![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একথা অনস্বীকার্য যে, কুরআনের পর ইসলামের দ্বিতীয় উৎস হল রাসূল
(সা.)এর পবিত্র হাদীস।
মূলতঃ কিতাবুল্লাহ ও হাদীসে
রাসূল (সা.) দ্বীন ইসলামের মূল ভিত্তি। এ
দুয়ের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করা, অর্থাৎ
একথা বলা যে, ‘কুরআনই দ্বীনের ভিত্তি’-
এমন উক্তি ইসলামের সাথে চরম শত্রুতা বৈ
কিছু নয়। হাদীস ব্যতীত শুধু কুরআন দ্বারা
ইসলামের পূর্ণরূপ বিকশিত হতে পারে না।
উম্মতের ঐক্যমতে কুরআন অবশ্যই ইসলামের
ভিত্তি এবং পূর্ণাঙ্গ সংবিধান। কিন্তু তা
হল একটি সংক্ষিপ্ত কিতাব, যার ব্যাখ্যা-
বিশ্লেষনের প্রয়োজন হয়। আর রাসূল (সা.)
হলেন এর ব্যাখ্যাকার এবং তাঁর কর্মবহুল
জীবন হল এই কুরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ।
এ মর্মে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
“আমি এই কুরআন আপনার প্রতি অবতীর্ণ
করেছি, যাতে মানুষের প্রতি অবতীর্ণ
বিষয়গুলো আপনি সঠিকভাবে স্পষ্ট করে
ব্যাখ্যা করে দিতে পারেন”। কুরআনের
ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের প্রয়োজন না থাকলে
আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর উপর এই দায়িত্ব
অর্পন করতেন না। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও
মুজতাহিদ ইমাম আওযায়ী (রাহ.) বলেন,
“হাদীস কুরআনের প্রতি তত মুখাপেক্ষী নয়,
কুরআন যে পরিমানের মুখাপেক্ষী
হাদীসের প্রতি”। অর্থাৎ- কুরআনে মর্ম
অনুধাবনের জন্যে হাদীসের সাহায্য নেয়া
ব্যতীত গত্যন্তর নেই। যেমন- গৃহ নির্মাণের
জন্যে শুধু ম্যাপ সামনে থাকলে চলে না,
বরং পদে পদে ইঞ্জিনিয়ারের নির্দেশনা
আবশ্যক। তেমনি ইসলামের ইমারতও শুধু
কুরআন দ্বারা পূর্ণতা লাভ করতে পারে না।
বরং এতে রিসালাতের হিদায়াতও
আবশ্যকীয়। আর এতেই নিহিত রয়েছে
আল্লাহ তাআলার অসংখ্য হিকমত ও রহস্য।
হাদীস ও সুন্নাতের গুণে ইসলামী
ফিক্বাহশাস্ত্র তথা ইসলামী আইনশাস্ত্র
এমন বিশ্বজনিনতা লাভ করেছে, যার
উদাহরণ বিগত ও বর্তমান যুগের কোনো
শাস্ত্রেই পাওয়া যায় না।
তারপরও এ কথা মনে রাখতে হবে যে, রাসূল
(সা.)এর বাণী, কর্ম তথা তাঁর পবিত্র
জীবনাদর্শ ব্যতীত কারো পক্ষে সত্যিকার
মুসলমান হওয়া সম্ভব নয়। যেমন- তাওহীদের
পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল নামায।
কুরআনের বহু জায়গায় নামাযের নির্দেশ
প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু নামাযের নিয়ম-
কানুন কুরআনে পাওয়া যায় না। যেমন
নামাযে রয়েছে- ছানা, সূরা পাঠ, রুকু-
সিজদায় তাসবীহসহ অনেক নিয়ম-পদ্ধতি।
আর এসব জানার জন্যে রাসূল (সা.)এর
হাদীসের মুখাপেক্ষী হতে হয়। রাসূল (সা.)
নামায পড়ার পদ্ধতি সম্পর্কে বলেছেন,
“আমি যেভাবে নামায আদায় করেছি,
তোমরাও সেভাবে নামায আদায় করবে”।
সুতরাং এতে বুঝা গেল, চৌদ্দশত বছর পর্যন্ত
যে নামায চলে আসছে, তা রাসূল (সা.)এর
বাণী ও কর্মের আলোকেই রূপায়িত হয়েছে।
অনুরূপ যাকাতও ইসলামের রুকন তথা
ইসলামের অনেক বড় ইবাদত। আর্থ
সামাজিক সমস্যা সমাধানে যাকাতের
ভূমিকা অনস্বীকার্য। কুরআনে নামাযের
পাশাপাশি যাকাতের কথাও বলা হয়েছে
বার বার। কিন্তু যাকাতের নেসাবের কোন
বিবরণ কুরআনে নেই। ফক্বীহ তথা ইসলামী
আইন বিশেষজ্ঞ ইমামগণ সংশ্লিষ্ট
হাদীসের আলোকে যাকাতের পূর্ণাঙ্গ
নিয়ম-কানুন রচনা করে গেছেন। রাষ্ট্র
নীতি ও সমাজ নীতির কথাও এখানে
উল্লেখ্য। আল্লাহর খেলাফত প্রতিষ্ঠার
জন্যেই জমিনে মানুুষের আগমন। কিন্তু
খেলাফত প্রতিষ্ঠার পন্থা কী, আইনের
রূপরেখা কী হবে, প্রশাসনিক ক্ষমতার
সীমা-পরিসীমা কী এবং শাসক ও
শাসিতের পারস্পরিক সম্পর্ক হবে কোন
ধরণের; ইত্যকার আরো বহু প্রশ্ন আছে,
যেগুলোর মৌলিক নির্দেশনা পবিত্র
কুরআনে থাকলেও তাফসীলি কার্যক্রমের
উল্লেখ পাওয়া যায় না। হ্যাঁ, তাফসীল
পাওয়া যাবে হাদীস তথা রাসূল (সা.)এর
পবিত্র জীবনাদর্শে এবং এই জীবনাদর্শের
আলোকে গড়া খেলাফতে রাশেদার আমল ও
কার্যক্রম, যা আজকের সমস্যা সঙ্কুল মানব
সমাজের জন্যে অবশ্যই পথের দিশা।
মোটকথা, যে ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান
রূপে স্বীকৃত তা হাদীস ও সুন্নাতে রাসূল
(সা.) ব্যতীত রাষ্ট্র ও সমাজে এবং
ব্যক্তিগত ও প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিষ্ঠা
লাভ করতে পারে না।
কুরআন অনুধাবনে হাদীসের আবশ্যকতাঃ
যারা বলতে চান মুসলমানদের জন্যে কুরআনই
যথেষ্ট, হাদীসের প্রয়োজন নেই, তাদের
চিন্তা করা উচিৎ যে, কুরআন ব্যতীত
জ্ঞানের অন্য কোন বিশ্বস্ত উৎস যদি না
থাকে এবং হাদীসের প্রতি দৃষ্টিপাত না
করা হয়, তবে স্বয়ং কুরআনের বহু আয়াতের
মর্ম অস্পষ্ট থেকে যাবে। যেমন- সূরা
আনফালের এক আয়াতে বলা হয়েছে, “এবং
আল্লাহ যখন তোমাদের প্রতিশ্রুতি
দিচ্ছিলেন যে, দু’দলের কোন একটি পরাভূত
হবে”, এখানে যে দু’দলের উল্লেখ হল, তারা
কোন কোন দল এবং তাদের কী কী
প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, তা হাদীস
ব্যতীত আর কোনো সূত্রে জানা যাবে কি?
অথচ কুরআনে তো এর উল্লেখ নেই। তাহলে
অবশ্যই মানতে হবে যে, কুরআন ব্যতীত অন্য
কোন ওহীও রাসূল (সা.)এর প্রতি নাযিল হত।
সূরা তাওবার এক আয়াতে বলা হয়েছে,
আল্লাহ তোমাদেরকে অনেক রণাঙ্গনে
সাহায্য করেছেন। এখানে যে রণাঙ্গনের
উল্লেখ হল, তা কোনটি? হাদীস ব্যতীত
বুঝার কি সাধ্য আছে?
কুরআনের আলোকে হাদীসে রাসূল (সা.)ঃ
হাদীস অস্বীকার করে যারা কুরআনকেই
দ্বীন ইসলামের উৎস মনে করে, কুরআনে ওই
সমস্ত আয়াতকেও তাদের অস্বীকার করতে
হবে। যেখানে বলা হয়েছে, হাদীস ও
সুন্নাহ দ্বীনের উৎস এবং শরীয়তের স্বতন্ত্র
দলীল। যদি স্বীকার না করে, তবে তা হবে
কুরআন অস্বীকার করার নামান্তর। শ্রদ্ধেয়
ওস্তাদ আল্লামা ইউসুফ বানুরী (রাহ.)
বলেছিলেন, পবিত্র কুরআনে শতাধিক
আয়াত এমন আছে, যেগুলোর প্রত্যেকটি
হাদীসের শরয়ী দলীল হওয়ার প্রতি স্পষ্ট
ইঙ্গিত দেয়। উদাহরণ স্বরূপ নিম্নে শুধু
তিনটি আয়াতই উল্লেখ করছি। আল্লাহ
তাআলা বলেন- “আপনার প্রতিপালকের
শপথ! তারা ততক্ষণ মুমিন হবে না, যতক্ষণ
না পারস্পরিক বিবাদে তারা আপনাকে
মীমাংসাকারী হিসেবে মেনে নেয়।
অতঃপর আপনার মীমাংসায় তারা মনে
কোনো ধরণের সংকোচ না আনে এবং তা
পূর্ণরূপে মেনে নেয়”। এই আয়াতে স্পষ্ট
ঘোষণা আছে, রাসূল (সা.)এর আদেশের
আনুগত্য শুধু যে আবশ্যক তা নয়, বরং মুমিন
হওয়ারও পূর্ব শর্ত। সেই আদেশ, উপদেশ ও
কর্মনীতিকেই পরিভাষায় হাদীস বলা হয়।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন- “কোন মু’মিন
নারী পুরুষের অবকাশ নেই যে, আল্লাহ ও
তাঁর রাসূল (সা.) কোনো কাজের আদেশ
দিলে সে কাজে প্রশ্ন করবে। আর যে
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে,
সে স্পষ্ট গোমরাহীতে নিপতিত হল”। (সূরা
আহযাব-৩৬)। এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা
নিজের ও তাঁর রাসূলে আদেশ পালনকে
ঈমানের জন্যে অপরিহার্য করে দিয়েছেন।
সুতরাং রাসূল (সা.) এর হাদীস তথা বাণী ও
কর্ম যদি শরীয়তের অন্যতম দলীল না হত,
তবে উক্ত আয়াতে এতো কঠোর
সাবধানবাণী দেয়া হতো না। আল্লাহ
তাআলা আরো ইরশাদ করেন- “সেই আল্লাহ
নিরক্ষর লোকদের কাছে, তাদের থেকে
একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যেন তিনি
তাদের নিকট আল্লাহ্র আয়াতসমূহ
তিলাওয়াত করেন। এতে করে যাতে তিনি
তাদের পবিত্র করেন এবং কিতাব ও
প্রজ্ঞার শিক্ষা দান করেন। আর এই
লোকেরাই ইতিপূর্বে স্পষ্ট গোমরাহীতে
পতিত ছিল”। (সূরা জুমআ)।
এই আয়াতে রাসূল (সা.)এর চারটি
দায়িত্বের কথা উল্লেখ করা হয়- ১. কুরআন
তিলাওয়াত। ২. পরিশুদ্ধ করন। ৩. কিতাবের
শিক্ষা। ৪. প্রজ্ঞার শিক্ষা দান। এখানে
কিতাবের শিক্ষা বলতে কুরআনের তাফসীর
ও ব্যাখ্যার কথা বুঝানো হয়েছে। আর
প্রজ্ঞা অর্থ হাদীস ও সুন্নাহ। সুতরাং বুঝা
যায়, রাসূল (সা.)এর দায়িত্ব ডাক পিয়নের
মতো শুধু মানুষের কাছে আল্লাহর বাণী
পৌঁছানো নয়, বরং কুরআনের তা’লীম এবং
তাফসীর তথা ব্যাখ্যার দায়িত্বও তাঁর
প্রতি ন্যস্ত হয়েছে। যারা শুধু কুরআনকেই
শরীয়তের দলীল মনে করেন, কুরআন তাদের
তাগিদ দিচ্ছে যে, পাশাপাশি যেন হাদীস
ও সুন্নাতকেও শরীয়তের দলীল রূপে স্বীকার
করা হয়। (সূরা নাহল-৪৪, তালীকুস সাবীহ,
সূরা নিসা-৬৫, সূরা আহযাব-৩৬, সূরা জুমআ,
ইবনে কাসীর)।
হাদীসের প্রামাণ্যতায় কুরআনের আরো
কতিপয় উদ্ধৃতিঃ
এভাবে পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতে
রাসূল (সা.) এর অনুসরণ-অনুকরণের প্রতি
জোর তাকিদ দেওয়া হয়েছে।এমনকি
রাসূলের অনুসরণকে আল্লাহ তাআলার
অনুসরণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নিম্নে এ
সংক্রান্ত কিছু আয়াতের তরজমা
উপস্থাপিত হল- “আপনি বলে দিন, তোমরা
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত হও। যদি
তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে তবে জেনে রেখ,
আল্লাহ তাআলা তো কাফিরদের
ভালোবাসেন না”। (সূরা আলে-ইমরান-৩২
আয়াত)।
“হে মুমিনগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর,
আনুগত্য কর রাসূলের ও তোমাদের মুজতাহিদ
ওলামায়ে কিরাম ও শাসকবর্গের”। (সূরা
নিসা-৫৯)। “সুতরাং তোমরা আল্লহকে ভয়
কর এবং পরস্পর সম্পর্ক উন্নয়ন কর, আর
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, যদি
তোমরা মু’মিন হয়ে থাক”। (সূরা
আনফাল-১)। “হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ
ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং জেনে শুনে
পৃষ্ঠ প্রদর্শন করো না”। (সূরা আনফাল-২০)।
“আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর,
পরস্পর বিবাদ করো না। এতে তোমরা দুর্বল
হয়ে যাবে”। (সূরা আনফাল-৪৬)। “আপনি
বলে দিন, আল্লাহর আনুগত্য কর এবং
রাসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা
পীঠ টান দাও তাহলে জেনে রেখ, রাসূলের
উপর অর্পিত দায়িত্বের তিনিই দায়ী। এবং
তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য
তোমরাই দায়ী। আর যদি তোমরা তাঁর
আনুগত্য কর, তাহলে হিদায়াত প্রাপ্ত হবে”।
(সূরা নূর-৫৪)। “হে ঈমানদারগণ! তোমরা
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথা মান্য কর, আর
নিজেদের আমল বিনষ্ট করো না”। (সূরা
মুহাম্মদ-৩৩)। “তোমরা সালাত কায়েম কর,
যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তার
রাসূলের অনুকরণ কর”। (সূরা মুজাদালাহ-১৩)।
“তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং আনুগত্য
কর রাসূলের। আর যদি পৃষ্ঠ প্রদর্শন কর,
তাহলে শুনে রেখ, আমার রাসূলের দায়িত্ব
কেবল স্পষ্টভাবে প্রচার করা”। (সূরা
তাগাবুন-১২)। “তিনি মনগড়া কিছুই বলেন
না। তাঁর নিকট প্রেরিত ওহীর আলোকেই
কথা বলেন”। (সূরা নজম-৩)। “যে রাসূল
(সা.)এর আনুগত্য করল, সে প্রকৃতপক্ষে
আল্লাহরই আনগত্য করল”। (সূরা নিসা-৮০)।
“আমি নবী-রাসূলদের এ উদ্দেশ্যেই প্রেরণ
করেছি যে, আল্লাহ তাআলার নির্দেশ,
উম্মত তাদের আনুগত্য করবে”। (সূরা নিসা
-৬৪)। “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের
আনুগত্য করবে, সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন
করবে”। (সূরা আহযাব-৭১)।
এভাবে পবিত্র কুরআনের প্রায় ৪৫টি
জায়গায় রাসূল (সা.)এর আনুগত্য ও তাঁর
অবাধ্য হওয়া থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে
সতর্ক করা হয়েছে। উপরোক্ত আয়াত সমূহের
আলোকে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে,
হাদীসে রাসূলের প্রমাণ্যতায় সংশয় করা
কুরআনের প্রতি সংশয় করারই নামান্তর।
সুতরাং প্রমাণিত হল, কুরআন যেমন অবশ্য
পালনীয়, হাদীসে রাসূলও অবশ্য পালনীয়।
©somewhere in net ltd.