নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন যদি স্বপ্ন না হয়ে বাস্তব হতো, তবে কতইনা ভাল হতো।

মুহাম্মদ মাইনূল হাসান রাফি

মাইনূল হাসান রাফি

মাইনূল হাসান রাফি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধুত্ব ও ভালবাসার গল্প→ সারপ্রাইজ

০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:০৩

বাড়ি থেকে ঢাকা ফিরার জন্য

রওনা দিলাম প্রায় ৩টার দিকে।

কাউন্টারে গিয়ে জানলাম বাস

সৌদিয়ার বাস আসতে আরো আধ

ঘন্টা আছে। তাই বসে গেলাম

কাউন্টারে যাত্রীর জন্য

রাখা একটি সিটে, আর পাশের

সিটে কাঁধের ব্যাগটা রাখলাম। চুখ

দিলাম টিভির দিকে, আজকাল

বাস কাউন্টারে টিভি কমন

জিনিস।

সবাইকে আধুনিকতা ছুঁয়ে গেছে,

মনে হয় একমাত্র আমাকে ছাড়া।

ছোটবেলা থেকেই শান্ত আর

চুপচাপ ছিলাম। বই

পড়া বা লেখালেখিতে সময়

কাটাতে বেশ ভালই লাগতো।

আমার লেখা কবিতাগুলো বেশির

ভাগই ভালবাসাকে ঘিরে। কিন্তু

আমি কাউকে ভালবাসিনি এখনো।

বলা যায়,

ভালবাসা আসেনি এখনো আমার

জীবনে।স্কুল-কলেজ অতিক্রম

করে ভার্সিটি পড়ছি এখন।

লাইফটা পুরা পরিবর্তন হয়ে গেল

গ্রাম হতে ঢাকায় এসে।ব্যস্ততায়

সময় যে কখন শেষ হয়ে যায়

বুঝে উঠি না। অবসরে বন্ধুদের

সাথে আড্ডা আর টিউশনি করি।

আজকাল লেখালেখিও তেমন

করিনা, সময় কোথায়?যাই হোক,

ভার্সিটি পড়ছি তবুও

ভালবাসা কি জিনিস

বুঝে উঠতে পারিনি। আমার দুই বন্ধু

প্রায় বলে মামা, তুই একটা স্মার্ট

ছেলে হয়েও ভার্সিটি পড়তেছস

কিন্তু এখনো প্রেম করলি না। কখন

করবি বুড়া হয়ে গেলে।

আমি দেখতে মোটামোটি সুদর্শন

ছেলে ছিলাম বটে, তবে আমার জন্য

প্রেমটেম মানায় না। কাল

একটা প্রেজেন্টেশনের জন্য গ্রুপ

ঠিক করা হবে বলে একটু সকালেই

ক্যাম্পাসে যেতে বলল রাহাত।

তাই তারাতারি ঘুমিয়ে পড়লাম

রাতে,

তাছাড়া বাড়ি থেকে ঢাকা ফিরে খুব

ক্লান্ত লাগছে। সকালে ঘুম

থাকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ

গুছিয়ে বের হয়ে গেলাম

ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে। বের হয়েই

দেখলাম বাসার পাশের খালেক

মামার চায়ের ছোট্ট

দোকানটা খোলা আছে। তাই

সেদিকে এগিয়ে গেলাম চায়ের

জন্য। মামাকে বললাম দ্রুত এককাপ

চা দিতে, লেট হয়ে যাচ্ছে। কিছু

সময় পর মামা চা দিল।

আমি চা শেষ করে বিল

মিটিয়ে একটা রিক্সায় উঠে আকিব

ও রাহাত কে কল

করে ওদের অবস্থান জেনে নিলাম।

যখন ভার্সিটি পৌছলাম,

দেখি আমাদের বন্ধু মহলের সবাই

ইতিমধ্যে উপস্থিত।

মনে হচ্ছে সবাই খুব কৌতূহল

নিয়ে আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।

আমি কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করতেই

কেউ একজন পিছন হতে আমার চুখ

বেধে পেলেছে। আর

বাকিরা বলতে লাগলো চুপ

করে আমাদের সাথে হাঁটতে থাক

মামা। আমি ওদের এই

পাগলামি দেখে অবাক

হয়ে ভাবতে লাগলাম কি হয়েছে?

সবাই আমাকে চুখ বেধে কোথায়

নিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ

মনে পড়লো আজ ১৪মে, আমার

জম্মদিন। বন্ধুমহলে সারপ্রাইজ

একটা বড় প্রাপ্তি। বন্ধুরা কখন

কোথায় সারপ্রাইজ

দিয়ে বসে তাঁর কোন হদিস

থাকেনা। আমার সাথেও তাই

হলো। সবাই

আমাকে বার্থডে সারপ্রাইজ

দিতে মিথ্যা প্রেজেন্টেশনের

কথা বলে নিয়ে এসেছে এত সকালে।

যেখানে কোন ক্লাসি নেই আজ।খুব

আনন্দে দিনটি কাটিয়াছি আমি,

সবাই মিলে আমাকে অন্য রকম এক

বার্থডে উপহার দিল। বার্থডের

কয়েকদিন পরের কথা যখন

ভার্সিটি যাচ্ছিলাম রিক্সায়

তখন হঠাৎ একটি মেয়ে পিছন

থেকে নাম ধরে ডাক দিল।

চেয়ে দেখি আমাদের জুনিয়র

স্টুডেন্ট অরিন । কিন্তু দেখ

আমাকে নাম ধরে ডাক দিল। বড়দের

সম্মান করতেও ভুলে গেছে। বেশ

কিছুদিন ধরে মেয়েটি জ্বালাতন

করে যাচ্ছে ,

সে কিনা আমাকে ভালবাসে এই

ধাবিতে। যদিও ভালবাসার

কথাটি প্রথমে আমার বন্ধু আকিবের

মাধ্যমে। আকিব অরীনের

মামাতো ভাই। আকিব আর

রাহাতও চেয়েছিল আমি যেন

অরীনের সাথে রিলেশন করি। এই

দুজনের সাথে আমার খুব ভাল

বন্ধুত্ব। ওদের সাথে কোথাও

গেলে আমার কান

বয়রা করে পেলতো অরীনের গুনগান

করতে করতে। একদিন রাহাত

বললো- শোন মামা!! যদি আমার

সাথে নাজিফার

রিলেশনটা না থাকতো না তবে অরীনের

সাথে প্রেম করতাম।

উত্তরে আকিব বলল-কিন্তু

মামা অরীন যে নাহিদ কে পছন্দ

করে, আপনাকে না।কখন আমাদের

পিছনে নাজিফা এসে রাহাতের

কথাটা শোনে বেচারার উপর ১০

নম্বর বিপদসংকেত দেখিয়েছে।

পুরা দশদিন যোগাযোগ বন্ধ।যায়

হোক

আমি রিক্সা দাঁড় করিয়ে অরিনের

আসার অপেক্ষা করলাম। ১ মিনিট

পরে অরিন এসে আমাকে বলল-

আমাকে চুখে দেখনি?? এখন আরো ঐ

পাশে যাও, আমি কোথায়

বসবো তোমার কোলে?

আমি বললাম- বড়দের

সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জান

না তুমি? হায়রে আমার বড় রে,

তোমার কাছে শিখবো আর কি বলল

অরিন। এমনিতেই আমি লাজুক, এখন

আবার

মেয়ে নিয়ে ক্যাম্পাসে গেলে বন্ধুরা সবা



বাহ!! বাহ!! দিবে আমাকে। তাই

আমি বোকার মত বললাম

তুমি কি আমার সাথে যাবে?

অরিন রেগে গিয়ে বলল- না,

রিক্সাওয়ালার সাথে যাবো।

আচ্ছা okay,

তাহলে আমি নেমে যায় বলে,

যখনি রিক্সা থেকে নেমে যেতে লাগলাম

তখন অরিন আমার শার্টের কলার

টেনে ধরে আমাকে আবার

বসিয়ে দিল।

আমি তাকিয়ে দেখলাম

মেয়েটি আমার দিকে করুন

দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।

আমি স্পষ্টভাবে ওর চোখে জল

দেখতে পেলাম। তাই

রিক্সা মামাকে চালাতে বলে দুজনেই

অনেকক্ষণ চুপ করে থাকলাম।

খেয়াল করলাম অরিন কান্না করছে,

তাই sorry বললাম। মেয়েটি হঠাৎ

রিক্সার মধ্যেই আমার

বুকে ঝাপিয়ে পড়লো।

আমি চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম

২/১ জন মানুষ ছাড়া আর কেউ নেই

রাস্তায়। অরিন আমার

বুকে মাথা লুকিয়ে বলতে লাগল

তুমি কি অন্য কাউকে ভালবাসো?

নইতো আমাকে ভালবাসতে পারছো না ক

েন?

আমাকে কি তোমার পছন্দ নয়?

আমি খারাপ মেয়ে বলোনা?

আমি তোমাকে খুব ভালবাসি,

সেটা তুমি বুঝ না?

আমি হতবাক হয়ে ওর সব প্রশ্ন

শোনে গেলাম কিন্তু উত্তর

খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কিছুক্ষণ পর

আমি বললাম- দেখ অরিন তোমার

আর আমার ফ্যামেলী স্ট্যাটাস

অনেক ভিন্ন। আমি গ্রামের গরিব

ঘরের ছেলে, তুমি বড়লোক বাবার

মেয়ে। আমাদের সম্পর্ক তোমার

বাবা কখনো মেনে নিবেন না।

কারণ সব বাবা চান

তাদেরে মেয়েকে ভাল

ঘরে বিয়ে দিতে। আমার বুকের

থেকে হঠাৎ হাসি মুখে

অরিন: শুধু এই কারণে??

আমি: হ্যাঁ।

অরিন: তাহলে সেটা কোন

ব্যাপারই না।

আমি: কেন? ব্যাপার না মানে?

অরিন: কারণ

আমি বাবাকে তোমার

কথা বলেছি। ইভেন তোমার জন্য

অনেক বিয়ের প্রস্তাব রিজেক্ট

করেছি। বাবা তোমার

সাথে দেখা করতে চেয়েছেন ।

আকিব ভাইয়ার থেকে তোমার

সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন।

কিন্তু তুমিতো আমাকে পাত্তাই

দিচ্ছ না। i love you, do you love

me?

বললাম- সব কিছু এত সহজ

না অরিন।কারণ

তুমি বা আমি চাইলে সব সম্ভব না।

তাছাড়া তোমার

বাবা দেখা করতে চেয়েছে বলে ধরে নিও

না আমাকে উনার

পছন্দ হবে।

ভার্সিটি চলে আসলাম তাই আর

কথা না বাড়িয়ে রিক্সার বিল

মিটিয়ে আমি হাটতে শুরু করলাম।

পিছন থেকে অরিনের ডাক- দাঁড়াও

নাহিয়ান।

আমি না তাকিয়ে চলে আসলাম

ক্লাসে। আজ ক্লাসেও তেমন মন

বসাতে পারলাম না। ক্লাস শেষ

হওয়ার পর যখন বের হচ্ছিলাম তখন

অরিন বলল - আজকের মধ্যেই উত্তর

জানাবে, হ্যাঁ অথবা না।

আমি কিছু না বলেই চলে আসলাম

বাসায়। রাহাত কে কল

করে বিকালে বাসায়

আসতে বলে অরিনের

কথা চিন্তা করতে করতে কখন

ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা। বিকাল

৫টার দিকে রাহাত ও নাহিদ

দুজনেই আসলে আমি সব

খুলে বললেম। তখন আমাকে অনেক

ভাবে বুঝিয়ে হ্যাঁ বলতে বলল।

এমনকি রাহাত নিজেই অরিন

কে মেসেজ দিল- i love u too লিখে।

রিপ্লাই আসল- আমি জানতাম

আমার বাবুটা এটাই বলবে।

এভাবে অনেক সময় ধরে এসএমএস

চালাচালি করার পর অরিন কে কল

দিয়ে কথা বললাম। মেয়েটি আজ

অসেক খুশি যা না দেখলেই নয়। শুরু

হল আমাদের একসাথে পথ চলা।

অরিন ছিল ওর বাবা মায়ের ২য়

সন্তান। যদিও ওর বড় ভাই রোড

এক্সিডেন্টে মারা যায় ছোট

বেলায়। তাই ওর বাবা মার সব

সম্পত্তির মালিক অরিন। যখন

থেকে অরিন ওর আব্বুর

সাথে দেখা করতে বলতেছে তখন

থেকে আমার ভিতরে একটা কথা খুব

ভাবাচ্ছে। সেটা হল অরিনের

বাবা কি আমাকে মেনে নিবে??

আমরা যে মধ্যবিত্ত ফ্যামেলী।

এভাবে প্রায় ১ মাস

পার হয়ে গেল। একদিন

বিকালে অরিন বলল- আব্বু

কে বলেছি আজ

তুমি দেখা করতে আসবে সন্ধ্যায়।

সুতরাং তারাতারি আসবেন

মিস্টার। আমি সন্ধ্যা ৭টায় ওদের

বাসায় গেলাম, দেখলাম অরিনের

কয়েকজন রিলেটিভ আছেন ।

সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম আমার

মা বাবাকে দেখে। বুঝলাম

এগুলো সব অরিনের কাজ।

বাবা মায়ের একমাত্র

মেয়ে হিসাবে ওর পছন্দ

কে মনে নিল আমার হবু শ্বশুর

শাশুড়ি। ঐ রাতেই আমাদের

ইনগেসমেন্ট হয়ে গেল। কিন্তু

বিয়ে আরও পরে অর্থাৎ

আমরা গ্রেজুয়েট হয়ে গেলে। এর

কিছুদিন পরে আমার শ্বশুর

আমাকে বিদেশ পাটিয়ে দিলেন, ২

বছর পর আমি সফটওয়্যার

ইন্জিনিয়ারিন

ডিগ্রী নিয়ে দেশে ফিরলাম।আর

অরিন ইংলিশ লেকচারার। আজ

আমাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিক কাজ।

আমাদের সকল বন্ধুরাও আসল

বিয়েতে। শুধু নাহিদ বলেছে ওর

কাজ আছে অনেক তাই এখন

দেশে আসতে পারবেনা। অনেক

খারাপ লেগেছে ওর না আসার

কথা শুনে। কিন্তু দেখি বিয়ের দিন

ও ঠিকই সার প্রাইজ

হিসাবে চলে আসল। সব চেয়ে বড়

সার প্রাইজ নাহিদ আর সিনতিয়ার

বাবুটা। ওরা আমাকে বলেনি যে,

ওদের কোলে ছোট্ট বাবু আসছে।

আসলে বন্ধু মহলে সবি সারপ্রাইজ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.