![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নারীরে আমরা প্রথম দিয়াছি নর সম অধিকার
মানুষের গড়া প্রাচীর ভাঙ্গিয়া করিয়াছি চুরমার
-কাজী নজরুল ইসলাম
দুই
মাই সিস্টার-লাইফ ইজ ওভারফ্লোয়িং টুডে
িসপ্রং রেইন শ্যাটারিং ইটসেল্ফ লাইক গ্লাস
(বাঙলা : জীবন আমার বোন উছলে উঠছে আজ
বসন্তের বৃষ্টি আছড়ে পড়ছে কাচের টুকরোর মতো)
-রুশ কবি বরিস পাস্তেরনাক
কেস স্টাডি ১ : দামিনী। দিল্লির চিকিৎসাবিদ্যার ছাত্রী। বয়স ২৩। গত ১৬ ডিসেম্বর চলন্ত বাসে পৈশাচিকভাবে ধর্ষিত হয়েছে। পাঁচ-ছ’জন বাসযাত্রী তাকে গণধর্ষণ করেই ক্ষ্যান্ত দেয়নি, উপরন্তু গোপনাঙ্গে লোহার রড ঢুকিয়ে সমাপ্তি টেনেছে। সারা বিশ্বে এ নিয়ে তোলপাড়। কথিত ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’ যে কতোটা কলঙ্কিত- তা এরপরেই আস্তে আস্তে বেরিয়ে পড়েছে।
কেস স্টাডি ২ : নবম শ্রেণির ছাত্রী ময়না। বয়স ১৫। গত ৬ ডিসেম্বর থেকে একটানা ৩ দিন ৩ রাত ধর্ষিত হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের এ মেয়েটি গণধর্ষণের শিকার। চাঁদের মতো এ শিশুটিকে ৫ জানোয়ার পর্যায়ক্রমে নির্যাতন করেছে। রুবেল, নূরুজ্জামান, মনি, শাজাহান ও হারুন- জৈবিক চাহিদাই এই অমানুষগুলোর কাছে সবকিছু। তারপর মৃতবৎ জেনে ফেলে গেছে রেললাইনে। মুমূর্ষ মেয়েটি চিকিৎসাবিহীন থেকেছে ২১ দিন। জন্মদাতা পিতা ‘কুলটা’ বলে মাসহ বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। দুঃখিনী মা গুরুতর অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল দূরের ভাইয়ের বাড়িতে। সেখানেও জায়গা হয়নি এ হতভাগাদের। সমাজপতিরা ‘অসতি’ বলে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। তাকে জায়গা দিলে মামার পরিবারকেও বয়কট করা হবে বলে তারা জানিয়ে দেয়। হৃদয়হীন এসব কর্মকাণ্ডে মেয়েটি আরো কাতর হয়ে পড়ে। শারীরিক মানসিক নির্যাতন আর আঘাতের পর আঘাতে মেয়েটি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। বহু কষ্টে মেয়েটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। টানা ১০ ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকে বারান্দায়। তারপর গণমাধ্যমের নজরে আসে। সবাই তখন লোকলজ্জার ভয়ে হলেও মায়াকান্নায় এগিয়ে আসে।
ফিরে দেখা : প্রতিবেদন বলছে, শুধুমাত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক বছরে ১৭৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগ নেতা জসীমউদ্দীন মানিক একাই করে ১০০টি ধর্ষণ। ধর্ষণে সেঞ্চুরির সাফল্যকে তখন বেশ আড়ম্বরতার সাথে উদযাপনও করা হয়। প্রতিবেদন আরো বলছে, এ হিসেবের বাইরেও যে কতো ঘটনা এই ক্যাম্পাসে ঘটেছে, তার হিসেব নেই।
[দৈনিক ইনকিলাব, ৫ অক্টোবর ১৯৯৮]
বাংলাদেশ-ভারতের পরিসংখ্যান
পুলিশের রিপোর্টকে সম্বল করে বিবিসি জানাচ্ছে, ভারতে ধর্ষণের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে।
ঠুঁটো জগন্নাথ মহিলা পরিষদের তথ্য মতে, বাংলাদেশে ২০১২ সালে ৬০০০ নারী শিকার হয়েছে ভয়াবহ নির্যাতনের। যদিও প্রকৃত চিত্র আরো ভয়াবহ। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা ও ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছে ১৬০০ নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১০৬ নারীকে। গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৫৭টি। ধর্ষিতার মধ্যে ৩ বছরের শিশু থেকে ৫৫ বছরের বৃদ্ধাও আছে।
মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার তথ্য মতে, ২০১১ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল ৩ হাজার ৭শ ৩৪ জন। ২০১০ সালে ৩ হাজার ৭৫ জন। ২০০৯ সালে ২ হাজার ৯শ ৮৪ জন। ২০০৮ সালে ৩শ ৬৭ জন। ২০০৭ সালে ৪৫৫ জন। ২০০৬ সালে ৫৯২ জন। স্মর্তব্য, ক্রমেই সহিংসতা বেড়েছে। বেড়েই চলছে। আরো উল্লেখ করা দরকার, হিসেবের এ চিত্রটা অপরাধের বিস্তৃতির তুলনায় অনেক কম। হিমশৈলের চূড়া মাত্র (tip of the ice berg)।
জাতীয় দৈনিকে ধর্ষণ
ধর্ষণ মহামারির পরিধি এতো ব্যাপক- কোনোভাবেই তার ব্যাপ্তি ফুটিয়ে তোলা সম্ভব না। এমন কোনো দৈনিক পাওয়া ভার, যেখানে অন্তত একদিন একটাও ধর্ষণের ঘটনা থাকবেনা। আমাদের বসবাস যে কতোটা নীচু সমাজে, কল্পশক্তির মাধ্যমেও তার পরিমাপ সম্ভব না। দৈনিকের কিছু শিরোনাম তুলে দিচ্ছি। তাতে একটু হলেও আঁচ করতে পারবেন। ‘রাঙামাটিতে আদিবাসী ছাত্রী ধর্ষণ’ (সমকাল ২০১৩)। ‘এবার কক্সবাজারে তরুণীকে গণধর্ষণ শেষে হত্যা’ (বাংলাদেশ প্রতিদিন ২০১৩)। ‘সাভারে ধর্ষিতার জবানবন্দি’ (বাংলাদেশ প্রতিদিন)। ‘ঝিনাইদহে আড়াই বছরের শিশুকে ধর্ষণ’ (আমার দেশ ২০১৩)। ‘সারিয়াকান্দিতে সাড়ে চার বছরের মেয়ে ধর্ষিত’ (আমার দেশ)। ‘পিরোজপুরে ছাত্রলীগ নেতার কাণ্ড : প্রেমিকার নগ্ন ছবি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে শহর থেকে গ্রামে’ (জানুয়ারি ২০১২)। ‘গার্মেন্ট কর্মীকে ধর্ষণের পর জিহবা কেটে দিয়েছে যুবলীগ কর্মী’ (ডিসেম্বর ২০১১)। ‘মুসলিম কিশোরীকে পাশবিক নির্যাতন : হিন্দু যুবক গ্রেফতার’ (সেপ্টেম্বর ২০১১)। ‘ভিকারুননিসার ছাত্রী ধর্ষণ : আসামি শুধুই পরিমল’ (আগস্ট ২০১১)। ‘ধর্ষণের জ্বালায় আগুনে জ্বলল মেয়েটি’ (ফেব্র“য়ারি ২০১১)। ‘নারায়নগঞ্জে দু ভাইকে বেঁধে রেখে বোনকে ধর্ষণ’ (ফেব্র“য়ারি ২০১১)। ‘ধর্ষণের পর আবার অপমান : সইতে না পেরে আত্মহত্যা’ (ফেব্র“য়ারি ২০১১)। ‘টঙ্গিতে তিন তরুণীকে ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যা’ (জানুয়ারি ২০১১)। ‘মোরেলগঞ্জে তরুণীকে গণধর্ষণের পর বিষ খাইয়ে হত্যা’ (নভেম্বর ২০১০)।
আইন বনাম ধর্ষিতা
ধর্ষণের এই ব্যাপকতার পিছনের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, অপরাধীর শাস্তি না পাওয়া। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে যথেষ্ট শক্তিশালী আইন থাকা সত্ত্বেও নির্যাতনকারীরা বিভিন্ন উপায়ে পার পেয়ে যায়। বাংলাদেশের আইন ভারতের চেয়েও শক্তিশালী। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩)-এর ৯(১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে তবে সে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে। একই আইনের ৯(২) ধারায় আছে, ধর্ষণ বা ধর্ষণপরবর্তী অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটলে ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। একই সঙ্গে জরিমানার কথাও আছে। সর্র্বনিম্ন জরিমানা ১ লাখ টাকা। ৯(৩) ধারায় আছে, যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে এবং উক্ত ধর্ষণের ফলে কোনো নারী বা শিশু মারা যায় তাহলে প্রত্যেকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড, কমপক্ষে ১ লাখ টাকা জরিমানা হবে। ভারতে এক্ষেত্রে শুধু যাবজ্জীবনের কথা বলা আছে; সে দেশের দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধরায় (২)জি উপধরায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন শাস্তি না পাওয়ার বড় কারণ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধুতাও এর জন্য দায়ী। নানা স্বার্থের টানে তারা অপরাধীর পক্ষ নিয়ে বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি করে। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন মহলের সচেতনতার অভাব। মহিলা আইনজীবী সমিতির এক জরিপে জানা যায়, এসব কারণে ধর্ষণ মামলার ৯০ শতাংশ আসামি খালাস পেয়ে থাকে।
মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, ‘প্রশাসনে দলীয় লোক থাকার কারণে এসব ঘটনার অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় পার পেয়ে যায়। এছাড়া ফৌজদারি আইনের দুর্বলতার কারণে অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তি হয় না।’ প্রতিবিধানের পথ বাতলে আদিলুর রহমান বলেন, ‘জনগণের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই এরা শাস্তি পাবে।’ শুধুমাত্র আইন প্রয়োগের অভাবে এখানে ধর্ষণ মহামারি ব্যাপক রুপ নিয়েছে।
ধর্ষিতা বনাম সমাজ
আমাদের সমাজে একজন ধর্ষিতার পক্ষে সেভাবে কেউই এগিয়ে আসে না। তার কিছু চরিত্র নিচে তুলে ধরা হলো।
এক
আইনজীবীরা ধর্ষকের পক্ষে আদালতে দাঁড়ায়। ভাবতে অবাক লাগে, তাদের কি মা-বোন নেই! শুধু কি অর্থের লোভে তারা আদালতে ধর্ষকের পক্ষ নেয়! একটা নারীর ইজ্জতের চেয়েও তার কাছে কয়টা টাকার মূল্য বেশি! ধিক!
দুই
মেডিকেল রিপোর্ট যেসব ডাক্তাররা দিয়ে থাকে, তারাও ক্ষেত্রবিশেষ ‘মালপানি’র পিছনে পড়ে। ধর্ষকের বিপক্ষে মিথ্যা রিপোর্ট করে। আলোচিত ইয়াসমিনের মৃত্যুর পর মেডিকেল রিপোর্র্ট কী ছিল, ডেইলি স্টারের সৌজন্যে বয়ান করছি। ‘ইন আওয়ার অপিনিয়ন, ডেথ ওয়াজ ডিউ টু অ্যাফিক্সিয়া ফলোড বাই ইন্টার্নাল হ্যামারেজ, অ্যাজ আ রেজাল্ট অব থ্রটলিং ফলোড বাই হেড ইনজুরি অ্যান্ড শি ওয়াজ রেপড হুইচ ওয়াজ অ্যান্টি-মর্টেম অ্যান্ড হোমিসাইডাল ইন নেচার : ইয়াসমিন, দ্য ব্যালাড অব আ ফ্লাওয়ার নট অ্যালাউড টু ব্লুম’ (আমাদের মতে, শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। মাথায় গুরুতর জখম এবং টুঁটি চেপে ধরায় অন্তর্গত রক্তক্ষরণ হয়ে সে মারা যায়। সে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিল, যা স্বভাবের দিক থেকে হত্যাচেষ্টার স্বাক্ষরবাহী)। সূত্র, দ্য ডেইলি স্টারÑ১৭ ফেব্র“য়ারি ১৯৯৮। এমন একটি দৃষ্টান্তই যথেষ্ট, কখনো-সখনো ডাক্তাররাও ধর্ষকের শত্র“।
তিন
পরিবারও বিভিন্ন কারণে নিরব ভূমিকা পালন করে। তাদের কারণটি বেশ যথার্থ। দেখা যায়, যেসব মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়, তাদের অধিকাংশই প্রাইমারি ও হাইস্কুল পড়–য়া। জীবনের শুরুভাগে যারা ধর্ষণের শিকার হয়, তাদের বাকি জীবন সামনে পড়ে থাকে। ফলে পরিবারই বিষয়টি এড়িয়ে যায়। কারণ, এটা জানাজানি হলে মেয়েকে বিয়ে দেয়া কঠিন হয়ে যায়। ধর্ষিত মেয়েকে এদেশের ছেলেরা বিয়ে করতে চায় না। আবার থানা-পুলিশ করতে গেলে ডাক্তারি পরীক্ষাসহ নানাবিধ ঝামেলায় জড়াতে হয়। এটাও অনেক পরিবার চায় না। সমাজের এসব রীতিনীতির কারণেই ধর্ষিতার মূলপক্ষ পরিবারও ধর্ষিতার বিপক্ষ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়।
চার
প্রশাসন-যারা ধর্ষিতার মূল ভরসা, তারা এক্ষেত্রে সবথেকে বাজে আচরণ করে। তারা মূলত উৎকোচের আশায় থাকে। আবার পুলিশ-আইনজীবী যোগসাজশ করে ধর্ষণ বাণিজ্য করে। পুলিশের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ হচ্ছে, তারা রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল এবং গেস্টহাউসে অভিযান চালিয়ে যৌনকর্মী ধরে এনে নিজেরাই ধর্ষণ করে। রক্ষক তখন ভক্ষকে রুপান্তর হয়।
ধর্ষণের আরো কারণ
এক. খোলামেলা পোষাক : ইন্ডিয়া এবং পশ্চিমাবিশ্ব যে অশ্লীল পোষাকের আমদানি করেছে বর্তমান সমাজে- ধর্ষণ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে একেও অনেক বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ করে থাকেন।
দুই. মোবাইল : মোবাইলের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি কিংবা যৌন আবেদনময় নানা চিত্র পৌঁছে যাচ্ছে এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। দশ-বারো বছরের বালকরাও তা দেখে সেসব বাস্তবায়নে ভীষণ আগ্রহী হয়ে উঠছে।
তিন. ইন্টারনেট : যারা ব্রাউজিং জানে-খুব ছোটো থেকেই যাদের ইন্টারনেটে ঘোরাফেরা, তারাও এসব অশ্লীল পর্ন দেখে দেখে ধর্ষণে উদ্যমী হয়ে উঠছে।
চার. নিয়ন্ত্রণহীন ক্লাব : পাড়ায় পাড়ায় গড়ে ওঠা পাঠাগার বা ক্লাবগুলোতে আগে একটা সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ছিল। এখন আর সেসব চোখে পড়ে না। তাই তরুণদের ওপর সামাজিক কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাই এরা ভুল পথে পা বাড়াচ্ছে। ধর্ষণের মতো ঘটনাও এদের দ্বারা ঘটছে।
পাঁচ. সামাজিক অবক্ষয় : শিষ্টাচার ভদ্রতা বলে এখন আর কিছু নেই সমাজে। নারীদের প্রতি সম্মানের ব্যাপক ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। নেশাজাতীয় দ্রব্য যারা সেবন করে। তাদেরও বড় একটা অংশ ধর্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রিয় কোনোভাবে এসব মোকাবেলা না করাতে তরুণরা খুব সহজেই বখে যাচ্ছে। আর বখাটেরা স্বাভাবিকভাবেই এসব অপকর্মের সঙ্গে যুুক্ত হয়ে পড়ছে।
ছয়. নৈতিক শিক্ষার অভাব : নৈতিক কিংবা ধর্মীয় শিক্ষার বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। স্বাভাবিকভাবেই আদর্শিক শিক্ষার অভাবে সমাজের অধপতন ঘটছে। মানুষের নীচ মানসিকতা ভালো করার উপায় তাই আমাদের সমাজে নেই। এসব নীচরা সমাজে অহরহ ধর্ষণের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
সাত. মামলার ধীরগতি : ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৫-এ খবর নিয়ে জানা যায়, প্রায় সাত বছর পার হয়ে গেলেও বেশকিছু আলোচিত এবং লোমহর্ষক মামলার রায় এখনো তারা দিতে পারেনি। এমনকি ৩০টিরও বেশি ধর্ষণ মামলা ১০ বছর ধরে বিচারাধীন।
আট. আকাশ সংস্কৃতি : লেখক ও উন্নয়ন কর্মী অদিতি ফাল্গুনী বলেন, ঝাঁ-চকচকে পশ্চিমা পোশাক; ভারতীয় বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির সিনেমায় ধর্ষণ দৃশ্য, ইভ টিজিংয়ের দৃশ্য, অশ্লীল আইটেম সং তথা নারীর নিছক যৌনবস্তুসুলভ উপস্থিতি সমাজে নারীর হীন অবস্থাকে ক্রমাগত জোরদার তো করেই, পাশাপাশি পুরুষদের জৈবিক আক্রমণেও উৎসাহিত করে।
নয়. ভোগবাদী মানসিকতা : ভোগবাদী সমাজে তাৎক্ষণিক আনন্দ লাভকে বড় করে দেখা হয়। তাই মানুষ ক্ষণিকের আনন্দ লাভের জন্য ধর্ষণের মতো হীন কাজে লিপ্ত হয়।
প্রতিকার
ধর্ষণ বৃদ্ধির যতগুলো কারণ উপরে উল্লেখ করা হলো, গভীরভাবে লক্ষ করলে দেখা যাবে- এসবের কোনোটিই ইসলাম ধর্ম সমর্থন করে না। তাই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার বিকল্প নেই। আমি যদি আরো পরিষ্কারভাবে বলি, মেয়েদের পর্দাবৃত হতে হবে। ছেলেদের আরো সংযত হতে হবে। পরিবারের দায়িত্বশীলদের আরো সতর্ক হতে হবে। কিংবা আমি যদি এখানে কুরআন-হাদীস উদ্ধৃত করি; ইসলামের সোনালি যুগের কিছু ঘটনা তুলে আনি- তবে কিছু লাফাঙ্গাকে ছাগলের তৃতীয় বাচ্চার ন্যায় লাফাতে দেখব। আমাকে তারা মৌলবাদি বলে গাল দিতে আরম্ভ করবে। অথচ এটাই যে ধর্ষণ প্রতিরোধের প্রধান হাতিয়ার, তা এসব জ্ঞানপাপীদের কে বোঝাবে! দুঃখের কথা, বিষয়টা সাদা খৃষ্টানদের বোধগম্য হলেও বাঙালি মুসলমানরারা বুঝতে চায় না। একজন ব্লগারের সংশ্লিষ্ট ঘটনাটি তার ভাষায়ই এখানে উল্লেখ করছি : ‘লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল্ডস্মিথস কলেজে আমার এক শিক্ষিকা ম্যাগির সঙ্গে একদা কথা হচ্ছিল। তিনি একজন সাদা খৃষ্টান মহিলা। কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন, আমি একটা গ্রামার স্কুলে পড়েছি। স্কুলটা ছিল মিক্সড- ছেলে-মেয়েরা একসঙ্গে পড়ত। কিন্তু মেয়েরা কমন রুমে থাকত। শিক্ষক/শিক্ষিকার সঙ্গে ক্লাসে যেত আবার ক্লাস শেষে শিক্ষকের সঙ্গে বেরিয়ে আসত। ছেলেদের সঙ্গে এই সাদা খৃষ্টান মেয়েরা কোনোরকম আড্ডা দেয়ার সুযোগ পেত না।’
ইসলামী খেলাফত না থাকায় এদেশে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন সম্ভব না। তবু সেটাই যে প্রতিকারের মূল অস্ত্র- সচেতনরা অবশ্যই তা বুঝতে পারবেন। কারণ, জেল থেকে প্রতিশোধপরায়ন হয়ে যখন একজন ধর্ষক বেরিয়ে আসে, তখন সে ‘মহাধর্ষক’ হবার প্রতিজ্ঞা করে। আর ইসলামী ব্যবস্থাপনায় এসবের সুযোগ নেই। বরং একজনের শাস্তি দেখে আরো হাজারজনের সংশোধনের বিশেষ ব্যবস্থা আছে।
দ্রষ্টব্য : লেখাটি সদ্য প্রকাশিত বিবেক ম্যাগাজিনের ফেব্রুয়ারি সংখ্যার প্রচ্ছদ কাহিনি হিসেবে ছাপা হয়েছে।
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩০
মুহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেছেন: সংযত এবং মার্জিত উপায়ে ভাষা ব্যবহার কাম্য।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২১
জুবেরী বলেছেন: শালা ছাগু দূরে গিয়ে মর, আর ল্যাদাস না।