নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখক, কলামিস্ট, [email protected]

কে এন এন লিংকু

লেখক, কলামিস্ট

কে এন এন লিংকু › বিস্তারিত পোস্টঃ

পৃথিবীতে অর্থনীতি এবং খাদ্য সমস্যা, মে-২০২২।

২১ শে মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২৮

বিংশ শতাব্দীতে সবচাইতে আলোচিত বিষয় ছিল জলবায়ু পরিবর্তন। এর মধ্যে হঠাৎ করে কোভিড এর দংশন, থেকে দুর্বল হয়ে ওঠা দেশগুলো যখন তাদের রুগ্ন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ব্যস্ত তখন অতর্কিতভাবে রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধ।

খুব সাধারণভাবে দেখলে একটা দেশের অর্থনীতি কি? জিডিপি দিয়ে এর পরিমাপ করা যায়। অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিক রাখা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সমুন্নত রাখা, এবং বৈদেশিক ঋণের বোঝা কমিয়ে ফেলা বা নিয়ন্ত্রণে রাখা। মোটামুটিভাবে একটা সুস্থ অর্থনীতির মাপকাঠি। সঠিক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যদি না থাকে। তবে মুদ্রাস্ফীতি হতে থাকে, বিভিন্ন জিনিস আমদানী করতে সরকারকে হিমশিম খেতে হয়। দেশের অর্থনীতিতে ধ্বস নামে। এভাবে আস্তে আস্তে মন্দা আক্রান্ত করে ফেলে। মন্দা আক্রান্ত দেশে যেহেতু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দূর্বল হয়ে পড়ে, কর্মহীন লোকজনের সংখ্যা বেড়ে যায়। খাদ্য এবং জ্বালানি মানুষের ক্রয় সীমানার বাইরে চলে যায়, শুরু হয় সমাজে বিশৃঙ্খলা অরাজকতা।
আশির দশক ছিল, পৃথিবীর অর্থনীতি এবং সংস্কৃতির একটি উজ্জল সময়। আমেরিকা ইউরোপ জুড়ে, নিত্য নতুন ফ্যাশনের চমক, হেভি মেটাল গানের তরঙ্গ বা ব্রেক ডান্স পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
কিন্তু ঠিক তখনই ল্যাটিন আমেরিকা ধুঁকছে প্রচন্ড বৈদেশিক ঋণের চাপ, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক তীব্র মন্দায় । তখনও সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট। যা একইভাবে মুদ্রাস্ফীতি খাদ্য ঘাটতিতে মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ভেনিজুয়েলা, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, পেরু, চিলি এইসব দেশগুলো চরম অনিশ্চয়তা, বেকারত্ব, খাদ্য ঘাটতির সহ বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে ছিল।
পাহাড় সমান ঋণের বোঝা ,আর দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি । সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার আগুনে যেন তেল ঢালছিল। প্রায় এক দশকেও এইসব দেশ কোমর সোজা করে উঠে দাঁড়াতে পারেনি।
ইতিহাস কি আবার একই রকম ভাবে ফেরত আসছে? এবার ল্যাটিন আমেরিকা সহ তার সঙ্গে আমেরিকা (ইউ এস এ), ইউরোপ ও এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলো যুক্ত হতে যাচ্ছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের গত সপ্তাহে রিপোর্ট অনুযায়ী ১৫ টি উন্নয়নশীল দেশ কিছুদিনের মধ্যে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি মেটাতে খারাপ অবস্থায় পড়ে যেতে পারে। যা তাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে বিপদগ্রস্ত করতে পারে । ফলশ্রুতিতে আসতে পারে শ্রীলংকার মত অবস্থা। অথবা আশির দশকের সেই ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর মত দুরবস্থা।
বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে আরো বলেছে, ৭০ টির মত অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশকে মিটাতে হবে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের লোনের কিস্তি। এই কিস্তি পরিশোধ করতে যেয়ে তাদের পরতে হবে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চাপে, এটা নিশ্চিত। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এর অন্যতম কারণ হিসাবে দেখা যাচ্ছে।
১০৭ টি দেশেও আসবে তীব্র জ্বালানি এবং খাদ্য ঘাটতি। এসব দেশের জনগণ প্রায় ১.৮ বিলিয়ন। ( পৃথিবীর ১/৫ %) ।
৬৯ টি দেশ থাকবে শ্রীলংকার অবস্থার কাছাকাছি। ছোট করে যদি শ্রীলংকার অবস্থা বলি, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, সুদের হার হেলাফেলা করা, আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শেষ করে ফেলাই শ্রীলংকার তীব্র মন্দার প্রধান কারণ। এশিয়া-প্যাসিফিকের ২৫, ল্যাটিন আমেরিকার ১৯, আর আফ্রিকার ২৫ টি দেশ রয়েছে এমন শঙ্কার মধ্যে। এই দেশগুলোর মধ্যে কম বেশি ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট, জ্বালানি ,ভোজ্যতেল এবং খাদ্য সংকট। অর্থাৎ প্রায় একই সমস্যা বিভিন্ন দেশগুলোতে।
মিশর রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে ৫০% গম আমদানি করতো। এখন আমদানি বন্ধের কারণে আগের মজুদ এর হিসাবে মাত্র তিন মাসের খাদ্য তাদের সংরক্ষণে রয়েছে। বোঝা যাচ্ছে তীব্র খাদ্য সংকট এ পড়তে পারে এদেশ। তিউনিসিয়ার অর্থনীতির তীব্র মন্দাও এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। জিডিপির শতভাগ তাদের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ। বর্তমান বাণিজ্য ঘাটতি ৮০০ মিলিয়ন ডলার । একই অবস্থায় লেবানন। গতবছর বৈরুতে বোমা বিস্ফোরণে তাদের মূল খাদ্য গুদাম নষ্ট হয়ে যায়। ১১% খাদ্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি তখন থেকেই । মুদ্রাস্ফীতির ছোবলে লেবানিজ পাউন্ড ৯০% তার ওজন হারিয়েছে। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৩৬০%। লেবানন ইউক্রেন থেকে তাদের প্রয়োজনের ৮০% গম আমদানি করতো। বিশ্বব্যাংকের বিশেষ সহায়তায় জরুরী ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ গ্রহণ করে খাদ্য নিরাপত্তা ওপর জোর দিয়েছে এই দেশটি। আর্জেন্টিনা এপর্যন্ত ৯ বার বৈদেশিক ঋণের কিস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আইএমএফ তাদের দিয়েছে ৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। খাদ্য ঘাটতি ছাড়াও তাদের রয়েছে সামনের তীব্র শীতের জ্বালানি সংকট।
এল সালভাদর, পেরু,ইথিওপিয়া, কেনিয়া সহ দক্ষিণ আফ্রিকার আরো বেশ কয়েকটি দেশ একই রকম অর্থনৈতিক এবং খাদ্য সংকটে ডুবে আছে।
এরকম অর্থনৈতিক দুর্বলতা বা খাদ্য সংকট সাধারণত এক সময় গণবিক্ষোভ বা গৃহযুদ্ধের মতো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।
উত্তর ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী দেশ তুর্কি, সমৃদ্ধশালী দেশ। এখন ভুগছে তীব্র মুদ্রাস্ফীতি এবং জ্বালানি ও খাদ্য সংকটে । অর্থাৎ একই চিত্র। জিডিপির ৫৪% ঋণে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাপে পড়ে মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ৭০% । সংকুচিত জিডিপি ৩.৪% । বিশ্ব ব্যাংক আগামী এক বছর পৃথিবীর এই প্রত্যেকটা দেশকে অত্যন্ত সতর্কতার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছে।
উন্নত দেশগুলোর কি অবস্থা? রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটো সংযুক্ত হয়ে ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট নিয়ে যোগ দিয়ে দিল। ধারণা ছিল এরমধ্যে রাশিয়া গুটিয়ে যাবে, বাস্তবে পরিস্থিতি এমনটা হল না। রাশিয়ার সুপষ্ট আগ্রাসন নীতি এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাবার সমস্ত লক্ষনই সুস্পষ্ট। ন্যাটো গত দু'মাসে ১.৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করে ফেলেছে। ন্যাটো জোট ভুক্ত দেশগুলোর সবচেয়ে বড় ডোনার হচ্ছে আমেরিকা। বছরের শুরু থেকেই আমেরিকার অর্থনীতির অবস্থা তেমন সুবিধাজনক অবস্থায় দেখা যাচ্ছে না। প্রথম কোয়ার্টার মিলিয়ে গত ৫ মাসে তাদের অর্থনৈতিক ঘাটতি রয়েছে ৭ ট্রিলিয়ন ডলার। অনেকগুলো অর্থনৈতিক সূচক যোগ করলে লেখাটা অনেক বড় হয়ে যাবে। আমেরিকার পুঁজিবাজার Nasdaq এ ২৮% পতন দেখা গেছে । বিশ্বের শীর্ষ বড় কোম্পানি গুলোর অবস্থান এখানেই। তার মধ্যে অ্যাপেল, মেটা, টেসলা কিংবা বিশ্বকাপানো অ্যামাজন সহ সমকালের আরো বেশ কয়েকটি কোম্পানির পুঁজিবাজার ধ্বস এর পরিমান ১৬-৩০% এরমধ্যে। পুঁজিবাজার ধ্বস এর মধ্যে জাপান, চায়না বা রাশিয়াও রয়েছে। এই দেশগুলোর গড়ে পুঁজিবাজারে ধসের পরিমাণ প্রায় ১১%।
মোটামুটিভাবে আতঙ্কিত এ পরিস্থিতিতে বোঝা যাচ্ছে গোটা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে পড়ছে। বিশ্বজুড়ে কৃষি উৎপাদন এ ব্যাপক ঘাটতি, মানুষের সৃষ্টির সমস্যার মধ্যে খনিজ তেল এবং ভোজ্য তেল কৃত্রিম সংকট, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকা তে ব্যাপক খরা যা সয়াবিন তেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্য উৎপাদন গত পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। পৃথিবীর আরেকটি অন্যতম কারখানা বলে খ্যাত চায়না বর্তমানে বৃহত্তম অর্থনীতি এর দেশ। প্রায় তিন মাস ধরে চলা কোভিড লকডাউন, নিজের দেশের অর্থনৈতিকেই এই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না , ব্যাহত করছে কৃষি উৎপাদন সহ পৃথিবীর মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প কারখানার কাঁচামাল সরবরাহেও। এর ফলে পৃথিবীর বহু দেশের কলকারখানার উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, দুর্বল করে তুলছে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি। বিবিসি ১৩ ই মে , একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। যাতে উল্লেখ করা হয় রাশিয়া ইউরোপের ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়েছে। ইউরোপ রাশিয়ার প্রায় ৬০% তেল গ্যাস এবং ইলেকট্রিসিটি উপর নির্ভরশীল।
পরাশক্তি আমেরিকা, চায়না, ইউরোপ এবং এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্রমেই সংকুচিত জিডিপিতে চলে আসছে। বর্তমানে আমেরিকার জিডিপির সংকোচনের হার ১.৪%। যে কোন দেশের এই সংকোচন যদি ২% এর বেশি হয়, স্বাভাবিকভাবেই সেই দেশকে মন্দা কবলিত দেশ বলা যেতে পারে। আগামী কোয়ার্টারে যদি আমরা প্রবৃদ্ধির হার একইভাবে নিম্নগামী দেখি তাহলে দুশ্চিন্তার শেষ থাকবে না।
বৈদেশিক মুদ্রা বা ফরেক্স ( ফরেন কারেন্সি রিজাভ) , অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে সমুন্নত রেখে, কৃষি উৎপাদনে জোর দিয়ে, অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আপাতত ব্যবহার বন্ধ করে, প্রতিটা দেশকে এই বিপদ মোকাবেলা করতে হবে।
সামনে আসছে শীতকাল। ইলেকট্রিসিটি এবং গ্যাসহীন ইউরোপ, আমেরিকা তীব্র জ্বালানি সংকটে পড়তে যাচ্ছে। জ্বালানি তেল প্রতি গ্যালন বর্তমানে ৬ মার্কিন ডলার চলছে।
রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ, অথবা যদি কোনো সমঝোতার আলামত না পাওয়া যায়, ধারণা হচ্ছে কোল্ড বাইট, বা তীব্র শীতের (কোল্ড বাইট) কামড়ে ইউরোপ-আমেরিকার ২৫ শতাংশের অধিক লোক মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছে। আর খাদ্য ঘাটতিতে মৃত্যুর পরিমান দরিদ্র দেশগুলোর প্রায় ৩০%।
উচ্চমূল্যের জ্বালানি, খাদ্য ঘাটতি, ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে হিটিং সিস্টেম , উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, প্রতিটা দেশের ধীর গতির অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রত্যক্ষ কৃষি উৎপাদনের স্বল্পতা, সাধারণ মানুষের মাঝে হাহাকার ছাড়া আর কিছুই নেই। খাদ্য আর মন্দা পিরীত লোক ইউরোপের দিকে শরণার্থী হিসেবে ব্যাপক পরিমাণে অগ্রসর হবে, ইউরোপ তথা সারা বিশ্বের জন্য এটাও হবে আরেকটি বড় মহামারী।

পৃথিবী কে এখন বলা হয় গ্লোবাল ভিলেজ। একবিংশ শতাব্দিতে এসে, মানুষকে যদি ঠান্ডা অথবা খাদ্যের অভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয় তাহলে এ সভ্যতার মূল্য কি?


কে এন এন লিংকু
লেখক, কলামিস্ট
knnlinku @ gmail.com

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪৬

সোনাগাজী বলেছেন:



বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ নেয়া ও ফেরত দেয়ার ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি রকম?

২| ২১ শে মে, ২০২২ রাত ৮:৪৮

সোনাগাজী বলেছেন:


পোষ্ট দেয়ার পর অবসরে গেলেন?

৩| ২১ শে মে, ২০২২ রাত ১০:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এই মুহুর্তে একজন নবী আসার দরকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.