![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১।এসএসসি পাশ করার পরের সময় থেকে কেমন যেন পাষান হয়ে গেছি।কেমন যেন অনুভূতিহীন লাগে নিজেকে ।আশেপাশে কারো দুঃখে আর মন কেঁদে উঠে না।কারো কষ্ট আর হায়-হুতাশ করি না।এমনকি আপনজনেরর দুঃখেও না,কষ্টেও না।
তাদেরকে স্বান্তনা পর্যন্ত দিতে পারি না।
এমনকি কেউ মারাগেলেও না।কয়েকমাস আগে আমার দাদার ভাই মারা গেলেন।রাত দুইটায় ফোনকরে জানানো হল।আমার কোন ভাবান্তর হয়নি।চোখ ছলছল করে উঠে নি।এমনকি তাকে দেখতে পর্যন্ত গেলাম
না। তখন আমার একটা ক্লাসটেস্ট ছিল
মাত্র আর ক্লাস চলছিল। এ এমন কিছুই
নয়।দুই একদিন ক্লাস মিস দেওয়া যেত।
স্যারকে রিকুয়েস্ট করে ক্লাসটেষ্ট পরেও দেওয়া যেত।আমি যখন ইন্টারমিডিয়েট ১ম
বর্ষে তখন আমাদের বাড়িতে আমার
এক জ্যাঠা মারা গেলেন।তখনও
আমি কাঁদি নি।যদিও আপন জ্যাঠা নন
কিন্তু খুব আদরর করতেন আমাকে।খুব ভালও বাসতেন ।আমাদের ঘরের পাশেই
তাদের ঘর ছিল।সবাই কাদল কিন্তু
আমি কাঁদি নি।কাঁদে নি আমার ভিতরের আমিটা।দুঃখের অনুভূতিগুলো মনে হয় মরে গেছে।অশ্রুগ্রন্থিগুলো মনে হয় নষ্ট
হয়ে গেছে।মাঝে-মাঝেই এখন জ্যাঠার কথা খুব মনে পরে।তার হাসিঠাট্টাগুলো খুব মনে পরে। তখন আমার মন খারাপ হয় এইভেবে মানুষটা আমাকে অনেক স্নেহ করত, ভালভাসত ।অথচ তার মৃত্যুতে দুফোটা চোখের জল ফেললাম না।কতটা নিষ্ঠুর আমি।ওই সময়টায় আরো কয়েকজন
আত্নীয়স্বজন মারা গেলেন।কিন্তু এই মৃত্যু গুলো আমাকে খুব বেশি একটা টাচ করল না।
দোয়াকরি আল্লাহপাক তাদের
সকলকে যেন জান্নাতবাসী করেন।
২।গত দুইদিন যাবত ঘুমাতে পারছি না।
ঘুমাতে গেলে দুঃস্বপ্ন দেখি।একটা মেয়ে পুড়ে যাচ্ছে আর ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকছে।ভাইয়া আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
ভাইয়া আমাকে বাঁচাও বাঁচাও
বলে চিৎকার করছে।কিন্তু আমি আমার
বোনকে বাঁচাতে পারছি। কারণ আমি নিজেও পুড়ে যাচ্ছি।আমার নিথর দেহ মাটিতে লুটিয়ে পরছে। আর বোনের বাঁচাও বাঁচাও তিৎকার কানে ভাসছে।ভাইয়া আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। এই শব্দগুলো কানে ভাসছে।
বাতাসে ভাসছে।আমার কানে উত্তপ্ত লোহার ছেঁকার মতো লাগছে।কিন্তু
তাকে আমি বাঁচাতে পারছি না।আমি ডুকরে কেঁদে উঠি।আমার ঘুম ভেঙেগ যায়।
উঠে দেখি আমার সারা শরীর ঘেমে গেছে।আমি উতভ্রান্তের মতো বিছানায় বসে থাকি।পানি খাই।আমার চোখ ছলছল করে উঠে।আমি মায়ের ফোনে ফোন দেই
ওপাশে রিং হয়।
>ছোট বোনটা ফোন রিসিভ
করে হ্যালো বলে।
>বলে কে?
>আমি বলি আমি তোমার বড় ভাইয়া।
>মাইশা তুমি কেমন আছ।
>ও বলে আমি ভাল আছি ভাইয়া।
>তুমি কেমন আছ ভাইয়া।
>আমিও ভাল আছি।
>আরো অনেক কথা হয়।
আমি ওকে কবিতা বলতে বলি।
>বোনটা আমাকে কবিতা শোনায়,
’আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে।
পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ি
দুইধার উচু তার ঢালু তার পাড়ি।'
>আমি আরেকটা কবিতা বলতে বলি ।
>ও আরেকটা কবিতা বলে।
'সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি
আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে
আমি যেন সেই কাজ করি ভাল মনে।'
আমি আরো কবিতা শুনতে চাই।
আমার বোন আমাকে আরো কবিতা শোনায়।আমি একটা কবিতা শুনি।
দুইটা কবিতা শুনি।তিনটা কবিতা শুনি।
অনেকগুলা কবিতা শুনি।আমার চোখের কোণে নিরবে জল গড়িয়ে পরে।
আমি ওকে ভালভাবে পড়ালেখা করতে বলি।আমার কথা জড়িয়ে যায়।ভাল
থেকো বলে ফোনটা রেখে দেই।
৩। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কক্সবাজার
থেকে ঢাকাগামী বাসটিতে পেট্রলবোমায়
দগ্ধ হয়ে একটি মেয়ে ও তার বাবা পুড়ে মারা যায়।ভাগ্যক্রমে তাদের মা বেচে যায়।
তারা কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছিল
তাদের মেয়ের আবদারে।কিন্তু বাপ
মেয়ে আর ফিরে নি।দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমায় তারা মারা যায়।
মেয়েটির নাম মাইশা।আমার বোন
মাইশা।হ্যা আমার বোনের নাম
মাইশা।আপনার বোন মাইশা।মাইশা আমাদের বোন।আমার খুব কষ্ট হয়। আমার বোনের নামে নাম বলেই কি এই কষ্ট?
আমার বোনের নামে নাম বলেই কি এই
দুঃস্বপ্ন?
এই কষ্টের শেষ কোথায়?
এই দুঃস্বপ্নের শেষ কোথায়?
কারো পরিবারের কেউ বাড়ি থেকে বের
হলে আমরা দুঃশ্চিন্তায় থাকি।কখন বাড়ি ফিরবে?রাস্তায় পেট্রলবোমায় দগ্ধ হওয়ার
দুঃশ্চিন্তা।আমরা তো খুব বেশি কিছু চাই না।
আমরা দিনশেষে সুস্থদেহে বাড়ি ফিরতে চাই?আমরা সুস্থদেহে মায়ের আঁচলের
নিচে ফিরতে চাই?আমরা সুস্থদেহে বাড়ি ফিরে বোনের হাসি মুখ দেখতে চাই?
আমরা কি এইটুকু চাইতে পারি না।
আমরা আর অপঘাতে মৃত্যু চাই না।
আমরা সাধারণ মৃত্যু চাই।
হায়দার খানের গানটা খুব মনে পরছে -
“আমি চিৎকার করিয়া কাঁদিতে চাহিয়াও
করিতে পারি নাই চিৎকার।
বুকের ব্যাথা বুকেতে লুকায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার।"
©somewhere in net ltd.