![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am student of Feni Polytechnic Institute .... Want to be a Good Person ... I love Bangladesh
বিয়ে
======
"চল নিপুল।",বললো মা। "কোথায় যাবো আম্মু?",অবাক হই আমি। "তোর ফারুক আংকেল এর বাড়িতে।",মায়ের মুখে মুস্কি হাসি ফুটে উঠে।
মায়ের মুখে এমন হাসি দেখে চিন্তায় ধরলো মাথায় 'কেন যাবেন ওখানে? ' ভাবতে লাগলাম আমি। "কি রে নিপুল রেডি হয়ে আয় না!",আম্মু আবার ডাকলো আমায়। কোন কারনে আম্মু খুব খুশি যা আমার কাছে লুকাচ্ছেন কিন্ত তার কাজকর্মে তা ঠিকই বুঝা যাচ্ছে।
"আমি যাবোনা আমার ইমপর্টেন্ট কাজ আছে।",নিজের মুখটা কথার সাথে ভাব মিলিয়ে তাকালাম। হঠাৎ আম্মুর মুখে একটু হাসির বিচ্যুতি ঘটেছে খেয়াল করলাম আমি। নিজেকে সামলে আবার বললেন, "তোকে যেতেই হবে যত কাজই থাকুক।"
"কেন যাবো বলবে তো?",প্রশ্নের ভাব ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমি। "তোর ফারুক আংকেল এর মেয়ে ফারির আজ এনগেজমেন্ট। তাই আমাদের যেতে হবে।",মা শাসানো সুরে বললো
মায়ের হাবভাব দেখে বুঝে গেলাম না গিয়ে উপায় নেই। ফারিয়া মেয়েটি কে সেই ছোট থেকেই দেখছি। সমান সমান ই ছিলাম বয়সে মোটামুটি ও অবশ্য ছয় মাসের ছোট ই ছিল। লম্বায় ও সমান ছিলা প্রায়।
ফারুক আংকেল আব্বুর খুব ভালো বন্ধু সেই হিসেবে প্রায় ই ওদের বাসায় যেতাম। ফারিহাকে সবাই ফারি ডাকতো আমি ছাড়া। আমি রাগিয়ে ডাকতাম "হাড়ি"। হাড়ি ডাকলেই মেয়েটি রেগে লাল হয়ে যেত আর আমায় দৌড়াতো। আমাদের দৌড়াদৌড়ি কিংবা বান্দ্রামী দেখে ফারুক আংকেল একদিন বলেই দিল,"এই পিচ্চি পাজি দুটোকে একটার সাথে আরেকটার বিয়ে দিব কিন্ত?"
সেদিন বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় কেউ আর কারো সাথে দেখা করিনি আমরা। পরদিন যাওয়ার সময়ে ফারি তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। মেয়েটাকে সেদিন কেন যেন আপন মনে হয়েছিল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে উঠলো সে আর আমিও হাসলাম।
এরপর দুজন যত বড় হলাম ততই একজন আরেকজনের সাথে দেখা করতাম না। গতবছর দেখা হয়েছিল। ফারি ভীষণ সুন্দরী হয়ে গেছে। আমায় দেখে কিছু বলেনি না চিনার ভান করে চলে গেছে।
"কিরে নিপুল তুই এখনো রেডি হস নি?",মায়ের পুরো চোখে মুখে রাগ ফুটে উঠলো,"অবশ্যই তোকে যেতে হবে। না গেলে আমার সাথে আর কথা বলবিনা।" মায়ের কথা শুনে মুখ কালো হয়ে গেল আমার, "ওকে যাবো কিন্ত তোমায় ওদের বাসায় নামিয়ে দিয়েই চলে আসবে।",নীল শার্টটা পড়তে পড়তে বললাম আমি।
"নিপুল তোর শেরওয়ানি টা পড় আর তোকেও ভিতরে যেতে হবে। ",মায়ের মুখ থেকে হাসির চিনহ চলে গেল। মায়ের হঠাৎ কি হলো? বুঝতেছিনা কিছুই। 'আমাকে যাওয়ার এত তাড়া দিচ্ছে কেন?' সাত পাঁচ ভাবতেই মোবাইল টা রিং হলো।
নাম্বারটা অপরিচিত বলে কে শিউর নই তাও রিসিভ করে সালাম দিলাম
"আসসালামু আলাইকুম। কে বলছিলেন?",দ্রুত বললাম আমি। অই পাশে নীরব কিন্ত নিশ্বাসের শব্দ ঠিকই শুনলাম আমি। "কথা না বললে রেখে দিচ্ছি!",রাগ এসে গেল কিছুটা। "আমি হাড়ি ",অইপাশ থেকে মিষ্টি একটা মেয়েলি কন্ঠ ভেসে এলো
কিছুক্ষণ ভাবলাম "হাড়ি " এ কেমন নাম আর হয়তো ভুল ই শুনলাম তাই উত্তর দিলাম "সরি?"। অইপাশে কিছুটা চুপ তারপর মেয়েলি কন্ঠটা আবার এলো, "আমি ফারিহা। এখনো চিনেন নাই?" মেয়েটির কন্ঠে কিছুটা কান্নার ছাপ। 'ফারি 'শুনার পরেই হূদপিণ্ড টা লাফিয়ে উঠলো আমার।
দৌড়ালাম ছাদে। হাফাতে হাফাতে জবাব দিলাম, "চিনেছি। কিন্ত হাড়ির কথা এখনো মনে আছে?" মেয়েটি কিছুক্ষণ ঘনঘন নিশ্বাস নিল তারপর আবার উত্তর দিল,"আমি সব মনে রেখেছি বাবার কথাটাও। কিন্ত আপনি তো কখনো খোজ ই নেন নি আমার।"
"হাহাহাহাহা। আগে তো তুমি বলেই ডাকতে এখন তবে কেন আপনি বলছো?",কিছুটা হাসলাম আমি। "আজ আমার কি জানেন তো সরি আমার কি জানো তো?",ফারিহা ওপাশ থেকে কিছুটা কেঁদেই দিল। বুকটা ধুক করে উঠলো আমার। তাও কৃত্তিম হাসি দেখালাম। এনগেজমেন্ট এর কথা স্মরণ হতেই, "কংগ্রেস। তা হবু বরটা কেমন?" বলে উত্তর দিলাম আমি
ওপাশে থেকে মেয়েটি শাঁসালো আর সাথে কান্নজড়ানো কন্ঠে বললো,"নিপুল আমি এই এনগেজমেন্ট মানি না। বাবা আমাকে আগ থেকেই বলতো তোমার সাথেই আমার বিয়ে হবে আর আমি শুনে হাসতাম আর তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি কিন্ত কখনো বলিনি। তোমার নাম্বার ফেসবুক আইডি সব জোগাড় করে রেখেছি কিন্ত যোগাযোগ করিনি ভেবেছি তুমি ই করবে।"করুন কন্ঠে বললো ফারি।
"ভালোবাসো সেটা আগে বললেই পারতে তাহলে আজ অন্য কারো সাথে এভাবে হতো না। কিন্ত সেদিন যে আমায় না দেখার ভান করেই চলে গেলে?",চাপা রাগ ভর করে মাথায়
"আমার রাগ ছিল। তুমি আমার সাথে এতদিন যোগাযোগ করোনি তাই রেগে কথা বলিনি......
"সব শুনেছি আমি কিন্ত?",পিছনে থেকে মায়ের শাসানো কন্ঠ শুনা গেল। কিন্ত মা এটাকে তেমন আমলে নিল না আমায় রেডি হতে জোর দিল। মায়ের আচরণ কিছুটা অন্যরকম বুঝলাম কিন্ত আমায় কিছুই বললোনা।
ফারির নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এলো,"ফেসবুক এ আসো তাড়াতাড়ি। " ফেসবুক এ লগিং করতেই একটা ম্যাসেজ 'তাসনিয়া আক্তার ফারিহা ' আইডি থেকে। ভিতরে লেখা, "প্লিজ হেল্প নিপুল? "। উত্তর দিলাম বাংলায়, "কি হেল্প ফারি?"
কয়েক মিনিট পরে রিপ্লাই এলো ম্যাসেজ, "আমি বাসা থেকে পালিয়েছি কোথাও আমায় লুকিয়ে রাখতে পারবে?" ম্যাসেজ টা পড়েই ফারির একবছর আগে দেখা চেহারাটা কল্পনা করলাম আর মিলালাম সে ভিষণ বিপদে।
একটা টেক্সি কারে করে রওয়ানা দিলাম কিন্ত আমার চোখেমুখে ঘাম ফারিকে কোথায় রাখি। মায়ের চোখ এডালো না,"কিরে নিপুল তুই কি কোন কারনে আতঙ্কিত?" মায়ের প্রশ্নের উত্তরে অস্বিকার করলাম আমি। গাড়িটা থামিয়ে এক বান্ধবী কে ফোন দিলাম আমি আর গাড়ি থেকে একটু দুরে এসে কথা বললাম তার ওখানে থাকার জায়গা হবে কিনা? সে উল্টা ঝাড়ি দিল,"লেডিস মেসে আমি থাকবো ভেবে। "
সব খুলে বললাম তাকে। ডিজিটাল যুগের পোলাপাইন এর এক প্রব্লেম কিছু হইলেই 'ট্রিট দে? ' সে ও বলতে ভুললোনা। তার মেসে রাখতে রাজি হলো সে। ফারিকে ঠিকানাটা ম্যাসেজে দিলাম কে জানে যেতে পারবে কিনা?
গাড়িতে গিয়ে আমার চোখ তো আসমানে উঠে গেল কারণ আম্মুকে ভীষণ চিন্তিত দেখাচ্ছে।"কি হলো আম্মু? ",বললাম আমি। আম্মুর মুখটা কালোই রয়ে গেল। আবার জিজ্ঞেস করলাম, "কি হয়েছে প্লিজ বলো?" আম্মু মুখ কালো করে জবাব দিল, "ফারি বাড়ি থেকে পালিয়েছে।" বলেই কিছুটা ঝাড়ি দিলেন। "তাহলে চলো বাসায় ফিরে যাই?",আমার সহজ সাবলীল উত্তর।
"কি ব্যাপার তোর চোখেমুখে এত হাসি কেন? নিশ্চয়ই তুই জানিস ফারি কোথায়?",মা আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো। আমলে নিলাম না আমি, "আজব আমি কিভাবে জানবো?" চেহারাকে বাংলার পাঁচ করে তুললাম আমি
মোবাইলে একটা ম্যাসেজ এলো খুলতেই দেখি ফারির ম্যাসেজ। "তোমাদের বাসার ঠিকানা দাও আর তুমি বাসায় আসো আমি অন্য কোথাও থাকতে পারবোনা। আন্টিকে এখনো জানানোর প্রয়োজন নেই কিছুই। আন্টিকেও অবশ্যই আনবে কিছু না জানিয়ে প্লিজ।"
আবার চোখেমুখে ঘাম ছুটলো আমার কি বলে আনা যায়। হঠাৎ করেই বুদ্ধিটা এলো নিজের আরেকটা মোবাইল দিয়ে নিজের মোবাইল এ কল দিলাম আমি তারপর রিসিভ করেই জোরে চিৎকার দিলাম, "কি?" "সব লন্ড ভন্ড করে দিসে?" "কখন?" "কখন? " "হ্যাঁ আমরা আসতেছি।" আম্মাকে বুঝালাম কোন একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে আর জানার উদ্দেশ্যে আম্মু জিজ্ঞেস করলো, "কি হয়েছে নিপুল? কে ফোন করেছিল?"আম্মুর চোখেমুখে অজানা ভয়
"বাসায় চোর ঢুকেছে সব নিয়ে গেছে। বাড়িওয়ালা ফোন দিসেন।",কৃত্তিম আতঙ্ক ফুটালাম। "দেখি বাড়িওয়ালা কে আবার ফোন দেই?",বললো আম্মা। ফোনটা কেড়ে নিলাম আমি। এখন দরকার নেই উনারা আতঙ্কিত ফোন দিও না। "ড্রাইভার সাব গাড়ি ঘুরান।",হুকুম দিলাম আমি। আম্মা চুপ করে আছেন আর চুপ থাকাও সম্মতির লক্ষণ।
আবার ম্যাসেজ এলো,"এসেছি কিন্ত তোমাদের বাড়িটা খুজে পাচ্ছিনা।" ফারিহা ম্যাসেজ দিল। আবার বিস্তারিত বললাম তাকে। হঠাৎ মায়ের অতঙ্কিত কন্ঠ শুনা গেল, "আলমারি তে টাকা গুলো রেখেছিলাম। না জানি নিয়ে গেছে চোরে। তোর বাবার সামনে মুখ দেখাবো কেমনে? এ কেমন চোর দিনের বেলায় চুরি করে!" আম্মুর চোখের কোনে পানির ফোটা চকচক করে উঠে।
কিছুক্ষণ পর ফারিহার আবার ম্যাসেজ, "তোমাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি।বাড়িওয়ালা ঢুকতে দিচ্ছেনা। তাড়াতাড়ি আসো। আমার ভয় করছে, সামনের ছেলেগুলো যেভাবে তাকাচ্ছে।"
ভয়টা আমার ভিতরেও এলো..........
(To be continued)
[বি. দ্র. আর এক পার্ট আছে । ইচ্ছে ছিল এক পার্টেই শেষ হবে কিন্ত লিখতে বসলেই এত লেখা কোত্থেকে যে আসে।ইনশাল্লাহ আরেক পার্ট ও লিখে ফেলবো ]
©somewhere in net ltd.