নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগটিতে বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন, আরো জানতে পারবেন চাকুরির খবর সম্পর্কে, এবং বিভিন্ন খবরের কাগজের খবর জানতে পারবেন। জানতে পারবেন সাস্থ্য সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যা।

মোঃ আলী আহমেদ সুমন

আমি মোঃ আলী আহমেদ সুমন, আমি একজন ওয়েব ডেভেলপার এফিলিয়েট মার্কেটার

মোঃ আলী আহমেদ সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজকের বিষয় ডায়রিয়া (Diarrhoea) ও সমাধান

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩২

আজকের বিষয় ডায়রিয়া (Diarrhoea)
ডায়রিয়া বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা।
সব বয়সের মানুষের ডায়রিয়া হতে পারে। তবে শিশুদের জন্য এটি একটি বিশেষ গুরুতর সমস্যা । প্রতিবছর ১ লাখ ২৫ হাজার শিশু ডায়রিয়া এবং এর সাথে সর্ম্পকিত অপুষ্টিতে মারা যায়, প্রতি ২৪ ঘন্টায় ২ বছরের কম বয়স্ক শতকরা ২১ জন শিশু ডায়রিয়ায় ভুগছে। তাই শিশুদের ডায়রিয়া রোগ সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত জানতে হবে এবং সচেতন হতে হবে।

-- ডায়রিয়া বলতে কি বোঝায়? পায়খানায় স্বাভাবিকের চেয়ে পানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং সেই সঙ্গে বারবার পায়খানা হওয়াকে ডায়রিয়া বলে। সাধারণ ভাবে ২৪ ঘন্টায় তিন বা তারও বেশিবার পাতলা পায়খানা হলে তাকে ডায়রিয়া বলা যেতে পারে।

--ডায়রিয়ার প্রকারভেদ ---
১। অসুখের মেয়াদের উপর নির্ভর করে ডায়রিয়াকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়।
ক. সল্প মেয়াদী : যে ডায়রিয়া হঠাৎ করে শুরু হয়ে কয়েক ঘন্টা বা কয়েক দিন স্থায়ী হয় এবং ১৪ দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায় তাকে তীব্র ডায়রিয়া বলে। তীব্র ডায়রিয়ার মেয়াদ অবশ্যই ১৪ দিনের কম হবে।
খ. দীর্ঘ মেয়াদী ডায়রিয়া : যে ডায়রিয়া শুরু হয়ে একটা টানা ১৪ দিন বা তারও বেশি দিন (কখনো কয়েক মাস) চলতে থাকে তাকে দীর্ঘ মেয়াদী ডায়রিয়া বলে।
২। মলে রক্ত আছে কি না তার উপর ভিওি করে ডাইরিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
ক. ওয়াটাবি ডায়রিয়া : এই ধরণের ডায়রিয়ায় মল একবারে পানির মতো পাতলা হয়। মলে কোনো রক্ত থাকে না।
খ. আমাশয় : এই ধরণের ডায়রিয়ায় মলে রক্ত থাকে যা দৃশ্যমান।
-- ডায়রিয়ার কারণ কি -- প্রায় সব ক্ষেত্রেই জীবানু দ্বারা ডায়রিয়া হয়। অন্ত্রে জীবানু প্রবেশ করে ডায়রিয়া সৃষ্টি করে। আমাদের দেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাধারণত তিন ধরণের জীবানু দ্বারা ডায়রিয়া হয়। জীবনু গুলো হলো:
ক. ভাইরাস : রোটা ভাইরাস এই ডায়রিয়ার সৃষ্টি করে।
খ. ব্যাকটেরিয়া : ই কোলাই, ভিবরিও কলেরি কলেরার জন্য দায়ী। শিগেলা জীবানু দ্বারা রক্ত আমাশয় হয়।
গ. প্যারাসাইট : এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকা জিয়ারডিয়া ল্যাম্বলিয়া।
-- যে যে মাধ্যমে জীবানু প্রবেশ করে --
১. খাদ্য ও পানীয় বস্তুর মাধ্যমে
২. মাছির মাধ্যমে
৩. মলের মাধ্যমে
৪. অপরিষ্কার হাতে বাসনপত্র ইত্যাদি

--এছাড়া কতগুলো বিশেষ শারীরিক অবস্থা ডায়রিয়ার সংক্রমণে সহায়তা করে। --
যেমন:-
১. অপুষ্টি: পুষ্টিহীনতার কারনে ডায়রিয়ার জীবানু খুব সহজেই শরীরকে আক্রান্ত করে। কারন এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
২. কত গুলো রোগ যেমন হাম নিউমোনিয়া ম্যালেরিয়া যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে শিশু বা রোগী খুব সহজেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়।
--ডায়রিয়া যেভাবে প্রতিরোধ করতে হবে --
১. হাত ধোয়া ও অন্যান্য ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা : ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা খাবার আগে ও শিশুকে খাওয়ানোর আগে শিশুর পায়খানা পরিস্কার করার পরে রান্না করার আগে এবং খাবার পরিবেশন করার আগে ভালো ভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। অন্যান্য ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা যেমন নিয়মিত নখ কাটা, প্রতিদিন গোসল করা, বাচ্চাকে দুধ দেয়ার পূর্বে স্তন পরিস্কার ইত্যাদি পালন করতে হবে।
২. বাড়তি খাবার : ৬ মাস হওয়ার পর থেকে শিশুকে মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার দিতে হবে। কারণ, এই সময় শরীর বৃদ্ধির জন্য যে পরিমাণ খাবার শিশুর দরকার হয় মায়ের বুকের দুধ সে চাহিদা মেটাতে পারে না। খাবার শুধু নরম করে রান্না বা চটকিয়ে হজম যোগ্যকরতে হবে। ঝাল মসলা বর্জন করতে হবে।
৩. নিরাপদ পানি ব্যবহার: টিউবলের পানি বা ফুটানো পানি ডায়রিয়ার জন্য নিরাপদ। পানির উৎসের কাছে গোসল, ধোয়া, মোছা বা মল মূএ ত্যাগ করতে দেওয়া যাবে না। পায়খানা অবশ্যই পানির উৎস থেকে ১০ মি: দূরে এবং নিচুতে হতে হবে। পানির উৎসকে পশুর নাগালের বাইরে রাখতে হবে। পরিস্কার পাত্রে পানি সংগ্রহ করে ধুয়ে নিতে হবে। পাত্র ঢেকে রাখতে হবে। শিশু বা গৃহের পশু যাতে পাত্র থেকে পানি পান না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মূল পাত্র থেকে পানি তোলার জন্য আলাদা মগ ব্যাবহার করতে হবে। সম্ভব হলে পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে।
৪. হামের টীকা: হাম একটি ভাইরাস জনিত রোগ। শিশুদের হাম হলে রোগ প্রতিরোধকারী ক্ষমতা দ্রুত কমে যায়। ফলে শিশু খুব সহজেই জীবানু ঘটিত রোগ যেমন: ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়। সুতরাং শিশুর হাম যাতে না হয় সে জন্য শিশুর বয়স ৯ মাস পূর্ণ হলেই হামের টিকা দিতে হবে।
৫. স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যাবহার।
৬. বাচ্চাদের মলের দ্রুত নিস্কাশন।
৭. ভিটামিন এ: ভিটামিন এ শিশুকে পাতলা পায়খানা ও অন্যান্য রোগ থেকে রক্ষা করে। শিশুকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার যেমন: বুকের দুধ, হলুদ ফলমূল, সবুজ শাকসবজি দিতে হবে।
--বি:দ্র: পানি বিশুদ্ধ করার পদ্ধতি--
১. কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ মিনিট টগবগ করে ফুটার পর পানি বিশুদ্ধ হয়।
২. দেড় লিটার পানিতে ১টি হ্যালোট্যাব ছেড়ে দিলে আধা ঘন্টা পর পানি বিশুদ্ধ হয়।
৩. প্রতি লিটার পানিতে আড়াই মিলিগ্রাম ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে পানি বিশুদ্ধ করা যায়।
৪. বৃষ্টি হওয়ার ১০ মিনিট পর বৃষ্টির পানি পরিষ্কার পাত্রে সংরক্ষণ করেও খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

--চিকিৎসা--
১. পানি স্বল্পতা যাতে না হয় সে জন্য শিশুকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী তরল খাবার দেয়া প্রয়োজন।
২. শিরায় স্যালাইন দিয়ে
৩. মুখে খাবার স্যালাইন খাইয়ে
৪. লবণ চিনির/গুড়ের শরবত
৫. ডাবের পানি বা শুধু পানি
৬. চিড়া/ভাতের মাড়
৭. খাবার পানি ডায়রিয়া বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তরল খাবার চালিয়ে যেতে হবে।
৮. জিরা ভাজাচূর্ণ করে ২ ঘন্টা পর পর আধা চামচ করে সেবন করালে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া অনেক উপকার পাওয়া যায়।
৯. বহেড়া গুরো করে আধা গ্রাম এবং কর্পূর ২৫ মিলিগ্রাম একসঙ্গে পানিতে মিশিয়ে সকাল-বিকাল ২ বার খেতে দিলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
১০. অপুষ্টি যাতে না হয় সে জন্য শিশুকে প্রচুর খাবার দেয়া প্রয়োজন। যেমন: বুকের দুধ চালিয়ে যেতে হবে এবং ঘনঘন খাওয়াতে হবে। শিশু অন্য দুধে অভ্যস্ত হলে তাই খাওয়াতে হবে এবং কমপক্ষে প্রতি ৩ ঘন্টা অন্তর অন্তর খাওয়াতে হবে।
উপযোগী খাবার: ভাত, ডাল, শাকসবজি, ডিম, মাছ, মাংস অথবা এসবের খিচুড়ী। খাবারের সাথে ১ বা ২ চামচ তেল দিতে হবে। টাটকা ফলের রস, কলা বা পেপে চটকিয়ে দিতে হবে। শিশু যতটা খেতে চায় ততটা খাওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে হবে। ৩-৪ ঘন্টা পর পর দিনে অন্তত ৬ বার খেতে দিতে হবে। খুব ছোট শিশুদের আরো বেশী বার খেতে দিতে হবে। খাবার নরম করে রান্না ও ভালো ভাবে সিদ্ধ করতে হবে যাতে সহজে হজম হয়। শিশু গরুর দুধ খেলে সমপরিমাণ পানির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে অথবা দই হিসেবে দেওয়া যেতে পারে। খাবার বা দুধে চিনি দেওয়া যাবেনা এতে ডায়রিয়া বেশী হতে পারে। বুকের দুধ চালিয়ে যেতে হবে। ডায়রিয়া বন্ধ হবার পর ২ সপ্তাহের জন্য প্রতিদিন একবার করে অতিরিক্ত খাবার দিতে হবে, যত দিন না শিশু আগের অবস্থায় ফিরে পায়।
১১. ডায়রিয়া হচ্ছে একটি স্বনিয়ন্ত্রিত রোগ অর্থাৎ কোন ঔষুধ ব্যবহার না করলেও তা এক সময় আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়। কিছু কিছু নির্বাচিত ক্ষেত্রে রোগীর অসুস্থতার মেয়াদ কমানোর উদ্দেশ্যে ও রোগ বিস্তার রোধ করার জন্য নিদিষ্ট কিছু ঔষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে মনে রাখতে হবে যে স্যালাইনই ডায়রিয়ার প্রধান ঔষুধ।
--কিভাবে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে তা নিচে দেওয়া হলো---
১. শিশুর বয়স ২ বছরের নিচে হলে প্রতি ১-২ মিনিটে ১ চামচ।
২. শিশুর বয়স ২ বছরের বেশী হলে প্রতি ১ মিনিটে ১ চামচ।
৩. প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য চুমুক দিয়ে আস্তে আস্তে।
৪. শিশু যদি বমি করে তবে ৫-১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর আবার খুব আস্তে আস্তে প্রতি ২-৩ মিনিট পরপর ১ চামচ করে খাবার স্যালাইন খাওয়ানো দরকার।
৫. শিশুকে অন্তত ২ দিনের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইনের প্যাকেট অভিভাবকের বাড়িতে রাখার পরার্মশ দেয়া উচিৎ।
৬. খাবার স্যালাইনের সাথে সাথে শিশুকে মায়ের বুকের দুধ ও অন্যান্য খাবার ও খাওয়াতে হবে। প্যাকেট থেকে একবার তৈরী করার পর স্যালাইন পানি ১২ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যবহার উপযোগী থাকে। গুড়, চিনি ও চালের গুড়োর স্যালাইন ৬ ঘন্টার বেশী সংরক্ষন করা যায় না।

------------অব্শ্যই মনে রাখবেন-----------
নিচের লক্ষণ গুলোর কোন একটি দেখা দিলে শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।
* অনেকবার পাতলা পায়খানা
* বারবার বমি বা স্বর
* পায়খানায় রক্ত
* অত্যন্ত তৃষ্ণার্ত
* খাদ্য বা পানি গ্রহনে অনীহা
* চোখ বসে গেলে
* যদি ৩ দিনের মধ্যে অবস্থার উন্নতি না হলে
* চরম পানি স্বল্পতা
* প্রসাব বন্ধ হয়ে যাওয়া
* চরম অপুষ্টি থাকলে
----স্বাস্থ্য শিক্ষা---
১. তরল জাতীয় খাবার, নরম, ভাত, খাওয়ার স্যালাইন ও সুসিদ্ধ খাবার খেতে হবে।
২. তৈলাক্ত খাবার, তেলে ভাজা খাবার, মশলাযুক্ত খাবার ও শক্ত খাবার বর্জন করতে হবে।
--পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা--
১. পায়খানার পর সাবান বা ছাই দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।
২. খাবার আগে ও পরে ভাল করে হাত ধুতে হবে।
৩. নিয়মিত নখ কাটতে হবে।
৪. খাবার ঢেকে রাখতে হবে এবং ৬ ঘন্টার মধ্যে আবার খেতে হলে গরম করে খেতে হবে।

বি:দ্র: যদি প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায় এবং রোগীর পিপার্সাত হয়ে যায় তবে ঐ ধরনের রোগীদের কলেরা হয়েছে বলে ধারনা করা হয়। এটি ডায়রিয়া রোগীর একটি মারাক্তক জটিলতা যদি বিগত ২৪ ঘন্টার মধ্যে রোগীর প্রস্রাব না হয়ে থাকে তবে অবিলম্বে তাকে নিকটবর্তী হাসপাতালে পাঠাতে হবে।
অতএব, আমরা সকলেই একটু সচেতন হলে সহজে প্রতিরোধ ও নিরাময় যোগ্য ডায়রিয়ার হাত থেকে লক্ষ লক্ষ শিশুর প্রাণ রক্ষা করতে পারি


বন্ধুরা আশা করি “ডায়রিয়া” রোগটি কি ? কিভাবে ছড়ায় ? প্রতিরোধের উপায় সহ এই রোগের আরো বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
-----ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য। আমি আসা করব আমার লেখা গুলো আপনার সবসময় পড়বেন।------- সাস্থ্য সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে জানতে----------http://adf.ly/1UrkfT চলুন যাই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.