নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস 'আলালের ঘরের দুলাল'-এর প্রথম ঔপন্যাসিক প্যারীচাঁদ মিত্র। যিনি টেকচাঁদ ঠাকুর ছদ্মনামে সাহিত্য রচনা করতেন। প্যারীচাঁদ মিত্র ওরফে টেকচাঁদ ঠাকুর বাংলা গদ্যের অবয়ব নির্মাণ এবং বিবর্তনের ইতিহাসে এক বিশেষ উল্লেখযোগ্য নাম। যিনি বাংলা সাহিত্যে উপন্যাসের স্ফুটনোম্মুখ যুগে পুরোপুুরি না হলেও অন্ততঃ অংশত জীবনের সাথে শিল্পের সংযোগ ঘটাতে পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। ভাষা ব্যবহারে কথ্যরীতির অনুসরণ তাকে বাংলা সাহিত্যে বিশিষ্টতা এনে দেয়। তার প্রথম উপন্যাস ‘আলালের ঘরের দুলাল’(১৮৫৮) বাংলা গদ্যে সাড়া জাগানো প্রথম গ্রন্থ। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী প্যারীচাঁদ মিত্র বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলেও, পরবর্তীকালে সাংবাদিকতা ও বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্যই বিখ্যাত হয়ে আছেন। সমাজহিতৈষী ও সংস্কৃতিসেবী প্যারীচাঁদ মিত্র বাঙালি সমাজের কল্যাণে বহু সংগঠন গড়ে তোলেন। তিনি জ্ঞানোপার্জিকা সভা, বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি, ডেভিড হেয়ার মেমোরিয়াল সোসাইটি, রেস ক্লাব, এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড হর্টিকালচারাল সোসাইটি, বেথুন সোসাইটির সাথে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। প্যারীচাঁদ মিত্র দি ইংলিশম্যান, ইন্ডিয়ান ফিল্ড, হিন্দু প্যাট্রিয়ট, ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া এবং বেঙ্গল স্পেক্টেটর পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করতেন। তিনি পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেও সফল হয়েছিলেন। স্ত্রী-শিক্ষা প্রচারেও দিয়েছেন যথেষ্ট সক্রিয়তার পরিচয়। ১৮১৪ সালের আজকের দিনে তনি জন্মগ্রহণ করেন। আজ তার ২০০শত জন্মবার্ষিকী। বাংলা সাহিত্যের প্রথম ঔপন্যাসিক প্যারীচাঁদ মিত্রের ২০০তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
প্যারীচাঁদ মিত্র ১৮১৪ সালের ২২ জুলাই কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা রামনারায়ণ মিত্র প্রথম জীবনে হুগলি জেলা থেকে কলকাতা এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। প্যারীচাঁদ মিত্রের শিক্ষাজীবন শুরু হয় পারিবারিক পরিমণ্ডলে। তিনি একজন পণ্ডিত ও মুনশির কাছে যথাক্রমে বাংলা ও ফারসি শিখেছিলেন। পাশাপাশি তিনি শিখেছিলেন ইংরেজি ভাষাও। ১৮২৭ সালে তিনি হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে হেনরি ডিরোজিও নামের একজন অসাধারণ শিক্ষকের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এ কলেজেই তিনি তার শিক্ষাজীবন শেষ করেন। ১৮৩৬ সালে প্যারীচাঁদ মিত্রের কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরির ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন প্যারীচাঁদ মিত্র। পরে তিনি লাইব্রেরিয়ান হিসেবে পদোন্নতি পান এবং আরো পরে প্রতিষ্ঠানটির সেক্রেটারি বা সচিব হন। ব্যবসায়ী হিসেবেও তিনি ছিলেন সফল ব্যক্তিত্ব। পাবলিক লাইব্রেরির কাজের পাশাপাশি প্যারীচাঁদ মিত্র বিভিন্ন ব্যবসার সাথেও জড়িত হয়ে পড়েন। তিনি গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল কোম্পানি লিমিটেড, পোর্ট ক্যানিং গ্র্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি এবং হাওড়া ডকিং কোম্পানির মতো বিনিয়োগ কোম্পানির অংশীদার ও পরিচালক ছিলেন। এছাড়াও তিনি সমাজহিতৈষী ও সংস্কৃতিসেবী হিসেবে বিশেষ অবদান রাখেন। সমাজ-সচেতন প্যারীচাঁদ বিধবা-বিবাহকে সমর্থন করতেন এবং বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের তীব্র বিরোধী ছিলেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো, জেল ও কিশোর অপরাধীদের সংশোধন কেন্দ্রের পরিদর্শক, কলকাতা হাইকোর্টের গ্র্যান্ড জুরি, বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য, কলকাতা মিউনিসিপ্যাল বোর্ডের অবৈতনিক ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। এ ছাড়া, তিনি 'পশু-ক্লেশনিবারণীসভারও' সদস্যছিলেন।
১৮৫৭ সালে তার প্রথম উপন্যাস 'আলালের ঘরের দুলাল' প্রকাশিত হয় । এটি বাংলা ভাষায় প্রথম উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃত। এই উপন্যাসে তিনি প্রথমবারের মতো বাংলা সাহিত্যের গদ্যরীতির নিয়ম ভেঙে চলিত ভাষারীতি প্রয়োগ করেন। যা 'আলালী ভাষা' হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। আলালী ভাষারীতি বাংলা গদ্যের বাহন হিসেবে টিকতে পারেনি। কিন্তু পরবর্তীকালে বঙ্কিমচন্দ্রের হাতে যে আদর্শ গদ্যরীতির উদ্ভব ঘটেছিল তার পিছনে এ রীতির অবদান অনস্বীকার্য। এখানেই প্যারীচাঁদ মিত্রের সার্থকতা এবং বঙ্কিমচন্দ্রের মন্তব্যের যথার্থতা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আলালী ভাষা সম্পর্কে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পক্ষপাতহীন একটি মন্তব্য এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্যঃ ‘আমি এমন বলিতেছিনা যে আলালের ঘরের দুলালের ভাষা আদর্শ ভাষা। উহাতে গাম্ভীর্যের এবং বিশুদ্ধির অভাব আছে এবং ঊহাতে অতি উন্নত ভাবসকল,সকল সময়ে পরিস্ফুট করা যায় কিনা সন্দেহ । কিন্তু, উহাতেই প্রথম এ বাংলাদেশে প্রচারিত হইল যে, যে বাংলা সর্বজনমধ্যে কথিত এবং প্রচলিত তাহাতে গ্রন্থ রচনা সুন্দরও হয় এবং যে সর্বজন হৃদয় গ্রাহিতা সংস্কৃতানুযায়ী ভাষার পক্ষে দুর্লভ এ ভাষার তাহা সহজ গুণ।’
উপন্যাসটিতে তিনি ব্যবহার করেন সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা। আলালের ঘরের দুলাল উপন্যাসটি 'দি স্পয়েল্ড চাইল্ড' নামে ইংরেজিতেও অনূদিত হয়। আলালের ঘরের দুলাল : গ্রন্থটি সম্পূর্ণ সামাজিক পটভূমিকায় রচিত। নব্য শিক্ষিত ইয়ংবেঙ্গলদের কার্যকলাপ ও পরিণতি গ্রন্থটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। প্যারীচাঁদ মিত্র এই নবলব্ধ দৃষ্টিকোণ থেকে লক্ষ্য করলেন যে, ধর্ম ও নীতিহীনতাই উচ্ছৃঙ্খলতার মূল কারণ। সুতরাং জীবনযাত্রা প্রণালীর মধ্যেই রয়েছে এ থেকে মুক্তির পথ। এ কথা প্রতিপন্ন করার জন্যেই তিনি আলালের ঘরের দুলালের কাহিনী নির্মাণ করেন। আবাল্য অতি আদরের ধনীর পুত্র মতিলাল কখনও ধর্ম ও নীতির শিক্ষা পায়নি, উপরন্ত অসৎ সঙ্গে সে অবনতির শেষ ধাপে এসে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে মতিলালেরই অনুজ রামলাল আদর্শ চরিত্র। বরদাবাবুর একান্ত স্নেহছায়ায় বড় হয়ে সে তার সকল নির্দেশ মান্য করে সর্বজনের প্রশংসা অর্জন করেছে। মতিলালের চৈতন্যেদয় এবং আদর্শ জীবনের প্রতি আকর্ষণে সমাপ্তি। গ্রন্থের এই দুই প্রধান ঘটনাস্রোত বিচিত্র খণ্ড ক্ষুদ্র ঘটনায় পল্লবিত হয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মূল ঘটনা অপেক্ষা এ বিচিত্র খণ্ড ক্ষুদ্র পল্লবিত ঘটনাই গ্রন্থটির আশ্চর্য সফলতার কারণ। এছাড়াও তিনি ইংরেজি ভাষায় রচনা করেন The Zemindar and Ryots. এই গ্রন্থটি তখনকার সময়ে অনেক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। কারণ এটি রচিত হয়েছিলো চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। প্যারীচাঁদ মিত্র তার সাহিত্যিক জীবনে ১৯টি গ্রন্থ রচনা করেন যার মধ্যে ১১টি বাংলা। অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ক’টি হচ্ছে ‘রামারঞ্জিকা’(১৮৬০) স্ত্রীশিক্ষামূলক গ্রন্থ। ‘কৃষিপাঠ’(১৮৬১), ‘যৎকিঞ্চিত’(১৮৬৫), ‘ডেবিড হেয়ারের জীবনচরিত’(১৮৭৮) প্রভৃতি প্রবন্ধ গ্রন্থ। ‘অভেদী’(১৮৭১) ‘আধ্যাত্মিকা’(১৮৮০) ইত্যাদি নীতিবিষয়ক এবং সংলাপ প্রধান গল্পমূলক রচনা। ‘গীতাঙ্কুর’(৩য় সংস্করণ, ১৮৭০) ভ্রমণবিষয়ক গানের বই। ‘এতদ্দেশীয় স্ত্রীলোকদিগের পূর্বাবস্থা’(১৮৭৮)এবং ‘বামাতোষিণী’(১৮৮১) ইত্যাদি। তিনি তত্কালীন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথার বিরোধী ছিলেন এবং এর বিরুদ্ধে গ্রন্থও রচনা করেছেন। প্যারীচাঁদ মিত্রের রচিত উপন্যাসে জীবনের সামগ্রিক ও গভীর রূপ পরিস্ফুট না হলেও জীবনের খণ্ড চিত্র অঙ্কনে তাঁর পারদর্শিতা ছিল অপরিসীম। তাই তিনি ছিলেন খণ্ড চিত্র অঙ্কনের নিঁখুত ও সার্থক শিল্পী।
বাস্তব জীবনে রম্য লেখক প্যারীচাঁদ মিত্র বেশ রসিক হিসেবে সর্বজন পরিচিত ছিলেন। তার রসবোধের একটি নমুনাঃ একবার এক এলাকার অন্যতম ধনী দেব নারায়ন দে'র বাড়িতে একটা বড়সড় অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছিল। লেখা হচ্ছিল দেনাপাওনা ও খরচাপাতির ফর্দ। সেখানে উপস্তিত ছিলেন রসিক লেখক প্যারীচাঁদ মিত্র। খরচের ফর্দ দেখে প্যারীচাঁদ মিত্র বললেন-' একি মিস্টান্নের জন্য এতো কম টাকা? ব্রাম্মনকেও তো তেমন দেয়া হচ্ছেনা। এসব খরচ কিছু বাড়িয়ে দিন।' দেবনারায়ন দে বললেন-' প্যারীচাঁদ বাবু, আপনি শুধু খরচ বাড়াতে বলছেন। টাকাটা কে দেবে শুনি?' প্যারীচাঁদ মিত্রের তড়িৎ জবাব-'কেন, আপনি দেবেন। আপনার নামের আগে দে, নামের পরেও দে। দিতে আপনাকে হবেই। কি চমৎকার রসবোধ!!১৮৮৩ সালের ২৩ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী প্যারীচাঁদ মিত্র। আজ তার ২০০তম জন্মবার্ষিকী। বাংলা সাহিত্যের প্রথম ঔপন্যাসিক প্যারীচাঁদ মিত্রের জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
২২ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:১৮
কোবিদ বলেছেন:
কাশেম ভাই
হাটে হাড়ি ভাঙ্গা কি ঠিক হলো?
ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।
ভালো থাকবেন।
২| ২২ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৬
ডি মুন বলেছেন: শ্রদ্ধাঞ্জলী।
ভালো থাকুন সর্বদা।
২২ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৯
কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ ডি মুন
ভালো থকবেন
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:১৩
এম এ কাশেম বলেছেন: পোস্টের জন্য ধনয়বাদ নুরু ভাই।
শুভ কামনা।