![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শক্তির জোরে, ক্ষমতার জোরে দাপটের
পাশবিক উন্মাদনায় যে সীমালংঘন করে
তখন
তার বিদায় ঘন্টা বেজে উঠে।
সীমালংঘনকারী কাউকেই আল্লাহ
বাঁচিয়ে রাখেনি। কালের গর্ভে তারা
বিলীন
হয়ে গেছে। আজ তারা ক্ষমতার দাপটে
মদমত্ত হয়ে দাম্ভিকতার মাতাল
অশ্বে আরোহণ করে নিজেদের
নীতি নৈতিকতা বির্সজন ও বুদ্ধি বিবেক
জলাঞ্জলি দিয়েছে। ধর্মহীন
শিক্ষা বাস্তবায়ন করার দ্বারা বিভিন্ন
সাবজেক্ট বৃদ্ধি করে অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন
পরীক্ষার হঠাৎ আগমন ঘটিয়েছে।
ইসলামী শিক্ষার একমাত্র ধারক ও বাহক
মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা তথা ইসলামী
শিক্ষা
ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার হীন
অপচেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে এর
দ্বারা আমরা যে স্বেচ্ছাচারিতার চরম
পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছি তা ইহুদী ও
খৃষ্টানদের তৈরীকৃত পরিকল্পনারই বাস্তব
ফল মাত্র। এটি বিজ্ঞানসম্মত
শিক্ষা দেওয়ার আড়ালে ইসলাম ধ্বংসের
এক
মহা পরিকল্পনা নয় কি? ১৮৩৬
সালে মহারাণী ভিক্টোরিয়া বৃটেনের
সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। সে সময়
ভারতবর্ষের দাখিলকৃত শিক্ষা কমিশনের
রিপোর্ট প্রসঙ্গে কমন সভায় ব্যাপক
আলোচনা হয়। তৎকালীন বৃটিশ
প্রধানমন্ত্রী গ্লাডষ্টোন একটি পবিত্র
কুরআন শরীফ হাতে নিয়ে উঁচু করে ধরে
কমন্স সভায় বলেছিলেন, ‘এটা মুসলমানদের
ধর্মীয়
গ্রন্থ আল-কুরআন।
বৃটিশরা বর্তমানে অনেকগুলো মুসলিম দেশ
দখল করে নিয়েছে। যদি এই দেশগুলোর উপর
বিনা বাধায় বৃটিশদের আধিপত্য বজায়
রাখতে হয় তাহলে এই কুরআন শিক্ষা থেকে
তাদেরকে দূরে রাখতে হবে’ (সরকার
শিহাবুদ্দিন আহমাদ, বিভ্রান্তির
বেড়াজালে মুসলমান, পৃঃ-৫)। ইংরেজদের
শাসনামলে কুরআন ও হাদীছ চর্চা প্রায় বন্ধ
হয়ে গিয়েছিল। যুগে যুগে মুসলমানদের
মেরুদন্ড
ভাঙ্গা জাতিতে পরিণত করে রাখার জন্য
এটি ছিল ইংরেজদের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত
চক্রান্ত। আজও আমরা এই জাল হতে মুক্ত
হতে পারিনি বরং তা আরও ভয়াল
আকৃতিতে ঘরের শত্রুরাই অক্টোপাসের
আকৃতি নিয়ে ঘিরে ধরেছে। বর্তমান
শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলিত ধারা দু’টি। যথা
:
একটি আধুনিক শিক্ষা, অপরটি ধর্মীয়
শিক্ষা। এ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তক
ছিলেন
ইংরেজ শিক্ষাবিদ লর্ড মেকলে ১৮৩৯
সালে তিনি বলেছিলেন, We must at
present do our best to form a
class, who may be interpriters
between us and millions. Whom
we govern a class of persons.
Indian in blood and colour, but English in taste, in
openion, in
moral and in intellect.
‘বর্তমানে আমাদের সর্বাধিক প্রচেষ্টা
হবে,
এমন একটি গোষ্ঠী সৃষ্টি করা, যারা
আমাদের
ও আমাদের লক্ষ লক্ষ প্রজার মধ্যে দূত
হিসাবে কাজ করতে পারে। এরা রক্তে ও
বর্ণে হবে ভারতীয়। কিন্তু মেযাজে,
মতামতে,
নৈতিকতা ও বুদ্ধিবৃত্তিতে হবে
ইংরেজ’ (বিভ্রান্তির বেড়াজালে
মুসলমান, পৃঃ ১৩) । উপরোল্লেখিত দু’টি
প্রস্তাবনার
দিকে তাকিয়ে বর্তমানে আমাদের
সমাজে যারা ধর্মকে সভ্যতার পথের
কাঁটা হিসেবে মনে করে এবং শিক্ষা
ব্যবস্থা
থেকে ধর্মকে বাদ দিতে চান তাদের এই
স্বপ্নের আড়ালে তারা কি চান তা
আমাদের নিকট এখন পুরোপুরি স্পষ্ট।
ইসলামে নৈতিক শিক্ষা : উপরের
আলোচনা থেকে একথা সুস্পষ্ট যে,
ধর্ম ছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থা বৈঠাবিহীন
নৌকার
মত। এক্ষণে এখন দেখা যেতে পারে কুরআন-
সুন্নাহ নৈতিক শিক্ষার ব্যাপারে কিরূপ
সমৃদ্ধশালী। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,,,ِ
‘শপথ
পৃথিবীর, যিনি তা বিস্তৃত করেছেন’। ‘শপথ
প্রাণের
এবং যিনি তা সুবিন্যস্ত করেছেন, অতঃপর
তাকে সৎকর্ম এবং অসৎ কর্মের জ্ঞান দান
করেছেন’। যে নিজেকে শুদ্ধ
করে সে সফলকাম হয় আর
যে নিজেকে কুলষিত করে সে ব্যর্থ মনোরথ
হয়’ (শামস ৯১/৬-১১)। এখানে আল্লাহ
তা‘আলা মানুষকে বিবেকবান
করে সৃষ্টি করেছেন এ কথা উল্লেখ করার
পাশাপাশি ভাল ও মন্দ উভয় প্রকারের
পরিণাম উল্লেখ করেছেন
এবং নৈতিকতা সম্পন্ন হওয়ার প্রতি
আহবান
করেছেন।
তিনি অন্যত্রে বলেন,ِ
‘রামাযান মাস হ’ল সেই মাস যাতে কুরআন
নাযিল করা হয়েছে, যা মানুষের
জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথের যাত্রীদের
জন্য সুস্পষ্ট পথনিদের্শ আর ন্যায়-অন্যায়ের
মাঝে পার্থক্য বিধানকারী’ (বাকারাহ
২/১৮৫)। অর্থাৎ মহান আল্লাহ আল-কুরআনের
মধ্যে ন্যায়-অন্যায়, আলো-
অন্ধকারকে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করেছেন
এবং তাকে পার্থক্যকারী মানদন্ডও দান
করেছেন। সুতরাং ইসলামের আলোকে
নৈতিক
দর্শন বলতে যা বোঝায় তা হ’ল আল-কুরআন
এবং ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক নৈতিকতা।
পবিত্র
কুরআন যে নৈতিকতার বিবরণ দিয়েছে তা
এত
ক্ষুদ্র পরিসরে বুঝানো সম্ভব নয়।
নিম্নে উল্লেখযোগ্য কিছু
আলোচনা করা হ’ল। (১) আল্লাহর ইবাদত
করতে হবে।
যেমন
আল্লাহর বলেন,,,
‘তোমার
পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে,
তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত
করনা’ (বনী ইসরাইল ১৭/২৩)। (২) পিতা-
মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের
মধ্যে কেউ বার্ধক্যে উপনীত
হলে তোমরা তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও
বলনা এবং তাদের ধমক
দিওনা বরং শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বলা’ (বনী
ইসরাঈল ১৭/২৩)। (৩) আত্মীয়-স্বজন,
অভাবগ্রস্থ ও
মুসাফিরদের তাদের প্রাপ্য দিয়ে দিবে।
(৪) কিছুতে অপব্যয় করা যাবে না। (৫) কৃপণ
হয়োনা এবং সম্পূর্ণ প্রসারিতও
করনা। তাহলে তুমি নিন্দিত এবং নিঃস্ব
হয়ে পড়বে। (৬) তোমরা সন্তানদেরকে
দারিদ্রে্যর
ভয়ে হত্যা করনা। আমি তাদের
এবং তোমাদের রিযিক প্রদান করে থাকি।
(৭) আল্লাহ যাকে হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন
যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা
করনা। (৮) ইয়াতীম বয়োঃপ্রাপ্ত না হওয়া
পর্যন্ত
সৎ উপায় ছাড়া তার সম্পত্তির
নিকটবর্তী হয়ো না। (৯) প্রতিশ্রুতি পালন
কর,
প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব
করা হবে। (১০) মেপে দিবার সময়
পূর্ণমাত্রায় দাও
এবং ওযন কর সঠিক দাড়ি পাল্লায়। (১১) যে
বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই তার
অনুসরণ করনা। (১২) যমীনে অহংকার করে
চলনা (বনী ইসরাঈল ১৭/২৪-২৮)। এছাড়াও
অসংখ্য আয়াতে মহান আল্লাহ
নৈতিকতার সম্পর্কে প্রয়োজনীয়
নির্দেশদান করেছেন। যেমন মায়েদার ৯০
নং আয়াতে মদ, জুয়া সুরাপান; আন‘আমের
১৫১, আ‘রাফের ৩৩ নং আয়াতে অশ্লীলতা,
ইউনুস ১৩ নং আয়াতে যুলুম, মায়িদার ৩৩
এবং ৩৮ নং আয়াতে অশান্তি সৃষ্টি,
চুরি নিষিদ্ধ করণ, বাকারাহ ১৮৮
নং আয়াতে সম্পদ আত্মসাতের
ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে,
নিসা ৩৬ নং আয়াতে মাতা-পিতা,
প্রতিবেশী মুরুববীদের সাথে সদাচরণের
নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং পাশাপাশি
তার
অমান্যকারীর জন্য ভয়াবহ শাস্তির বিধান
জারি করতঃ তা পূর্ণকারীর জন্য
জান্নাতের
বিবরণ দেওয়া হয়েছে। যা একজন
মানুষকে নীতি সম্পন্ন আদর্শবান
হয়ে চলতে উদ্বুদ্ধ করে। এছাড়াও আল্লাহ
তা‘আলা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর চরিত্রের
শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং এ
কথা নি©র্র্দ্বধায় বলা যায় যে, ইসলামই
একমাত্র শান্তিপূর্ণ সমাজের বার্তাবাহক।
উপসংহার : পাশ্চাত্য হতে আমদানিকৃত
বস্তাপঁচা সংস্কৃতির ভয়াবহতার
দিকে তাকিয়ে এবং তাদের সমাজের
ধর্মহীন
শিক্ষার ফলে অশান্তির যে ঝড়
উঠেছে তা দেখে আমাদের দেশেও ১০ নম্বর
সর্তকতা সংকেত জারি করা যরূরী। ঐশির
দ্বারা শুরু হওয়া ধর্মহীন শিক্ষার
প্রলয়ংকরী ঝড় থামানোর প্রক্রিয়া শুরু
করা সরকার সহ আমাদের প্রত্যেকের
একান্ত
দায়িত্ব ও কর্তব্য। নইলে সবেমাত্র শুরু
হওয়া অনৈতিকতার এই ভয়াবহ দাবানল
কোথায় গিয়ে শেষ হবে তা বলা বড় দায়।
আল্লাহ আমাদের ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত
হয়ে শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার তাওফীক
দান করুন। আমীন!
©somewhere in net ltd.