নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিরোনামহীন

"আমার মাঝের অন্য আমি"

কৃষ্ণবিবর

একজন সাধারণ মানুষ।

কৃষ্ণবিবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজব কিন্তু আজব নয়

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪০

- ভাই, ও ভাই।



মধ্যবয়ষ্ক, সাধাসিধে ধরনের লোক। নজরে পরার মত কোন বৈশিষ্ট নেই। ডাকে সাড়া দিয়ে তাকালাম লোকটার দিকে।



- আপনাকে একটা জিনিস দেখাই।

- আমাকে? কি?



সাবধানে পকেটে থেকে বের করল কাচের মত কিছু একটা। রোদের আলো পরে চকচক করে উঠলো।



- কি জিনিস এটা?



মুচকি হাসি দিল লোকটা। প্রশ্নটা সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেল। এমন একটা জিনিসের কথা শুনেছি, নামটা ঠিক মনে পড়ছে না। কিন্তু সেগুলো আরো ছোট হয় আকারে। বেশ দামী।



- সুন্দর না জিনিসটা?

- জ্বী, সুন্দর।



বলতে বলতে জিনিসটা এগিয়ে দিলো লোকটা।



- আমি কি করব এইটা দিয়ে?

- আপনিতো দেখছি মজার মানুষ। জানেন এইটার অর্ধেক সাইজের একেকটার জন্য মানুষ মানুষকে মেরে ফেলছে। দাম জানেন এটার?

- কত?

- দাম পড়ে শুইনেন, আগে দেখেন জিনিসটা।



ভাল করে জিনিসটার দিকে তাকালাম। জিনিসটার মর্ম বোঝার চেষ্টা করছি।



- ভাই, এই জিনিস কোথাও পাবেন না। আপনাকে বলতে গেলে পানির দামে দিয়ে দিব।



এরপর যে দাম বলল তাতে ভিমড়ি খেলাম।



- এটার এত দাম কেন?

- ভাই যে কি বলেন! মাটির কত নিচে গিয়ে কত কষ্ট করে এই জিনিস জোগাড় করতে হয়। টন টন পাথর ভেঙ্গে চালের মত একটা দানা পাওয়া যায়। আর এইটাতো ভুট্টার দানার সাইজ। দাম হবে না?

- টন টন পাথর ভেঙ্গে এই জিনিস বের করার দরকার কি?

- কি বলেন, এত দামী জিনিস! টন টন পাথর কাটাতো কিছুই না।



অকাট্ট যুক্তি। বিতর্কের কোন সুযোগই নেই। কথা না বাড়ানোই শ্রেয় এইসব পরিস্থিতে। তবুও কৌতুহল থেকে প্রশ্ন করে বসলাম,



- ছোটগুলোর দাম কত।

- ঠিক নাই, কোনটা কম, কোনটা বেশি।

- দাম কে ঠিক করে?

- যে বেচে সেই দাম ঠিক করে, যা বলে তাই।

- তাই কি সম্ভব? যাক, গড় পড়তা একটা দাম বলেন।

- হবে কিছু একটা... দাম শুনে কি করবেন?

- তাহলে এইটার গড়-পড়তা দামটা আন্দাজ করতাম।



লোকটা অদ্ভুত চোখে আমার দিকে তাকালো। যেন এমন অদ্ভুত কথা এই প্রথম শুনলো।



- দেন ভাই, আমার জিনিস আমারে দিয়া দেন। ভুল লোকের কাছে দিয়ে ফেলসি। নামতা পইরা এই জিনিসের দাম হয় না।

- আরে থামেন ভাই। চেতেন কেন?

- ভাই শুনেন, এই জিনিস বেচার জন্য না। বিপদে পড়ে বেচতেছি। এমনিতে এটার যা দাম তার অর্ধেকে আপনাকে দিয়ে দিচ্ছি। কোন দামাদামী করা যাবে না। নিলে নেন, না নিলে ফেরত দিয়ে দেন।

- অস্থির হচ্ছেন কেন? জিনিসটা কি বুঝি। এইটা কি কাজে লাগে বলেন শুনি।

- দেখেন না কি সুন্দর?

- আর?

- আর, আবার কি?

- আর কোন কাজে লাগে না?

- লাগে, কিন্তু ওইগুলা আলাদা, এইটা কত বড় আর কত সুন্দর।



আচ্ছা তাহলে সব মিলিয়ে জিনিসটা খালি খুব সুন্দর। এমন জিনিসটাই দরকার। চেক বইটা বের করে আগামী ছয় মাসের বেতনের সমান একটা চেক লিখে দিলাম লোকটাকে।



- ভাই পুরা ঠকায়া দিলেন। বিপদে পরসি দেইখা দিলাম। বহুত খুব জিতসেন।



লোকটা যেমন হঠাৎ করে এসেছিল, তেমন হঠাৎ করেই চলে গেল। আমি কাচের মত জিনিসটা নিয়ে বসে আছি। ভালই হলো। মোটামুটি সস্তাতেই পেলাম। চিন্তা করতে করতেই জিনিসটার নাম মনে পড়ে গেল...

.

.

.

.

.



ভাবছেন এমনটা জিনিস বুঝি কেবল গল্পেই থাকে! আরেকবার ভাবুন। এই জিনিস আমাদের সবারই পরিচিত। কিছু তথ্য:



১. এটি যতটা দুর্লভ ভাবা হয়, মোটেও ততটা দুর্লভ নয়। সাউথ আফ্রিকা, রাশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়াতে এর যে পরিমান মজুদ আছে তা চাহিদার তুলনায় ঢের বেশি। এর যে দুর্লভ্যতা তা কৃত্রিম।

২. স্বর্ণের মত এর নিজস্ব কোন মুল্য নেই। সহজ ভাষায় ১০ টা ১ কেজি স্বর্ণের বারের দাম আর ১ টা ১০ কেজি স্বর্ণের বারের দাম সমান। এই জিনিসের ক্ষেত্রে এমনটি সত্য নয়। বিক্রেতার নির্ধারিত মুল্যই এটার মূল্য।

৩. এটি পৃথিবীর কঠিনতম জিনিস নয়।

৪. বিয়ের আংটি হিসেবে এর ব্যবহারের ইতিহাস ১০০ বছরেরও কম।



ঠিক ধরেছেন, হীরের কথাই বলছি। তাহলে জিগ্যেস করছেন হীরের দাম এত কেন? - "Because you think so!"



(ইউটিউবের এক ভিডিও থেকে আইডিয়া প্রাপ্ত। কিন্তু ভিডিওটা কিছুতেই খুজে পাচ্ছি না আর।)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.