নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশে এক সময়কার অত্যন্ত জনপ্রিয় কলাম 'মধ্যরাতের অশ্বরোহী'-খ্যাত প্রথম সারির সাংবাদিক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ফয়েজ আহমদ। ছড়াকার হিসাবেও প্রসিদ্ধি পেয়েছিলেন প্রবীণ এই সাংবাদিক। মধ্যরাতের অশ্বারোহী ছাড়াও তাঁর ''সত্যবাবু মারা গেছেন'' শীর্ষক বইটি প্রচুর জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছাড়াও পরবর্তীতে নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন ফয়েজ আহমদ। নব্বই এর দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় সে সময়কার দুই বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে একসাথে মুখোমুখি বসানোর পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন ফয়েজ আহমদ। বহু গুণে গুণান্বিত ফয়েজ আহমদ ছিলেন বাংলাদেশের জীবনধারার ও বাংলাদেশের সংস্কৃতির একজন চলন্ত ইতিহাস ছিলেন। দেশখ্যাত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ গত ২০১২ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করনে। বাংলা ভাষার শিশুতোষ সাহিত্যিক খ্যাতিমান কবি ফয়েজ আহমেদের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। সৃষ্টিজন কবি, প্রখ্যাত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদের মুত্যুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ফয়েজ আহমেদ ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ২ মে ব্রিটিশ ভারতে ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগণার বাসাইলভোগ গ্রামে এক সামন্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামটি বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ জেলার অন্তর্ভূত। তাঁর পিতার নাম গোলাম মোস্তফা চৌধুরী এবং মাতা আরজুদা বানু। সাংবাদিক ফয়েজ আহ্মদের জীবন বিচিত্র অভিজ্ঞতায় পূর্ণ। ছেলেবেলা থেকেই পত্রিকা ও লেখালেখির সঙ্গে জড়িত ছিলেন ফয়েজ আহমেদ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষভাগে পলায়নমুখী পশ্চাদগামী ব্রিটিশ সৈন্যরা যখন বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকায় ক্যাম্প স্থাপন করেছিল, তখন ঢাকা নগরীর বনানীস্থ একটি ক্যাম্পে তরুণ প্রকৌশলী তথা পাইলট হিসেবে শিক্ষানবিসের কাজ করেছিলেন ফয়েজ আহমেদ। ১৯৪৭-এ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি কম্যুনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
(১৯৭৩ সালে মওলানা ভাসানীর সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন বঙ্গবার্তা’র প্রধান সম্পাদক ফয়েজ আহ্মদ , টেপ রেকর্ডার ধরে আছেন বার্তা সম্পাদক কামাল লোহানী)
১৯৪৮ সাল থেকে ফয়ে আহমেদের সাংবাদিক জীবনের শুরু। তিনি ইত্তেফাক, সংবাদ, আজাদ ও পরবর্তীতে পূর্বদেশে চীফ রিপোর্টার ছিলেন। তিনি সাপ্তাহিক ইনসাফ ও ইনসান পত্রিকায় রিপোর্টিং করেছেন। ১৯৫০ সালে 'হুল্লোড়' এবং ১৯৭১ সালে 'স্বরাজ' পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৬৬ সালে পিকিং রেডিওতে বাংলা ভাষার অনুষ্ঠান শুরু করার জন্যে তিনবছর মেয়াদে নিযুক্ত হন। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম আর নেতৃত্বের ফলে অল্প সময়েই পিকিং রেডিওতে (বর্তমানে রেডিও বেইজিং) বাংলা ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হয়। সে সময় চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লব শুরু হয়। এছাড়া তিনি ঢাকা রেডিওতে ১৯৫২-৫৪ সালে 'সবুজ মেলা' নামের ছোটদের বিভাগটি পরিচালনা করতেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রথম প্রধান সম্পাদক নিযুক্ত হন। পরে দৈনিক বঙ্গবার্তার প্রধান সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।
সাংবাদিকতা করার সময় থেকে তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটেরও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ৮০'র দশকে ফয়েজ আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর সিণ্ডিকেটের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আশির দশকে গঠিত জাতীয় কবিতা উৎসবের প্রথম পাঁচ বছর আহ্বায়ক ছিলেন ফয়েজ আহ্মদ। এছাড়া ১৯৮২ তে বাংলা একাডেমীর কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু পরে এরশাদের সামরিক শাসনের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন। বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রামী ঐতিহ্যের প্রেক্ষাপটে ঐতিহাসিক কারণেই ১৯৮২-৮৩ সালে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের জন্ম । তাঁর নেতৃত্বে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যেমন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার হয়েছিল তেমনি ১৯৮৮ সালের মহা প্লাবন, ১৯৯০ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সাধারণ মানুষের পাশে গিয়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে দাঁড়িয়েছিল।
আধুনিক বাংলা ছড়ার নন্দিত সৃষ্টিজন কবি ফয়েজ আহমেদ। তাঁর ছড়ার জগত বৈচিত্রময়। দেশকাল, মুক্তিযুদ্ধ, দৈনন্দিন সমাজ ভাবনা, জনসংগ্রাম থেকে একেবারে শিশুতোষ ভাবনার বর্ণিল প্রকাশ তার ছড়ার উপজীব্য হয়েছে। ঝিলিমিলি, তা তা থৈ থৈ, ছোট ছেলে মামানের, জোনাকীসহ অসংখ্য ছড়াগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর এই 'মজার পড়া ১০০ ছড়া'য় প্রকাশিত ছড়াগুলি আমাদের শিশু-কিশোর পাঠকদের জন্য একটি বড় উপহার বলে মনে করতে পারি। তিনি প্রধানত শিশু-কিশোরদের জন্য ছড়া ও কবিতা লিখেছেন। ফয়েজ আহমদের বইগুলোর মধ্যে চার খন্ডের কলাম সংকলন ''মধ্যরাতের অশ্বারোহী'' ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। মধ্যরাতের অশ্বারোহী ছাড়াও তাঁর ''সত্যবাবু মারা গেছেন'' শীর্ষক বইটি প্রচুর জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
ফয়েজ আহমদের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১০০। এর মধ্যে প্রচুর বই তিনি লিখেছেন শিশুদের জন্য। ছড়ার বইয়ের মধ্যে-'হে কিশোর', 'কামরুল হাসানের চিত্রশালায়', 'গুচ্ছ ছড়া', 'রিমঝিম', 'বোঁ বোঁ কাট্টা', 'পুতলি' 'টুং', 'জোনাকী', 'জুড়ি নেই', 'ত্রিয়ং', 'তুলির সাথে লড়াই', 'টিউটিউ', 'একালের ছড়া', 'ছড়ায় ছড়ায় ২০০' বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও তিনি চীনসহ বিভিন্ন দেশের পাঁচটি বই অনুবাদ করেছেন। এর মধ্যে হোচিমিনের জেলের কবিতা উল্লেখযোগ্য। ফায়েজ আহমেদ ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকার প্রাচীন ও সুবৃহৎ আর্ট গ্যালারী 'শিল্পাঙ্গণ'। তিনি প্রগতিশীল পাঠাগার 'সমাজতান্ত্রিক আর্কাইভ' এর প্রতিষ্ঠাতা।
মধ্যরাতের অশ্বারোহী’ নামে খ্যাত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য ফয়েজ আহমদ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তিনি ১৯৬৫ সালে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান পুরস্কার, ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮০,১৯৮২ সালে ভাসানী স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৮০ সালে অগ্রনী ব্যাংক পুরস্কার, ১৯৮৭ সালে সাব্বির সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯১ সালে একুশে পদক, ১৯৯৭ সালে শিশু একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া নুরুল কাদের শিশু সাহিত্য ও মোদাব্বের হোসেন আরা শিশু সাহিত্য পুরস্কারসহ আরও অনেক পুরস্কারে ভূষিত করা হয় তাঁকে।
ফয়েজ আহমেদ জীবনের শেষের দিকে দীর্ঘদিন হৃদরোগ ও চোখের গ্লুকোমায় ভুগছিলেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বরেণ্য ছড়াকার, দেশখ্যাত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ৮৪ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত রোগে বারডেম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সাংবাদিকতা জগতের অভিভাবক কবি ফয়েজ আহমেদের আজ ২য় মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা ভাষার শিশুতোষ সাহিত্যিকের মৃত্যুদিনে তাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৪২
কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৭
রোকসানা লেইস বলেছেন: "নাম ঠিক জানা নেই কিন্তু শান্ত না সেন্টু সন্তু"
তার আত্মার শান্তি কামনা করি