নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্তরালে ...

অনেকের মাঝেও একা থাকা যায়, নি:সঙ্গতায় কারো অনুভব ছুঁয়ে যায় ...

আইরিন সুলতানা

***বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই; রাজাকারদের না বলুন*** ----------------------------- ::: সুস্থ ব্লগিং নীতিমালার সঠিক বাস্তবায়ন চাই ::: -----------------------------

আইরিন সুলতানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

৭ই মার্চের ভাষণঃ স্বাধীনতার দলিল বনাম জিয়ে পাকিস্তান/জয় পাকিস্তান/পাকিস্তান জিন্দাবাদ নামা

০৫ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:৫৬

পরিপ্রেক্ষিতঃ

১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ছয় দফা দাবী পেশ করে, যেখানে সুনির্দিষ্ট করে স্বাধীনতার কথা উল্লেখ না থাকলেও এই ছয় দফা প্রস্তাবনার মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার দাবিকে প্রতিষ্টিত করা। পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ছয় দফা প্রত্যাখ্যাত হয় এবং আইয়ুব-মোনায়েম গং সহিংসতার পথকেই বেছে নেয়। শুরু হয় ধরপাকড়। এই পর্যায়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার কর্মীরা গ্রেফতার হন। শেখ মুজিব, তাজউদ্দীন আহমদও বন্দি হন। পাকিস্তানের সামরিক শাসকেরা শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রবিরোধী আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান আসামী করে তাকে ফাঁসিতে ঝুলানোর চক্রান্ত বাস্তবায়নে উদ্যোগী হয়। কিন্তু উনসত্তরের সেই গণআন্দোলনে ছাত্র-জনতার ক্রমবর্ধমান রোষের মুখে মামলা খারিজ হয় এবং ২২শে ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব মুক্তি লাভ করেন। ২৩শে ফেব্রুয়ারি বৃহত্তম জনসমাবেশে শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেয়া হয়। জেনারেল আইয়ুবের পতনে ক্ষমতার রদবদলে রাষ্ট্রপরিচালনায় আসে জেনারেল ইয়াহিয়া খান।



পরিস্থিতি আরো শ্বাসরূদ্ধকর হয়ে ওঠে যখন সত্তরের জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একক সরকার গঠনের সাংবিধানিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করেন জুলফিকার আলী ভুট্টো, পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা, প্রস্তাব করেন পাকিস্তানের দু’ভাগে দু’জন প্রধানমন্ত্রী পদ্ধতির। শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফাও নামঞ্জুর করেন ভুট্টো।



".. .. .. A conspiracy has been going on against the people of Bangladesh by the bureaucrats, the vested interest, the ruling cliques and coterie for the last 22 years. If they are playing their old games now, they should know that they were playing with fire." (Press conference by Sheikh Mujib, 26th November, 1970, APP)



ভাষণের প্রস্তুতিঃ

দেশের ভাগ্য নির্ধারণে তৎকালীণ প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩রা মার্চ অধিবেশন আহ্বান করেন । কিন্তু আকষ্মিকভাবে ১লা মার্চ এই অধিবেশণ মূলতবি করে সেনাপতি আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে হাত দিলেন যেন। পাকিস্তানি জে. রাও ফরমান আলী পরবর্তীকালে তার গ্রন্থে লিখেছেন, "ইয়াহিয়ার ঘোষণার পর সমগ্র বাঙালি জাতিই এবার যুদ্ধের পথে নেমে গিয়েছিল। আমার মনে কেন সন্দেহ নেই, অধিবেশন মুলতবি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের ভাঙন ঘটেছিল।" ছাত্র-জনতা ছুটে গিয়েছিল সেদিন শেখ মুজিবের কাছে। হোটেল পূর্বাণীতে ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা নিয়ে সহকর্মীদের সাথে আলোচনারত বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিকভাবে জণাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষনা করেন,"লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে। জনতার শোষণ মুক্তিই আমাদের লক্ষ্য। আমরা এই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করবই। আগামী ৭ই মার্চ পর্যন্ত সমগ্র পূর্ব বাংলায় প্রত্যেকদিন বেলা দু’টো পর্যন্ত হরতাল অব্যাহত থাকবে। আর এর মধ্যে ষড়যন্ত্রকারীরা যদি বাস্তব অবস্থাকে স্বীকার করতে ব্যর্থ হয় তাহলে ৭ই মার্চে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে।" (একাত্তরের রণাঙ্গন, শামসুল হুদা চৌধুরী, আহমেদ পাবলিশিং হাউজ, ঢাকা, ১৯৮৪) বঙ্গবন্ধুর প্রতি আস্থাশীল বাঙালির মনোবল প্রবল দৃঢ়তায় গর্জে ওঠে, "পরিষদে লাথি মার/বাংলাদেশ মুক্ত কর।"



শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২রা মার্চ ঢাকায় এবং ৩রা মার্চ সারাদেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়। ২ মার্চ সেনাবাহিনীর গুলিতে বেশ কিছু মানুষ হতাহত হয়। হত্যার জবাবে বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট জানিয়ে দেন, "মনে রাখবেন, ৭ কোটি মানুষকে গুলি করে মারা যাবে না। আর যদি মারেন, তাহলে আমরাও মারবো।" তিনি ৩রা মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সমগ্র পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পল্টনের এই সভায় কবিগুরুর ’আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটিকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ঘোষনা করা হয়। ৪ঠা মার্চ বঙ্গবন্ধু জাতিকে সার্বিকরূপে প্রস্তুতি গ্রহণে বলেন, "চরম ত্যাগ স্বীকার ছাড়া কোনদিন কোন জাতির মুক্তি আসেনি।"



৭ই মার্চের ভাষণ পূর্ব আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াঃ

একাত্তরের মার্চকে এমনি এমনিই আর উত্তাল বলা হয়না, বিশেষত ৭ই মার্চকে ঘিরে একদিকে বাঙালি টগবগে অন্যদিকে পাকিস্তানি শাসকের বাড়ন্ত ভয়ভীতি, উৎকন্ঠা। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনও ৭ই মার্চকে তাদের পর্যবেক্ষণে রেখেছিল। ৫ই মার্চ ঢাকা থেকে দি টাইমস এর সংবাদতদাতা পল মার্টিন এক সংবাদে শেখ মুজিবুর রহমানকে বিদ্রোহী বাংলার শাসক হিসেবেই উল্লেখ করেন। ৬ মার্চ লন্ডনের দি টাইমস এর সম্পাদকীয় মন্তব্যে বলা হয়, "প্রতিবাদমুখর পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কচ্যুত হওয়ার দাবি ঘণ্টায় ঘণ্টায় তীব্রতর হচ্ছে।" ৬ই মার্চ করাচি থেকে পিটার হ্যাজেলহার্স্ট এক রিপোর্টে জানান, "পূর্ব পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবের সামনে দুটি পথ খোলা রয়েছে। ৭ মার্চ তিনি একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারেন অথবা সংসদ ডেকে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের নেতাদের যোগদানের আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।" (দি সানডে টাইমস, ৭.৩.১৯৭১)। এমনকি ৭ই মার্চের ভাষণ নিয়ে ওয়াশিংটনে ৬ই মার্চ আপাল-আলোচনায় ব্যতিব্যস্ত ছিলেন কিসিঞ্জার গং। সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের ২০০৮ সালে প্রকাশিত ’১৯৭১: আমেরিকার গোপন দলিল’ বইটির ১৩৩ পৃষ্ঠায় ’৭ই মার্চের ভাষণ শুনতে ওয়াশিংটনের রূদ্ধশ্বাস অপেক্ষা’ অংশে বলা হয়েছে,"মুজিবের সভার এক দিন আগে ৬ই মার্চ ওয়াশিংটন সময় ১১টা ৪০ মিনিটে শুরু হওয়া বৈঠকে কিসিঞ্জার স্টেট ডিপার্টমেন্টের পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে বাঙালি নেতার সম্ভ্যাব্য ভাষণ নিয়ে প্রায় ৪০ মিনিট আলোচনা করেন। কিসিঞ্জারের সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের ওই বৈঠকে শেখ মুজিব ভাষণে কী বলবেন, স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন কি না, তিনি যদি আমেরিকার সহায়তা চান, তখন তারা কী করবেন এসব নিয়ে আলোচনা হয়।" বইটির এই অংশে উক্ত বৈঠকে উপস্থিত ক্রিস্টোফার হোলেনের বক্তব্য তুলে ধরা হয়, "আগামীকাল মুজিবেব সামনে সম্ভবত তিনটি বিকল্প পথ খোলা । এক. একতরফাভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা, দুই. এর চেয়ে কম কিছু সম্ভবত দু’টি সংবিধার প্রণয়নের দাবি জানান, তিন. ২৫শে মার্চ ইয়াহিয়া আহৃত অধিবেশনে যোগ দিতে রাজি হওয়া।" ৭ই মার্চ সকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড ধানমন্ডির ৩২ নম্ভব বাসভবনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করে তাকে সেদিনের জনসভায় স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান।



অবশেষে রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চঃ

৭ই মার্চের প্রস্তুতিতে বাঙালির মধ্যে উৎসবের আমেজও ছিল, সাথে টান টান উত্তেজনা। জনসভা সফলের জন্য কারো অনুমতির তোয়াক্কা না করেই পাড়ায় পাড়ায় অলিগলিতে চলেছে মিছিল। সবাই জানতো সেদিন রেসকোর্স ময়দানে তিল ধারণের জায়গা হবে না। তাই সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে। গন্তব্য রেসকোর্স ময়দান। দুপুর দুটোর মধ্যেই জনসভার মাঠ লোকে-লোকারণ্য হয়ে যায়। তাজউদ্দীন আহমদ উপস্থিত জনস্রোতকে নিয়ন্ত্রণের জন্য বারবার মাইকে সবাইকে ধৈর্য্য ধারনের অনুরোধ জানান। শেখ মুজিব ছাড়া অন্য কোন নেতাই সেদিন কোন বক্তৃতা প্রদান করেননি। অবশেষে পাকবাহিনীর তাক করা আগ্নেয়াস্ত্রকে তাচ্ছিল্য করে প্রায় ১০ লাখ মানুষের মাঝে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯ মিনিটে রচনা করেছিলেন এক মহাকাব্য - ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ।



৭ই মার্চের ভাষণ পরবর্তী প্রতিক্রিয়াঃ

প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট এবিএম মূসা লিখেছেন, "প্রকৃতপক্ষে ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি চরণ নিয়ে একটি আলাদা প্রবন্ধ লেখা যেতে পারে।" তিনি আরও বলেছেন, "৭ মার্চের আগেই আমরা স্বাধীন হয়ে গিয়েছিলাম, যখন থেকে ঘরে ঘরে স্বাধীন বাংলার সবুজ-লালের মধ্যে মানচিত্র আঁকা পতাকা উড়ছিল, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যখন সরকার চলছিল, অফিস-আদালত ও ব্যবসা, কল-কারখানায় কাজ চলছিল।"



বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী সরদার সিরাজুল ইসলাম, ৭ মার্চের ভাষণকে 'মহাকাব্য' হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, "৭ মার্চ থেকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি ঘটল এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটল ।"



পাকিস্তানি সামরিক চিন্তাবিদ জেনারেল কামাল মতিনউদ্দীন তার 'দ্য ট্র্যাজেডি অফ এরর' গ্রন্থে লিখেছেন, "যে কোন দিক থেকেই ৭ মার্চ ছিল মুজিবের দিন। তার কণ্ঠে ছিল প্রচণ্ড আবেগ। পুরো পরিস্থিতি ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। তার কণ্ঠের দৃঢ়তায় জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। তার পুরো বক্তব্যে এতটাই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল, মনে হয় সেদিন গাছ-পাথরও আন্দোলিত হয়েছিল। জনগণের প্রাণচাঞ্চল্য ছিল উদ্দীপনাময়।" (পৃষ্ঠা ১৯০)। এরপর তিনি বলেন, "প্রকৃতপক্ষে ১৯৭১-এর ৭ই মার্চেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়।"



অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ শেখ সাহেবের কর্মসূচীর প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে মন্তব্য করেছিলেন, ”আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান যে শর্তাবলী আরোপ করিয়াছেন তাহা নিম্নতম ও ন্যায় সঙ্গত।” (ইত্তেফাক, ৯-৩-৭১)



চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ইতিহাসবিদ ড. এ. আর মল্লিক লিখেছেন, "আমার মনে হয়, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বাঙালির ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন। .. .. ৭ই মার্চের ভাষণ বেতার (পরদিন) মারফত চট্টগ্রামে থেকেই আমাদের শোনার সুযোগ হয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি সংগ্রামে যোগ দেবার সিদ্ধান্ত নেই ঐ দিনই।" (আমার জীবন কথা ও বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম, এ. আর. মল্লিক, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, ১৯৯৫)



শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান ৭ই মার্চের অনুভুতির কথা এভাবে মনে রেখেছেন, ".. .. ৭ই মার্চের বক্তৃতা .. শুনতে পেলাম ৮ই মার্চে। কী অসাধারণ ভাষণ ! সর্বশরীর রোমাঞ্চিত হয়। বঙ্গবন্ধু যখন বললেন, ’এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, 'এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, তখনই মনে হলো, পৃথিবীর বুকে একটি নতুন জাতির জন্ম হলো .. ..।" (আমার একাত্তর, আনিসুজ্জামান, সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা, ১৯৯৭)



চট্টগ্রামস্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ইউনিটের সেকেন্ড ইন কমান্ড, মেজর জিয়াউর রহমানের এ প্রসঙ্গে একটি উক্তি উল্লেখেযাগ্য, "৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ঘোষণা আমাদের কাছে এক গ্রীন সিগন্যাল বলে মনে হল। আমরা আমাদের পরিকল্পনাকে চুড়ান্ত রূপ দিলাম। কিন্তু তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে তা জানালাম না। .. .. .." (একটি জাতির জন্ম, দৈনিক বাংলা, ২৬শে মার্চ, ১৯৭২, পুনর্মুদ্রিত সাপ্তাহিক বিচিত্রা, স্বাধীনতা সংখ্যা, ১৯৭৪)।



৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্লেষণঃ

কিছুদিন ধরে টেলিভীষনে মীর শওকত আলী’র সাক্ষ্যাৎকার ঘুরে ফিরে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন চ্যানেলে আসছিল। প্রসংগ ছিল স্বাধীনতার ঘোষক বিতর্ক। সেই আলোচনাতেই মীর শওকত বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মূল রূপরেখাগুলো তুলে ধরেন তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে।

বঙ্গবন্ধুর সেই প্রতাপশালী ভাষণের কিছু অতি পরিচিত কিছু অংশে আলোকপাত করা যায় এভাবে-



"এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"

- এর অর্থ আমাদের লক্ষ্য কিন্তু নির্ধারিত হয়ে গেছে এবং এতে জনগণও সম্পৃক্ত হয়ে গেছে পূর্ণ সমর্থনে এবং আমরা যে স্বাধীন জাতিস্বত্ত্বা কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নিতে চাই তার সুষ্পষ্ট ঘোষনা দেয়া হচ্ছে।



"ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো...তোমাদের যার যা আছে তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো "

- আমাদের লক্ষ্য ইতিমধ্যে নির্ধারিত। সংগ্রাম/যুদ্ধের আহ্বান হয়ে গেছে। এবার যুদ্ধের প্রস্তুতি, কৌশল কিভাবে হবে তার নির্দেশনা বহন করছে এই উক্তি।



"আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি ...."

- এ হলো চূড়ান্ত আদেশ। যদি বঙ্গবন্ধু আবারো যুদ্ধের আহ্বান করতে অসমর্থ হন, তবুও বাঙালি যেন এই সংগ্রাম অটুট রাখে।



বিশেষজ্ঞরা ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মূল সুরগুলোকে বয়ান করেন এভাবে -



• সামগ্রিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা ;

• নিজ ভূমিকা ও অবস্থান ব্যাখ্যা ;

• পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনীতিকদের ভূমিকার ওপর আলোকপাত ;

• সামরিক আইন প্রত্যাহারের আহবান ;

• অত্যাচার ও সামরিক আগ্রসন মোকাবিলার হুমকি ;

• দাবী আদায় না-হওয়া পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে সার্বিক হরতাল চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা ;



জিয়ে পাকিস্তান নাকি জয় পাকিস্তান নাকি পাকিস্তান জিন্দাবাদঃ

যে গতানুগতিক ভাষণটি আজ ৩৯ বছর ধরে আমরা শুনে আসছি, তার সর্বশেষে শেখ মুজিবের বজ্রকন্ঠে ধ্বনিত হয় ’জয় বাংলা’ । একটা বিতর্ক সময় সময় চাগিয়ে ওঠে যে, বঙ্গবন্ধু জয় বাংলার পর বলেছিলেন ’জয় পাকিস্তান’। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান প্রায় সমান সমান। খুবই মজার হলো এই পক্ষ-বিপক্ষের মতামতগুলো গড়ে উঠেছে, সেই ৭১ সালে যারা বিচরণ করতেন তাদের কর্তৃকই। এখানে আরো একটি মজার খেলা আছে, আমাদের স্বাধীনতার বিরোধীতা করে শেখ মুজিবের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান তারা সুযোগ বুঝে শেখ মুজিবের ’জিয়ে পাকিস্তান’ জিকির তুলে চুপ মেরে যান। কিন্তু প্রমাণ হিসেবে তাদের পক্ষ থেকে এখনো কোন অডিও/ভিডিও রেকর্ড পেশ করা সম্ভব হয়নি এই ৩৯ বছরেও। তবে অনেক প্রাজ্ঞজনের বক্তব্য থেকে আংশিক কথা তুলে এনে প্রমাণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে যে শেখ মুজিব ’জিয়ে পাকিস্তান’ বলেছিলেন। তৃতীয় মজার ক্ষেত্রটি হচ্ছে, কেউ কেউ বলেন বঙ্গবন্ধু জিয়ে পাকিস্তান বলেছেন, কেউ বলেন জয় পাকিস্তান বলেছেন এবং কেউ বলেন পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলেছেন। তিনটি স্লোগান অর্থগত দিক দিয়ে একই হলেও এখানে তথ্যগত বিভ্রান্তি ঘটছে তাতে কোনই সন্দেহ নেই।



সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমানের লেখা ‘বাংলাদেশের তারিখ’ (প্রথম সংস্করণ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘জয় বাংলা, জিয়ে পাকিস্তান’ বলে ৭ মার্চের ভাষণ শেষ করেন। এরপর অনেকের পুরনো স্মৃতিরোমন্থনে কিংবা মুখ থেকে মুখেতে শব্দ বিভ্রাট ঘটতে ঘটতে জিয়ে পাকিস্তান হয়ে গেল জয় পাকিস্তান কিংবা পাকিস্তান জিন্দাবাদ।



যারা শুনেছিলেন বলে দাবি করেন, তারা কী বলেন, তারা কী ভাবেনঃ

’জিয়ে’ শব্দটি মূলত সিন্ধিভাষীরা ব্যবহার করে। এর অর্থ বেঁচে থাকুক বা জয় হোক। ষাটের দশকের শেষ দিকে ও সত্তর দশকের শুরুতে তৎকালীন পাকিস্তানের সিন্ধু অঞ্চলে (বর্তমানে সিন্ধু প্রদেশ) পূর্ব বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনের অনুকরণে জিয়ে সিন্ধ নামে আন্দোলন শুরু করেছিলেন এক নেতা (সম্ভবত জনাব জিএম সৈয়দ)। ৭ই মার্চে যারা বঙ্গবন্ধুকে জিয়ে পাকিস্তান বলতে শুনেছিলেন বলে দাবি জানান তাদের কেউ কেউ এটাই ভেবেছিলেন বঙ্গবন্ধু পক্ষান্তরে কৌশলে সিন্ধি আন্দোলনের প্রতি তাঁর সমর্থন জানিয়েছিলেন । এ প্রসংগে কেউ কেউ বলেন যে, হাবিবুর রহমান কোন এক আলোচনাতে সম্ভবত ব্যক্ত করেছিলেন, জিয়ে পাকিস্তান বলে বঙ্গবন্ধু মূলত পাকিস্তানের প্রতি শেষবারের মত শুভেচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।



সাংবাদিক নির্মল সেনের 'তবে একথা সত্য, শেখ সাহেব ৭ মার্চের বক্তব্যের শেষদিকে বলেছিলেন, জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান' বক্তব্যকে ব্যবহার করতেও ছাড়েন না সন্দেহভাজনরা। কিন্তু নির্মল সেনের পরবর্তী ব্যাখ্যাগুলোকে আড়ালে-আবডালে রাখা হয়। কী ছিল নির্মল সেনের সেই ব্যাখ্যা? নির্মল সেন বলেছিলেন-



"...অধিকাংশ লোকের বিশ্বাস আমি মিথ্যা বলেছি। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমার স্মৃতি আমাকে বিভ্রান্ত করেনি। এবং আমার মতে, সেদিন জয় পাকিস্তান বলে শেখ সাহেব সঠিক কাজ করেছিলেন। একজন বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে আমি একটি ভিন্ন কথা শুনেছি। বিশেষ করে বামপন্থী মহল এটা বলেছে। তারা সমালোচনা করেছে, শেখ সাহেব স্বাধীনতা ঘোষণা দিলেন না কেন? আবার একই মুখে বলেছেন শেখ সাহেব বুর্জোয়া নেতা। তিনি কিছুতেই স্বাধীনতা ঘোষণা দিতে পারেন না। আমার মত হচ্ছে, জয় পাকিস্তান না বলে কোনো উপায় ছিল না। তখনো আলোচনা শেষ হয়নি। ক’দিন পর ইয়াহিয়াদের সঙ্গে আলোচনা করার কথা। একটি লোকও স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত নয়। সেদিন যদি জয় পাকিস্তান না বলে শুধু ‘জয় বাংলা’ বলতেন এবং স্বাধীনতার ঘোষণা দিতেন তাহলে ইয়াহিয়া বাহিনী মারমুখী আক্রমণ করত। লাখ লাখ লোক প্রাণ হারাতো। তখন এই মহলটিই বলত জনতাকে কোনো প্রস্তুত না করে এ ধরনের স্বাধীনতা ঘোষণা বালখিল্যতা। এ জন্যই অসংখ্য লোকের প্রাণহানি হয়েছে এবং এর জন্যই শেখ মুজিবের বিচার হওয়া উচিত।…"



নির্মল সেনের মধ্যে হয়ত আরো খানিক ইতঃস্ততা কাজ করছিল, তাই তিনি এ ব্যাপারে সরাসরিই বঙ্গবন্ধুর সাথে কথা বলেন। নির্মল সেনের ভাষ্যমতে বঙ্গবন্ধু সেদিন তাঁকে জানিয়েছিলেন,



"...আমাকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে হলে অনেক পথ অতিত্রক্রম করতে হবে। ইয়াহিয়ার সামরিক সরকারকে শেষ কথা বলতে হবে। পশ্চিম পাকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে ভুট্টো। তার সঙ্গেও কথা বলতে হবে। আমি এই আলোচনা শেষ না করে কিছু করলে পৃথিবীতে আমি জবাবদিহি করতে পারব না। আমি এখন ভালো অবস্থানে আছি। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হয়েও আমাকে ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে না। ... আমাকে আমাদের সেনাবাহিনী ও সরকারের কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপ করতে হবে। সেই আলাপ এখনো শেষ হয়নি। সবদিকে এত অপ্রস্তুত রেখে একটি দেশকে আমি সংগ্রামের মুখে ঠেলে দিতে পারি না। আপনি কি বোঝেন না ওইদিন চারদিকে শত্রু বেষ্টিত অবস্থায় আমার অন্য কিছু বলার ছিল না...।"



এরপর নির্মল সেনের নিজের বক্তব্য ছিল, এরপরও যদি বলা হয় যে শেখ সাহেব ভুল করেছেন তো ওই ভুলটুকু না করলে ২৫শে মার্চের চেয়ে ৭ই মার্চেই অধিক সংখ্যক লোক মারা পড়ত।



যারা শোনেননি বলে নিশ্চিত করেন, তারা কী বলেন, তারা কী ভাবেনঃ

এই প্রসংগেই এক ব্লগে মন্তব্য আকারে একজন জানান যে, তার সাথে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর ফোনালাপ হয় এবং সেই আলাপে এই প্রপাগান্ডাটি যে স্ববিরোধী তা বলতে গিয়ে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী পরিস্কার জানিয়েছেন, প্রথমত বঙ্গবন্ধু এধরনের কিছু একদমই বলেননি, এবং দ্বিতীয়ত যদি ধরেই নিতে হয় যে বঙ্গবন্ধু এমন কিছু বলেছিলেন তাহলে তিনি "জিয়ে পাকিস্তান’ না বলে "জয় পাকিস্তান" বলতেন। আরো একজন ব্লগার বলেছিলেন যে, তার বাবা সেই ভাষণের সরাসরি রেকর্ড করেছিলেন, ফলে সেই রেকর্ড শুনতে শুনতেই তিনি বড় হয়েছেন, এবং সেই রেকর্ড "পাকিস্তান জিন্দাবাদ" জাতীয় কোন স্লোগান তিনি শোনেননি। একজন জানিয়েছিলেন, তিনি অনেক পুরনো একটি ভিএইচএস -এ এই ভাষণ দেখেছিলেন,শুনেছিলেন। এবং জয় বাংলা বলার পর বঙ্গবন্ধু মাইক্রোফোনের সামনে থেকে সরে যান।



শফিক আহমেদ নামে একজন একটি মন্তব্যে জানিয়েছিলেন যে, এর পূর্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে, ১৫ই অগাষ্টে বিটিভিতে প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলো তার সংগ্রহে রেকর্ড করা রয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের সম্পূর্ণ ভাষণটি রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। তিনি জানান, আমরা যে গতানুগতিক অংশটি পর্যন্ত জানি, অর্থ্যাৎ "....এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা" এরপর সামান্য বিরতীতে শেখ মুজিব মঞ্চে আবারো ফিরে আসেন। (তারমানে জয় বাংলার পর জয় পাকিস্তান/জিয়ে পাকিস্তান/পাকিস্তান জিন্দাবাদ জাতীয় কোন স্লোগানের অস্তিত্ব তখন পর্যন্ত নেই)এবং ডায়াসের সামনে থেকে এগিয়ে মঞ্চের সামনে চলে আসেন। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি আরো কিছু আবেগঘন কথা বলেন ...যা অনেকটা এরকম -



"আপনাদের সাথে কোনদিন বেঈমানি করিনাই...আমাকে জেল দিয়ে, ফাঁসি দিয়েও ভুলাতে পারে নাই...এই রেসকোর্সেই আপনারা আমাকে একদিন মুক্ত করে এনেছিলেন, সেদিন বলেছিলাম, জীবন দিয়ে হলেও আমি আপনাদের বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবো, আমি জীবন দিতে প্রস্তুত" .............. এরপর বঙ্গবন্ধু ভাষণের সমাপ্তি টানেন এইভাবে -"আমাদের সভা এইখানে সমাপ্ত, আসসালামু আলাইকুম"



প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক অধ্যাপক ডঃ অজয় রায় তার একটি রচনাতে জানান যে, তিনি ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত ছিলেন কিন্তু জয় পাকিস্তান জাতীয় কোন বাক্য তিনি সেদিনের ভাষণে শোনেননি। তিনি আরো যোগ করেন, ৮ই মার্চ ঢাকাসহ বাংলার সকল বেতার কেন্দ্রে ৭ই মার্চের ভাষণটি বারবার প্রচারিত হতে থাকে যেখানে এই বাক্যটি সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত ছিল। ডঃ অজয় রায়ের মতে রেডিও তে প্রচারিত ওই ভাষণটিই এখন পর্যন্ত সবচাইতে প্রামাণিক। এছাড়াও ডঃ অজয় রায় উল্লেখ করেন যে, ৭ই মার্চের ভাষণের পরের দিন অর্থ্যাৎ ৮ই মার্চ দৈনিক পাকিস্তান, ইত্তেফাক, পাকিস্তান অবজারভার, দি পিপল পত্রিকাগুলোতে কোথাও জয় পাকিস্তান নিয়ে কোন ধরনের তথ্য ছাপা হয়নি।



বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ কি কোন প্রেক্ষাপটেই ম্লান হয় আদৌ?

যারা খুব সূক্ষ্ণভাবে জিয়ে পাকিস্তান প্রসংগটি টেনে আনেন তাদের মধ্যে অনেকে আবার এক কাঠি সরেস হয়ে বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার বলে বসেন! বঙ্গবন্ধু রাজাকার হলে সেসময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে নিয়ে তটস্থ থাকতো না। কিংবা গোলাম আযম, নিজামীরা যারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিয়েছিল তারা তখন শেখ মুজিবকে বুকে টেনে নিতে দেরী করতো না।



জিয়ে পাকিস্তান বলা অথবা না বলা নিয়ে তর্কের উগ্র পর্যায়ে খেয়াল রাখুন, সেদিন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি শব্দ একই সাথে ধ্বনিত হচ্ছিল উপস্থিত জনতার মাঝেও। ফলে সেদিন, সেসময় উত্তাল জনতা যদি বঙ্গবন্ধুর প্রতি কোনরূপ বিরূপ মনোভাব পোষণ না করে তাঁর নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালনে সাড়া প্রদান অব্যাহত রাখে, তাহলে যে সন্দেহের আঙ্গুল বঙ্গবন্ধুর দিকে তোলা হচ্ছে, সে সন্দেহের আঙ্গুল তো উপস্থিত জনতার দিকেও তোলা উচিৎ। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই আশা করা যায় যে, এই বোকামিটুকু করার মত ধৃষ্টতা আমরা কেউ দেখাবো না।



কেউ কেউ দাবি করেন, স্বাধীনতার পর সমস্ত রেকর্ড থেকে জিয়ে পাকিস্তান মুছে ফেলা হয়েছে। যে রেকর্ডগুলো মুছে ফেলা হয়েছে, সেগুলো নিশ্চিতভাবে সরকারি আর্কাইভে থাকা রেকর্ড। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধচলাকালীন সময় তো এই ভাষণ শুনে শুনেই জনতা অনুপ্রাণিত হয়েছিল, অনেকের কাছেই সেই ভাষণের সংগ্রহ থাকার কথা। এগুলো খুঁজে খুঁজে তো মুছে ফেলা সম্ভব হওয়ার কথা নয়।



যেসব প্রত্যক্ষদর্শীরা জিয়ে পাকিস্তান এর উচ্চারণরণকে নিশ্চিত করেন তারা কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতি বীতশ্রদ্ধতা দেখানোর মত সাহস করেননি, বরং এর যৌক্তিকতা, প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষাপটকেই পরবর্তীতে পরিস্কার করেছেন, এবং সেই অংশটিই অনেক সুবিধাবাদিরা এড়িয়ে যান সন্তর্পনে।



বঙ্গবন্ধুর সব সিদ্ধান্তই সঠিক, তিনি সব ক্ষেত্রেই দূরদর্শী ছিলেন তা নয়। তিনি নেতা হিসেবে যতটা সফল ছিলেন, শাসক হিসেবে ততটা বলিষ্ঠ ছিলেনা না অনেকক্ষেত্রেই। বস্তুত দুনিয়ায় আলোচিত কোন নেতাই এমন ভুলক্রটির উর্ধ্বে ছিলেননা কখনই। ফলে সব কথার শেষ কথা এই যে, জিয়ে পাকিস্তান বলা , না বলাতে বঙ্গবন্ধুর আন্তরিক ভূমিকাকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই, তেমনি ৭ই মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণও এতো কিছুর পর কোন ভাবেই ম্লান হয়ে যায় না।

মন্তব্য ৯৪ টি রেটিং +৩১/-৩

মন্তব্য (৯৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:৫৭

বাবুল হোসেইন বলেছেন: Click This Link

০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৫৪

আইরিন সুলতানা বলেছেন: ধন্যবাদ আপডেটের জন্য।

২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:০০

বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত বলেছেন: নির্মল সেন কি মিথ্যা বলেছেন......????

০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:১১

আইরিন সুলতানা বলেছেন:
নির্মল সেন কী কী বলেছিলেন তা ঠিক মত পড়ে নিন আগে।

৩| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:১২

এরশাদ বাদশা বলেছেন: বঙ্গবন্ধু যদি সেদিন জিয়ে বা জয় পাকিস্থান যেটাই বলিনা কেন, উচ্চারণ করতেন, উপস্থিত লাখো বাঙালি মূহুর্তেই বঙ্গবন্ধুকে টেনে ডায়াস থেকে নামিয়ে আনতো।

ওই ভাষনের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য বঙ্গবন্ধুর অন্তর থেকে স্ফুলিঙ্গের মতো বের হচ্ছিলো। বাংলা যতোদিন বেঁচে থাকবে, যুগে যুগে নতুন প্রজন্ম সেই ভাষন থেকে নিজেদের ভেতরের শক্তিমত্তাটাকে অনুভব করবে প্রাণ দিয়ে। এগিয়ে যাবার প্রেরণা পাবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার, নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:২৩

আইরিন সুলতানা বলেছেন: সমস্যা হলো অনেক রথিমহা রথিরাই বলছেন, একথা বলা হয়েছে...যদিও দীর্ঘ ৩৯ বছরেও কোন রেকর্ড প্রমাণস্বরূপ উপস্থাপন করতে পারছেনা কেউই।

আবার যারা যারা বলছে, তাদের মধ্যে অনেকেই কিন্তু এর পেছনের রাজনৈতিক সূক্ষ্ণ কৌশলগত কারণকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, এবং তারা বঙ্গবন্ধুকে এজন্য দায়ী করতে পারেননি মূলত বা তারা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাহীনতাও প্রদর্শন করেননি। আরেকদিক থেকে এও সত্য যে, জিয়ে পাকিস্তান বলার পরও যদি উপস্থিত জনতার মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা না দেয় তাহলে উপস্থিত জনতাও এর কারণ সম্পর্কে জ্ঞাত। ফলে কেউ যদি বঙ্গবন্ধুকে জিয়ে পাকিস্তান বলার জন্য দায়ী করতে চায় তো ফলে এই ভুলের দ্বায়িত্ব তখন উপস্থিত প্রতিটি জনতার প্রতিও বর্তায়।

এবার দেখা যাক, যদি এটা অপপ্রচার হয় তো অপপ্রচারকারীরা জনতার দিকে আঙ্গুল তোলার মত সাহসী হতে পারে কি না।

৪| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:১৩

এরশাদ বাদশা বলেছেন: অনেক দিন পর প্রথম পাতায় আপনার পোস্ট দেখলাম আপু। অনেক দিন পর। খুব ভালো লাগলো মন্তব্য করতে পেরে। আজকাল পুরোনোরা তো আসেনই না, যারা আসেন তারা লিখেন না।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:২৯

আইরিন সুলতানা বলেছেন: পোস্টটা একটু বড় হয়ে গেছে, এক পোস্টে বিভিন্ন তথ্যের সন্নিবেশ করতে গিয়ে। পড়তে হয়তো সময় লাগলো, এজন্য দুঃখিত ।

হ্যা, ব্লগে এখন ঐ নতুনের কেতন ওড়ে ! কিংবা ওদের হলো শুরু, আমাদের হলো সারা! ...এটাই রীতি।

৫| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:১৪

এরশাদ বাদশা বলেছেন: পাকিস্থানী রক্তের দূষিত গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো নিমিষেই। শুরুতেই মাইনাস। ঘেন্না লাগে এ ব্লগটাকে এখন।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:২৭

আইরিন সুলতানা বলেছেন: মূল প্রয়োজন হলো ইতিহাসটাকে জানা। যদি একটু ঘেঁটেঘুঁটে দেখেন, তাহলে জিয়ে পাকিস্তান বলার গল্পটা সত্য হলেও তখনকার প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে, এর প্রয়োজনীয়তাটুকু অনুধাবন করা যাবে। এবং এই উপলব্ধি কিন্তু ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে কোনভাবেই অবমূ্ল্যায়িত করবেনা।

যে নির্মল সেনের বক্তব্য দিয়ে কেউ কেউ কুয়াশা তৈরী করতে চাচ্ছে, তারা কিন্তু নির্মল সেনের পুরো বক্তব্যটুকু এড়িয়ে গেছে। নির্মল সেনের অবস্থান কিন্তু শেষ পর্যন্ত ষ্পষ্টতঃই বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ছিল।

এজন্যই বলেছি, জিয়ে পাকিস্তান বলা না বলাতে মূলত বঙ্গবন্ধু এবং ৭ই মার্চের ভাষণ কোনভাবেই যার যার শ্রদ্ধার অবস্থান থেকে বিচ্যূত হয় না।

৬| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:১৮

মামুন বিদ্রোহী বলেছেন: দরকারী পোষ্ট

আপাতত সংগ্রহে রাখলাম। সময় করে পড়ে নিব।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৪০

আইরিন সুলতানা বলেছেন: কোন প্রয়োজনীয় তথ্য আপনার জানা থাকলে তা অবশ্যই জানাতে ভুলবেন না।

৭| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:২৮

এরশাদ বাদশা বলেছেন: যেখানে পাকিস্থানের বিরুদ্ধে গোটা জাতি একটি ময়দানে সমবেত হলো, যার নেতৃত্বে সমবেত হলো, সেই ময়দানেই সেই জাতির সামনেই, সেই নেতাই, সেই পাকিস্থানের স্তুতি কেমন করে গাইতে পারে?

রেসকোর্স ময়দান যখন ভিডিও ফুটেজে দেখি, তখন আপনাতেই গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। গোটা বাংলাদেশ যেন সেই একটি ময়দানেই।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৩৯

আইরিন সুলতানা বলেছেন: আবারো বলছি, যেসব জ্ঞানী-গুণি ব্যক্তিরা তাদের বক্তব্যে বা বইয়ে একথা লিখেছেন, তারাসহ এই দীর্ঘ ৩৯ বছরে কেউই কোন অডিও-ভিডিও রেকর্ড প্রমাণস্বরূপ প্রদর্শন করতে পারেনি। বলা হয়ে থাকে সব রেকর্ড মুছে ফেলা হয়েছে। কিন্তু সরকারি রেকর্ড না হয় সব মুছে ফেলা সম্ভব কিন্তু আমজনতার মধ্যেও নিঃসন্দেহে অনেকেই রেকর্ড করেছিল, সেগুলো মুছে ফেলা সম্ভব না। তাছাড়া, বঙ্গবন্ধুকে বিব্রত করে এমনি গোটা জাতিকেও ছত্রভঙ্গ করে দিতে এমন একটি মোক্ষম সুযোগ স্বাধীনতা বিরোধীরা হাতছাড়া করলো কিভাবে তখন ?

আপনার মত আমারও একই প্রতিক্রিয়া ছিল। ১০ লাখ জনতা যেখানে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঘৃণার টগবগে তখন তো কোন আনাড়ি বক্তাও পাকিস্তানের জয়গান গাওয়ার মত বোকামি করবেনা।

এই পোস্টটি দেখতে পারেন - Click This Link

এখানে ৩২ নং মন্তব্যে একই কথা বলেছি আমি।

সমস্যা হলো, আমরা তো ৭১ দেখিনি। ফলে আমাদের নির্ভর করতে হয় জ্ঞানীগুণি জনের কথার উপর। কিন্তু তারাই যদি দু'ভাগে ভাগ হয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেন তো ইতিহাস কোন দিকে যাবে !!!

৮| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৩৫

আলী আরাফাত শান্ত বলেছেন: ++

০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৫৮

আইরিন সুলতানা বলেছেন: বড় একটা লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ শান্ত।

৯| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৪২

আলী প্রাণ বলেছেন: অসাধারণ!

একদমে পুরোটা পড়লাম, আপনার আলোচনা ভালো লাগলো...


দুঃখ লাগে হীনস্বার্থে যখন......


ভালো থাকবেন।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১১:৩২

আইরিন সুলতানা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে, এই বড় লেখাটি পড়ার জন্য।

আপনার কাছে কোন উল্লেখ্যযোগ্য তথ্য থাকলে তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।

১০| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৪৫

তায়েফ আহমাদ বলেছেন: প্রথম কথা, বাঙলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর কোন বিকল্প ছিল না।
দ্বিতীয় কথা, সাতই মার্চ ভাষন একটি অনন্য কাব্যিক ভাষন।
এ কথা দু'টিই অনস্বীকার্য।
তৃতীয় কথা হচ্ছে, যেখানে ইতিহাসের দ্বিমুখী পাঠ পাওয়া যায়, সেখানে কে কী বলেছেন, তার চাইতে, ঘটনার পূর্বাপরকে স্বাভাবিক বোধবুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করাই যুক্তিযুক্ত।

এরপরেই যে কথাটি বলতে চাই তা হচ্ছে, আপনার লেখার শুরুতে বলা "১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ছয় দফা দাবী পেশ করে, যেখানে সুনির্দিষ্ট করে স্বাধীনতার কথা উল্লেখ না থাকলেও এই ছয় দফা প্রস্তাবনার মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করা। " কথাগুলোকে অতিকথন বলে মনে হচ্ছে। কেননা, ঐতিহাসিক ছয় দফা প্রস্তাবের প্রতি দফাকে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে সে সময়েই তাজউদ্দিন আহমদ কর্তৃক আওয়ামী লীগ এবং শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ হতে "আমাদের বাঁচার দাবী-ছয় দফা কর্মসূচী" শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়, যার ছত্রে ছত্রে একথা পরিষ্কার করে বলা রয়েছে যে, এ প্রস্তাব মোটেই পশ্চিম-পাকিস্তান বিরোধী নয়। তাই, ছয় দফা ছিল বাঙালীর স্বাধীকারের সনদ। এটা সত্য যে, ৭০ এর নির্বাচনে ৬ দফার উপরেই এদেশের জনগন আওয়ামী লিগকে ম্যান্ডেট দিয়েছে এবং এরই ভিত্তিতে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু, তাহলো, পরবর্তী সময়ের ঘটনাবহুল বাস্তবতা মাত্র, পূর্ব পরিকল্পিত কিছু নয়।
এর পরে আসি, ৭ই মার্চের ভাষনের ব্যাপারে। এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে এ ভাষন মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেছে-সন্দেহ নেই; এক্ষেত্রে তিনি "জিয়ে পাকিস্তান" উচ্চারণ করেছেন কি করেন নি-তা বিবেচ্য বিষয় নয় মোটেও। কিন্তু, এটাও সত্য কথা যে, ২৫শে মার্চ দিনেরবেলা পর্যন্ত ইয়াহিয়া এবং ভূট্টোর সাথে বঙ্গবন্ধুর চলমান আলোচনা যদি কোন কারনে সফলতার মুখ দেখতে পেত, ঠিক সেই মূহুর্তে আমাদের স্বাধীনতার দাবী সামনের দিকে চলে আসার প্রশ্নই উঠতো না।
আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা যাকে ভাল জানি তাকে আকাশে না তুলতে পারলে ভাল লাগে না, আবার, যাকে ভাল লাগে না তাকে মাটির নীচে পূঁতে ফেলার আগপর্যন্ত আমাদের শান্তি হয় না।
৭ই মার্চের ভাষন তার সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এবং পরবর্তী ঘটনার নিরিখে যথেষ্ট প্রভাবশালী এবং দিকনির্দেশকারী বক্তব্য। একে আলাদা করে জাস্টিফাই করার কোন দরকার দেখি না। এ ভাষন এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ, কিন্তু, একমাত্র দিকনির্দেশকারী বক্তব্য নয়।
ভুল কথা বলে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১২:৪৫

আইরিন সুলতানা বলেছেন: যেখানে ইতিহাসের দ্বিমুখী পাঠ পাওয়া যায়, সেখানে কে কী বলেছেন, তার চাইতে, ঘটনার পূর্বাপরকে স্বাভাবিক বোধবুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করাই যুক্তিযুক্ত।

-- ঠিক এইরকম করেই ভাবার চেষ্টা করেছি অন্তত এই বিষয়টিকে নিয়ে। ফলে পোস্টের শেষে এসে জিয়ে পাকিস্তান বলা হয়েছিল কি হয়নি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার আর প্রয়োজন দেখিনি।

কথাগুলোকে অতিকথন বলে মনে হচ্ছে। কেননা, ঐতিহাসিক ছয় দফা প্রস্তাবের প্রতি দফাকে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে সে সময়েই তাজউদ্দিন আহমদ কর্তৃক আওয়ামী লীগ এবং শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ হতে "আমাদের বাঁচার দাবী-ছয় দফা কর্মসূচী" শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়, যার ছত্রে ছত্রে একথা পরিষ্কার করে বলা রয়েছে যে....

--অতিকথন নয়, বরং সংক্ষিপ্ত কথন ছিল । পূর্ব পাকিস্তানে স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে ৬ দফা পেশ করা হয় সেই ছয় দফা ছিল আমাদের জন্য ছিল পশ্চিম পাকিস্তানী শোষণ ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির চাবিকাঠি। আর পশ্চিম পাকিস্তানিরা একে ভেবেছিল পাকিস্তান ভাঙ্গার একটি প্রচেষ্টা। ৬ দফাকে কেন্দ্র করেই বাঙালির স্বায়ত্বশাসনের আন্দোলন জোরদার হচ্ছিল, যা অতঃপর স্বাধীনতার আন্দোলনের মাত্রা পায় ।

৭ই মার্চের পর নির্মল সেনের সাথে বঙ্গবন্ধুর আলোচনার এককালে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য নির্মল সেন তুলে ধরেন এভাবে-

"... প্রথমে আমরা এক হাতের পাঁচটি আঙ্গুল অপর হাতের একটি আঙ্গুল অর্থাৎ ছয়টি আঙ্গুল দেখাতাম। অর্থাৎ এই ছয়টি আঙ্গুল ছিল ছয় দফা। পরে পাঁচটি আঙ্গুল নামিয়ে ফেলতাম। বাকি থাকত একটি আঙ্গুল। অর্থাৎ এক দফা। অর্থ হচ্ছে ছয় দফার শেষ কথা হচ্ছে এক দফা বাংলাদেশের স্বাধীনতা।..."

প্রশ্ন হচ্ছে আন্তরিকতার, ভুলের নয়। আমরা একাত্তরে ছিলাম না, লোকের বুলি, আলোচনা, বইপত্র, আন্তর্জাল এখান থেকেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে দেখতে হয়, বুঝতে হয়। আমরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। তবে তা সেসময়ের বীরদের অবদানকে খাটো করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং একটি ইতিহাসকে আত্মস্থ করার জন্যই।

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

১১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৪৯

এরশাদ বাদশা বলেছেন: দেখেছিলাম ওই পোস্ট, মন্তব্য করার রুচি হয়নি।

আপনি ওই মন্তব্যে আমার চিন্তাটাকেই তুলে ধরেছেন। প্রথমত, যে ভাষার জন্য এই লড়াই যদি স্তুতি গাইতে হয়, বঙ্গবন্ধু সেই ভাষাতেই গাইবেন। জিয়ে ফাকিস্থান বলার প্রশ্নই আসেনা। তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি, যদি বলেন। মন থেকে সায় পাচ্ছিনা, বঙ্গবন্ধু কোন অবস্থাতেই জয় পাকিস্থান কিংবা জিয়ে পাকিস্থান বলবেন না। বলতে পারেন না।

আর একটা কথা বলি, এ ইস্যূটা কিন্তু অজানা ছিলো, যে রেসকোর্সের ময়দানে বঙ্গবন্ধুর এই তথাকথিত স্পিচ।

কল্পনায় রেসকোর্সের ময়দানে নিজেকে দাঁড় করিয়ে ভাষন শুনছিলাম। ভাষন শেষে বঙ্গবন্ধু বললেন, জয় বাংলা....প্রতিউত্তরে লাখো জনতার সাথে সুর মেলালাম..জয় বাংলা। তারপর বঙ্গবন্ধু বললেন...জিয়ে পাকিস্থান....প্রতিউত্তরে বলতে গেলাম...জিয়ে....কিন্তু বলতে পারলাম না... কারণ...আমার চারিদিকে তখন পিনড্রপ সাইলেন্স....

নাহ্! কোনো অবস্থাতেই বিশ্বাসযোগ্য নয়!!!

বর্ণনাটাকে নাটুকে মনে হতে পারে। কিন্তু ঠিকই আমি এরকম দৃশ্য কল্পনা করছিলাম।

১২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৫২

এরশাদ বাদশা বলেছেন: @তায়েফ ভাই-- একমাত্র দিকনির্দেশনা দানকারী বক্তব্য তাহলে ঠিক কোনটা? যে বক্তব্য বাঙালি জাতিকে সশ্রস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রেরণা জুগিয়েছিলো?

ছয় দফা দাবি একটা ভিত ছিলো। যার উপর পরবর্তীতে রচিত হয়েছিলো সংগ্রাম--ভুল বললাম??

১৩| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৫৪

দুরন্ত স্বপ্নচারী বলেছেন:
শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষন মূল্যায়নে এ.বি.এম মূসা, সিরাজুল ইসলাম, কামাল মতিন প্রমূখের বক্তব্য এখানে সংযুক্ত করার কোন মানেই হয় না। অত্যন্ত সাধামাটা ভাষায় আবেগকাতর তাদের প্রতিক্রিয়া।
ওটা সন্দেহ নেই বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ট ভাষন। পৃথিবীতে অনেক দেশ আছে যাদের জনসংখ্যাই দশ লক্ষ হবে না। পৃথিবীতে দশ লক্ষাধিক জনতার সমাবেশ সত্যি বিরল। আরো বিরল স্বাধীনতাকামী উন্মাতাল জাতির সামনে দাড়িয়ে তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়নের বক্তব্য দেয়ার নজির; ঠিক সশস্ত্র যুদ্ধের আগে। এই বক্তব্যের কোন তুলনা নেই।

ছোটবেলা থেকেই ভাষনটি শুনে আসছি। তবে ভাষনটির ভিডিও দেখার প্রথম সৌভাগ্য হয়েছিল ২৩ জুন, ১৯৯৬ রাতে বিটিভি'র সৌজন্যে। ওইদিন মুজিব তনয়া হাসিনা ক্ষমতা গ্রহন করেন। শিহরিত হয়েছিলাম, মনে পড়ে শরীরের লোমগুলো দাড়িয়ে গিয়েছিল।

পরে আরো অজস্রবার শুনেছি। যতদুর মনেপড়ে কোন একবার ভিডিও-তে দেখেছিলাম 'জয় বাঙ্গলা' বলার পর পাশে তাকালেন মুজিব, কয়েক মূহুর্তের মধ্যে উচ্চারণ করলেন 'জিয়ে পাকিস্থান'। তারপর কন্ঠ নামিয়ে আওয়ামী লীগ কর্মীদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি কথা বলেছিলেন।

কিন্তু ওই একবারই দেখেছিলাম ওই ভিডিও। পরে প্রতক্ষ্যদর্শীদের বর্ণনায় দেখেছি তারা অস্বীকার করছেন বিষয়টি। আমি ধরে নিয়েছি তারা রাজনৈতিক স্বার্থে অনুরূপ বলছেন। আমার সন্দেহের কারণ মুজিবের ভাষন এখন যেটি মাইকে এবং কখনো কখনো টিভি ও বেতারে প্রচারিত হয়, সেগুলোর অধিকাংশকেই আমার কাছে মুজিবের কন্ঠ বলে মনে হয় না। আমার কাছে মনে হয় ওগুলোয় পরবর্তীতে অন্য কেউ কন্ঠ দিয়েছে। আমি ভাষনগুলোর মধ্যে নানা ধরনের ভিন্নতা খেয়াল করেছি।

এক সময় ধরেই নিয়েছিলাম যে আমি টিভিতে যেটা দেখেছি বলে মনে করি সেটা আসলে আমার বিভ্রম। কারণ এর স্বপক্ষে কোন প্রমান পাই না। তাই আমি নিশ্চিত নই মুজিব আসলেই 'জিয়ে পাকিস্থান' বলেছিলেন কিনা। যদি বলেও থাকেন তবুও কিছু আসে যায় না; ওই ভাষন গুরুত্ব হারায় না এতটুকুও।
তবে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিকদের চেয়ে অনেক বেশি গ্রহনযোগ্য মুহম্মদ হাবিবুর রহমানের বক্তব্য।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:১৪

আইরিন সুলতানা বলেছেন: মূলত হাবিবুর রহমানের চেয়ে নির্মল সেনের আংশিক বক্তব্য নিয়েই হৈ চৈ বেশী হয়। অথচ নির্মল সেনের বক্তব্যকে সত্যি ধরার পরও তাঁর পরবর্তী ব্যাখ্যা কিন্তু সম্পূর্ণ শেখ মুজিবের সমর্থনেই ছিল, এবং সেখানে তিনি কোন বিতর্কের অবকাশ রাখতে চাননি বলেই মনে হয়।

গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার রায়টি কিন্তু সম্ভবত এই হাবিবুর রহমানই দিয়েছিলেন। ফলে তাঁর উপর কি ততটা আস্থা রাখা যায়? যদিও নির্মল সেনের মত হাবিবুর রহমানও কিন্তু জিয়ে পাকিস্তান বলার পক্ষে বললেও শেখ মুজিবের বিপক্ষে মনে হয় কিছু বলেননি।

১৪| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৫৫

এরশাদ বাদশা বলেছেন: তৃতীয় কথা হচ্ছে, যেখানে ইতিহাসের দ্বিমুখী পাঠ পাওয়া যায়, সেখানে কে কী বলেছেন, তার চাইতে, ঘটনার পূর্বাপরকে স্বাভাবিক বোধবুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করাই যুক্তিযুক্ত।

চোখ বুঁজে সহমত। এ ক্ষেত্রে নিজের বোধকে কাজে লাগনোটাই সর্বোত্তম পন্থা।

১৫| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৫৭

এরশাদ বাদশা বলেছেন: @দূরন্ত স্বপ্নচারি--- পরে আরো অজস্রবার শুনেছি। যতদুর মনেপড়ে কোন একবার ভিডিও-তে দেখেছিলাম 'জয় বাঙ্গলা' বলার পর পাশে তাকালেন মুজিব, কয়েক মূহুর্তের মধ্যে উচ্চারণ করলেন 'জিয়ে পাকিস্থান'। তারপর কন্ঠ নামিয়ে আওয়ামী লীগ কর্মীদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি কথা বলেছিলেন।

ভিডিওটা কি নেটে পাওয়া যাবে? আপনের কাছে সোর্স থাকলে লিংক দ্যান প্লীজ।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:০৬

আইরিন সুলতানা বলেছেন: বলা হয় যে, স্বাধীনতার পর ভাষণ থেকে জিয়ে পাকিস্তান মুছে দেয়া হয়।

কিন্তু একটা ছোট্ট প্রশ্ন থেকে যায়, ৭ই মার্চের ভাষনের পর ৮ই মার্চ রেডিওতে ওই ভাষণ বারবারই প্রচারিত হয়, তখন কী জিয়ে পাকিস্তান সহকারে ভাষণ প্রচারিত হতো? যদি তা হয়ে থাকে তো সারা বাংলার মানুষ ৭ই মার্চের পর আবারো সাক্ষী হওয়ার কথা জিয়ে পাকিস্তানের।

কিন্তু যদি একদিনের মধ্যেই ভাষণ এডিট করে ফেলার মত সতর্কতা দেখানো হয়, তাহলে, কেউ কেউ যেমন বলে থাকেন, তারা টিভিতে একবার দেখেছিলেন জিয়ে পাকিস্তান সহকারে ভাষণ, তো টিভিতে আন-কাট ভাষণ প্রচারের মত অসতর্কতা কী করে হলো!

যতদূর জানি, জিয়ে পাকিস্তান সহকারে কোন অডিও/ভিডিও প্রমাণ এখনও কেউ উপস্থাপন করতে পারেনি। নেটে এমন কিছু খুঁজে দেখেছি, পাইনি।

১৬| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:১১

মনির হাসান বলেছেন: মীমাংসায় না আসলেও ... বিতর্কটা নিরেপেক্ষ ভাবে দেখার চেষ্টা করেছেন ... অসাধারণ ।


০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:১৯

আইরিন সুলতানা বলেছেন: পরিস্থিতিটা এখন এমন যে, কেবল মাত্র আমি যদি ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত থাকতে পারতাম, তবেই একটি সিদ্ধান্তমূলক পোস্ট দিতে পারতাম। কিন্তু আমি সেটি করতে পারছিনা, কারণ, যারা ইতিহাসকে সামনে থেকে দেখেছেন, তথ্যের বিভাজনটা তাদের মধ্যে।

এবং আমি কোন সিদ্ধান্তের আসার চেষ্টা করতেও চাইছিনা, কারণ, সামান্য পড়াশোনার করার পর মনে হলো, যেমনটি পোস্টে বলেছি, এই বলা না বলায় আসলে ৭ই মার্চ কোন ভাবেই মলিন হয়না, ফলে শেখ মুজিবের অবদানকে সন্দেহ করারও অবকাশ নেই। বলা যায়, পোস্টের উদ্দেশ্য একভাবে এই উপলব্ধিকেই প্রকাশের প্রয়াস।

১৭| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:১৭

দুরন্ত স্বপ্নচারী বলেছেন:
@ এরশাদ বাদশাঃ
আমি নিজে ভিডিও দেখার পরও যখন পরবর্তীতে নিজের দেখা নিয়েই সংশয়াগ্রস্থ, তাহলে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে আমার কাছে কোন তথ্য প্রমান নেই। আমি অন্যদের মত 'পৃথিবী অন্যতম শ্রেষ্ট' বলি না, যতগুলো ভাষন সম্পর্কে পড়েছি জেনেছি, তার আলোকে আমি বিশ্বাস করেছি যে মুজিবের ভাষন শ্রেষ্টতম।
যদিও ওই বক্তব্যকে 'জিয়ে পাকিস্থান' শব্দদ্বয়ের উপস্থিতি আমার কাছে একেবারেই গুরুত্বহীন। তবুও চিরকালই আমার মনে সংশয় রয়ে যাবে, যেহেতু আমি একবার শুনেছিলাম।

@ তায়েফ,
"১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ছয় দফা দাবী পেশ করে, যেখানে সুনির্দিষ্ট করে স্বাধীনতার কথা উল্লেখ না থাকলেও এই ছয় দফা প্রস্তাবনার মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করা। ''

ছয় দফা বা একুশ দফা কিংবা ৭ই মার্চ নয়, মুজিব যে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন সেটা সত্য। এবং তিনি ভাবতেন কি করে স্বাধীনতা পাওয়া যায়? তিনি ভারতের সংগে গোপন সমঝোতা করার চেষ্টা করছেন ১৯৬২ সালে। তিনি সারা দেশ চষে বেড়িয়েছেন এবং স্বাধীনতার জন্য ত্যাগ স্বীকারে তৈরী হতে বলেছেন আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের। তিনি গোপনেও দেশের অনেক স্থানে গিয়েছেন, বৈঠক করেছেন। কোন সন্দেহই নেই যে মুজিবের মাথায় স্বাধীনতা ছিল। কিন্তু প্রকাশ্য ভাষনে বা দলীয় ঘোষনায় হয়তো সুস্পষ্ট প্রতিফলন ছিল না। কিন্তু মুজিবের প্রস্তুতি ছিল।

যদি ২৫ মার্চ রাতে মুজিব গ্রেপ্তার না হতেন, যদি নির্বাচনের ফল মেনে মুজিব পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী হতেন, তবুও বাংলাদেশ স্বাধীন হতো। হ্যাঁ, ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১-এ স্বাধীন হতো না। তবে পরে হলেও হতো। পরে হলেও সশস্ত্র যুদ্ধই হতো। এবং মুজিবই সেদিকে বাঙ্গালীকে নিয়ে যেতেন।

১৮| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:২৩

মনির হাসান বলেছেন: স্বপ্নচারীর কমেন্টে থাম্বস আপ ...

১৯| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:২৫

রাহা বলেছেন: ধন্যবাদ একটা সুন্দর পোস্টের জন্য । দেখুন যারা বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করে, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বির্তক করে তারা শুধু কথা বলার জন্যই কথা বলে । কোন প্রমাণ তারা কখনোই হাজির করতে পারে না আবার আপনি কোন প্রমাণ-তথ্য দিলেও তা দেখে না ।

২০| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:২৯

তায়েফ আহমাদ বলেছেন: @এরশাদ বাদশাঃ (১২ নং মন্তব্য)
সত্যিকথা বলতে কী, আমি আমার পড়াশোনা এবং বোধবুদ্ধির আলোকে যা বুঝি তা হচ্ছে, দিকনির্দেশনা দানকারী একটিমাত্র বক্তব্য বলে কিছু আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু দিকে ছিল বলে মনে হয় না।
মার্চ মাস ব্যাপী চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র খালাস হচ্ছে, বিমান বোঝাই করে সৈন্য আসছে, অথচ, বিচ্ছিন্ন কিছু প্রতিরোধ ছাড়া এ সময়ে আর কিছু লক্ষ্য করা যায় না। ২৫শে মার্চ রাতের গনহত্যাই প্রমান করে দেয় যে, এ ব্যাপারে আমরা কতটুকু অপ্রস্তুত ছিলাম। স্বাধীনতা অর্জনের ব্যাপারে নূন্যতম দিকনির্দেশনা থাকলেও, সে রাতে ঢাকায় সাধারন মানুষ, আন্দোলনরত ছাত্র-শিক্ষক, ইপিআর এবং পুলিশসহ সকল পর্যায়ের, সকল স্তরের মানুষের অকাতরে মৃত্যুবরণ করার কথা নয়। ২৬-২৭শে মার্চ'৭১ চট্টগ্রাম হতে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বিভিন্ন জনের স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠকে অধিকতর দিকনির্দেশকারী(এর মাঝে কেউ কেউ জিয়াউর রহমানের ঘোষনাকে অধিক গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করেন আর অন্যেরা স্বীকারই করেন না; এ নিয়ে রাজনৈতিক টানাহেঁচড়া এত বেশি হয়েছে এবং হচ্ছে যে, কথা না বাড়ানোই সমীচীন) বলা চলে।
তবে, সত্যিকার অর্থে, সমগ্র দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে ১৭ই এপ্রিলের মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠাকালে পঠিত স্বাধীনতার ঘোষনাপত্রই মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশকারী বক্তব্য বলে আমার মনে হয়। এর আগপর্যন্ত সকল প্রতিরোধই ছিল বিচ্ছিন্ন এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ববিহীন। এর পর থেকেই সংগঠিত সংগ্রামের সূত্রপাত।

২১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:৩১

দুরন্ত স্বপ্নচারী বলেছেন: সম্ভবত নয়, যে বেঞ্চ গোলাম আজমের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়েছিল সেই বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন মুহম্মদ হাবিবুর রহমান।
আপনার যুক্তিটি খুবই হাস্যকর। যেহেতু হাবিবুর রহমান গো আ'র পক্ষে রায় দিয়েছিলেন তাই তাকে বিশ্বাস করা যাবে না?!!

গোলাম আজম এর নাগরিত্ব ঠিক কোন যুক্তিতে বাতিল করা যেতে পারে তা আদালতকে কেউ বুঝাতে সক্ষম হয়নি। আপনি বিচারপতি হলে কি করতেন? বিদ্যমান আইনের আলোকে বিচার করতেন নাকি যে আইন নেই সেই আইনে বিচার করতেন?
একজন ন্যায়নিষ্ট বিচারকের ওই মামলায় কিছুই করার ছিল না। সরকারের উচিৎ ছিল নাগরিকত্ব বাতিলে আইন প্রনয়ন করা। কিন্তু সরকার ছিল গোআ এর পক্ষে। রায়ে বলা হয়েছিল, 'রাস্ট্র কোন মানুষের জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না।''
আমরা আম জনতা আসলেই রাজনীতিকদের উস্কানীতে নৃত্য করি। হাবিবুর রহমানকে দোষ দেয়ার কি আছে? হাসিনা চাইলে তো এখন আইন তৈরী করতে পারে। বিতর্ক জিইয়ে রাখে কেন?

এই হাবিবুর রহমানই কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ধারা ভঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মানুষকে তার অবস্থান ও অবদান দিয়ে নির্মোহভাবে বিচার করা উচিত।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১:০১

আইরিন সুলতানা বলেছেন: আমি নির্মোহভাবেই থাকার চেষ্টা করেছি স্বপ্নচারী । ফলে মন্তব্যে বাড়তি উষ্মা প্রকাশের চেষ্টা ভাল লাগলো না একদমই। আশা করি এটা আমাদের মধ্যেকার পাণ্ডিত্যের লড়াই নয়, বরং যার যার জ্ঞান অনুযায়ী ইতিহাস দেখা, আলোচনা এবং তথ্য শেয়ার।

আপনি হাবিবুর রহমানের বক্তব্যকেই বেশী গুরুত্ব দিয়েছিলেন, ওই অংশের কারণে হাবিবুর রহমানের ভূমিকা নিয়ে আমার উচ্চারণ ছিল, তবে খুব নিশ্চিতভাবে তথ্য হাতে ছিলনা তাই "সম্ভবত" যোগ করেছিলাম।

আমি চাইলে আপনার বক্তব্যের ক্ষেত্রেও একই কথা উল্লেখকরতে পারতাম যে, আপনি বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিকদের কথা উড়িয়ে দিতে চাইছেন ! এরকম তর্কে যাওয়ার অর্থ নেই। কারণ বিষয়টা হচ্ছে, কে কতটুকু বলেছেন মূল বিষয়টিকে নিয়ে এবং সেই বক্তব্যের টোন কী ছিল। এখানে না হাবিবুর রহমানকে ছোট করে দেখানোর ইচ্ছে আমার, না নির্মল সেন কে বড় করে দেখানো। এবং সম্ভবত বলেওছি যে, যারা বিরোধীতা করতে চান তারা নির্মল সেনের বক্তব্য নিয়েই মাতামাতি করে বেশী।

২২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:৪১

তায়েফ আহমাদ বলেছেন: @দুরন্ত স্বপ্নচারীঃ(১৭ নং কমেন্ট)
বঙ্গবন্ধু এদেশের স্বাধীনতার স্থপতি হলেও, তিনি'৬০এর দশকেই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতেন কীনা, তা নিয়ে দ্বিমুখী বক্তব্য আছে।(এই মূহুর্তে হাতের কাছে রেফারেন্স নেই:()
আপনি বলেছেন, "কোন সন্দেহই নেই যে মুজিবের মাথায় স্বাধীনতা ছিল। কিন্তু প্রকাশ্য ভাষনে বা দলীয় ঘোষনায় হয়তো সুস্পষ্ট প্রতিফলন ছিল না। কিন্তু মুজিবের প্রস্তুতি ছিল।" সত্যি কথা বলতে কি, ২৫শে মার্চ'৭১ রাতের আগপর্যন্ত তাঁর রাজনৈতিক পদচারনায় আর যাই হোক স্বাধীনতার জন্য তাঁর প্রস্তুতি ছিল- এমন আমার একটিবারের জন্যেও মনে হয় নি।

২৫শে মার্চ দিনেরবেলা পর্যন্ত ইয়াহিয়া এবং ভূট্টোর সাথে বঙ্গবন্ধুর চলমান আলোচনা যদি কোন কারনে সফলতার মুখ দেখতে পেত, ঠিক সেই মূহুর্তে আমাদের স্বাধীনতার দাবী সামনের দিকে চলে আসার প্রশ্নই উঠতো না।- একথা আপনার বক্তব্যের বিরোধী নয়। সত্যিকার অর্থে, '৬৯-'৭১ এ এদেশের মানুষের মাঝে যে বিস্ফোরনোন্মুখ পরিস্থতি বিদ্যমান ছিল তাতে যে কোন সময়ে বাঙলাদেশের স্বাধীনতা লাভের সম্ভাবনাই বেশি ছিল। আমার বক্তব্য ছিল, "আলোচনা যদি কোন কারনে সফলতার মুখ দেখতে পেত, ঠিক সেই মূহুর্তে" আমরা স্বাধীনতার দিকে ধাবিত হতাম না মনে হয়।
আশা করি, বোঝাতে সক্ষম হয়েছি?:)

২৩| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:৪২

দুরন্ত স্বপ্নচারী বলেছেন: গোলাম আজমের নাগরিকত্ব ফেরতমুহম্মদ হাবিবুর রহমান।

০৮ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:২৯

আইরিন সুলতানা বলেছেন:

আপনার এই পোস্টটা পড়লাম - Click This Link


তায়েফ আহমাদের সাথে আপনার বেশ একটা টান টান উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। ফলে তার দু'টো মন্তব্যের অংশবিশেষ বরং আপনার সাথে শেয়ার করে উত্তেজনা তাতিয়ে দেই বরং :)

তায়েফ আহমাদ বলেছেন: .......যেখানে ইতিহাসের দ্বিমুখী পাঠ পাওয়া যায়, সেখানে কে কী বলেছেন, তার চাইতে, ঘটনার পূর্বাপরকে স্বাভাবিক বোধবুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করাই যুক্তিযুক্ত।



যাইহোক, আপনার ব্লগেও মন্তব্য দিয়েছি বিচারপতি হাবিবুর রহমানের এই রায় সংক্রান্ত বিষয়ে...এখানেও দিচ্ছি ...

গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে হয়তবা বিচারপতি সাহেবের কোন ভূমিকা থাকলেও থাকতে পারতো। বিশেষত, উনার পেছনের ইতিহাসে উনার বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে।

গোলাম আযমের মামলাটি হাই কোর্টে বিভক্ত রায়ের কবলে পড়ে। দু'জন বিচারপতির একজন পক্ষে রায় দেন, একজন বিপক্ষে, ফলে তৃতীয় বিচারক আনওয়ারুল হক চৌধুরীর আবির্ভাব এবং রায় যায় পক্ষে। এরপর মামলা আসে সুপ্রীম কোর্টে । এখানে বিচারক প‌্যানেলে হাবিবুর রহমান সহ মোট ৪ জন ছিলেন। সেসময় হয়ত বিচারকদের "বিব্রত" হওয়ার প্রথা চালু হয়নি, তবে হাইকোর্টের রায়ের পর্যায়টা খেয়াল করে বলা যায়, হাবিবুর রহমান হয়ত প‌্যানেলের একজন বিচারক হিসেবে বিপক্ষে রায় দিতে পারতেন (যদিনা এখানে কোনভাবে বাধ্যবাধ্যকতার গোপন রাজনীতি থেকে থাকে) , হতে পারে সার্বিক রায় গোলাম আযমের পক্ষেই যেতো, কিন্তু বিচারপতি হাবিবুর রহমার তার অবস্থান ধরে রাখতে পারতেন।

২৪| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:৪৩

হায় ঈশ্বর! বলেছেন: @ দুরন্ত স্বপ্নচারী: তোমারে ঝাঝা না দিয়া পরলাম না

২৫| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:৪৩

তায়েফ আহমাদ বলেছেন: ২১ নং এ পুর্ণ সহমত।

২৬| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:০০

এরশাদ বাদশা বলেছেন: @ তায়েফ ভাই-- প্ল্যানিং বা প্রস্তুতি যেটাই বলিনা কেন, ছিলো যে না, সেটা তো মানতেই হবে। গনহত্যার পরই স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা সামনে এসে পড়ে, এও অনস্বীকার্য।

আপনার পড়াশোনার উপর আস্থা আছে। আমার লক্ষ্য হলো শেখা। সঠিক ইতিহাস জানা।

২৭| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:০৪

তায়েফ আহমাদ বলেছেন: বেশী আস্থা রাখা ভাল না!
আশাভঙ্গের বেদনায় পুড়তে হয়!:|:|

২৮| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:১৬

দুরন্ত স্বপ্নচারী বলেছেন: @তায়েফ,

সত্যি কথা বলতে কি, ২৫শে মার্চ'৭১ রাতের আগপর্যন্ত তাঁর রাজনৈতিক পদচারনায় আর যাই হোক স্বাধীনতার জন্য তাঁর প্রস্তুতি ছিল- এমন আমার একটিবারের জন্যেও মনে হয় নি।

মুজিব কি তাহলে ২৫ মার্চ রাতে তাজউদ্দীনসহ অন্য নেতাদেরকে কোন রকম চিন্তা ভাবনা না করেই বলেছিলেন 'তোমরা ভারতে চলে যাও। ওরা বোর্ডার খুলে দেবে'? মুজিবকে এতই নির্বোধ মনে করেন?
মুজিব কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়াই বলে দিলেন যে, 'এবারের সংগ্রাম স্বাধিনতার সংগ্রাম'?
তাহলে কি বিশ্বাস করতে হবে যে মুজিব স্বাধীনতা শব্দটার মানেই জানতেন না?
আপনাদের যুক্তি দেখলে লজ্জায় আত্মহত্যা করতে মন চায়।

৭০-এ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে তিন নেতার মাজারে দাড়িয়ে মুজিব বলেছিলেন, ''আজ থেকে পাকিস্থানের পূর্বাংশ পশ্চিম পাকিস্থানের পরিবর্তে বাংলাদেশ নামে পরিচিত হবে।''
মুজিব কে? তিনি তো তখন নির্বাচিতও ছিলেন না তাহলে মুজিব এ কথা বলার অধিকার কোথায় পেলেন? কার উস্কানীতে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অংশকে নতুন নাম দিয়ে দিলেন? আর কেনইবা বেকুব বাঙ্গালী বেকুব মুজিবের কথায় পূর্ব পাকিস্থানের পরিবর্তে বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে লাফানো শুরু করলো?

মুজিব ছিলেন জনগনের নেতা। নির্বাচিত না হলেও তিনিই হয়ে উঠেছিলেন জনগনের প্রধান কন্ঠ। জনগনই তাকে ভূখন্ডের নতুন নাম দেয়ার অধিকার দিয়েছিল। আর মুজিবের ডাকে বাংগালী স্বতস্ফুর্তভাবেই পূর্ব পাকিস্থানকে বাংলাদেশ বলে ডাকতে শুরু করে।

২৫ মার্চের অনেক আগেই মুজিব একটি পতাকার কথা বলেছিলেন। বুয়েটে হাসানুল হক ইনু'র রুমে কামরূল হাসান পতাকার ডিজাইন করার পরে সেটা মুজিবকে হাটু গেড়ে পল্টনের প্রকাশ্য সমাবেশে দিয়েছিলেন আসম আব্দুর রব।
মুজিব কেন একটি পতাকার কথা বলেছিলেন? পূর্ব পাকিস্থান নামক প্রদেশের জন্য নাকি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য??

মুজিব কেন বলেছিলেন, ''আমি যদি নাও থাকি, তোমরা কবি গুরুর 'আমার সোনার বাংলা'কে জাতীয় সংগীত করো?"

মুজিবই ক্রমশ বাঙ্গালী জাতিকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে গেছেন। তিনিই দাবানল সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি কোন বিপ্লবী ছিলেন না, ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে অভ্যস্থ নেতা। তাই তিনি মুখে সশস্ত্র যুদ্ধের কথা বলেননি। কিন্তু এদেশে এখনো হাজারো মানুষ জীবিত আছে যাদের কাছে মুজিব প্রকাশ করতেন তার পরিকল্পনা, তার স্বপ্ন।

তাই যারা বলে ২৫ মার্চের আগে স্বাধীনতার কোন চিন্তা ছিল না, তারা সত্যকে স্বীকার করে না।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:৩০

আইরিন সুলতানা বলেছেন: মুজিব কেন বলেছিলেন, ''আমি যদি নাও থাকি, তোমরা কবি গুরুর 'আমার সোনার বাংলা'কে জাতীয় সংগীত করো?"
--------------

৩রা মার্চ পল্টন ময়দানের জনসভায় যে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়, পল্টনের সেই সভাতেই কবিগুরুর ’আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটিকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ঘোষনা করা হয়।

চমৎকার কয়েকটা কী-পয়েন্ট তুলেছেন- বাংলাদেশ, পতাকা, জাতীয় সংগীত, স্বাধীনতার সংগ্রামের আহ্বান। একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে যাত্রার এর চেয়ে বড় নিদর্শন আর কী হতে পারে!

২৯| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:২২

হায় ঈশ্বর! বলেছেন: @ দুরন্ত স্বপ্নচারী: তোমারে আবারও ঝাঝা না দিয়া পরলাম না .


অফটপিক: কাগোরে কি বুঝাও. তুমিও জানো আমিও জানি.বুঝাইয়া লাভ নাই

৩০| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ ভোর ৪:৩৪

জাতি জানতে চায় বলেছেন: দারুন পোস্ট! তবে আমরা যেরকম আলোচনা-বিতর্ক করতেছি, ৭ই মার্চের ভাষনের পর দেশের অবস্থা অনেকটা এরকমই ছিলো! অন্তত মুরব্বীদের থেকে যা শুনেছি, তাতে পরিস্থিতি এরকমই ছিলো মনে হয়! নেতা কি চিন্তা করছিলেন বা কি তার বক্তব্যে ছিলো সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ভাষনটা পাবলিকের কাছে কোন ম্যাসেজ পৌছালো সেটাও গুরুত্বপূর্ন! মুরব্বীদের থেকে শুনে মনে হচ্ছে তাদের কাছে পৌছানো ম্যাসেজ এরকম ছিলো, যে বঙ্গবন্ধু বাঙালীদের আর শোষিত-বঞ্চিত হতে দেবেন না, এবার সেটা ক্ষমতা গ্রহনের মাধ্যমেই হোক আর স্বাধীনতার মাধ্যমেই হোক! যদি ৮ই মার্চ বা পরে সামরিকজান্তা মুজিবের নিকট পুরো পাকিস্তানের ক্ষমতা দ্রুত হস্তান্তরে রাজি হত তাহলে কি ২৬শে মার্চ থেকে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়ে যেত, নাকি অখন্ড পাকিস্তানের সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে দায়িত্ব পালনে দেখা যেত??!!

বঙ্গবন্ধুর পদক্ষেপ গুলো অস্বাভাবিক ছিলো না! একটি শোষিত-বঞ্চিত জাতির নেতা হিসেবে উনি অল্টারনেটিভ পথ গুলো এক সাথে নিয়েই এগোতেন! উনি যদি ৬৬ তেই বাংলাদেশের আল্টিমেট স্বাধীনতার ব্যাপারে নিশ্চিত হতেন, তাহলে ৭১ পর্যন্ত স্বাধীনতার বিষয়টা ঝুলে থাকার কথা নয়! তবে এটা তিনি বুঝতে পারছিলেন যে দীর্ঘদিনের শোষন-বঞ্চনার কারনে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে স্থায়ী দেয়াল তৈরি হয়েছিলো, কিন্তু তখনও তিনি হবু স্বাধীনতা ব্যাপারে সম্পূর্ণ প্রস্তুত বা নিশ্চিত ছিলেন না বলেই মনে হয়! এটার জন্য ৭ই মার্চের চরম আল্টিমেটামে দুইটা ভিন্ন রাস্তার মেসেজই ক্ষমতাসীনদের নিকট পৌছান- হয় দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তর কর, নয়ত সম্ভাব্য নতুন রাষ্ট্রের জন্ম মেনে নেও! "আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি ...." এটা দিয়ে হয়ত সেটাই বোঝানো হইছিলো যে ক্ষমতাসীনরা যদি আল্টিমেটাম মেনে না নেয় আর সিদ্ধান্ত দেয়ার পূর্বেই যদি গ্রেফতার হন, তখন যাতে বাঙালী ক্ষমতাসীনদের অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে না নেয়! ২৫শে মার্চ রাতে পাকি হানাদারের আক্রমন আর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের চুড়ান্ত মনোভাবের প্রকাশ পায়, ফলে একমাত্র বিকল্প পথ স্বাধীনতার অনুষ্ঠানিক ঘোষনা আসে ২৭শে মার্চে জিয়ার বেতার ভাষনে!

৭ই মার্চের ভাষন রাজনৈতিকভাবে, একটা জনগোষ্ঠীর শোষন-বঞ্চনার বিরুদ্ধে চরম আল্টিমেটামের ঐতিহাসিক এক ভাষন! এ ভাষনে পরিস্থিতি অনুযায়ী অল্টারনেটিভ হিসেবে স্বাধীনতার রাস্তা খোলা রাখা হয় সেটাও কারো পক্ষে অস্বীকার করার উপায় নাই! কিন্তু এ ভাষনটিকে আল্টিমেট স্বাধীনতার ঘোষনা হিসেবে মানা কঠিন! আমার দেখা এখন যারা মুরুব্বী কিন্তু সরাসরি কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নয় বা অন্ধ রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়, তাদের সবার কাছে এটাই শুনতে পাই যে ৭ই মার্চে তারা আল্টিমেট স্বাধীনতার ঘোষনা না পেলেও পরিস্থিতির সাপেক্ষে পাকিস্তান যে ভেঙ্গে যেতে পারে, এটার আঁচ তারা পেয়েছিলেন! এক্ষেত্রে ২৭শে মার্চে জিয়ার ভাষনটিকে দুর্দান্ত ফিনিশিং বলেই মনে হয়!

১৭ ই এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১২:৪২

আইরিন সুলতানা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

তবে একটু কষ্ট করে নীচে ব্লগার াহো'র ৩২ নং মন্তব্যটি পড়ে দেখার অনুরোধ করছি আরো কিছু প্রয়োজনীয় তথ্যের কারণে...

আনুষ্ঠানিকভাবে ৭ই মার্চের ঘোষণাকে স্বাধীনতা ঘোষণা না মানলেও এটা তো মানতেই হবে যে বঙ্গবন্ধু ২৫শে মার্চের উদ্ভূত পরিস্থিতির পর প্রত্যাশিত কাগজে-কলমেও স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

শেখ মুজিব ২৫শে মার্চ মধ্যরাতের পর, (অর্থ্যাৎ ২৬শে মার্চের রাত) ১:৩০ টার দিকে বন্দী হন।

২৬শে মার্চে এম.এ.হান্নান রেডিও তে প্রথম আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষনাপত্র পাঠ করেন। এই ঘোষনা পত্রটি বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত ছিল এবং এতে তারিখ উল্লেখ ছিল ২৫শে মার্চ ১৯৭১ ।

ঘোষণাপত্রটির শুরুতেই বলা ছিল, "আজ বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও স্বার্বভৌম রাষ্ট্র।... ... ..."



পরবর্তীতে এই ঘোষণাপত্রটি বাংলা করেন ডঃ মনজুলা আনোয়ার। চট্টগ্রামের কিছু ছাত্র ঠিক করে এই ঘোষনাটি আগ্রবাদ রেডিও স্টেশন থেকেও প্রচার করা উচিৎ। কিন্তু এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাভে ব্যর্থ হয় তারা।

তারা কালুরঘাট ব্রীজ এলাকার নিকটবর্তী হয়, যারা জিয়াউর রহমানের আওতায় ছিল। বাঙালি সেনরা রেডিও স্টেশন পাহারা দেয়, ইঞ্জিনিয়াররা প্রচারনার সার্বিক ব্যবস্থা তত্বাবধান করে এবং জিয়াউর রহমান ঘোষনা পাঠ করেন।


জিয়া যে ঘোষণা পাঠ করেছিলেন, তা অবশ্যই পরিস্থিতিতে উজ্জীবিত করেছিল, তাতে কোনই সন্দেহ নেই। তবে জিয়ার আগেও অনেকে পাঠ করেছেন ঘোষণা। মেজর জিয়ার পদবীই তাকে এখানে অন্যান্যদের থেকে বাড়তি প্রাওরিটি দেয় । এবং জিয়া'র চূড়ান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বঙ্গবন্ধুর পক্ষ বা বার্তা বাহক হয়েই আসে।

৩১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ ভোর ৪:৪৭

টেকনলজী বলেছেন: দারুণ, সরাসরি প্রিয়তে

অমি রহমান পিয়ালের আর্কাইভে এ নিয়ে একটা পোস্ট আছে, উনি একটা অন্য সম্ভাবনার কথা বলেছেন

৩২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ ভোর ৬:২১

াহো বলেছেন: শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন,

যেহেতু উল্লিখিত বিশ্বাসঘাতকতামূলক কাজের জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, এবং বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান; এবং

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র
মুজিবনগর, বাংলাদেশ
তারিখ: ১০ এপ্রিল ১৯৭১


--------------------------------------------------
২৫শে মার্চ মাঝরাতে ইয়াহিয়া খান তার রক্তলোলুপ সাঁজোয়া বাহিনীকে বাংলাদেশের নিরস্থ মানুষের ওপর লেলিয়ে দিয়ে যে নরহত্যাযজ্ঞের শুরু করেন তা প্রতিরোধ করবার আহ্বান জানিয়ে আমাদের প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।


১১ই এপ্রিল ১৯৭১ বাংলাদেশবাসীর উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদের বেতার ভাষণ।



---------------------------------------------------------------------

২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনার বিষয়ে ১৯৭১ সালের আন্তর্জাতিক নিউজ-মিডিয়া
LEADER OF REBELS IN EAST PAKISTAN REPORTED SEIZED; Sheik Mijib Arrested After a Broadcast Proclaiming Region's Independence DACCA CURFEW EASED Troops Said to Be Gaining in Fighting in Cities -Heavy Losses Seen
The Pakistan radio announced today that Sheik Mujibur Rahman, the nationalist leader of East Pakistan, had been arrested only hours after he had proclaimed his region independent and after open rebellion was reported in several cities in the East.
New York Times - Mar 27, 1971
Click This Link


“The rebel leader Sheikh Mujib arrested.” The paper also added—“The radio Pakistan has declared that, Sheikh Mujib was arrested from his residence, within one hour after he declared the independence of Bangladesh.” (The Evening News, March 26, 1971: Headline news)

“The independence war has begun in East Pakistan. Pakistani soldiers started to crush Bangalee’s independence movement under the leadership of Sheikh Mujib. President Yahya Khan declared Sheikh Mujib the traitor of Pakistan. The declaration of the independent Bangladesh, in the name of Sheikh Mujib, came from a radio station named: “Voice of Bangladesh”. The radio also has issues an order to all Bangalees to follow orders only from the Sheikh Mujib, the leader of the independence.” (The Guardian- March 27, 1971)

“The leader of independence Sheikh Mujib has declared independence of Bangladesh and severe battle is in progress in the eastern part of Pakistan. President Yahya Khan has banned Awami League political party, declared Sheikh Mujib as the traitor of Pakistan and vowed to punish Sheikh Mujib for his crime. ” (The Times of London, March 27, 1971)

১৭ ই এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১২:৫০

আইরিন সুলতানা বলেছেন: আপনাকে অ-নে-ক ধন্যবাদ কষ্ট করে, সময় করে এই তথ্যগুলো জানানোর জন্য।

৭ই মার্চ ছাড়াও যে সরাসরি বঙ্গবন্ধু ২৫শে মার্চ পরবর্তী পরিস্থিতিতে ঘোষণাপত্র ইস্যু করেন, এটা অনেকেই এড়িয়ে , জিয়া প্রসংগে চলে আসেন। জিয়ার ঘোষণা পাঠ অমূলক নয় তবে, তবে মাঝের পর্যায়গুলো না থাকলে পুরো ঘটনাটি পূর্নাঙ্গতা পায়না মোটেও । ....

এই বিষয়ে আরো একটু বিস্তারিত খুঁজছিলাম, কিছুদিন আগে, খুব বেশী বিস্তারিত পাওয়া হয়ে ওঠার আগেই আপনার মন্তব্য পেয়ে জানা গেল অনেক কিছু।

৩৩| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১১:৪৭

হায়রে দুনিয়া বলেছেন: যথেষ্ট লেখাপড়া করেছেন এই পোস্টটার জন্য, বোঝা যাচ্ছে।

অসংখ্য প্লাস আর ধন্যবাদ।

৩৪| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৪:২৯

তায়েফ আহমাদ বলেছেন: @দুরন্ত স্বপ্নচারীঃ(২৮ নং কমেন্ট)
আপনি লক্ষ্য করেছেন কীনা জানি না, আমি প্রথম মন্তব্যে বলেছিলাম যে, যেখানে ইতিহাসের দ্বিমুখী পাঠ পাওয়া যায়, সেখানে কে কী বলেছেন, তার চাইতে, ঘটনার পূর্বাপরকে স্বাভাবিক বোধবুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করাই যুক্তিযুক্ত।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসম্বাদিত নেতা হওয়া নিয়ে কোন দ্বিমত নেই। দ্বিমত হচ্ছে, স্বাধীনতার যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন এবং কাছের মানুষদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, তা কেন সকল পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়তে ২৫শে মার্চের গনহত্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো! সে রাতে ক্র্যাক্‌ডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে এমন নিশ্চিত খবর জানার পরেও কেন তিনি বিনাবাধায় আত্মসমর্পণ করলেন?
এই দুইটি ব্যাপারই বঙ্গবন্ধুর দেখা স্বাধীনতার স্বপ্নের উপর দুইটি বিরাট প্রশ্নবোধক কিংবা আশ্চর্য্যবোধক চিহ্ন এনে দেয়- অন্ততঃ আমার মনে।:|
একে আমি সত্য অস্বীকার নয়, বরং প্রকৃত সত্য জানার চেষ্টা করি মাত্র।

@হায়রে দুনিয়াঃ যে বুঝতে চায় না, সে কোনদিনই বুঝবে না; তাই বলে, যিনি সত্য জানেন তাঁর নিশ্চুপ হওয়াটা মানায় না। অতএব, আপনি উত্তেজিত হবেন না!:)

@লেখকঃ এত কথা-অকথার ভীড়ে আপনার প্রচেষ্টাকে ধন্যবাদ দেয়া হলো না। এখন দিলাম।:D

০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:৪৬

আইরিন সুলতানা বলেছেন: সে রাতে ক্র্যাক্‌ডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে এমন নিশ্চিত খবর জানার পরেও কেন তিনি বিনাবাধায় আত্মসমর্পণ করলেন?

-------------

শেখ মুজিব সে রাতে নিশ্চিতভাবে পালিয়ে যেতে পারতেন বলে যেমনটা ভাবছি ঘটনা আদতে মনে হয় না তা ছিল। সেদিন ক্র্যাকডাউনের আশংকায় সম্ভবত বিকেলে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্যদের পালিয়ে যেতে বলেন। তাঁকে অনুরোধ করা স্বত্বেও তিনি পালাতে রাজি হননি তখন, এবং ধানমন্ডির বাড়িতেই অবস্থান করেন। মধ্যরাতের আগে আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁকে পালানোর জন্য পীড়াপীড়ি করলে তিনি বললেন, আমার বাড়ি কমান্ডোরা ঘেরাও করে ফেলেছে, আমার যাওয়ার উপায় নাই।তোমরা চলে যাও। এরপরও যখন তারা তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য জিদ ধরেন, তখন তিনি বলেন যে,আমাকে না পেলে পাক হানাদার বাহিনী সমস্ত ঢাকা শহর ধ্বংস করে দেবে।

৩৫| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৪:৩৩

তায়েফ আহমাদ বলেছেন: আগের মন্তব্যের দ্বিতীয় অংশ@ হায়রে দুনিয়া নয় বরং @হায় ঈশ্বর! হবে।:(
অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দুঃখিত।

৩৬| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:১৪

দুরন্ত স্বপ্নচারী বলেছেন: @ তায়েফ,

আপনার কাছে আমার প্রশ্নঃ পৃথিবীতে কোন কোন রাষ্ট্র ঘোষনা দিয়ে স্বাধীন হয়েছে?

এই প্রশ্নটার জবাব পাবার পরে আমি আলোচনায় আসবো।

৩৭| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:৩৫

হায় ঈশ্বর! বলেছেন: @তায়েফ আহমাদ ও ভাই ওটা আপনার জন্যে ছিলো না. শুধু দুরন্ত স্বপ্নচারী এর জন্যে. আমি আবার তার পুরানা শত্রু কিনা তাই .

৩৮| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৩৪

দুরন্ত স্বপ্নচারী বলেছেন: @তায়েফ,
মুজিবের উপর গোয়েন্দা নজরদারী ছিল আগাগোড়াই। সেটা এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল ৭ মার্চে তাকে রেসকোর্সে নিয়ে যাবার জন্য গোঁফওয়ালা ছাত্রলীগ নেতাদের খুঁজে তাদেরকে চুল ব্যাক ব্রাশ করিয়ে মুজিবের পাশে গাড়িতে বসানো হয়েছিল। এবং তিনটি গাড়ির কোনটিতে মুজিব আছেন সেটা যেন কেউ বুঝতে না পারে সে ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।
অর্থাৎ মুজিবের উপরে যেরকম নজরদারী ছিল তাতে মুজিবের পক্ষে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না।
পালানোর চেষ্টা তার মৃত্যু ডেকে আনতে পারতো।
তাছাড়া পরে প্রমানিত হয়েছে মুজিবের অনুপস্থিতি যুদ্ধে আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল।

সে রাতে ক্র্যাক্‌ডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে এমন নিশ্চিত খবর জানার পরেও কেন তিনি বিনাবাধায় আত্মসমর্পণ করলেন?
তবে মুজিবের উচিৎ ছিল পাক সেনাদের সাথে ধ্বস্তাধ্বস্তি করে প্রাণ হারানো?

দ্বিমত হচ্ছে, স্বাধীনতার যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন এবং কাছের মানুষদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, তা কেন সকল পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়তে ২৫শে মার্চের গনহত্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো!

মুজিবের পক্ষে ঢোল পিটিয়ে স্বাধীনতার ঘোষনা দেয়া সম্ভব ছিল না। তিনি গনসংযোগের মাধ্যমে জনতাকে জাগানোর চেষ্টা করে চলেছিলেন। তিনিই শান্ত জনতাকে স্বাধীনতার দিকে দূর্বার গতিতে ধাবিত করেন। তিনি জনতাকে প্রস্তুত করে তুলছিলেন ধীরে ধীরে।

ওসমানী ছিলেন বাঙ্গালী অফিসারদের মধ্যে ফুল কর্নেল। তিনি যখন অবসর গ্রহন করলেন তখন মুজিবই তাকে ডেকে আওয়ামী লীগে আনেনে। এবং মুজিবই তাজউদ্দীনকে জানান যে দেশে কখনো যুদ্ধের প্রয়োজন হলে ওসমানী গেরিলা যুদ্ধের নেতৃত্ব দেবেন।

ড. কামাল হোসেনকে মুজিব আওয়ামী লীগে আনেন। আইনি সহায়তার জন্য। ছয় দফা তৈরীর সময় পূর্ব পাকিস্থানের প্রতি অর্থনৈতিক বৈষম্যের তথ্য তুলে ধরার জন্য মুজিব দারস্থ হন ড. রেহমান সোবহানের।
মুজিব তার রাজনৈতিক গুরু সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর থেকেই স্বাধীনতার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেন। অবিশ্রান্ত তিনি সাংগঠনিকভাবে শক্তি অর্জনের চেস্টা করে গেছেন; কারণ একটিই আর সেটি হলো চূড়ান্ত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়া।

তবে কেন পাক বাহিনী ২৫ মার্চে ঝাপিয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত এসব জানা গেল না?

মুজিব আগে আক্রমন করতে চাননি। তিনি বিছিন্নতাবাদী হতে চাননি। তিনি চেয়েছেন আগে পাকিস্থানীরা আক্রমন করুক। যেন বিশ্বের সহানুভূতি ও সমর্থন আদায় সহজ হয়।

৩৯| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৪৩

হায় ঈশ্বর! বলেছেন: @তায়েফ আহমাদ ...এইবার আপনে শক্ত যুক্তি দিতে পারবেন.....আপনে জবাব দেয়ার আগে আমার শত্রু জবাব দেয়ায় হেতে বিপদে পরবো

৪০| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৪৪

ধ্রুব বলেছেন: এমুন গবেষনার টাইম পান কৈ! আমাগোতো কামলা দিয়া বাসায় ফির কামলা দিবার পরে মাথা কাজ করে না!

০৮ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১০:০৯

আইরিন সুলতানা বলেছেন: কয়দিন ব্লগে কম-বেশী আলোচনা দেখলাম...কিন্তু কোথায় জানি ধোঁয়া ধোঁয়া ধোঁয়া, তাই ভাবলাম কাহিনী কী একটু জানি , তারপর ভাবলাম সবার সাথে একটু শেয়ার করি...
তোমার তো কামলার শিডিউল-ই উল্টা বলে জানতাম, ফলে মাথা কাজ না করারই কথা সব সময়।

৪১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১২:৪৭

হায় ঈশ্বর! বলেছেন: @ধ্রুব...এইগুলান সে ভার্সিটি তে থাকতেই গুইলা খাইসে. নতুন কইরা গবেষণা করতে হয় নাই .....

৪২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৭:৫৩

পারভেজ আলম বলেছেন: একমাত্র দিকনির্দেশনা দানকারী বক্তব্য বলে কোন কিছু নাই বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধকে ১৯ মিনিটের ভাষন বা একজন মেজরের রেডিও ভাষনের ফলাফল বলে যারা চালাতে চায় তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। একাত্তর একটা ধারাবাহিক সংগ্রামের ফলস্রুতি, যেই সংগ্রামের শুরু একাত্তরে হয় নাই, হয়েছে আরো বহু আগে। ছাত্র, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবীদের হাতে তিলে তিলে গড়ে ওঠা এই সংগ্রামে সময়োপযোগি সুযোগ্য নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যারা বঙ্গবন্ধুর "জিয়ে পাকিস্তান" নিয়ে মাতামাতি করেন, বঙ্গবন্ধুর দোষ ধরেন, রাজনীতি এবং ইতিহাস বিষয়ে তাদের কোন ধারণাই নাই। একজন জাতীয় নেতা চাইলেই সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষনা দিতে পারেন না, ব্যাপারটা এত সহজ না। ৭ মার্চ সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষনা হতো রাজনৈতিক কৌশলগত দিক থেকে ভূল স্বিদ্ধান্ত। তবে বঙ্গবন্ধুর মাথা থেকে এই দেশের স্বাধীনতার ধারণা বেরিয়েছে এমনটা যারা মনে করেন তারা মোটেও এ জাতির মুক্তি সংগ্রামের আত্মার খবর রাখেন না। এদেশের সাধারণ গণমানুষের মধ্যে তখন যে মুক্তিস্প্রিহা জেগে উঠেছিল, শেখ মুজিব একজন যোগ্য নেতা হিসাবেই তাতে সারা দিয়েছিলেন। বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম যেমন একাত্তরে শুরু হয় নাই, তেমন একাত্তরে শেষও হয় নাই। এই সংগ্রাম এখনো চলছে, প্রকৃত মুক্তি সংগ্রামীরা পথ চিনে চিনে ঠিকই সেই সংগ্রামে সামিল হয়। আর আওয়ামীলীগ, বিএনপির মতো ভারত, আমেরিকা, আরবের দালালেরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আর চেতনা বিকৃত করে নিজেদের স্বার্থে, পারস্পরিক বিরোধীতার খাতিরে।
বাঙালির প্রকৃত মুক্তি সংগ্রামে সামিল হোন। যেই উপনিবেশ তখনো ছিল, সেই উপনিবেশ এখনো আছে। লাল সবুজের সালাম।

০৮ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১০:১৯

আইরিন সুলতানা বলেছেন: সহমত এবং সাথে একটু যোগ করতে চাই ...

সবচেয়ে বড় কথা হলো ঘোষনা দিলেই তো আর দেশ স্বাধীন হয় না। জিয়া ঘোষনা দিয়েছেন (বা পাঠ করেছেন) বটে কিন্তু সেই গ্রাউন্ডটা কে তৈরী করলো? জিয়া ছাড়াও তো আগে ঘোষনা পাঠ হয়েছে, বা কাকে দিয়ে করানো যায় তা ভাবা হচ্ছিল , জিয়াউর রহমানকে প্রাওরিটি দেবার কারণ ছিল ওইখানে তার rank । সেসময় মেজর জিয়া কে মানুষ চিনতো না, ফলে তার ঘোষণার জন্য কেউ মুখিয়ে থাকেনি, তবে তারা যে রিভল্ট করেছিল, সেই সময় জনগণকে সামগ্রিক পরিস্থিতির জন্য আপডেট ঘোষনা দেয়া নিয়ে আলোচনা চলছিল। এবং rank এর কারণেই জিয়াউর রহমানের নাম চলে আসে স্বভাবতই। ফলে তাঁর এক ঘোষনাতে বাঙালি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েনি বা দেশ স্বাধীন হয়নি, সুতরাং এই ঘোষনাকে প্রয়োজনীতা বলে আখ্যা দেয়া যায়, মেজর জিয়াকে ধন্যবাদ দেয়া যায় কিন্তু তাই বলে "স্বাধীনতার ঘোষক" এর যে তাৎপর্যপূর্ণ অর্থ রয়েছে সেই দিক বিবেচনা করে তাকে ঘোষক বলা এবং বঙ্গবন্ধুর সমকক্ষ করার প্রচেষ্টা অবশ্যই নিন্দাযোগ্য।

৪৩| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১১:২৫

মেঘ বলেছেন: ভালো লাগলো। পড়লাম আ্দ্যোপান্ত।

৪৪| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩২

তায়েফ আহমাদ বলেছেন: @দুরন্ত স্বপ্নচারীঃ অনিচ্ছাকৃত দেরি করে উত্তর দেয়ার জন্য দুঃখিত।

প্রথমতঃ আপনি পৃথিবীতে কোন কোন রাষ্ট্র ঘোষনা দিয়ে স্বাধীন হয়েছে? -প্রশ্নটির মাধ্যমে আমাকে বিপদে ফেলে দিয়েছিলেন। কারন, আমি ইতিহাসের আগ্রহী ছাত্র, অ্যাকাডেমিক ছাত্র নই!:( তাই, উইকিপিডিয়ায় এ সংক্রান্ত লিস্ট দেখে মাথা খারাপের যোগাড়!
Click This Link

দ্বিতীয়তঃ আমি এই পোষ্টে মন্তব্যে ৭ই মার্চের ভাষনের গুরুত্বকে আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে স্বীকার করেই নিয়েছি; তবে, একে স্বাধীনতার সুস্পষ্ট ঘোষনা বলতে রাজি হই নি।

তৃতীয়তঃ অন্যদেশের স্বাধীনতার ঘোষনার সাথে আমাদের স্বাধীনতা ঘোষনার মিল খুঁজতে যাওয়া বোকামী বলে আমার মনে হয়েছে।

জার্মান রেডিও এই রিপোর্টটি শুনে দেখতে পারেন।
Click This Link

এর মধ্যেই অধৈর্য্য(?) হয়ে আপনি উত্তর দিয়ে দিলেন!:)

বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিগতভাবে যে পরিমান স্বাধীনচেতা ছিলেন তাতে, দীর্ঘমেয়াদী(যে প্রস্তুতি নিয়ে পাক বাহিনী আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাতে মাত্র ৯ মাসেই স্বাধীনতা অর্জন একটি মিরাকল বলা চলে) স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা করে দিয়ে তিনি বিনাবাধায় আত্মসমর্পন করবেন, তা মেনে নিতে আমার সত্যিই কস্ট হয়! মৃত্যুর পরোয়ানা তাঁর মাথার উপরে '৭১-এর আগে-পরে সবসময়ই ছিল, তাই না?

মুজিব আগে আক্রমন করতে চাননি। তিনি বিছিন্নতাবাদী হতে চাননি। তিনি চেয়েছেন আগে পাকিস্থানীরা আক্রমন করুক।- আপনার এই কথাকেই অন্যভাবে বলে বিরুদ্ধবাদীরা ২৫শে মার্চের গনহত্যার জন্য বঙ্গবন্ধুকে দায়ী(যা বিশ্বাসযোগ্য নয়) করে থাকে! শুনেছেন বোধ হয়?

@হায় ঈশ্বরঃ আপনাদের শত্রুতা সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে, আমার সাথে কারো শত্রুতা নেই। মতের অমিল থাকাটা বিচিত্র নয়। তবে, এখানে আমি যে কোন মূল্যে আমার মত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করি না, কিছু জানার এবং জানানোর চেষ্টা করি। যেমনঃ দুরন্ত-এর কাছ থেকে এমন কিছু তথ্য জানলাম যা আগে জানতাম না!

০৮ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:৪৬

আইরিন সুলতানা বলেছেন: স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা করে দিয়ে তিনি বিনাবাধায় আত্মসমর্পন করবেন, তা মেনে নিতে আমার সত্যিই কস্ট হয়!

-----

বিনা বাধায়, বিনা বাধায় বলে আপনি বারবার সেসময়ের পরিস্থিতিকে হালকা করে দিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে, উপরেও এক জায়গায় এমন মন্তব্য করেছিলেন , সেখানেই উত্তর করেছিলাম, এখানেও করছি -


শেখ মুজিব সে রাতে নিশ্চিতভাবে পালিয়ে যেতে পারতেন বলে যেমনটা ভাবছি ঘটনা আদতে মনে হয় না তা ছিল। সেদিন ক্র্যাকডাউনের আশংকায় সম্ভবত বিকেলে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্যদের পালিয়ে যেতে বলেন। তাঁকে অনুরোধ করা স্বত্বেও তিনি পালাতে রাজি হননি তখন, এবং ধানমন্ডির বাড়িতেই অবস্থান করেন। মধ্যরাতের আগে আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁকে পালানোর জন্য পীড়াপীড়ি করলে তিনি বললেন, আমার বাড়ি কমান্ডোরা ঘেরাও করে ফেলেছে, আমার যাওয়ার উপায় নাই।তোমরা চলে যাও। এরপরও যখন তারা তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য জিদ ধরেন, তখন তিনি বলেন যে,আমাকে না পেলে পাক হানাদার বাহিনী সমস্ত ঢাকা শহর ধ্বংস করে দেবে।

৪৫| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৫

হায় ঈশ্বর! বলেছেন: দেখি সপ্নচারী কি বলে . @তায়েফ আহমাদ ও ভাই আপনে খেপলেন কেন . কৈলাম তো ঐ মন্তবো টা তার লাইগা ছিলো .

৪৬| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১০:৪৪

তারার হাসি বলেছেন:
গোছানো লেখা গোছানো উত্তর।
শুভকামনা সবসময়ের জন্য............

৪৭| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১০:৫৯

তায়েফ আহমাদ বলেছেন: @হায় ঈশ্বর!: ভাইরে ক্ষেপি নাই। আমার কথাবার্তা একটু এই রকম রসকষহীন..........এই জন্য জীবনে অনেক নিগ্রহ পোহাইতে হৈছে!:(

৪৮| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৮

দুরন্ত স্বপ্নচারী বলেছেন:
@তায়েফ,
আপনার মন্তব্যের জবাব হলোঃ শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষনকে আপনি যেমন স্বাধীনতার সুস্পষ্ট ঘোষনা বলে মনে করেন না, তেমনি এটাকে কেউই সুস্পষ্ট ঘোষনা বলে দাবী করে না।

আপনার এই কথাকেই অন্যভাবে বলে বিরুদ্ধবাদীরা ২৫শে মার্চের গনহত্যার জন্য বঙ্গবন্ধুকে দায়ী(যা বিশ্বাসযোগ্য নয়) করে থাকে! শুনেছেন বোধ হয়?

জ্বি ভাই, মুজিব গনহত্যার জন্য দায়ী। মুজিবই বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্থানকে দ্বিখন্ডনের জন্য দায়ী।
মুজিবই অযথা পূর্ব-পাকিস্থানবাসীকে সংগ্রামে লিপ্ত করেছিলেন। মুজিবই প্রধানমন্ত্রী হবার খায়েশে শান্তিপ্রিয় মানুষের কাছে যুদ্ধ টেনে এনেছিলেন এবং পাকিস্থান বিভক্ত করে তার একাংশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্য তিনি সর্বাংশে দায়ী। তার বিচার করা হোক।

৪৯| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:৫২

দুরন্ত স্বপ্নচারী বলেছেন: শেখ মুজিব বিনা বাধায় আত্মসমর্পন না করে পাকসেনাদের সাথে ধ্বস্তাধস্তি করে প্রাণ হারালে অনেক বঙ্গবাসী খুশি হতো ;)

৫০| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:৩৭

পারভেজ বলেছেন: সহমত
++

১১ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:৪৯

আইরিন সুলতানা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্য।

৫১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:৫৫

কাব্য বলেছেন: অনেক আগেই গ্যালারীতে বসছি ।

১১ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:৪৯

আইরিন সুলতানা বলেছেন: বসে না থেকে একটু হাঁটাচলা করো ।

৫২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১০:৫৬

দুরন্ত স্বপ্নচারী বলেছেন: প্রিয় সুহৃদ,
আমি নতুন। আপনার লেখা পড়ি, ভালো লাগে বলে। আপনার সবগুলো লেখাই অসাধারণ। সত্যি বলতে কি ব্লগে আপনাদের মতো কয়েক জন অসাধারণ লেখক আছেন বলেই আমার ব্লগে আগমন।
আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম। আপনার শুভ কামনায়-

আপনার একান্ত গুণমুগ্ধ
স্বপ্নচারী

১১ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৯:৪৭

আইরিন সুলতানা বলেছেন:
ভাই, কারে বললেন ! আমার নাম তো সুহৃদ না ! :) আর আপনিও তোন নতুন না, বছর খানেক তো হইলোই ব্লগে ..!

৫৩| ১১ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:৪৫

সায়েম মুন বলেছেন: নতুন রেওয়াজ শুরু হলো ------- বিরাট তথ্যমুলক পোষ্ট দেখা যাচ্ছে ইদানীং!

অনেক অজানা কিছু জানতে পারছি আপনার কল্যাণে!

তবে মাঝেমাঝে কবিতাও আশা করি:(

ব্লগে কম দেখা যায় কেন?:(

শুভকামনা রইল!

১২ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:৫০

আইরিন সুলতানা বলেছেন: বিরাট তথ্যমূলক পোস্টের হাট ! :)

এর বাইরের অজানা কিছু আপনার জানা থাকলে, সেটা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।

কবিতা লিখি...শুধু পোস্ট করছিনা আপাতত!

ব্লগে বেশী দেখা গেলে কি আর এই প্রশ্নটা করতেন, বলেন !

ভাল থাকুন। শুভকামনা তো সব সময়।

৫৪| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১২:৫৮

দুরন্ত স্বপ্নচারী বলেছেন: ৭ই মার্চে আমি আসলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। এই জন্য ক্লিয়ার কইরা কিছু বলতে পারতেছি না। ;)

১৭ ই এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১:৩৩

আইরিন সুলতানা বলেছেন: অন্তত পরের দিন রেডিও শুনে ভাষণের রেকর্ড তো রাখতে পারতেন :)

তাইলে কী হইসে, আর ক্যান হইসে তার ফয়সালা আপনিই করে দিতে পারতেন... ;)

৫৫| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৯:৪০

নুরুজ্জামান মানিক বলেছেন: +প্রিয়তে ।

২৫ শে এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৪

আইরিন সুলতানা বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

৫৬| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১০:১৭

নুরুজ্জামান মানিক বলেছেন: দুরন্ত স্বপ্নচারীর ২৮ নম্বর মন্তব্যে দুইটা সংশোধনী
১। "৭০-এ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে তিন নেতার মাজারে দাড়িয়ে মুজিব বলেছিলেন, ''আজ থেকে পাকিস্থানের পূর্বাংশ পশ্চিম পাকিস্থানের পরিবর্তে বাংলাদেশ নামে পরিচিত হবে।''

১৯৬৯ সালে হবে । (সুত্রঃ ইত্তেফাক ৬ ডিসেম্বর ১৯৬৯)

২। "বুয়েটে হাসানুল হক ইনু'র রুমে কামরূল হাসান পতাকার ডিজাইন করার"

পতাকার নকশাকার ছিলেন ছাত্রলীগের শিবনারায়ন দাশ । আমার বই 'স্বাধীনতা যুদ্ধের অপর নায়কেরা'(২০০৯, শুদ্ধস্বর প্রকাশন ) থেকে তুলে দিলাম পতাকার কাহিনী-


১৯৭০ সালের ৭ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১১৮ নম্বর কক্ষে সিরাজুল আলম খানের নির্দেশে আ স ম আবদুর রব, শাজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমেদ, মনিরুল ইসলাম ওরফে মার্শাল মনি, হাসানুল হক ইনু, চিশতী শাহ হেলালুর রহমান প্রমুখ স্বাধীন বাংলার পতাকা তৈরির পরিকল্পনা করেন। কিন্তু পরিকল্পকদের কেউই আঁকতে জানেন না। সবাই চিন্তায় পড়লো। শাজাহান সিরাজ বললেন -কুমিল্লার ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শিবনারায়ণ দাস ভালো আঁকতে জানেন। শাজাহান সিরাজের প্রস্তাবে শিবনারায়ণ দাসকে কুমিল্লা থেকে নিয়ে আসা হলো। মূলত শিবনারায়ণ দাস চিশতী হেলালের ২৫ (ঢাবি ছাত্রলীগ সেক্রেটারি) সহযোগিতায় পতাকার অঙ্কন করেন। নীলক্ষেতের নিউ প্যাক ফ্যাশন টেইলার্সের মোঃ হোসেন, মোঃ নাসিরুল্লাহ, আবদুল খালেক মোহাম্মদী নির্দেশমতো পতাকা তৈরি করে দেন। সবাই একমত ছিলেন মানচিত্র দিয়ে পতাকা তেরী কষ্টসাধ্য হবে তথাপি বাঙালি জাতীয়তাবাদকে জাগ্রত করার লক্ষ্যে তারা এভাবেই পতাকা তৈরি করেন সেদিন।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১২:৪২

আইরিন সুলতানা বলেছেন: আপনি যে সময় করে মন্তব্যগুলোও পড়ে, প্রয়োজনীয় তথ্য যোগ করার তাগিদ অনুভব করেছেন এই পোস্টে এজন্য অ-নে-ক কৃতজ্ঞতা।



এই মন্তব্যটি সবাইকে পড়ে দেখার অনুরোধ করছি।

৫৭| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১২:৫১

দুরন্ত স্বপ্নচারী বলেছেন:
বাংলাদেশ নামকরণটি আসলে ৫ ডিসেম্বর ১৯৬৯-এ হয়েছিল।

কামরূল হাসানের পতাকার ডিজাইনের বিষয়টিও কোথায় যেন পড়েছিলাম, রেফারেন্স দিতে পারব না। হতে পারে সেটা পরিবর্তিত ডিজাইনটি (যেটা বর্তমানে প্রচলিত) করার সময়ও, আমি নিশ্চিত নই।

নুরুজ্জামান মানিককে ধন্যবাদ তথ্য দুটো সরবরাহ করার জন্য।

৫৮| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৩:০৬

নুরুজ্জামান মানিক বলেছেন: @দুরন্ত স্বপ্নচারী

১. "বাংলাদেশ নামকরণটি আসলে ৫ ডিসেম্বর ১৯৬৯-এ হয়েছিল। "


২.বস্তুত লাল সূর্যের মাঝে সোনালী রঙের মানচিত্র বসিয়ে দেয়ার কারণ ছিল, বাংলাদেশ বলতে কোন ভুখন্ডটি বোঝায় তা' চিহ্নিত করা । আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মানচিত্র উঠিয়ে দেয়া হবে । এভাবেই পতাকা তৈরি হয়ে গেল জয় বাংলা বাহিনীর জন্য । ঘটনাচক্রে এ পতাকাটিই হয়ে গেল বাংলাদেশের জাতী্য় পতাকা ।

পৃথিবীর স্বাধীন রাষ্ট্রের মানচিত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্থান সুনির্দিষ্ট হবার পর দেশের পতাকায় সেই মানচিত্র রাখার আর দরকার পড়ল না ।

বাহাত্তরে মন্ত্রীসভায় মানচিত্র বাদ দিয়েই তাই পতাকার নকশা পাশ হয় । বাহাত্তরে পতাকার ফাইনাল নকশা করেন পটুয়া কামরুল হাসান ।

৫৯| ২৭ শে মে, ২০১০ বিকাল ৫:০৮

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: অসাধারণ! ধন্যবাদ।

৬০| ২৭ শে মে, ২০১০ বিকাল ৫:২২

রিফাত হোসেন বলেছেন: বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানী শোষন থেকে মুক্তি চেয়েছেন সম্পূর্ণ আলাদা হতে কখনই চান নি ।

বাংলাদেশ নামক আলাদা পতাকার হয়ত আলাদা উপ রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখনই স্বাধীন সার্বভৌম দেশের স্বপ্ন দেখেন নি ।

এত ১৬ দফা ৬ দফা ৭ দফা ১৪ দফা করা লাগে না স্বাধীনতার জন্য ।

স্বাধীন দেশের এক বাণী ১ দফা স্বাধীন বাংলাদেশ চাই, আমাদের মুক্তি চাই, সেটা শেখ মুজিব করেন নাই ।
এত দফা করার মানে কি `?

৬১| ২৭ শে মে, ২০১০ বিকাল ৫:২৩

রিফাত হোসেন বলেছেন: স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ড ও আলাদা দেশ কিন্তু ইউকে নামে সংযুক্ত ! খেয়াল করুন ব্যাপারটা ।

৬২| ০৯ ই জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৩

রোবোট বলেছেন: রিফাত @ ৬০ নাম্বার কমেন্ট
স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু ঘোষণা বা দাবী দিয়াই আদায় করা যায় জানতাম্না

৬৩| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১:৪৯

বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলেছেন: ৭ই মার্চের ভাষণ ষ্ট্যান্ড বাই ঘোষণা। জিয়ার ঘোষণাই চূড়ান্ত।

২৭ শে মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:০১

আইরিন সুলতানা বলেছেন: একটি অন বিহাফ অফ ঘোষণা কিভাবে চূড়ান্ত হলো ??? তাছাড়া জিয়ার ভাষনটি তো আরো কয়েকজনকে দিয়েও পাঠ করানো হয়েছিল। তাহলে জিয়ার ভাষনের মৌলিকতা কোথায়??

ব্যাখা করুন।

৬৪| ০১ লা নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৭:০১

বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলেছেন: মিজ. আইরিন মরহুম মীর শওকত আলী ২৪শে মার্চ ২০০৯ সালে বাংলাভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেন। তাতে তিনি বলেন ১৯৭১ এর ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরের রাত ২টার পর মেজর জিয়া প্রথমে নিজ নামে ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে স্থানীয় আলীগ নেতাদের বিশেষ অনুরোধে মুজিবের নাম যোগ করেন। মুজিব যে ২৫-২৬শে মার্চ চূড়ান্ত স্বাধীনতা ঘোষণা দেন নি সে বিষয়ে ব্লগার দাসত্বর DOI সিরিজ(দলিল প্রমাণ সহ) পড়তে পারেন। যদি ইয়াহিয়া মুজিবকে প্রধানমন্ত্রী করত তাহলে আর যাই হৌক ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না। সেটা আরো কয়েক বছর লেগে যেত। তাই ৭ই মার্চের ঘোষণাকে কোনমতেই চূড়ান্ত ঘোষণা বলা যাবে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.