নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন খুলে হাসলে- পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকেই অসম্ভব সুন্দর দেখায়

লোকালয়ের আড়ালে

মন খুলে হাসলে- পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকেই অসম্ভব সুন্দর দেখায়

লোকালয়ের আড়ালে › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অন্যতম নকশা প্রণয়নকারী এবং বাংলাদেশের প্রথম ভাস্কর নভেরা আহমেদ চলে গেছেন না ফেরার দেশে ...

০৭ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১২:১০





বাংলাদেশে ভাস্কর্য শিল্পের পথিকৃৎ নভেরা আহমেদ আর নেই। গতকাল মঙ্গলবার প্যারিসের একটি হাসপাতালে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ভাস্কর নভেরা আহমেদ । তিনি সুদীর্ঘকাল অন্তরাল জীবন-যাপন করছিলেন।



নভেরা আহমেদ বাংলাদেশের ভাস্কর্যশিল্পের অন্যতম অগ্রদূত এবং প্রথম ভাস্কর্য শিল্পী। তিনি ভাস্কর হামিদুর রহমান এর সাথে জাতীয় শহীদ মিনারের প্রাথমিক নকশা প্রণয়নে অংশগ্রহণ করছিলেন। দীর্ঘ ৪১ বছর পর ১৭ জানুয়ারী’২০১৪ প্যারিসে তাঁর রেট্রোসপেকটিভ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।তার আগে তার শেষ প্রদর্শনী ১৯৭৩ সালে জুলাই মাসে প্যারিসে গ্যালারি রিভগেসে হয়েছিল। ১৯৯৭-এ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদক-এ ভূষিত করে। অবশেষে ৬ ই মে প্যারিসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।



নভেরার বাবা সৈয়দ আহমেদ এর কর্মসূত্রে সুন্দরবন অঞ্চলে অবস্থানের সময় নভেরার জন্ম হয় ১৯৩০ সালে। চাচা আদর করে নাম রাখেন নভেরা। ফার্সি শব্দ ‘নভেরা’র অর্থ নবাগত, নতুন জন্ম। পরবর্তী জীবনে নভেরা শব্দটি যথার্থই অর্থবহ হয়ে উঠেছিল। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশের ভাস্কর্য আধুনিক ভাষা পেয়েছিল। নভেরার শৈশব কেটেছে কলকাতায়। নভেরা কলকাতার লরেটা থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। স্কুল জীবনেই তিনি ভাস্কর্য গড়তেন।



১৯৪৭-এ ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত ভাগ হয়ে যাওয়ার পর তারা কুমিল্লায় চলে আসেন। এ সময় নভেরা কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন। পিতার অবসরগ্রহণের পর তাঁরা সবাই আদি নিবাস চট্টগ্রামে গিয়ে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন নভেরা।



কিশোরী বয়সে বিয়ের বিপক্ষে ছিলেন। তাই বাবার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে হতে চেয়েছেন ভাস্কর। বাবা মেয়েকে আইনশাস্ত্র পড়তে পাঠিয়ে দেন লন্ডনে, ১৯৫১ সালে। ভাস্কর হওয়ার অদম্য স্পৃহায় স্বাধীনচেতা নভেরা যোগ দেন সিটি অ্যান্ড গিল্ড স্টোন কার্ভিং ক্লাসে। তখনই নভেরার সঙ্গে পরিচয় ভাস্কর হামিদুর রহমানের। পরে ক্যাম্পারওয়েল স্কুলে পাঁচ বছর পড়ে ন্যাশনাল ডিপ্লোমা পেয়ে দুই বছরের জন্য যান ফ্লোরেন্সে। নভেরা ১৯৫৫ সালে কোর্স শেষ করে ডিপ্লোমা পেলেন।



১৯৫৬ সালের জুন মাসে নভেরা ও হামিদ একসঙ্গে দেশে ফিরে এলেন। ঢাকায় তখন স্থপতি মাজহারুল ইসলামের পরিকল্পনায় আধুনিক স্থাপত্য নির্মাণের কাজ আরম্ভ হয়েছে। তাঁরই উদ্যোগে নবনির্মিত পাবলিক লাইব্রেরি, পরবর্তীকালে যেটা ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরিতে রূপান্তরিত হয়েছে। সেখানে এঁরা দুজনেই কাজ করার কমিশন পেলেন। ওপরের একটি দেয়ালজুড়ে বিশাল এক ফ্রেসকো করলেন হামিদ; নভেরা প্রবেশপথের দেয়ালের ওপরের অর্ধেকটা জুড়ে একটি লো রিলিফ করলেন। তারপর ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাঁরা আরো কিছু কাজ করলেন এবং ’৫৭ সালে ওই লাইব্রেরিতেই তাঁদের যৌথ প্রদর্শনী হলো। একেবারে নতুন ধরনের কাজের সঙ্গে পরিচিত হলো এদেশের মানুষ।



১৯৫৭ সালে ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান শহীদ মিনারের পরিকল্পনা প্রণয়ন করার অনুরোধ করেন প্রধান প্রকৌশলী জব্বার এবং শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে। জয়নুল আবেদিন সরাসরি হামিদকে বলেছিলেন স্কেচসহ মডেল পেশ করতে। পরে যৌথভাবে শিল্পী হামিদুর রাহমান ও ভাস্কর নভেরা আহমেদ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নকশা করেন। হামিদুর রাহমান শহীদ মিনারের যে মডেল ও স্কেচ উপস্থাপন করেছিলেন জাঁ দেলোরা তার স্তম্ভগুলোর মাপ পরিবর্তন করে দেন। আর পরবর্তিতে ইতিহাস থেকে নভেরার নাম মুছে ফেলা হয়।



নভেরার প্রথম একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী ‘অন্তর্দৃষ্টি বা Inner Gaze ‘ ১৯৬০ সালের ৭ আগস্ট আয়োজিত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে পাকিস্তান জাতিসংঘ সমিতির উদ্যোগে এবং এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায়। এই ‘অন্তর্দৃষ্টি’ কেবল নভেরা আহমেদেরই নয়, সমগ্র পাকিস্তানের ক্ষেত্রেই সেটা ছিল নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কোনো ভাস্করের প্রথম একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী।



উনি ১৯৬৮ সালে লাওসে যান। সেখানে ভূপাতিত মার্কিন যুদ্ধবিমানের ভগ্নাবশেষ ব্যবহার করে মুর্ত করেছিলেন যুদ্ধের আগ্রাসী রূপকে। ১৯৫৮ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে নির্মিত ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে অধিকাংশই বেশ বড় আকারের – ৫ ফুট থেকে শুরু করে এমনকি ৭ ফুট ১১ ইঞ্চি পর্যন্ত উচ্চতাবিশিষ্ট। একই বিষয়বস্ত্ত নিয়ে নির্মিত একাধিক ভাস্কর্যের মধ্যে ‘পরিবার’ (১৯৫৮), ‘যুগল’ (১৯৬৯), ‘ইকারুস’ (১৯৬৯) ইত্যাদি কাজে মাধ্যমগত চাহিদার কারণেই অবয়বগুলি সরলীকৃত। ওয়েলডেড স্টিলের ‘জেব্রা ক্রসিং’ (১৯৬৮), দুটি ‘লুনাটিক টোটেম’ ইত্যাদির পাশাপাশি রয়েছে ব্রোঞ্জে তৈরি দন্ডায়মান অবয়ব। এছাড়া কয়েকটি রিলিফ ভাস্কর্য ও স্ক্রল। ‘লুনাটিক টোটেম’ বা ‘মেডিটেশনে’র (১৯৬৮) মতো ভাস্কর্যে শিল্পীর মরমি অনুভবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কোথাও-বা রয়েছে আদিম ভাস্কর্যরীতি থেকে পরিগ্রহণ।



নভেরার কিছু শিল্লকর্মঃ



Les Femmes Tournesol, 1973





La Danse du Soleil, 1972





La Chèvre de Chantemesle, 2008





Soul of the Phantom, 1973





Le Djinn, 1973





La Danse du Soleil, 1972





Le Baron Fou, 2009





Once in America, 1968-1969





Family







নভেরা প্রম-









সুত্রঃ

১। Novera, la comète imprévisible



২। প্যারিসে নভেরার প্রদর্শনী



৩। ফিরে দেখা নভেরা আহমেদ



৪। Family by Novera Ahmed



৫। উইকিপিডিয়া

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:০৩

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: ভাল লাগলো...

০৭ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:২৮

লোকালয়ের আড়ালে বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.