নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালোবাসি ঘুরে বেড়াতে, গান শুনতে, বই পড়তে...

মাহাদী হাসান প্রেত

আমার সম্পর্কে আর কি বলবো! আমি তো আমিই!

মাহাদী হাসান প্রেত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্ষণঃ (গল্পঃ ১৬+)

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:০৭


বিশাল এক ডিপ ফ্রিজের ভেতর শুয়ে আছে শুভ্র। ওর শরীরে কোন কাপড় নেই। ফ্রিজের ভেতর হালকা নীল আলো। ফ্রীজের ভেতর সাধারনত হালকা হলুদ লালচে রঙের লাইট থাকে। কিন্তু এই ফ্রিজের ভেতর অদ্ভুত এক নীল আলো। আবছা নীল আলোর মাঝে শুয়ে থাকত খুব ভালো লাগছে শুভ্রর। ওর চারপাশে সাদা সাদা বরফের খন্ড আর তুলোর মতো নরম হিম বরফের ছোট ছোট কুচি। একটু শীত শীতও লাগছে ওর। ঘুমের মাঝেই হাতটা বাড়িয়ে দেয় কাথার জন্য। কিন্তু এ কী?
ওর পাশেই কুন্ডলী পাকিযে শুয়ে আছে দীপ্তি। দীপ্তির শরীরেও কোন কাপড় নেই। কিন্তু কী সহজ ভাবে শুয়ে আছে মেয়েটা। যেন শরীরে কাপড় না থাকা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যপার। যেন মানব সমাজে কাপড় পড়ার কোন রীতি ছিলোই না কোন কালে। শুভ্র ঘুম জড়ানো কণ্ঠে ডাকে,
“এ্যাই!”
“উম!’’
“একটা কাথা দাও না!”
‘‘উম!”
‘‘কি উ উ করছো? শীত লাগছে। একটা কাথা দাওনা।’’
দীপ্তি শুভ্রর বুকের কাছে ঘেষে আসে। মুখটা বুকের একদম মাঝখানে গুজে দিয়ে বলে, “এই ফ্রিজের ভেতর কাথা পাব কোথায় বাবু!”
শুভ্র কিছুই বুঝতে পারে না। ওরা কি সত্যিই ফ্রিজের ভেতর! এইতো আজ সন্ধ্যায় কাজী অফিসে যেয়ে বিয়ে করেছে ওরা। স্পষ্ট মনে আছে, এইতো দীপ্তি হালকা আকাশী রঙের শাড়ী পড়ে রিক্সা থেকে নামলো। শুভ্র টি-শার্ট পড়ে দাঁড়িয়েছিলো কাজী অফিসের সামনে। শুভ্রকে দেখে দীপ্তি প্রায় কেঁদে ফেলে বলেছিলো, “আজকের দিনটাতেও তুমি একটা পাঞ্জাবী পড়তে পারলে না!”
ওদের তো এখন বাসর ঘরে থাকার কথা। শুভ্র দু’হাতে দীপ্তির মুখটা তুলে ধরে ওর মুখের দিকে তাকিযে থাকে। হ্যাঁ, দীপ্তিই তো। এই মেয়েকেই তো আজ বিয়ে করেছে ও। শুভ্র অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি হচ্ছে এসব বলোতো? আমরা এখানে কেন? আমাদেরতো আজ রাতুলের বাসায় বাসর ঘরে থাকার কথা। আমরা এখানে কেন?”
“কেন! তুমি খুশি হওনি? এই যে পৃথিবীর সব কোলাহল আর যান্ত্রিকতার বাইরে এখানে শুধু তুমি আর আমি। আমাদের চারপাশে আর কেউ নেই, কিচ্ছু নেই। শুধু তুমি আর আমি।”
“হুম। কিন্তু আমরা এখানে কিভাবে এলাম?’’
“একদিন রাতে তাঁরা ছুটে যাওয়ার সময় প্রার্থনা করেছিলাম- যেদিন আমাদের বিয়ে হবে সেদিন থেকে যেন তুমি আর আমি এমন কোথাও হারিয়ে যাই যেখানে আমাদের আর কেউ খুঁজে পাবে না। যেখানে শুধু তুমি আর আমি থাকবো, আর আমাদের ভালোবাসা থাকবে। ঈশ্বর আমার প্রার্থনা শুনেছে বাবু। তাইতো তুমি আর আমি এখানে। এখানে আমরা অনন্তকাল থাকবো। কখনো আমরা আলাদা হবো না আর কোন দিন।”
দীপ্তির চোখে জল চিকচিক করে ওঠে। শুভ্র দীপ্তির মুখটা ওর বুকের সাথে চেপে ধরে। দীপ্তি পাগলের মতো ওর মুখ ঘষতে থাকে শুভ্রর বুকে। ফিসফিসিয়ে বলে, “খুব শীত লাগছে বাবু? আজ থেকে আমার সবটুকু উষ্ণতা শুধু তোমার। নাও আমাকে।”

ফোনের রিংটোনের বিরক্তিকর শব্দে স্বপ্নটা ভেঙে যায় শুভ্রর। ঘুম ভাঙতেই মনে পড়ে সব। আজ বিকেলেই দীপ্তি আর ও বিয়ে করেছে। বন্ধু রাতুলের বাসায় বাসর হবার কথা ছিল। কিন্তু সন্ধ্যায় রাতুল হঠাৎ ফোন করে জানায় কোন খবর না দিয়ে ওর বাবা-মা সিলেট থেকে ফিরে এসেছে। কথাটা শুনে মুখটা কেমন হয়ে গিয়েছিলো দীপ্তির। কিন্তু কিচ্ছু বলেনি মেয়েটা। শুধু আলতো করে শুভ্রর কাঁধে মাথা রেখেছিলো। যেন এই কাঁধটাই ওর একমাত্র আশ্রয়। হয়তো দু’ ফোটা চোখের জল ফেলেছিলো মেয়েটা। শুভ্র ওর মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে বলেছিলো, “দেখো, একদিন আমাদের নিজেদের অনেক সুন্দর একটা ঘর হবে।”

তারপর অনেকক্ষণ রিক্সায় ঘুরে দীপ্তিকে হলে নামিয়ে দেয় শুভ্র। সারাটাক্ষণ ওর হাত চেপে ধরে রেখেছিলো মেয়েটি। যাবার সময়ও হাতটি ছাড়তে চায়নি। যেন হাত ছেড়ে দিলেই শুভ্র অনেক দূরে চলে যাবে। আর ফিরে আসবে না কোনদিন।
ফোনটা আবার বেঁজে ওঠে। ফোনের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে শুভ্র। দীপ্তির ফোন! নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় ওর। মেযেটা জেগে আছে এখনও। আর ও কীভাবে ঘুমিয়ে গেল। ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে হাউমাউ করে কান্নার শব্দ ভেসে আসে,
“বাবু তুমি কোথায়? আমাকে বাঁচাও প্লীজ।”
‘‘কী হয়েছে তোমার? কী, কী হয়েছে?’’
ডুকরে ওঠে দীপ্তি। কোন রকমে বলে, “হলের গেট ভেঙে কতোগুলো জানোয়ার ঢুকে পড়েছে ভেতরে। সব মেয়েদেরে কাপড় ছিড়ে-খুলে ফেলেছে। যাকে পাচ্ছে সবাইকে রেপ করছে। আমি কোন রকমে বাধরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে তোমায় ফোন করেছি। প্লীজ আমাকে বাচাও।”
“আমি আসছি এক্ষুণি। তুমি পুলিশকে ফোন কর প্লীজ।”
আবারও ডুকরে ওঠে দীপ্তি,
‘‘পুলিশতো ওদের সাথেই আছে। ওদের সাথে পুলিশও…”
কথা শেষ হয় না দীপ্তির। ফোনের ওপাশ দরজা ভাঙার শব্দ ভেসে আসে। ফেনটা হাত থেকে ছিটকে পড়ে যায়। তারপর একটি তীব্র আর্তচিৎকার আর গোঙানির শব্দ। জানোয়ারদের উল্লাসে নিঃশেষ হতে থাকে দীপ্তির সবটুকু উষ্ণতা।

(বিঃদ্রঃ এখনি সময় প্রতিরোধের। যারা আমাদের মা, বোন, প্রেমিকাকে রাস্তার মাঝে উলঙ্গ করতে পারে, তাদরে শরীর নিয়ে যৌনতায় মেতে উঠতে পারে- তারা একদিন আমাদের ঘরেও হানা দেবে। ধর্ষক কারো সন্তান, ভাই বা বন্ধু হতে পারে না। যেখানেই নারীর ওপর আক্রমন দেখবেন, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। না হলে একদিন আমার অথবা আপনার মা-বোন ও এমন বিকৃত লালসার শিকার হতে পারে।)

উৎসর্গঃ পহেলা বৈশাখে লাঞ্ছিত সকল বোনেদের প্রতি।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৩২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অসাধারণ একটা গল্প।

এটাকে ১৬ প্লাস ট্যাগ না দেয়াও যেত। সবাই পড়তে পারে এমন গল্প।

খুব সুন্দর লিখেছেন।

২০ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৫

মাহাদী হাসান প্রেত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ এমন উৎসাহপূর্ণ মন্তব্য করার জন্য। ১৬+/ ১৮+ নিয়ে কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই ট্যাগটা লাগানো। সহজভাবে নেবার জন্য আবারো ধন্যবাদ। :-)

২| ১০ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৩:০২

মাহাদী হাসান প্রেত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ এমন উৎসাহপূর্ণ মন্তব্য করার জন্য। ১৬+/ ১৮+ নিয়ে কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই ট্যাগটা লাগানো। সহজভাবে নেবার জন্য আবারো ধন্যবাদ। :-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.