নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যে সামান্য কিছু মানুষ তাদের সৃষ্টিতে ঈশ্বরের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন দালি তাদের মাঝে অন্যতম একজন। দালির পুরো নাম Salvador Domingo Felipe Jacinto Dalíi Domènech । বিংশ শতাব্দিতে পাশ্চাত্য চিত্রকলা শুধু মাত্র ছবি আঁকায় সীমাবন্ধ থাকে না। তা জন্ম দেয় নানা শিল্প আন্দোলনেরও। এসব আন্দোলন ছবির সঙ্গে সঙ্গে কবিতা, নাটক, সিনেমা ইত্যাদি নানা শিল্প মাধ্যমকে প্রভাবিত করে। বিংশ শতাব্দীতে এমন সব প্রভাব বিস্তারকারী শিল্প আন্দোলনের যারা উদ্গাতা তাদের একজন সালভাদোর দালি। বিশ্বখ্যাত সুররিয়ালিস্ট চিত্রশিল্পী সালভাদর দালির আজ ১০৮তম জন্মবার্ষিকী। ১৯০৪ সালের ১১ মে তিনি স্পেনে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মবার্ষিকীতে এই মহান শিল্পীর প্রতি রইল আমাদের শুভেচ্ছা।
স্পেনিশ শিল্পী দালি ১৯০৪ সালে উত্তর কাতালোনিয়ার ফিগুয়েরে জন্মগ্রহণ করেন। সুররিয়ালিস্ট শিল্পচূড়া মনি সালভাদোর দালিকে (১৯০৪-১৯৮৯) কাতালানের স্বপ্নভূমি আজন্ম আমৃত্যু আবিষ্ট করে রেখেছিল। সান ফারনান্দো ইনস্টিউট, মাদ্রিদ এ চারুকলা পড়ার জন্য ভর্তি হন, ১৯২২ সালে। অবশ্য চিত্রকলায় হাতে-খড়ি হয় আরো আগে। এখানে এসে ভাস্কর্য আর চিত্রকলায় দক্ষতা বাড়তে থাকে। শিক্ষকদের সাথে তার মতের মিল হত খুবই কম। মাদ্রিদে তাঁর সাথে বন্ধুত্ব হয় গার্সিয়া লোরকা, বুনোয়েল প্রমুখের সাথে। ১৯২৬ সালের প্রথম বারের মত প্যরিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন, সেখানে পরিচয় আরেক বিখ্যাত শিল্পী পিকাসো-র সাথে। এছাড়াও ব্রেঁতো, এলুয়ার, মাগ্রিত প্রমুখের সাথে তার যোগাযোগ তৈরি হয়। ১৯২৯ সালে তার এগারটি পেইন্টিং নিয়ে প্যারিসে প্রথম বারের মত চিত্র-প্রদর্শনী করেন। আস্তে আস্তে তাঁর পরিচিতি বাড়তে থাকে।
দালি একাধারে চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, গ্রাফিক্স ডিজাইনার। কিউবিজম, ফিউচারিজম ও মেটাফিজিক্যাল পেইন্টিং এর অনবিচ্ছিন্নতায় দালি সৃষ্টি করেন এমন এক স্যুরিয়ালিষ্টিক আবহ, শিল্পকলার ইতিহাসে যা বিস্ময়কর। দালি তার শিল্পকলায় এমন এক জগত সৃষ্টি করেছিলেন যার প্রভাবে বিংশ শতাব্দীর চিত্রকলায় খুলে গেছে এক নতুন দিগন্ত। দালি সাইত্রিশ বছর বয়সেই তার জীবদ্দশায় নিজের জীবনবৃত্তান্ত লিখে যান। বইটার নাম The Secret Life of Salvador Dalí ।
(আমাস্টারডামে মাদাম ত্যুসো-র মিউজিয়ামে সালভাদর দালি-র মোমের মূর্তি)
নিজেকে জাহির করার একটা অদ্ভূত প্রবণতা ছিল। তাঁর ঐতিহাসিক গোঁফ-এর কথা নাই বা বললাম। ওস্লো নামে তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিল একটি বিড়াল। তাঁর জীবন যাপন প্রণালী অনেকের কাছে বেশ অদ্ভূত ও হাস্যরসাত্নক ছিল। আর মাঝে এমন সব কথা-বার্তা বলতেন, যাতে সহজে লোকজনের মনোযোগ পেয়ে যেতেন। প্রচলিত আছে, রাস্তার কোনো লোককে যদি একজন আধুনিক শিল্পীর নাম বলতে বলা হয়, সে নামটি হবে সালভাদর দালি-র। এত জনপ্রিয় ও সাধারণ্যে পরিচিত হতে পেরেছিলেন তিনি।
সুরারিয়ালিস্টরা এই স্বাধীনচারী সৃজন খেয়ালের মন্ত্রণা পেয়েছিলেন অস্বভাবী মনোবিজ্ঞানীদের আদি পিতা ফ্রয়েডের কাছ থেকে। তার ‘স্বপ্নের বয়ান’ গ্রন্থ প্রকাশ পাওয়ার পর মানুষ সত্যকে নতুন করে পেল। যারা ‘স্বপ্নবয়ান’ পড়েননি তারাও জানেন যে মানুষের চলাচল অন্তর্গত নির্দেশে সক্রিয়। স্বপ্নই শুধু সত্য। বিচিত্র স্বপ্নজালে মানুষ বন্দি। স্বপ্নের মধ্যেই আসল মানুষ বিরাজ করে। স্বপ্ন ঘুমে ও জাগরণে। স্বপ্ন সুখদোলার স্বপ্ন দুঃস্বপ্নের। তুমুল নাটকীয়তা ছাড়া কোনো স্বপ্নই রচিত হয় না। স্নায়ুর কম্পনে সব কিছুই ভিন্ন রূপ লাভ করে। এসবই আছে দালির শিল্পে।
(আ্যালিম ইন ওয়াণ্ডার ল্যাণ্ড)
দালির চিত্রকলায় বারবার এসেছে অ্যালিস। অ্যালিস সেই চিরন্তন বালিকা যে তার শিশু-সুলভ সারল্য ভরা চোখ দিয়ে পৃথিবীকে দেখে। সে বাস করে কল্প-জগতের বাসিন্দাদের সাথে।
যদিও এই কল্পজগত বাস্তব জগতের প্রতিভূ হয়ে উঠে তার কাছে। এই কল্প জগত সে নির্বিঘ্নে পার করে দেয় কোনো ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া ছাড়াই, এবং বাস্তব জগতে ফিরে আসে পরাবাস্তবিক অভিজ্ঞতা নিয়ে। দালির এই ভাস্কর্যে অ্যালিসকে লাফরত বলে মনে হয়।
তার হাতের বাঁকানো রশিটি দৈনন্দিন জীবনের প্রতীক। আর হাতে এবং চুলে প্রস্ফূটিত গোলাপগুলো নারীর সৌন্দর্য ও যৌবনকে প্রতীকায়িত করছে।
সাদা চোখে দেখা পৃথিবীর বাস্তবতা আচম্বিতে বদলে যায় কিউবিজমে। কিউবিক পিকাসো ছিল উঠতি যুবক দালির স্বপ্নপুরুষ। প্যারিসে এসেই দালি পিকাসোর সঙ্গে দেখা করেন। দালি বলেছিলেন, “আমি লুভরে না গিয়ে আপনার কাছে এসেছি।” মহাতপা ঋষি পিকাসোর অসংকোচ উত্তর, “আপনি একদম ঠিক কাজটি করেছেন।” এই সংলাপ বিনিময়ে যে শ্রদ্ধা দালি পিকাসোকে দেখিয়েছেন তা শেষ পর্যন্ত অক্ষুণœ থাকেনি। সৌরজাগতিকভাবে বেঁচে থাকা, অনন্ত আকাশগ্রন্থি ধরে বেঁচে থাকা, যুক্তির অতীতলোকে ভ্রাম্যমাণ থেকে বেঁচে থাকা দালি মরমিতা নেই বলে পিকাসোকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ফ্রয়েড দালিকে দেখে বলেছিলেন, ‘স্পেনীয়দের মধ্যে এমন ফ্যানটিক তিনি আর দেখেননি। মানুষ মাতৃগর্ভ থেকে যে জন্মলক্ষণ নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়, যে অভিজ্ঞতার চক্রমণে রচিত হয় তার মনোলোক তা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারে না। তবে যতদূরই যাওয়া যাক না কেন, পায়ে পায়ে যায় শৈশব।
তবে যুদ্ধের তাপে আর মানুষের হিংস্রতা দেখে দালির স্বপ্নে এসেছে রক্তের দাগ-ধর্ষকামের চিহ্ন। যুদ্ধের ‘অশনিসংকেত’ ছবিতে আমরা মানুষের অঙ্গের স্থাপত্য দেখি। বলা ভাল সেই স্থাপত্যে গুড়িয়ে যাওয়া দেখি। কে যে শিকার আর কে যে শিকারী তা উদ্ধার করা যায় না ছবিটি দেখে। দীর্ঘবাহু, দীর্ঘ আজঙ্গ পা, স্তন, বিক্ষুব্ধ মুখোভঙ্গি, সব মিলিয়ে এক উত্তুঙ্গ পরিস্থিতি, কেবলই পীড়ন।
(The Face of War, 1940 তৈলচিত্র)
সাল্ভাদর দালি’র অদ্ভুতুড়ে সার- রিয়ালিস্টিক পেইন্টিং গুলোর মাঝে অন্যতম একটি পেইন্টিং এটি। ছবিটি যে সময় আঁকা তসেই সময় দালি’র জন্মভুমি স্পেন এ দীর্ঘ তিন বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ শেষ হয় । সমস্ত স্পেন লাশের ওপর বাস করছে, চারিদিকে যুদ্ধের বীভৎসতা , খুন, রক্ত, মৃত্যু এবং মৃত্যু । মমতাময়ী স্পেন যেন একটা জীবন্ত লাশ এ পরিনত হয়েছে, এবং পাশাপাশি চলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা। এই সময় এই ছবিটি আঁকেন দালি। ছবিতে দেখতে পাই একটা বিবর্ণ নারী মুখ। পিছনের ল্যান্ডস্কেপ ভয়াবহ শুন্যতা প্রকাশ করছে। ল্যান্ডস্কেপ এবং বিচ্ছিন্ন কঙ্কাল আমাদের যুদ্ধের বীভৎসতার আভাস দিচ্ছে। মুখাবয়বটির চখ এর ভেতরেও আর একটি কঙ্কাল তাঁর ভেতরে আরো একটি এভাবে চলতেই আছে, এর অর্থ সে শুধু মৃত্যু দেখছে, একের পর এক অগনিত মৃত্যু। কঙ্কাল্টির মুখের ভেতরেই একি অবস্থা। অর্থাৎ সে যা বলছে তাই মৃত্যু আর মৃত্যু। ছবিটিত ডান দিকে নিচে একটা হাতের ছাপ দ্যাখা যায়, দালি বলেছেন ছাপ টা তাঁর নিজের হাতের। দালি বলেছিলেন যে তিনি যুদ্ধ কে অনুভব করেন। যুদ্ধের বীভৎসতা , মৃত্যু, ধ্বংসযজ্ঞ , প্রতিটা কস্ট তিনি আলাদা ভাবে অনুভব করেন। এমনকি তিনি নাকি ভবিষ্যৎ যুদ্ধ ও অনুভব করতে পারতেন। এজন্যই তিনি তাঁর হাতের ছাপটা দিয়েছিলেন।
(স্ত্রী গালার সাথে সালভাদর দালি)
গালা নামে এক রমণীকে তিনি বিয়ে করেন দালি। ১৯২৯ সালে প্যারিসে দেখা হলো গালা এ্যালুয়ারের সঙ্গে। বিখ্যাত ফরাসি স্যুরিয়ালিস্ট কবি পল এ্যালুয়ারের স্ত্রী। খুব দ্রুত দালির সঙ্গে তৈরি হলো তার সম্পর্ক। গালা এ্যালুয়ার হয়ে উঠলেন দালির প্রেম-প্রেরণা। এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণে সালভাদর দালি গালা এ্যালুয়ারের প্রতি চরমভাবে আকর্ষিত হলেন। জন্মগতভাবে রাশিয়ার নাগরিক গালার আসল নাম এলেনা ইভানোভনা ডিয়াকোনোভা। বয়সে দালির চাইতে দশ বছরের বড় ছিলেন গালা। দালির জীবনে গালার ভূমিকা বিশাল। ১৯২৯ সাল থেকে গালা ও দালি একসঙ্গে থাকলেও তারা বিয়ে করেন ১৯৩৪ এ, দ্বিতীয়বার তাঁরা বিয়ে করেন ১৯৫৮ সালে। প্রথমবার সিভিল আইন এ ও দ্বিতীয়বার ক্যাথলিক আইনে। বিয়ের পরে তাঁর নাম হয় গালা দালি।
দালি ক্যান্ডাওলিজম(Candaulism ) চর্চা করতেন। অর্থাৎ নিজের স্ত্রী কে অন্যের সামনে এক্সপোজ করে এক ধরনের ফ্যান্টাসি পেতেন। এ কারনে গালা এর বিভিন্ন পুরুষের সাথে সম্পর্ক ছিল। এবং এ কারনেই বোধয় দালি গালা’র নগ্ন পোট্রেট এঁকেছেন। দালির চোখে নারীর মুখ হয়ে যায় নাটকের মঞ্চ অথবা ড্রইংরুম। ‘মে ওয়েস্টের মুখ’-এর নামক কাজটিতে চুলরাশি উত্তোলিত হয়েছে মঞ্চের পর্দার মত। চোখ দুটি দেয়ালে টাঙানো দুটি পেইন্টিং। দুনাকের ছিদ্রপথ ফায়ারস্পেস আর সবচেয়ে গাঢ় নাটক দুটি ডাগর লাল ঠোঁটে। আসলে ঠোঁটগুলো ঠোঁট নয়। লাল সোফা। ওই সোফাতেই ঠাঁই চায় পুরুষ, ঠাঁই খোঁজে আত্মরূপমুগ্ধ নারী নিজেও।
(The Persistence of Memory)
‘দা পাবসিসটেন্স অফ মেমোরি’ দালির সবচেয়ে আলোচিত ছবি। এ ছবির প্রধান চরিত্র ঘড়ি। অনেকগুলো ঘড়ির অভিব্যক্তিতে যুক্তির অতীত এবং কালাতীত অবস্থাকেও দালি ধরতে চেয়েছেন। এখানে সময় বর্তমানে লুপ্ত কোনো প্রাণীর মত, এখানে সময় ঝুলে পড়েছে কাপড়ের মত, গলে পড়েছে মাখনের মত, এখানে সময় দংশিত কালো পিঁপড়াদের সামুষ্ঠিক আক্রমণে। এখানে সময় সাগরবেলায়, সাগরে, সাগরপাড়ের পাহাড়ে, দূর আকাশে। এখানে সময় পায়ের কাছে এবং এখানে দৃষ্টির অজান্তে ধাবমানতা আছে। আরও আছে বিশাল পর্বতের নিচে ক্ষুদ্রতম অনুষঙ্গ। এ নাটক তো দালিতে থাকেই। এ ছবির সূচনা ডাইনিং টেবিলে। ফ্রান্সের বিখ্যাত পনির ক্যামোবের। গ্রীষ্মের উষ্ণতায় পনির নরম হয়ে এসেছিল। সাদা গলিত পনিরের দিকে চেয়ে জগৎশ্রেষ্ঠ দূরাভিসারী (ভিশনারি) দালির মনে হল সময় এভাবেই চলছে, গলে পড়ছে, রূপান্তরিত হচ্ছে। ক্রমে গলিত পনিরের জায়গায় উপস্থিত হল ঘড়িগুলো। সময়ের অস্থিরতা স্মারক ঘড়িগুলোর কোনোটাই সদর্থকতার ইঙ্গিত দেয় না। ঘড়ির যে গোলাকার ডায়াল সময়ের ঘূর্ণমানতাকে প্রকাশ করে সেই বৃত্তের বেড়ি ভেঙ্গে পড়েছে এ ছবিতে। যেখানে বৃত্ত রয়েছে সেখানেও পিপীলিকার দংশনে সব সংখ্যা মুছে গেছে আর দংশনে ঘড়ির দেহ হয়েছে রক্তললা। আরেকটি ঘড়িতে মাছি বসেছে। সেই ঘড়ির ভেতরকার নীল জল পান করছে মাছি। সময়ের এক অনন্ত বয়ান দালির এই ছবি।
(Geopoliticus Child Watching the Birth of the New Man ১৯৪৩ , তৈলচিত্র)
এটি সালভাদর দালি এর আর একটি বিখ্যাত পেইন্টিং। সিম্বলিজম ও রঙ এর ব্যাবহার স্পস্টতই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা প্রকাশ করে। দালি’র আর একটি মাস্টারপিস। ছবিটায় একটা ডিম আকৃতির পৃথিবী দ্যাখা যাচ্ছে। এবং সেই ডিম থেকে একজন মানুষ জন্ম নিচ্ছে। স্পষ্টতই মানচিত্রে যায়গাটা আমেরিকা। মানুষটার বাম হাত মানচিত্রে গ্রেট ইংল্যান্ড এর ওপর। অর্থাৎ পৃথিবীর ওই অংশ থেকে এমন এক শক্তি জন্ম নিচ্ছে যা গ্রেট ইংল্যান্ড কে আচ্ছাদিত করে রাখছে। মানচিত্রে তৃতীয় বিশ্বের বেশ কিছু অংশ গাড় করে আঁকা, এতে বোঝাচ্ছে যে বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা কাটিয়ে এসব অঞ্চলের ও কিছু দেশ শক্ত ভিত্তি তৈরি করে নিয়েছে। ডিম আকৃতির গোলকটার উত্তর থেকে দক্ষিন মেরু পর্যন্ত চেরা এবং সেখান থেকে রক্তের প্রবাহ বের হচ্ছে, এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা এবং কি পরিমান রক্ত ঝরেছে তা প্রকাশ করছে।
(The Great Masturbator 1929)
এটা দালির একটা শেল্ফ পোট্রেট, সঙ্গমের প্রতি তার চুড়ান্ত ভয় এবং বিতৃষ্ণা কে ফুটিয়ে তুলেছেন এই ছবিতে। এখানে ভুমির দিকে তাক করা পাথরের অবয়বটাই দালি এর মুখের অবয়ব। মুখটা ফোলা, শান্ত, চোখ বন্ধ, এতো বোধয় পরিশ্রান্ত অবস্থা বোঝানো হচ্ছে, আর নাকের কাছে একটা ঘাস ফড়িং তার পেটে আবার পিঁপড়া, দালি ছোটবেলায় ঘাস্ফড়িং প্রচন্ড ভয় পেতেন, এখানে তিনি বোধয় তার ভয় টাকেই প্রকাশ করেছেন। একটা নারীর মুখ পুরুষাঙ্গের কাছে গিয়ে থেকে আছে, এটা বোধয় তার মৈথুনের ফ্যান্টাসি ছিল। পুরুষটার পায়ের কাছে রক্ত ঝরছে, এতে কি খোজাকরন বঝানো হয়েছে? হতে পারে। ছবিতে আরো বেশ কিছু অবজেক্ট আছে, ডিম, সিনহের মুখ, তিনটা মানুষের অবয়ব (ছবিটায় আর বেশি কিছু বুঝিনি আমি, আমার মাথা জট পাকায় যাচ্ছে)
(Soft Construction with Boiled Beans (Premonition of Civil War) (1936)
দালি শুধুমাত্র যে ছবি আকাতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন তা নয়। ১৯২৯ সালে তিনি এবং তার শিক্ষা জীবনের বন্ধু লুই ব্যন্যুয়েল মিলে তৈরি করেন ১৬ মিনিটের একটি শর্ট ফিল্ম নাম Un Chien andalou (An Andalusian Dog) । সাররিয়ালিজম ফিল্ম এর মাঝে এটা ছিল প্রথম দিকের মুভমেন্ট, এবং প্রায় একশ বছর থেকে এই মুভিটা দর্শকদের এখনও কনফিউজড করে রেখেছে। এমনকি তিনি হিচকক এর সঙ্গেও কাজ করেছেন, তাঁর ‘Spellbound’ মুভিতে তিনি ড্রীম সিক্যুয়েন্স গুলো তৈরি করেছেন। এবং ওয়াল্ট ডিজনি এর সঙ্গে তিনি একটি কার্টুন ফিল্ম তইরির কাজেও হাত দিয়েছিলেন। ১৯৪৪ সালে তিনি তাঁর একমাত্র উপন্যাস প্রকাশ করেন নাম ‘Hidden Faces’। এমনকি তিনি একটি অপেরাও লিখেছিলেন ‘Etre Dieu’ এবং তিনি মাঝে পোশাকের ডিজাইন ও করেছেন।
তিনি ভীষণভাবে ক্যাপিটালাইজড ছিলেন, অর্থকে তিনি অত্যন্ত ভালবাসতেন এ ব্যাপারে তিনি বলেছিলেন – “Liking money like I like it, is nothing less than mysticism. Money is a glory. ” এজন্য অবশ্য কিছু মানুষ তাকে বাকা চোখে দ্যাখে। এবং তিনি তাঁর খ্যাতি কে অত্যন্ত উপভোগ করতেন, তিনি বলেছিলেন – “Each morning when I awake, I experience again a supreme pleasure – that of being Salvador Dali.”। তিনি সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত ছিলেন তাঁর সাররিয়ালিস্টিক এবং এবস্ট্রাক্ট পেইন্টিং এর জন্য। শেশের দিকে তিনি ছবি আঁকা কমিয়ে দেন। তিনি এতোটাই সফল ছিলেন যে তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর ছবির জন্য দুটি মিউজিয়াম তৈরি হয়েছিল একটি হচ্ছে The Salvador Dalí Museum পিটারসবারগ, ফ্লোরিডায় অপরটি Theatre-Museum ফিগুয়েরাস এ।
সালভাদর দালি ১৯৮৯ সালের ২৩ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। আজ এই মহান চিত্র শিল্পীর জন্ম দিন। জন্মবার্ষিকীতে এই মহান শিল্পীর প্রতি রইল আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
২| ১১ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১২:২৮
ডানামনি বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম। দারুণ লেখা।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১২:১২
চুক্কা বাঙ্গী বলেছেন: সালভাদর দালি একখান পিস। তার আঁকা পেইন্টিংগুলা মাথা ঘোলা করে দেয়। আর চেহারও ত ছিল সেইরকম। আমার জন্মে আমি এইরকম মোচ কারও দেখি নাই।