নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মেলাতে পারি না কিছু অন্তরে বাহিরে!!!!

সোহরাব সুমন

লেখক / কবি

সোহরাব সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আল-মা’য়ারাই --আরবের অন্ধ কবি

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৫১

আল-মা’য়ারাই (৯৭৩-১০৫৭), পুরো নাম আবু ’ল’আলা আহমেদ ইবনে ’আব্দুল্লাহ আল-মা’য়ারাই। উত্তর আলিপ্পর মা’য়ারা তে তার জন্ম। আরবের অন্যতম কবি হিসেবে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। জন্মের মাত্র চার বছর বয়সে তিনি গুটি বসন্তে আক্রান্ত হয়ে চিরদিনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারান। বড় হয়ে তিনি আলিপ্প, এন্টিওক সহ সিরিয়ার অন্যান্য শহর সমূহ ভ্রমণ করতে সক্ষম হন। এই সময় তিনি সেখানে সংরক্ষিত হস্তলিখিত সব পাণ্ডুলিপি মুখস্থ করার সুযোগ পান। সেই সময়কার কবিতার

সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত বাগদাদ শহরে তিনি টানা আঠারো মাস অবস্থান করেন। তারপর তিনি তার নিজ শহরে ফিরে এসে লুজুমিয়াত রচনা করেন। পঙতির এই বিশাল সংগ্রহটি এর নিয়ম বিরুদ্ধ গঠন এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য সনাতন ধারার সঙ্গে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। সেই সময় তার কাব্যময় বক্তৃতা শোনার আকর্ষণে অনেক লোক মা’য়ারাতে এসে একত্রিত হত। তারমতে, মা’য়ারাই লিখেছেন, “ধীশক্তি সম্পন্নলোকেরা আমাকে বৈরাগী বলে অভিহিত করেন, কিন্তু তাদের এই চিন্তা আসলে ভুল। আমি আমার কামনা বাসনাকে নিয়মের মাঝে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। আমি জাগতিক সুখ থেকে পরিত্যক্ত হয়েছি, কেননা সেগুলোর শ্রেষ্ঠতমটিই আমাকে ছেড়ে চলেগেছে।” কিন্তু অন্য আরো একটি মন্তব্যে তার নর বিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ পায়: “আমার জ্ঞানের দ্বারা তৈরি সত্তা ধুলায় পরিণত হবার পর থেকে, মানুষের সঙ্গে পরিচিতি অনুসারে আমি তাদের সঙ্গ পরিহার করে চলছি।”

লুজুমিয়াতের ধ্যানে এমন আবেগ রয়েছে, যা গতানুগতিক কোন ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রকাশ ঘটায় নি। বরং তাতে নতুন ধর্মীয় বিশ্বাসেরই আরোপ হয়েছে। আর তাই এর মাধ্যমে তিনি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। তিনি নিজেই বলেছেন, “আমি আমার ছত্র সমূহে কল্পনা, প্রেম, স্বপ্নালস ঘটনা, যুদ্ধের দৃশ্য, বা মদের আড্ডার মতো গল্পের বর্ণনা দেইনি। আমার উদ্দেশ্য সত্যকে তুলে ধরা। আজকাল আর কবিতায় সত্যকে তুলে ধরা হয়না। তার বদলে এতে মিথ্যের মাধ্যমে উৎকৃষ্টতাকে আরোপ করা হয়। আমি তাই আমার পাঠকদের সামনে নৈতিকতার কবিতা নিয়ে হাজির হয়েছি।”

সকল ধর্মের প্রতি আল-মা’য়ারাই এর এই সন্দিগ্ধতা জেনোফেনিস, ক্যারাভেকা এবং লুকরিটিয়াস এর সঙ্গে তুলনীয়। অজ্ঞানতা বিদূরিত হবার আগ পর্যন্ত পশ্চিমে এমন চিন্তার সন্ধান মেলেনি। সমানভাবে তিনি মুসলিম, ইহুদি এবং খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি বিরাগভাজন ছিলেন। তারমতে নির্দিষ্ট ধর্মের সাধুরা অন্ধভাবে জন্মানুসারে তাদের বিশ্বাস আঁকড়ে আছেন। তাদের জন্ম অন্য কোন ধর্মী গোষ্ঠীর গণ্ডির ভেতরে হলে তারা তখন সেই ধর্মেরই অনুসারী হতেন। তিনি এমন এক যুক্তিবাদী ছিলেন যিনি সকল ধরনের সনাতনতা এবং প্রকাশভঙ্গীর উপরে যুক্তির ঠাই দিতেন। ক্যারাভেকার মত তিনিও ধর্মকে পুরোহীতজন আর ধর্মের স্থপতিদের আয় এবং ক্ষমতার উৎসের এক মানবিয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতেন। যারা জাল নথিতে স্বর্গের প্রেরণা আরোপ করে জাগতিক সুবিধা লাভে ব্যস্ত। জৈন এবং

ব্রাহ্মণদের মতই তিনি জীবনের শুদ্ধাচারে বিশ্বাসী ছিলেন, একইসঙ্গে কোন প্রাণীর ক্ষতিরও ঘোর বিরোধী ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি নিরামিষ ভোজীতে পরিণত হন এবং সব ধরনের প্রাণী বধের এবং এর চামড়া পোশাক হিসেবে ব্যাবহারে বিরোধিতা করতে শুরু করেন।

খুবস্বভাবতই আল-মা’য়ারাই এর এই মতবাদ সমাজের সুবিধাভোগী গোষ্ঠীকে অসন্তুষ্ট করে।



নিচে এই অন্ধ কবির দশটি কবিতার অনুবাদ তুলে ধরা হল:



১. যে বন্ধু সুন্দর কথা বলতে পারতো

সুন্দর কথা বলতে পারে এমন বন্ধুর কথা শুনতে শুনতে

শান্ত নিরিবিলি যে সময়টা পেরিয়ে গেল সেটাই ধরণীর শ্রেষ্ঠক্ষণ।

প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত জীবনটা কতইনা মধুর !

কিন্তু প্রাচীন সময়টা মুখে আজো সেই তারুণ্যের দাঁত ধরে আছে:

তার ধ্বংসলীলায় ছারখার করেছে কতশত শ্রেষ্ঠ জাতী

সর্বত্রই সময় তাদের জন্য কী নিদারুণ কবর খুঁড়েছে-

কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউই সময়কে কবর দিতে পারেনি।





২. কথাবলায় বিরত থাকা

মানুষ যখন কথাবলা থেকে বিরত থাকে, তখন তার শত্রুও খুব কমই থাকে,

এমনকি নিয়তির কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে তার পতনের সময় আসলেও।

মক্ষিকারা মানুষের রক্ত পানকরে ফুলে ফেঁপে ওঠে অতি সন্তর্পণে

এটা তার পাপকে জঘন্যতম থেকে আরো লঘু করে:

মশারা যে পথে গেছে সেই পথ সে মাড়ায় না মোটেই,

তাদের দামামা শুনে সবাই আগেভাগেই সতর্ক হয়ে যায়।

যদি কোন উদ্ধত জন ধারালো কথার তরবারি ছুড়েদেয় তোমার পানে,

আপন ধৈর্যে তার মোকাবেলা করো, যাতে সেই ধার তুমি ভেঙ্গে দিতে পার।



৩. জন্মান্তরে অবিশ্বাস

বলা হয়ে থাকে আত্মারা দেহান্তরে যায়

শোধনের আগপর্যন্ত তারা দেহ থেকে দেহে ঘুরেফেরে;

কিন্তু অবিশ্বাস কোন সে ভুল তাড়া করে ফেরে,

কারো মন সেই সত্যটা নিশ্চিত হবার আগ পর্যন্ত।

তারপরও, তালের মতো যে মাথাটাকে তারা ঊর্ধ্বে বয়ে বেড়ায়,

শরীর তো আগাছারই মতো বাড়তে বাড়তে এক সময় মলিন হয়ে যায়।

পানদেয়া ফলা হতে বেরিয়ে থাকা ঝকঝকে পলিস করা পরিধান,

আর তোমার আত্মার কামনাকে লাঘব করে সুস্থির বেঁচে থাক।



৪. বিজয়ই প্রতিশোধ নেবে

সময় যদি তোমার সহায় হয়, সে তোমাকে

শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিশোধে পুরোপুরি সহায়তা দেবে।

মধ্যাহ্নে দিনগুলো অকেজো হবার মত এমনই তপ্ত থাকে

যে ভোরের আর্দ্রতার ছায়াও দূরে সরে যায়।



৫. শরীরটা তোমার ফুলদানি

শরীরটা, যা তোমাকে যাপনের কালে একটি আকার দিয়েছে,

সে আর কিছু নয় তোমার ফুলদানি: নিজেকে দিওনা ধোঁকা, হে আমার আত্মা !

ভেতরে মধু সঞ্চয়ের জন্য সেই বাটির দাম খুবই কম,

কিন্তু বাটির ভেতরে রাখা সেই জিনিসগুলো অমূল্যধন।



৬. প্রকৃতি থেকে এখন আর আমি ধার করি না

বোধ আর ধর্মে তুমি জরাগ্রস্ত।

আমার কাছে এসো, তাহলে হয়তো সত্য কিছু শুনতেও পাবে।

জলের উতরে দেয়া মাছকে অন্যায়ভাবে খেওনা,

এবং বধের শিকার প্রাণীর মাংসে লোভ করো না,

অথবা মায়ের শুভ্র দুগ্ধে যা সে তার শিশুকে ঢোক টেনে

খাবার জন্য জমিয়ে রেখেছে, মহৎ কোন নারীর জন্য নয়।

এবং ডিমগুলো কেড়ে নিয়ে আস্থাশীল কোন পাখিকে দুঃখ দিওনা;

এমন অবিচার সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ।

এবং আপত কালের জন্য জমিয়ে রাখা যে মধু মক্ষিকারা বহুশ্রমে

পু®প আর সুবাসিত গাছে ঘুরে ঘুরে পেয়েছিল;

তাই সে জিনিস কখনও নিওনা যাতে থাকে অন্যের অধিকার,

এমনকি দান, ধ্যান বা উপহারের জন্যেও নিওনা সেসব।

এতোসবের সঙ্গে আমার কোন সম্পপর্ক নেই; এবং আশা রাখি আমি

আমার চুল পেকে ধূসর হবার আগেই নিজ পথের উপলব্ধিতে পৌঁছাতে পারবো !



৭. মিথ্যা এক চিরন্তন ক্ষতি

কারণ আমাকে তার অনেক কিছুর কিছুতে বারণ করেছে,

সহজাতভাবে, আমার স্বভাব তাতে সদাশয় মুগ্ধ হয়েছিল;

এবং এক অনিঃশেষ ক্ষতি আমি বুঝতে পারতাম যদি, জানতাম,

মিথ্যাভাষণে আমি বিশ্বাস করেছি অথবা সত্যকে করেছি অস্বীকার।



৮. মানুষ কী বেছে নিতে পারে ?

লোকেরা কি আমাকে অনুসরণ করছে, বিভ্রান্ত হতে,

আমি কি তাদের বিবেচনার সঙ্গে সত্যর পথ দেখিয়েছি

অথবা এমন কোন সমতল পথে

যেখান থেকে তারা দ্রুতই পৌঁছাতে পারে।

তাই আমি জেগে আছি ক্লান্ত হবার আগ পর্যন্ত

সময়ের মাঝে, এবং নিজের ভেতরে;

এবং আমার হৃদয় এক এক করে পান করে

জীবনের যাবতীয় অভিজ্ঞতার মাখন।

নিঃসঙ্গতা আর একাকীত্ব ছাড়া মানুষের বেছে নেবার এমন কী আছে,

যখন নিয়তি তাকে তার ব্যগ্রতার কিছুই দেয়না ?

তোমার কী চাওয়ার আছে, যুদ্ধ অথবা শান্তি এনে দেবে:

দিনে দিনে স্বেচ্ছাচারী হাতে এতোসব আরোপ করবে

যোদ্ধা এবং শান্তি স্থাপনকারীর পানে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে।



৯. কারণ ছাড়া কেউই তো পথ দেখায় না



তোমাকে নিজ পথে বহুদিন ধরে, বহুদূর যেতে হবে,

তুমি রাজন এবং ত্রাসসৃষ্টিকারী,

এবং প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় তুমি অবিচারের জন্মদিয়ে চলেছ।

জ্যোতির্ময় পথে ফিরে আসতে কী তোমাকে আটকে রেখেছে ?

কেউ একজন এসে জমিখানা কেড়ে নিতে পারে, যদিও সে কুটির ভালোবাসে।

কিন্তু কেউ কেউ নবীর স্বর ওয়ালা স্বর্গীয় এক নেতার অপেক্ষায় থাকে

সারি সারি চেয়ে থাকা নিশ্চুপ লোকেদের ভীর ঠেলে যিনি উঠে আসবেন।

এসব অচল ভাবনা ! কেউই তো নেতৃত্ব দিতে পারেনা কারণ ব্যতীত,

ভোর আর রাত্রিতে পথ তো দেখাতে পারে না কেউই।



১০. মরণের উদার উপহার

শহরে বসবাস থেকে কে আমাকে উদ্ধার করবে

যেথায় আমি বেমানান গুণকীর্তনে ব্যস্ত রয়েছি ?

ধনী, ধার্মিক, জ্ঞানী: এতোসব আমার সুখ্যাতি,

কিন্তু এর ও আমার মাঝে অনেক প্রতিবন্ধকতা:

অজ্ঞানতাকে আমি গ্রহণ করতে পারি, যদিও চিন্তায় প্রাজ্ঞজন

কোন কোন দিকদিয়ে- এবং সেটাই কি আমাদের বিস্ময়কর আবরণ ?

তাই সত্যি বলতে কি আমরা কেউই কাজের কিছু নই:

আমিও মহান কেউ নই তোমরাও আঁকড়ে ধরার মত কেউ নও।

আমার শরীর জীবনের সংকীর্ণ ধারায় দুর্লভ ক্লান্তি আঁকড়ে আছে

কেমনে আমি সেই ক্ষয়াকে দূরে ঠেলে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরি ?

হায় মরণের মহান উপহার ! ব্যথার চির উপশম

এবং চিৎকারের পর নীরবতা, আমাদের দিয়ে যায় সে।



অনুবাদ: সোহরাব সুমন

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৫৯

খেয়া ঘাট বলেছেন: চমৎকার পোস্ট।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৪২

সোহরাব সুমন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

সঙ্গে থাকতে
https://www.facebook.com/sohrabsumonme

২| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:০২

চিগিমিকি বলেছেন: Click This Link

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৩

সোহরাব সুমন বলেছেন: দেখলাম

দলাদলী ভালো না

৩| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:২৭

নুসরাতসুলতানা বলেছেন: পোষ্টে ++++++

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৩

সোহরাব সুমন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে


https://www.facebook.com/sohrabsumonme

৪| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:০০

আমিনুর রহমান বলেছেন:



অসাধারণ +++

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৪

সোহরাব সুমন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ !!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.