নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাছের আঁশ শুয়ে আছে ঢেউয়ের শব্দের বিছানায়।

সোনালী মাছ

সঙ্গীতের চাকর আমি। শব্দ নিয়ে লোকের জঙ্গলে অলৌকিকতা খুঁজতে ক্ষয়াই একমাত্র জীবন।

সোনালী মাছ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প

০৫ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৭:৩৪

অনুগল্পঃ অসম্পূর্ণতা


শব্দটা আরো ঘনভাবে কানে আসলো তার।এই একা তুষারাবৃত প্রান্তে কিছু শেয়ালছাড়া কাদের এতো খেয়েদেয়ে কাজ নেই, এমন বিদঘুটে আওয়াজ কণ্ঠে নিয়ে তার পিছে দৌড়ে আসবে!
জনমানবশূন্য দীর্ঘ পথ হামাগুড়ি দিয়ে, তুষারের নৃত্য দেখতে দেখতে তার চোখ ঘোলাটে হয়ে গেছে।মগ্নপ্রায় চোখ দুটোর নজর তাই সে, কাটাবেষ্টিত একটি গাছের সুচালো পাতার উপরে ফেলে রাখতে, আরাম বোধ করছে।পাতার উপর চোখ রেখেই অনুভব করছে, তার পিছে ধেয়ে আসা ক্রমে নিকটবর্তী হওয়া ভয়ংকর শব্দ।

শব্দটি বয়ে নিয়ে আসা সাদা পশমের শেয়ালগুলোর গায়ে বরফকুচি গেঁথে আছে,যেন কোন দোকানদার সোকেচে সাজিয়ে রেখেছে মুক্তো। লাফিয়ে লাফিয়ে দৌড়ানোর তালে ঝলকে উঠছে পশম, ঝলকে উঠছে মার্বেলের মত চোখ, ঝলকে উঠছে তীক্ষ্ণ দাতের পাটি। শব্দটা যেন কালো মেঘের মত মাথার উপরে, চারপাশ অন্ধকার করে দিচ্ছে। সুচালো পাতার উপরে রাখা আয়েশি চোখ পেছনে ফিরে শব্দের উৎসটাকে একটু দেখার ইচ্ছা না করলেও, মনে ভয় প্রবেশ করছে, দ্রুতগতিতে সাপ ঢুকে যেভাবে গর্তে। শরীরের লোমগুলো সজাগ হয়ে নিঃশব্দে চিৎকার দিয়ে সতর্ক করে যাচ্ছে। কিন্তু পিছনে সে তাকাচ্ছে না।

শব্দটি এখন মাথার উপর। এখন আর শব্দের উৎসকে শেয়াল মনে হচ্ছে না।যেন হাত-পা বিশিষ্ট কোনো জঙ্গলি প্রাণী। নাম না জানা প্রাণীর কবলে এর আগে অনেকেই পড়েছে,এই স্থানে। কারোরই অভিজ্ঞতা জানা হয়নি, কারণ তারা অভিজ্ঞতা বলার সুযোগ পায়নি।
মধ্যম তার ঘাড়ে, কানের নিচে, রহস্যময় স্পর্শ পাচ্ছেন- লম্বাটে নখ, পাটের মত আঁশটে চুল, যা শরীরের প্রতিটি লোমের গোড়ায় টান ধরিয়ে দিচ্ছে।পৃথিবী চেপে ধরছে যেন ফলে আবৃত বীজকে; মধ্যম পিচ্ছিল বীজের মত চিরিত করে ছুটে বেরুতে চাচ্ছে অমন অকোমল ফলের মুষ্টি ভেদ করে।
এই বিপদ থেকে রক্ষার জন্য তার সামনে একটাই পথ, ভোঁ দৌড় দেওয়া এই বরফে আচ্ছাদিত রাস্তা ধরে। পরক্ষণেই তার জ্ঞানে আসলো,নিজের শরীরের অক্ষমতার কথা।তার শারীরিক সামর্থ্য হেটে যাওয়ার জন্যও উপযুক্ত নয়।তাহলে কি সেও এই অচেনা প্রাণীর সাথে সাক্ষাতের কথা কাউকে বলতে পারবেনা?

এখনই তার মৃত্যু অনিবার্য! মৃত্যুর অভিজ্ঞতা কারো কাজে আসেনা। এই কথা ভেবে সে জীবনের শেষ ইচ্ছাবশে শরীরের পূর্ণ শক্তি ব্যয় করে হাতপা ছুড়ে বিদঘুটে এক চিৎকার বের করে দিলো শরীর থেকে।
অমনি পাছায় এসে একটা লাথি পড়লো। মূর্ছা যাওয়া ঘুমাচ্ছন্ন ঝাপসা চোখে দেখলো, রুমমেট আশিক ব্রাশে পেস্ট নিচ্ছে আর বকবক করছে -"প্রতিদিন এমন দানবের মত চিল্লানি আর সহ্য হয় না। ভোরবেলা শান্তিমত ঘুমাতে পারিনা একদিনও। তুই একা কোনো রুম নিয়ে নে। নয়তো আমিই বেরিয়ে যাচ্ছি অন্যকোথাও।"
বেশ কিছুক্ষণ সময় গেলো পরিস্থিতি বুঝতে। আজও সে বেঁচে গেছে অচেনা প্রাণীটির হাত থেকে।স্বপ্ন ছিলো বলেই মুক্তি। এক চিৎকারেই সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত।আশিকের এই দুইলাইন বকবক মুখস্থ করা, প্রতিদিনই বলে। বিরক্তিকর হলেও হাজারগুন স্বস্তিকর সেই অচেনা প্রাণীর থাবায় প্রাণবধের চেয়ে।
প্রতিদিন ঘুমের মধ্যে আসে এই প্রাণীটি অথবা প্রাণীগুলো,যারা তাকে মারতে চায়।।কখনোই তাদের স্বরূপ দেখা যায়নি।

মধ্যম বিধ্বস্ত চিন্তা মাথায় নিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো তার সারা জীবনভর আঁকা চিত্রকর্মগুলোর সামনে। প্রতিটি ছবি আঁকার সময় গ্রহ-নক্ষত্রসম আকাঙ্ক্ষা ছিলো। প্রথম ছবির উপর হাত বুলিয়ে মনে পড়লো, এটি আঁকার সময় সে ভেবেছে, ক্রিয়েশন অফ এ্যাডাম অথবা দ্যা লাস্ট স্যাপারের কথা ভুলে যাবে মানুষ, তার এই চিত্রকর্মটি দেখার পর।
দ্বিতীয় ছবিটির কাছে গিয়ে মৃদু হাসলো। গুর্য়েনিয়া পাত্তা পাবেনা ভেবেছিলো,এই ছবিটার কাজ ধরে।একে একে সবগুলো ছবির উপর তার বলহীন কম্পিত হাতের আঙুল চলছে, যেন রোগা গরু দিয়ে অতি ধীরলয়ে চষে যাচ্ছে চাষি তার জমি। দ্যা স্ক্রিম সিরিজের প্রতিদ্বন্দ্বীরা যে কেউই সম্পূর্ণ অবয়ব পাইনি। তার তুলি পূর্ণতা দিতে পারেনি কোনো একটি চিত্রকর্মও।

একটা সিগারেট মুখে নিলো সে,শুকনো ঠোঁট।মেস থেকে বেরিয়ে পা বাড়ালো রাস্তায়। চা স্টল থেকে এক কাপ চা নিলো। একচুমুক দিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। ঢাকা শহরের এই দুর্যোগকে কোনো ধরনের পাত্তা না দিয়েই কেমন উড়ে উড়ে কাটছে পাখিদের জীবন। হাত নেই পা নেই যে লোকটি ধূলোর কূপে সাতার কেটে কুড়িয়ে যাচ্ছে মানুষের অবজ্ঞার কয়েন, তার পকেটেও মাত্র একটি জীবন পুরে দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে ঈশ্বর।
চায়ের প্রতিচুমুকে যেন এসিড ঢুকে যাচ্ছে নালী বেয়ে। যুদ্ধাক্রান্ত এক শহর নড়ছে মাথায়।সে তার চিত্রকর্মগুলো আঁকা শেষ করতে পারছেনা কিছুতেই, হাজারবারের চেষ্টায়ও ।
রাস্তা ছেড়ে আবার হাটা দিলো রুমের দিকে। রুমের কাছাকাছি আসছেই সেই শব্দটি তার কানে আসলো আবার।বিস্মিত মন নিয়ে ঘরে ঢুকে ছবিগুলোর কাছে গেলো, আছে ঠিকঠাক, অর্ধ অবয়বে। ক্লান্ত শরীরে নিয়ে ছবিগুলোকে পিছনদিক করে, টেবিলে বসতেই আবার সেই শব্দ।আবার তার চোখে অলসতা।পিছনে সেই ভয়ংকর শেয়ালের ঝাঁক। ক্রমেই যেন আরো নিকটতম।
মধ্যম দেখলো,পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে আসছে, তার শরীর বোধহীন হিম।নজর স্থবির হয়ে তাকিয়ে আছে একটা ছেঁড়া চিঠির পাতায়। তার ঝাপসা মনে পড়ছে, রোয়েনা প্রেমের প্রথমে দিয়েছিলো তাকে।
কিন্তু পিছনের শেয়ালগুলো দানবাকার ধারণ করছে, লম্বাটে নখ আর পাটের মত আঁশটে চুলের স্পর্শ তার কাঁধে,কানের নিচে। সে তাকিয়েই আছে ছেঁড়া চিঠির পাতায়,যদিও তার পিছনে তাকানো ফরয। কে তাকে মারতে চাচ্ছে, দেখা উচিত তার মুখ।
মধ্যমের শিরায় শিরায় পেরেক দৌড়ে বেড়াচ্ছে। সে কি এখন ঘুমে, স্বপ্নে আছে? কিন্তু এতো বাস্তবরূপ কেনো? স্বপ্ন হলে তো এক চিৎকারে বেড়িয়ে আসা যায় এমন মহাবিপদের কবল থেকে। পাছায় হয়তো একটা লাথি আসে আশিকের, এইতো। কিন্তু এটা স্বপ্ন নয়।
মধ্যম বিশাল জোরে চিৎকার দিলো। পাছায় পাথরশক্ত এক লাথি, আশিকের নয়, অচেনা সেই প্রাণীটির। উপড়ে পড়লো গিয়ে তার চিত্রকর্মগুলোর সামনে। কিন্তু চিত্রকর্মগুলো আর মাটিতে নেই, শূন্যে দুলছে। ঘুরছে তার চারপাশ। মুহূর্তে তারা হাত-পা বিশিষ্ট হলো; অসম্পূর্ণ দেহ। কারো হাত নেই,কারো পেট নেই,কারো মাথা নেই,কারো কোমর নেই।প্রতিটির অবয়ব হুবহু মধ্যমের মত।অসংখ্য অসম্পূর্ণ মধ্যম ঘুরছে তার চারপাশ। সে দুনিয়া কাঁপানো চিৎকার দিচ্ছে, স্বপ্নটা ভেঙে যদি বাস্তবে ফিরতে পারে; কিন্তু কোনোই আওয়াজ হচ্ছে না, স্বপ্নও ভাঙছে না। পিছন থেকে দুটি হাত তার গলা চেপে ধরেছে, দৃষ্টিতে সব নীল দেখছে। নিশ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। কিছুতেই হাত দুটিকে ছাড়াতে পারছেনা ;কারণ হাতদুটি তার নিজেরই।

লেখকঃ পাভেল আল ইমরান।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৪০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: উরিব্বাস!

অসম্পূর্নতাই কুড়ে কুড়ে খায় মানুষকে। দৃশ্যকল্প বুঝি এইরকমই হবে :)

+++

২| ০৬ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৬:১৯

সোনালী মাছ বলেছেন: হ্যাঁ, প্রতিটি মানুষ এভাবেই খুন হচ্ছে নিজের অসম্পূর্ণ কর্মের দ্বারা।
ধন্যবাদ জানাই লেখাটি পড়ার জন্য। @বিদ্রোহী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.