নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি ও আধুনিক ও রোমান্টিক কথাসাহিত্যিক। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার লেখায় "নীললোহিত", "সনাতন পাঠক" ও "নীল উপাধ্যায়" ইত্যাদি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন। মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা-ব্যক্তিত্ব হিসাবে সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষা-ভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। বাঙলাভাষী এই ভারতীয় সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসাবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন। তাঁর লেখা কবিতা, গল্প, উপন্যাস দুই বাংলার পাঠকদের কাছে সমান সমাদৃত। তাঁর কবিতার বহু পংক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্থ। ১৯৩৪ সালের আজকের দিনে তিনি বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ৭৯তম জন্মদিনে কবিকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বৃহত্তর ফরিদপুরের মাদারীপুর জেলার মাইজপাড়া গ্রামে জন্মগ্রণ করেন। জন্ম বাংলাদেশে হলেও তিনি বড় হয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। শৈশবের কিছুটা অংশ মাইজপাড়া গ্রামে পার করলেও বাকিটা সময় কেটেছে কলকাতায়। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। ব্যাংকের পিয়নের চেয়েও স্কুল মাস্টারের বেতন ছিল কম। তাই সুনীলের মা কখনোই চাননি তাঁর ছেলে শিক্ষকতা করুক। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ভয়াবহতার শিকার হয়েছিলেন তার বাবা। স্কুল, কলেজ বন্ধ হয়ে যায় অনির্দিষ্টকালের জন্য। বেসরকারী স্কুলে ছাত্রদের মাইনে থেকেই শিক্ষকদের বেতন হত। স্কুল বন্ধ হওয়ার পর তার বাবা বেকার হয়ে যায় এবং তার পক্ষে সংসার চালানো কঠিন হওয়ায় তিনি তার পরিবার পাঠিয়ে দেন গ্রামের বাড়িতে। তখন তিনি মাইজপাড়ার বীরমোহন বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর তিনি পড়াশুনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশুনা শেষ করে কিছু তিনি আপিসে চাকুরি করেছেন। তারপর থেকে সাংবাদিকতায়। আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান মি. পলেন কলকাতায় এলে সুনীলের সঙ্গে ঘনিষ্ট পরিচয় হয়। সেই সূত্রে মার্কিন মুলুকে গেলেন সুনীল ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে । ডিগ্রী হয়ে গেলে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপগ্রন্থাগারিক হিসাবে কিছুদিন কাজ করেন সুনীল।
সুনীলের সাহিত্যিক হয়ে ওঠাঃ সুনীলের পিতা তাকে টেনিসনের একটা কাব্যগ্রন্থ দিয়ে বলেছিলেন, প্রতিদিন এখান থেকে দু’টি করে কবিতা অনুবাদ করবে। এটা করা হয়েছিল তিনি যাতে দুপুরে বাইরে যেতে না পারেন। তিনি তাই করতেন। বন্ধুরা যখন সিনেমা দেখত, বিড়ি ফুঁকত সুনীল তখন পিতৃআজ্ঞা শিরোধার্য করে দুপুরে কবিতা অনুবাদ করতেন। অনুবাদ একঘেঁয়ে উঠলে তিনিই নিজেই লিখতে শুরু করেন। ছেলেবেলার প্রেমিকাকে উদ্দেশ্য করা লেখা কাবিতাটি তিনি দেশ পাঠালে তা ছাপা হয়।
(বাংলাদেশের কিংবদন্তি সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমদের সাথে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)
১৯৫৩ সাল থেকে তিনি কৃত্তিবাস নামে একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ একা এবং কয়েকজন এবং ১৯৬৬ সালে প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হল আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি, যুগলবন্দী (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), হঠাৎ নীরার জন্য, রাত্রির রঁদেভূ, শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, অর্জুন, প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম, ভানু ও রাণু, মনের মানুষ ইত্যাদি। শিশুসাহিত্যে তিনি "কাকাবাবু-সন্তু" নামে এক জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজের রচয়িতা।
সুনীল কুমারের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও বহুল পঠিত একটি কবিতা
"কেউ কথা রাখেনি"
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
কেউ কথা রাখে নি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখে নি
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিলো
শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
তারপর কতো চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো,
কিন্তু সেই বোষ্টুমী আর এলোনা
পঁচিশ বছর প্রতীক্ষায় আছি।
মামাবাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিলো, বড় হও দাদাঠাকুর
তোমাকে আমি তিনপ্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো
সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর
খেলা করে!
নাদের আলী, আমি আর কতো বড় হবো? আমার মাথা এ ঘরের ছাদ
ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায়
তিনপ্রহরের বিল দেখাবে?
একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারি নি কখনো
লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্করবাড়ির ছেলেরা
ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি
ভিতরে রাস-উৎসব
অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ পরা ফর্সা রমণীরা
কত রকম আমোদে হেসেছে
আমার দিকে তারা ফিরেও চায় নি!
বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন, আমরাও…
বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই
সেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স, সেই রাস-উৎসব
আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবেনা!
বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিলো,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালোবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এ-রকম আতরের গন্ধ হবে!
ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠেয়ে প্রাণ নিয়েছি
দুরন্ত ষাড়ের চোখে বেঁধেছি লালকাপড়
বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীলপদ্ম
তবু কথা রাখে নি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ
এখনো সে যে-কোনো নারী।
কেউ কথা রাখে নি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখে না!
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অরণ্যের দিনরাত্রি ও প্রতিদ্বন্দ্বী নিয়ে সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। লালনকে নিয়ে লিখিত ‘মনের মানুষ’ উপন্যাসটি গৌতম ঘোষ চলচ্চিত্রায়ন করেছেন। এছাড়াও তার আরো অনেক লেখা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ আনন্দ পুরস্কার (১৯৭২), সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৮৫), দ্য হিন্দু লিটারেরি পুরস্কার (২০১১) অর্জন করেছেন তিনি। মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত তিনি ভারতের জাতীয় সাহিত্য প্রতিষ্ঠান সাহিত্য অকাদেমি ও পশ্চিমবঙ্গ শিশুকিশোর আকাদেমির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
কথাসাহিত্যিক ও কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর হৃদযন্ত্রজনিত অসুস্থতার কারণে রাত ২টায় কলকাতার নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পশ্চিম বঙ্গ সরকারের ব্যবস্থাপনায় ২৫ অক্টোবর ২০১২ তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিথযশা এই কবির ৭৯তম জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৭
একজন আরমান বলেছেন:
কেউ কথা রাখেনি কবিতাটা আমার অনেক পছন্দের। কবিকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।