নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডানে গেলে জঙ্গী বামে গেলে নাস্তিক; দ্বন্দ্বেতে নেই বাপু আছি হেথা মাঝ ঠিক।
খালেদা শাহরিয়ার। ডাক নাম ডোরা। ডোরা রহমান নামেই তিনি অধিক পরিচিত। তিনি বাংলাদেশের প্রথম তিনজন নারী প্রকৌশলীদের অন্যতম। একজন পুরোধা, একজন দিগগজ, একটি বাতিঘর, সর্বোপরি একটি ইতিহাস। সংগ্রামী নারীদের পথিকৃত কিংবদন্তি এই মহিয়সী নারী ১৯৪৬ সালের ৮ই নভেম্বর এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা নিজেই ছিলেন আরেক দিগগজ পুরকৌশলের অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ কবিরউদ্দিন। বিয়ে করেন ১৯৬৮ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারী তারই সহপাঠী ইঞ্জিনিয়ার আমিনুর রহমানকে (তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম ইঞ্জিনিয়ার দম্পতি)। তাঁর আপন দুই ভাই ইঞ্জিনিয়ার, কন্যা ইঞ্জিনিয়ার, মেয়ে জামাতা ইঞ্জিনিয়ার, বড় নাতি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে, সেই ধারাবাহিকতায় ছোট নাতিটিও ঐ ইঞ্জিনিয়ারই হবে মোটামুটি জানা কথাই (ইন শা আল্লাহ),,, এক কথায় ইঞ্জিনিয়ারের ঘরবসতি! খালেদা শাহরিয়ারের পারিবারিক আভিজাত্য, শিক্ষাজীবনের সংগ্রাম, বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন, ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনের অবদান এবং প্রাপ্তি কেবল শুনেছি আর বিমোহিত হয়েছি। বিস্মিত হয়েছি। তাঁর সম্বন্ধে এত শুনেছি এত শুনেছি যে তাঁকে দেখার এবং পরিচিত হবার দুর্বার আকর্ষন অনুভব করেছি। বিদগ্ধজনদের সঙ্গও যে স্বর্গপ্রাপ্তি। সে পরিচিতির সুযোগ ছিলো কিন্তু সময় হয়নি। ইচ্ছে ছিলো গত বছরের ফেব্রুয়ারী কিংবা মার্চে দেখা করবো কিন্তু তার আগেই মরনব্যাধি ক্যান্সারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৈশ্বিক মহামারী কোভিড আক্রান্ত হয়ে (স্কয়ার হাসপাতালের চরম অব্যবস্থাপনা, অবহেলা এবং অপচিকিৎসায়) ২০২১ সালের ২০শে জানুয়ারী আজকের এইদিনে তিনি ইন্তেকাল করেন। সব হারানোই বেদনার তবু কিছু কিছু মৃত্যূ বড্ড নির্মম প্রকট হয়ে জানান দেয় হারানোর শূণ্যতা কতটা সুতীব্র। সেই শূণ্যতার সুতীক্ষ্ণ হাহাকার এবং হাজারও শোক স্মরণের ভীড়ে তাঁকে নিয়ে নতুন করে লেখা ভারি দুষ্কর। বরং সেই বিবেচনায় তার নিজ কন্যার স্পর্ষি লেখনীর চেয়ে প্রাণবন্ত আর কিইবা হতে পারে? উল্লেখ্য তাঁর কন্যা আমাদের সামহোয়ারইন'এর সহব্লগার কবি শিখা রহমান। তাই আজকের দিনে না হয় শিখা রহমানের লেখনীতেই নতুন করে স্মরিত হোন আরেকবার কিংবদন্তি আলোকবর্তিকা 'খালেদা শাহরিয়ার' সকলের প্রিয় 'ডোরা আপা'-
আমার মাঃ তার সুবিশাল কর্মজীবনের এক ঝলকঃ
********************************************
মা আকাশবাড়িতে পাড়ি জমিয়েছেন তিন সপ্তাহ পেরিয়েছে মাত্র। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে মা এসে মাথায় হাত রাখবেন না…খুব মনখারাপের সময়ে জড়িয়ে ধরে বলবেন না “সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস!!” এই কঠিন সময়ে উনাকে নিয়ে লেখা কঠিন। তারপরেও লিখতেই হবে জানি। কারণ তিনি শুধুই আমার ‘মা’ নন, উনি পুরো বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষের অনুপ্রেরণা।
.
আমার মা, খালেদা শাহারিয়ার কবির, ‘ডোরা’ ডাকনামেই অনেকের কাছে পরিচিত এবং বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রকৌশলী। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয় (ইপুয়েট, বর্তমানে বুয়েট) থেকে ১৯৬৮ সালে পুরকৌশল বিভাগে প্রথম শ্রেণী পেয়ে পাশ করেন।
.
তিনি যেসময়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, সে সময় নারীদের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে নিরুৎসাহিত করা হতো কেননা পড়াশুনার অংশ হিসেবে সার্ভে ক্যাম্পে তাদেরকে মাসখানেক বাড়ির বাইরে থাকতে হতো। সেজন্য মেয়েদেরকে স্থাপত্য বিভাগে পড়তে উৎসাহিত করা হতো। মা গল্প করতেন“ভাগ্যের খেলায় আর্কিটেকচার বিভাগের ভর্তি পরীক্ষার দিন আমার খুব জ্বর হয়। তবে এর কিছুদিন আগে আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ১৩০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় হই। এতে বাধ্য হয়ে আমার ভর্তির ব্যাপারটি কর্তৃপক্ষ খুব গুরুত্বের সাথে নেয়।” “Another new career for the women of Pakistan has been pioneered by East Pakistani girls, and once again they are from the East Pakistan University of Engineering and Technology. Out of over 113 students who graduated from the Department of Civil Engineering this year two of them are girls -- the first engineers of the province and the first of their kind in Pakistan ...,” – প্রকৌশল শিক্ষায় মেয়েদের পথিকৃৎ খালেদা শাহারিয়ার কবিরের কর্মজীবনের শুরু ১৯৬৮ সালের ১৪ই ডিসেম্বর মর্নিং নিউজে এভাবেই লেখা হয়েছিলো।
.
মায়ের কর্মজীবনের ইতিহাস প্রায় চার দশকের। চাকুরী জীবনের শুরু হয় ১৯৬৯ সালে “মকবুলার রহমান এন্ড এসোসিয়েটস” নামের ইঞ্জিনীয়ারিং কন্সাল্টিং ফার্মে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯৭০ সালে তদানীন্তন ইপিওয়াপদায় (বর্তমানে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাপাউবো) সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। তিনিই ছিলেন তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের নিযুক্ত পূর্ব পাকিস্তানের সর্বপ্রথম নারী প্রকৌশলী। মায়ের দেয়া সাক্ষাৎকার থেকে উদ্ধৃত করছি “বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন না কিন্তু আমিই ছিলাম পুরো মতিঝিল এলাকায় কর্মজীবী একমাত্র নারী। অবশ্য এর বাইরে কিছু ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান মেয়েও কাজ করতো, তবে তারা রিসিপশনিস্ট হিসেবে কাজ করতো।“ ১৯৭৫ সালে তিনি থাইল্যান্ডের ব্যাংককস্থ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এ আই টি) থেকে পানিসম্পদ প্রকৌশলে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। প্রকৌশলে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনিই ছিলেন মেয়েদের প্রথম প্রতিনিধি, আবার বাংলাদেশের মেয়েদের মধ্যে তিনি প্রথম প্রকৌশল বিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।
.
চাকুরী ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা, মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে খুব দ্রুত মা বাংলাদেশের শীর্ষ ও প্রতিভাবান পানিসম্পদ প্রকৌশলীদের মাঝে স্থান করে নেন। ১৯৭৮ সালে উনি এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনীয়ার পদে, ১৯৯৪ সালে সুপারেনটেন্ডিং ইঞ্জিনীয়ার পদে এবং ২০০০ সালে প্রধান প্রকৌশলী (চীফ ইঞ্জিনীয়ার) পদে উন্নীত হন। ২০০১ সাল পর্যন্ত উনি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নকশা পরিদপ্তরে সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০০২ সালে প্রকৌশলী খালেদা অতিরিক্ত মহাসচিব (Additional Director General, ADG O&M) হিসেবে দ্বায়িত্বভার গ্রহন করেন এবং ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে বাপাউবো থেকে অবসর গ্রহন করেন। সরকারী প্রকৌশল সংস্থায় এত উচ্চ পদে উন্নীত হওয়া উনিই প্রথম মহিলা প্রকৌশলী ছিলেন।
.
বাংলাদেশের পানিসম্পদ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ও বিশাল গর্বের প্রকল্প উত্তরবঙ্গের তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প। সেসময়ে পানিসম্পদ ক্ষেত্রে দেশের এই বৃহত্তম প্রকল্পটি পুরোপুরি ডিজাইন করেছিলেন বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়াররা। প্রকৌশলী খালেদা এই প্রকল্পের মুখ্য ডিজাইনারদের মধ্যে একজন ও তিস্তা ব্যারেজ ডিজাইনে তিনি অনন্য মেধার সাক্ষর রাখেন। স্কুলে পড়ার সময় থেকে বুয়েটে পড়া পর্যন্ত যখনই সুযোগ হয়েছে মায়ের সাথে তিস্তা ব্যারেজ সাইট পরিদর্শনে গিয়েছি। মা এতো সহজ করে সবকিছু বুঝিয়ে দিতেন যে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া এই আমিও প্রকল্পের খুঁটিনাটি বুঝতে পারতাম। অবশ্য দুই প্রকৌশলীর একমাত্র সন্তান হওয়ার সুবাদে প্রকৌশলবিদ্যায় ব্যবহৃত অনেক পরিভাষা ও শব্দাবলীর সাথে পরিচিত ছিলাম। পানিসম্পদ কৌশলে আমার ডক্টরেট ডিগ্রী নেয়ার পেছনে অনুপ্রেরণা ‘মা’। ছোটবেলা থেকে মায়ের কাছে থেকে জেনে গিয়েছিলাম যে প্রকৌশল বিদ্যার মাধ্যমে মানুষের জীবনের উন্নতি করা সম্ভব এবং সেটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করার সময়ে মানুষের জন্য মায়ের আবেগ আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছে। পুরকৌশল বিভাগ বেছে নেয়ার পেছনে আমার উদ্দেশ্য ছিলো মূলত কাজের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখা।
.
বাবা মোঃ আমিনুর রহমানের সাথে ১৯৬৯ সালে মায়ের সংসারজীবনের শুরু। ওনারা তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম প্রকৌশলী দম্পতি। বাবাও পুরকৌশলী ছিলেন, তবে উনি স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনীয়ারিং নিয়ে কাজ করতেন। একই পেশায় থাকার জন্য মায়ের অসুবিধাগুলো সহজেই বাবা বুঝে নিতেন। বাবাও বহুবার মায়ের সাথে প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়েছেন। মা অসংখ্য সেমিনার ও ওয়ার্কশপে যখন দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিদেশে ভ্রমন করেছেন, বাবা সংসার ও আমাকে সামলে রেখেছেন। পরষ্পরের সম্পূরক ছিলেন দুজন। দুজনেই খুব মিশুক আর আড্ডাবাজ ছিলেন। আমাদের পারিবারিক সময়গুলো গান-কবিতা-আড্ডা পরিবার-পরিজন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে খুবই আনন্দময় ছিলো। মায়ের যে ব্যাপারটা আমাকে তার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মুগ্ধ করেছে, সেটা হচ্ছে তার সার্বজনীন গ্রহনযোগ্যতা। উনি অবশ্য এই গ্রহনযোগ্যতা উনার দক্ষতা, পরিশ্রম ও সততা দিয়ে অর্জন করেছেন। মায়ের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা খুব সহজাত ছিলো। কথা বলামাত্রই সবাই বুঝে যেতো যে উনিই একমাত্র নেতৃত্ব দেয়ার উপযুক্ত। মা অনায়াসেই মানুষকে বিশ্বাস করতেন। নেতৃত্ব ও আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতার গুণে খুব সহজেই উনি অলস বা অমনোযোগী অধীনস্থদের কাছে থেকেও কাজ আদায় করে নিতেন। অমায়িক, সদালাপী ও সবসময়েই হাস্যোজ্জ্বল এই মানুষটা ছোটবড় সকলের কাছেই খুব প্রিয় ও শ্রদ্ধার ছিলেন।
.
প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে এছাড়াও তিনি Dhaka Integrated Flood Protection Project, Buriganga Right Bank Project ও অন্যান্য অনেকগুলো প্রকল্প ডিজাইন ও বাস্তবায়নের সাথে যুক্ত ছিলেন। ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্প নিয়েও তিনি কিছু কাজ করার সুযোগ তার হয়েছে। অন্যান্য প্রকৌশলী সহকর্মীদের মতে বাপাউবোতে গত দু’তিন দশকে এমন সফল ও দক্ষ প্রকৌশলী বোর্ডের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে আর আসেননি। মায়ের সততা, কর্মদক্ষতা ও কাজের প্রতি নিষ্ঠা সুবিদিত ছিলো। আজও বাপাউবোতে “ডোরা আপা” কিংবদন্তী। এক ডাকে সবাই উনাকে চেনে।
.
মা বাংলাদেশ পানি ও বিদ্যুৎ প্রকৌশল সমিতির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কর্মক্ষেত্রে প্রকৌশলীদের জন্যে সুষ্ঠ নীতিমালা প্রনয়ণ ও অধিকার আদায়ের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। অবসর গ্রহণের পরে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী সমিতির (Retired Engineers Association, REA) প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। বিভিন্ন পানিসম্পদ প্রকল্পের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে সেমিনার পরিচালনা ও মতামত প্রদানে সহযোগিতা করেছেন। তিনি অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের পেনশন ও অন্যান্য অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ অবদান রেখেছেন। লায়ন্স ক্লাব সহ অন্যান্য অনেক সামাজিক সংগঠনেই মা খুব সক্রিয় ছিলেন। লিঙ্গ বৈষম্য মোচনের ব্যাপারে ও মহিলা প্রকৌশলীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন সংগঠনে উনি খুবই সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন।
.
উনি ড. জেড এইচ ভূইয়া ফাউন্ডেশন সায়েন্স এওয়ার্ড, আবু হোসেন সরকার স্মৃতি গুণীজন সংবর্ধনা পদক, Lions Club Distinguished Service Award, মুক্ত আকাশ সম্মাননা পদক, বৃহত্তর রংপুর কল্যান সমিতি ও সাদুল্লাপুর উপজেলা সমিতির সম্মাননা পদক, Women Architects, Engineers, Planners Association (WEAPA) Award, BUET Alumni Award সহ বাংলাদেশ পানি ও বিদুৎ প্রকৌশলী সমিতি, Institute of Engineers, Bangladesh (IEB) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন সম্মাননা ও পদক অর্জন করেছেন। তবে মায়ের সবচাইতে বড় অর্জন সহকর্মী, প্রকৌশলী ও মানুষের ভালোবাসা।
.
মানুষকে অনুপ্রাণিত করার, তাদের মাঝে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলার আশ্চর্য ক্ষমতা ছিলো মায়ের। যখনই সুযোগ হয়েছে সাধ্যমতো অন্যকে সাহায্য করেছেন মা। প্রতিদান প্রত্যাশা না করে এমন সাহায্য করতে খুব কম মানুষকেই দেখেছি আমি। She had a golden heart. বিশেষ করে নারী কর্মজীবীদের সাহায্য ও অধিকার আদায়ের জন্য সবসময় মাকে লড়াই করতে দেখেছি। পত্রপত্রিকায় মায়ের দেয়া সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করছি "মেয়েদের জীবনে পরিবর্তন এসেছে সত্য কিন্তু সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গীর আরো পরিবর্তন দরকার।…আমরা চাচ্ছি না পুরুষের অধিকার ছিনিয়ে নিতে। মেয়েদের যা প্রাপ্য সেটা যেন তারা পায় এটাই আমি মনে করি। যেটুকু আমার দরকার তাই চাই। আমার দরকার নেই পুরুষের মতো হবার, তাদের মতো চলার। মেয়েরা মেয়েদের মতো হবে, তাদের মতো চলবে। তারা নিজেদের যোগ্যতায়, দক্ষতায়, নিষ্ঠায় সুশৃঙ্খলভাবে যেন কর্তব্য পালন করতে পারে সেই অধিকার তাদের দিতে হবে। তাদের অধিকার মানবাধিকার।"
.
সাতান্ন বছর আগে ‘ডোরা’ যে লড়াই শুরু করেছিলেন, পরবর্তীকালে তারই অনুসরণে অন্য মেয়েরাও উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে এসেছেন। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গন ছাত্রীদের কলরবে মুখরিত। বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে নারী প্রকৌশলীরা আজ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। হাতা-খুন্তির বদলে দেশের উন্নয়নের নীল নক্সায় নিবিষ্ট নারীরা। মা ইতিহাসের অংশ হয়ে অনন্তকাল অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাবেন। “ডোরা আপা” কিংবদন্তী হয়ে থাকবেন নারীদের প্রকৌশল শিক্ষার পথিকৃৎ হিসেবে এবং অত্যন্ত দক্ষ, মেধাবী ও দেশের শীর্ষ প্রকৌশলী হিসেবে। সততা ও মানবতার কারণে মা অজস্র মানুষের ভালবাসায় অমর হয়ে থাকবেন।
.
মা যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন, যত্নে থাকুন। রাব্বিরা হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানী সাগিরা!! মা এই দেশটাকে, দেশের মানুষগুলোকে বড্ড ভালোবাসতেন। উনি যে সুন্দর ও স্বাবলম্বী দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা সত্যি হোক।
.
© শিখা রহমান (১২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২১)
খালেদা শাহরিয়ার ও তাঁর আদরের রাজকন্যা শিখা
তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম ইঞ্জিনিয়ার দম্পতি আমিনুর রহমান ও খালেদা শাহরিয়ার
ছবিতে বাংলাদেশের প্রথম দুজন নারী প্রকৌশলী। উনারা দুজনে পুরকৌশল বিভাগে ১৯৬৮ সালে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ছবিটি ১৯৬৪ সালে তৎকালীন ইপুয়েট (বর্তমানে বুয়েট) ক্যাম্পাসে তোলা। বামেঃ খালেদা শাহারিয়ার কবির ও ডানেঃ শিরিন সুলতানা চুমকি
বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রকৌশলীরা। বামে শিরিন সুলতানা (চুমকি), মাঝে মনোয়ারা বেগম, ডানে খালেদা শাহরিয়ার (ডোরা)
আজকের এই দিনে সর্বশক্তিমান আল্লাহ গাফুরুর রাহীমের কাছে মরহুমার আত্মার মাগফেরাত এবং সমুদয় সুকৃতির প্রতিদান হিসেবে জান্নাতুল ফিরদাউস কামনা করছি। আমিন।
ছবিঃ পারিবারিক সূত্রে প্রাপ্ত
২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:২২
কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: .
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
পাঠে কৃতজ্ঞতা প্রিয় সুহৃদ।
২| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৫২
জগতারন বলেছেন:
পড়ে খুব ভাল লাগলো !
এই ব্লগ লেখকের প্রতি অভিন্দন জানাই।
২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:২৪
কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: সুমন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
৩| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৫২
জগতারন বলেছেন:
পড়ে খুব ভাল লাগলো !
এই ব্লগ লেখকের প্রতি অভিন্দন জানাই।
২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:২৫
কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: আবারও ধন্যবাদ
৪| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।
৫| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:২২
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনা করি। বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো এই মহীয়সী রমনীর প্রতি। আর প্রিয় কবি শিখা রহমানের জন্য সমবেদনা জা্নাই। জননীর স্থান কে্উ পূরণ করতে পারে না। আর লেখককে অভিনন্দন। এই মহীয়সী রমনীর বিষয়ে দারুন একখানি পোস্ট লেখার জন্য।
৬| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:০৫
আমি তুমি আমরা বলেছেন: মরহুমার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। প্রকৌশলে পড়তে চাওয়া মেয়েদের জন্য তিনি অনুপ্রেরণা।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:২৪
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ওপাড়ে ভালো থাকুন ডোরা আন্টি।
পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।