকতা ও
দক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ
করতে পারে বলে মনে করেন
বিশেষজ্ঞমহল। তাদের মতে,
এটা ভারতের চিরাচরিত
কর্তৃত্ববাদী মানসিকতার
পরিচায়ক। আনোয়ার
চৌধুরীর উপর
বোমা হামলা, ২১ আগস্ট
বোমা হামলা, জেএমবি’র
দেশব্যাপী বোমা হামলার
পর ইন্টারপোল, এফবিআই,
স্কর্টল্যান্ড ইয়ার্ডের
আগমনের সময় বাংলাদেশ ও
ভারতের কিছু গণমাধ্যমের
তরফে ভারতীয়
গোয়েন্দা সংস্থাকে বাংলাদেশে আসার
অনুমতি দানের
দাবি তোলা হয়েছিল।
কিন্তু সেসময় এ দাবি গৃহীত
হয়নি।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত
রিপোর্ট অনুযায়ী,
বাংলাদেশ ৪১ জন চিহ্নিত
সন্ত্রাসীর
তালিকা ভারতীয়
গোয়েন্দা সংস্থার
হাতে দিয়ে জানিয়েছে,
এরা ভারতে লুকিয়ে আছে।
বাংলাদেশ তরফ
থেকে বিষয়টি তদন্তে এ
দেশীয়
একটি গোয়েন্দা প্রতিনিধি দলের
ভারত সফরের উপর
গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
বিষয়টিতে ভারত সরকার
কতটুকু সদিচ্ছার পরিচয়
দিতে সক্ষম হয়
তা দেখতে ১৬ কোটি মানুষ
প্রতীক্ষা করবে।
তবে বাংলাদেশের এই
দাবি আরো অনেক আগেই
তোলা উচিত ছিল। কেননা,
ভারত তথা বাংলাদেশ
সীমান্তবর্তী ভারতীয়
রাজ্যগুলো দীর্ঘদিন ধরেই
বাংলাদেশী সন্ত্রাসীদের
অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
স্বাধীনতার পর
থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বঙ্গভূমি আন্দোলনের
সন্ত্রাসীরা কলকাতায়
অফিস খুলে কার্যক্রম
পরিচালনা করে চলেছে।
১৯৭৩ সালে পার্বত্য
চট্টগ্রামকে একটি স্বাধীন
জুম্মল্যান্ড প্রতিষ্ঠার
দাবিতে আন্দোলনকারী শান্তিবাহিনীর
সদস্যরা পশ্চিমবঙ্গ ও সেভেন
সিস্টার্সে আশ্রয়
পেয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিব নিহত হওয়ার পর
প্রতিবাদে বাংলাদেশের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ
ঘোষণাকারী কাদের
সিদ্দিকীর বাহিনীও
ভারতে আশ্রয় পেয়েছিল।
ভারতীয়
গোয়েন্দা সংস্থার
সাবেক কর্মকর্তাদের
লেখা বই
থেকে জানা যায়, এসব
সন্ত্রাসী ও
বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকা-
শুধু ভারতের ভূমিতে আশ্রয় নয়,
ভারত সরকার কর্তৃক
পৃষ্ঠপোষকতাও পেয়েছে।
এর বাইরে বাংলাদেশের
রাজনৈতিক ও সাধারণ
সন্ত্রাসীরাও
যেকোনো অপরাধ
করে বিচার
এড়াতে বাংলাদেশ
সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে গা-
ঢাকা দিয়ে থাকে। অনেক
ক্ষেত্রে তারা বছরের পর
বছর ধরে সেখানে বসবাস
করে, বিয়েশাদি করে,
ব্যবসাপাতি করে রীতিমত
সংসারপাতে।
বাংলাদেশের নিষিদ্ধ
সন্ত্রাসী সংগঠন হরকাতুল
জেহাদের কর্মীদের এক
বিরাট অংশ ভারতের
বিভিন্ন
মাদ্রাসা থেকে লেখাপড়া করা।
অন্যদিকে জামায়াতুল
মুজাহিদীন বাংলাদেশ
বা জেএমবির
সাথে ভারতের সম্পর্ক
অনেক পুরাতন।
জেএমবির ভারত কানেকশন
জেএমবির
প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আবদুর
রহমান,
শূরা সদস্যরা ধরা পড়ার পর
টিএফআই সেলের
জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবির
ভারত কানেকশন
নিয়ে অনেক তথ্য প্রকাশিত
হয়েছিল। সেসব তথ্য
বিস্তারিত
আকারে প্রকাশিত
হয়েছে বর্তমান লেখকের
‘জঙ্গীবাদ : বাংলাদেশ
কেন টার্গেট’ বইয়ে।
সেখানে বলা হয়েছে,
‘১৯৯৬ সালে ঢাকার পল্টনস্থ
এশিয়া ড্রাগন ট্রাভেল
এজেন্সি অফিসে মাওলানা ইসহাকের
মাধ্যমে ভারতীয় মোস্ট
ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী আবদুল
করিম টুন্ডা প্রথম আবদুর
রহমানের সাথে সাক্ষাৎ
করে। ঐ বৈঠকে ইসহাক
সাহেবকে আবদুর
রহমানকে ওলিউরের ভাই
বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। এক
সপ্তাহ
পরে যাত্রাবাড়ি বটতলা মাদ্রাসা ছাত্রদের
মেসে আবদুর রহমানের
সাথে টুন্ডা দ্বিতীয়
বারের মতো সাক্ষাৎ
করে এবং জিহাদের
বিষয়ে আলোচনা হয়। ঐ
বৈঠকে টুন্ডা আবদুর
রহমানকে প্রশিক্ষণের
ব্যাপারে সহায়তার
আশ্বাস দেয়। তারা উভয়েই
যোগাযোগের জন্য ঐ
মাদ্রাসার ছাত্র
সানাউল্লাহকে ব্যবহার
করতো। ১৯৯৭ সালে আবদুর
রহমান টুন্ডার
সাথে চট্টগ্রামের
ঝাউতলা আহলে হাদিস
মসজিদে গমন
করে এবং এখানে প্রশিক্ষণের
ব্যাপারে বিস্তারিত
আলোচনা করে।
টুন্ডা কৌশলে আবদুর
রহমানকে প্রশিক্ষণের জন্য
ভারতের
পরিবর্তে পাকিস্তানে যেতে রাজি করে।
এ ব্যাপারে সব
ব্যবস্থা করে দেবে জানিয়ে আবদুর
রহমানকে ভিসা-পাসপোর্ট
তৈরি করার নির্দেশ দেয়। ঐ
বছরই আবদুর রহমান টুন্ডার
ব্যবস্থাপনায়
দিল্লী হয়ে পাকিস্তানে যাবার
লক্ষ্যে বেনাপোল-
হরিদাসপুর সীমান্ত
দিয়ে ভারতে প্রবেশ
করে এবং দুই বছর
আগে থেকেই কলকাতায়
বসবাসকারী তারই ভাই
ওলিউরের বাসাই ওঠে।
কিন্তু সে যাত্রায় আবদুর
রহমানের পক্ষে আর
পাকিস্তান যাওয়া সম্ভব
হয়নি।
এখানে উল্লেখ্য, আবদুর
রহমানের ভাই ওলিউর রহমান
১৯৯৬ সাল থেকে টুন্ডার
ব্যবস্থাপনায় মাদ্রাসায়
লেখাপড়ার
ছদ্মাবরণে ভারতের
কলকাতায় দুই বছর অবস্থান
করছিল।
জেএমবিকে অপারেশনে নামিয়ে দিয়ে টুন্ডা রহস্যজনকভাবে আর
তাদের সাথে যোগাযোগ
করেনি। ২০০২ সালে টুন্ডার
সাথে আবদুর রহমানের শেষ
সাক্ষাৎ হয়। তবে ১৭ আগস্ট
বোমা হামলার আগে আবদুর
রহমান টুন্ডার
সাথে সাক্ষাৎ
করতে চেয়েছিল কিন্তু সফল
হয়নি।
১৯৯৮
সালে প্রথমদিকে টুন্ডা লেখাপড়ার
ছদ্মবরণে হাফেজ মাহমুদ ও
আবদুল মতিনকে মুর্শীদাবাদ
জেলার লালগোলায়
প্রেরণ করে।
ভারতে যাওয়ার পর
তারা কলকাতায়
মিটিয়াব্রুজ থানার
হালদারপাড়া আহলে হাদিস
মসজিদের খতীব আইনুল
বারীর সঙ্গে যোগাযোগ
করে। পরবর্তীতে আইনুল
বারীর সহযোগিতায়
নদীয়ার পলাশী মাদ্রাসায়
ভর্তি এবং ৮ মাস
সেখানে লেখাপড়া করে।
এ সময় হাফেজ মাহমুদ
নদীয়ার দেবগ্রামের
বাসিন্দা জনৈক লবির’র
বাড়িতে লজিং থাকতো।
১৭ আগস্ট বোমা হামলার
অভিযোগে সাতক্ষীরা থেকে গ্রেফতারকৃত
ভারতীয় নাগরিক নাসির
উদ্দিন দফাদার বলে,
‘আমি ভারতীয় নাগরিক।
আমি ভারতের
একটি মাদ্রাসায়
লেখাপড়া করে ইমামতি করতাম।
সে সময় ভারতীয়
গোয়েন্দা সংস্থার জনৈক
কমকর্তার সাথে আমার
পরিচয় হয়।
আমি গোয়েন্দা সংস্থার
চাকরি নেই
এবং ট্রেনিং গ্রহণ করি।
অস্ত্র চালনা থেকে শুরু
করে কমান্ড হামলা পর্যন্ত
ট্রেনিংপ্রাপ্ত হবার পর
আমাকে ১৯৯১
সালে বাংলাদেশে এসে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে যোগদান
করে তার রোকন হবার
নির্দেশ দেয়া হয়।
আমি নির্দেশ মোতাবেক
জামায়াতে যোগদান
করি। ১৯৯৫
সালে আমাকে আহলে হাদিসের
সাথে যোগদানের নির্দেশ
দেওয়া হয়।
আমি আহলে হাদিসে যোগদান
করি। ২০০৩
সালে আমাকে শায়খ আবদুর
রহমানের জামায়াতুল
মুজাহিদীনের
সাথে যোগদান
করতে বলা হয়। আমি নির্দেশ
মোতাবেক তার
দলে যোগদান
করি এবং বিভিন্ন জায়গায়
ক্যাডারদের ট্রেনিং দিই।
আমার পরিবার ভারতেই
আছে, ১৭ আগস্ট
বোমা হামলায়
আমি সরাসরি জড়িত।’ আমার
দেশ (২৬-০৮-২০০৫)।
আরেক ভারতীয় নাগরিক
ডা. এসএম মাসুদ বিন ইসহাক
গ্রেফতার
হলে পুলিশকে সে সিরিজ
বোমা হামলার বিস্তারিত
তথ্য দেয়। ‘র’-এর
নির্দেশে সে জেএমবিতে যোগ
দেয় এবং ২০০৩
সালে জেলা আমিরের
পদপ্রাপ্ত হয়। নয়াদিগন্ত
(১৯-০৯-২০০৫ )।
বোমা হামলার
ব্যাপারে সে পুলিশকে চঞ্চল্যকর
তথ্য দেয়। ভারতীয় আরেক
নাগরিক গ্রেফতার হবার পর
পাগলের ভান
করে যাচ্ছিল।
পরবর্তীকালে সে ভয়ঙ্কর সব
তথ্য পরিবেশন করে।
হাইকোর্ট মাজার
থেকে গ্রেফতারকৃত আরেক
ভারতীয় নাগরিক সিরিজ
বোমা হামলার
সাথে জড়িত। সরকারের
স্পর্শকাতর স্থাপনার উপর
বোমা হামলার দায়িত্ব
দিয়ে তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল
বলে জানা গেছে।
ভারতীয় নাগরিক
গিয়াসউদ্দীন ও নাসির
উদ্দিনের কাছ
থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়,
১৭ আগস্ট বোমা হামলার
পরিকল্পনায় ছিল উত্তর
চব্বিশ পরগণার
মাওলানা মহসিন
ভাদুরিয়া, রামেশ্বর প্রসূন
এবং আরো অনেকে।
উত্তরের চব্বিশ পরগণার
রামেশ্বর প্রসূনের
তত্ত্বাবধানে পরিচালিত
৯টিরও
বেশি ট্রেনিং ক্যাম্পে বাংলাদেশবিরোধী ট্রেনিং চালু
আছে। ওইসব ক্যাম্পেই ১৭
আগস্ট বোমা হামলার
হোমওয়ার্ক সম্পন্ন হয়
বলে জানা গেছে।
২০০২ সালের
প্রথমদিকে বেলাল (৪০),
সালাহউদ্দীন (৩০) ও
মোতাসিম (২৭) নামে তিন
ভারতীয় নাগরিক
মুর্শীদাবাদে জেলার
মালদহ
থেকে গোদাগাড়ি সীমান্ত
দিয়ে রহস্যজনকভাবে স্ব-
উদ্যোগে বাংলাদেশের
দিনাজপুরে আসে।
সালাহউদ্দিন ও মোতাসিম
মুর্শীদাবাদ জেলার
পানব্রুজ জঙ্গীপুরের
বাসিন্দা। এ সময় তারা শুধু
শূরা সদস্য খালেদ
সাইফুল্লার
সাথে দেখা করে ভারতে ফিরে যায়।
পরবর্তীতে তাদের আগ্রহ
অনুযায়ী একই বছর খালেদ
সাইফুল্লাহর মধ্যস্থতায়
টাঙ্গাইলে মোল্লা ওমরের
বাড়িতে আবদুর রহমানের
সাথে তাদের দেখা হয়।
সাক্ষাতে তারা আবদুর
রহমানের কাছে তার
জিহাদী কার্যক্রমের
সর্বপ্রকার সাহায্যের
নিশ্চয়তা দেয়
এবং জেএমবির ২-১ জন
সদস্যকে ভারতে প্রেরণের
অনুরোধ জানায়।
সে মোতাবেক তাদের
ফিরে যাবার কিছুদিন পর
আতাউর রহমান সানী ও
হাফেজ মাহমুদ মালদহে গমন
করে। এ সময়
তারা সাংঠনিক
কারণে মালদহে জেএবির
একটি শাখা খোলার
প্রস্তাব
দিলে মালদহকে জেএমবির
৬৫ তম সাংগঠনিক জেলার
মর্যাদা দিয়ে বেলালকে জেলা দায়িত্বশীল
নিয়োগ করা হয়। এ সময়
ভারতীয় পক্ষ
থেকে বাংলাদেশে জিহাদ
পরিচালনার জন্য অস্ত্র ও
বিস্ফোরক সরবরাহের
প্রস্তাব দেয়া হয়।
২০০৩ সালে বেলাল
জেএমবির বিভিন্ন
নেতৃবৃন্দের
সাথে যোগাযোগ
করে জানায়, ভারত
থেকে এক-দেড় হাজার
টাকা মূলের ওয়ান শুটার
গান সরবরাহ করা যাবে।
জেএমবি নেতৃবৃন্দ
নিজেদের
মধ্যে আলোচনা পর আরিফ
(চাঁপাইনবাবগঞ্জ), শিহাব
(গাইবান্ধা)
এবং তরিকুলের
(গ্রেফতারকৃত) মাধ্যমে অস্ত্র
ও বিস্ফোরকগুলো সংগ্রহ
করে।
বলতে গেলে একবারে নামমাত্র
মূল্যে জেএমবি ভারত
থেকে এই অস্ত্র ও
গোলাবারুদগুলো সংগ্রহ
করে।
২০০৪ সালের
শেষদিকে শূরা সদস্য
হাফেজ মাহমুদ মালদহে গমন
করে। এ সময় বেলালের
সাথে তার সম্পর্কের
টানাপড়েন শুরু
হলে তিনি জেলা দায়িত্বশীল
পদ
থেকে বেলালকে সরিয়ে রফিককে নিয়োগ
করেন। কিন্তু হাফেজ মাহমুদ
তাতে ব্যর্থ হন। মালদহ
থেকে জেএমবির কার্যক্রম
পরিচালনার জন্য
প্রতিমাসে মুর্শীদাবাদ
থেকে কেন্দ্রীয়
ফান্ডে ইয়ানত
হিসেবে ১০-১২ হাজার
টাকা প্রদান করা হতো।
জেএমবি ভারত
থেকে যে পাওয়ার জেল ও
ডেটোনেটর
নিয়ে আসে তার
সবগুলো প্যাকেটের
গায়ে ‘ইন্ডিয়া এক্সপ্লোসিভ
কোম্পানি লি. গোমিয়া’
লেখা আছে।
কোম্পানিটি ভারত সরকার
নিয়ন্ত্রিত
একটি কোম্পানি। সেই
কোম্পানি থেকে এই বিপুল
পরিমাণ পাওয়ার জেল ও
ডেটোনেটর
বাংলাদেশে রফতানি হলো আর
কর্তৃপক্ষ কিছুই
জানলো না তা অবিশ্বাস্য।
বেলালসহ যেসব ভারতীয়
নাগরিক
বাংলাদেশে এসেছিল
তারা টার্গেট
করে বাংলাদেশে এসে শায়খ
রহমানের সাথে সাক্ষাৎ
করে জেএমবির
সাথে কর্মকা-
সম্পর্কে অবহিত ছিল। আর এ
কারণেই তাদের
পক্ষে নামমাত্র
মূল্যে ভারতের
সরকারি কোম্পানি থেকে বিপুল
পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক
রফতানি সম্ভব হয়েছে।
(জঙ্গীবাদ : বাংলাদেশ
কেন টার্গেট,
মেহেদী হাসান পলাশ,
পরিবেশক-
মদীনা পাবলিকেশন্স, ৭৪-৭৮
পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।
বাংলাদেশে ভারতবিরোধী রাজনীতির
একটি ধারা রয়েছে।
ভারতপ্রেমীরা তাকে ‘জুজু’
বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন।
কিন্তু গত কয়েক বছরে এই
‘জুজুকে’ ভারতেও
থাবা বিস্তার
করতে দেখেছি। বিশেষ
করে বিগত
নির্বাচনে ভারতের
কেন্দ্রীয় ও বাংলাদেশ
সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর
রাজনীতিবিদদের বক্তব্য
থেকে এ কথা সুস্পষ্ট।
ভারতের গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমবঙ্গ
রাজ্যে বামফ্রন্টের
দীর্ঘদিনের রাজত্বের
অবসান
করে কংগ্রেসকে উৎখাত
করে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের
তৃণমূল কংগ্রেস
যেভাবে খুঁটি গেড়েছে তা সহসা উপড়ানো সম্ভব
তা মনে হচ্ছে না। আর এতেই
প্রমাদ গুণছে বামফ্রন্ট,
কংগ্রেস
এমনকি বিজেপিও।
তারা মমতার জনপ্রিয়তায়
ধস নামিয়ে পশ্চিমবঙ্গ জয়
করতে মরিয়া।
এক্ষেত্রে তাদের তুরুপের
তাস বাংলাদেশ ও
জঙ্গীবাদ। মমতা যেহেতু
তার রাজনৈতিক
ক্যারিশমা দিয়ে রাজ্যের
সংখ্যালঘু মুসলিমদের মন জয়
করতে সক্ষম হয়েছেন তাই
তার গায়ে জঙ্গীবাদের
কালিমা লেপন
করতে উঠে পড়ে লেগেছে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক
শক্তিগুলো। সারদার চিট
ফান্ড কেলেঙ্কারির
সাথে মমতা, বাংলাদেশ,
জামায়াত ও জঙ্গীবাদ
জড়িয়ে ইলেকশনের পরপরই
প্রথম আঘাত হানা হয়।
বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস সমর্থিত
পত্রিকাগুলো এই
প্রোপাগান্ডায়
ধুনো দিয়েছে। একবার
বলা হয়েছে, জামায়াতের
সাথে সমঝোতা করে মমতা ক্ষমতায়
বসেছে। আবার
বলা হয়েছে,
বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরিতে সারদা হাজার
কোটি টাকা দিয়েছে জামায়াতকে।
এই সারদার মালিক তৃণমূল
কংগ্রেসের এমপি কুণাল
ঘোষ। কিন্তু ভারতীয়
ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন
এজেন্সি দীর্ঘদিন
ধরে তদন্ত করেও সারদার
সাথে জামায়াতের
কোনো সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ
করতে না পারায়
আনন্দাবাজারীদের প্লট
মাঠে মারা যায়। এরপরই
ঘটে খাগাড়গড়ে বোমা বিস্ফোরণ।
নতুন ফিড পেয়ে একই
শক্তি পুনরায়
মাঠে নামে মরিয়া হয়ে।
তারা এই ঘটনার সাথে শুরু
থেকেই
বাংলাদেশী সন্ত্রাসীদের
জড়িয়ে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে।
বলা হচ্ছে, এসব সন্ত্রাসীর
আসল টার্গেট বাংলাদেশ।
তারা বাংলাদেশে নানা অন্তর্ঘাতমূলক
ঘটনা ঘটানোর জন্য
পশ্চিমবঙ্গে বোমা তৈরি ও
প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। এমনকি এও
বলা হয় যে, জঙ্গীদের মূল
টার্গেট ছিল,
বাংলাদেশের দুই শীর্ষ
নেত্রী খালেদা জিয়া ও
শেখ
হাসিনাকে হত্যা করা। অথচ
এনআইএ তদন্তে এমন
কোনো প্রমাণই
পাওয়া যায়নি। এমনকি এই
বোমা হামলার
সাথে বাংলাদেশী জঙ্গী জড়িত
থাকার ঘটনাটিও এখন পর্যন্ত
এনআইএ’র ধারণা করা ও
সন্দেহ করার
পর্যায়ে রয়েছে বলে বাংলাদেশ
সফরকারী এনআইএ’র টিমের
সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু
আনন্দবাজারী গোষ্ঠী এসব
মানতে রাজি নয়। তাদের
প্রোপাগান্ডা মেশিন
এখনো চালু।
সন্দেহ নেই তাদের আসল
টার্গেট
মমতা বন্দোপাধ্যায়
এবং এটি ভারতের
অভ্যন্তরীণ রাজনীতির
পাশা খেলা। আর এই
খেলায় ঘুটি হিসেবে দাঁড়
করানো হয়েছে বাংলাদেশ
ও পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের।
সে কারণে তৃণমূল কংগ্রেস
এমপি ইমরান
বিবিসিকে বলতে বাধ্য
হয়েছেন, মুসলমান বলেই
তাকে টার্গেট
করা হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো পর্যন্ত
ভারতীয় অভ্যন্তরীণ
রাজনীতির
নোংরা পাশা খেলায়
নিজেদের সমর্পণ করেনি।
বাংলাদেশের পুলিশ ও
র্যাব কর্মকর্তারা অন্য অনেক
সময়ের মতো ভারতীয়
প্রচারণার
সাথে নিজেদের জড়িত
না করে,
আনন্দবাজারী তালে সুর
না মিলিয়ে নিজেদের
মতো করে তথ্যগুলো যাচাই-
বাছাই
করে দেখতে চেয়েছে।
বাংলাদেশী গোয়েন্দা সংস্থা ও
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর
এই অবস্থান প্রশংসাযোগ্য।
এদিকে সংবাদপত্রে প্রকাশিত
খবরে জানা গেছে,
এনআইএ’র তদন্তকারী দল
ধারণা করছে ময়মনসিংহের
ত্রিশালে পুলিশের
গাড়িতে হামলা করে যারা জেএমবি সন্ত্রাসীদের
ছিনিয়ে নিয়ে গেছে তারা বর্ধমানের
এই বোমা হামলায় জড়িত
থাকতে পারে।
অভিযোগটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বের
সাথে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
কেননা, গত ১৭ নভেম্বর প্রথম
আলো পত্রিকায় প্রকাশিত
এক রিপোর্টে বলা হয়েছে,
ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক
পুলিশকে হত্যা করে প্রিজন
ভ্যান থেকে তিন
জঙ্গিকে ছিনতাইয়ের
ঘটনায় ভারত থেকে আসা দুই
ব্যক্তিও জড়িত ছিল
বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর
গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল
ইসলামের বরাতে ওই
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই
ঘটনায় লেকু ও সাজিদ
নামের দুই ব্যক্তি জড়িত
ছিলেন
বলে তদন্তে জানা গেছে।
এরা দু’জনই ভারত
থেকে এসে দুই
জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে আবারও
ভারতে ফিরে যান।
অতীতেও বাংলাদেশের
বিভিন্ন আলোচিত
বোমা হামলায় ভারত
থেকে আসা কিছু রহস্যময়
ব্যক্তির অবস্থান শণাক্ত
করেছিল বাংলাদেশের
তদন্ত সংস্থা। কিন্তু
বিষয়গুলো আরো রহস্যময়তার
কারণে সামনে আর
এগোয়নি।
বাংলাদেশের
স্থায়ী পররাষ্ট্র
নীতি হচ্ছে, বাংলাদেশ
তার
ভূখ-ে প্রতিবেশী কোনো দেশের
বিরুদ্ধে কোনো তৎপরতা পরিচালিত
হতে দেয় না। তবে এখন সময়
এসেছে,
প্রতিবেশী কোনো দেশের
ভূখ-েও যেন
বাংলাদেশবিরোধী কোনো তৎপরতা পরিচালিত
হতে না পারে তা নিশ্চিত
করা। এ
বিষয়টি বাংলাদেশকে সর্বাধিক
গুরুত্ব
দিয়ে বিবেচনা করতে হবে এবং জাতীয়
স্বার্থে প্রয়োজনীয়
যে কোনো পদক্ষেপ
গ্রহণে দৃঢ় থাকতে হবে।
email:[email protected]
©somewhere in net ltd.