![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সুশাসন কল্যাণ বয়ে আনে
লেখাঃড. মোহাম্মদ আতীকুর রহমান
ইসলাম এমন একটি জীবনদর্শন যে, এর সব
কর্মকাণ্ডে ন্যায্যতা ও ন্যায়পরায়ণতা
প্রাধান্য পায়। ইসলামী আইন ও বিচারের
ক্ষেত্রেও তা সমভাবে প্রযোজ্য। মানবতা
ও মনুষ্যত্ব ভূলুণ্ঠিত হয়, এমন কোনো আইন
ইসলামে নেই।
সমাজে সুবিচার বা
ন্যায্যতা ও ন্যায়পরায়ণতা না থাকলে
বিভিন্ন ধরনের অনাচার, দুরাচার,
বাড়াবাড়ি, অসন্তোষ, দুর্নীতি ও আইন
অমান্যের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই
সমাজের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠায়
ইসলাম ন্যায্যতা ও ন্যায়পরায়ণতাকে
সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
সবার প্রতি সুবিচার : ইসলামী
সমাজব্যবস্থায় আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে সব
নাগরিক সমান। নাগরিকের মর্যাদা ও
অধিকার এবং অপরাধের শাস্তি দেয়ার
দিক দিয়ে তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য
না করাই ইসলামের আদর্শ ও রীতি।
ইসলামী আইনব্যবস্থায় শিতি-অশিতি,
নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র সবাই সমান। সবার
সাথে এক ও অভিন্ন আচরণ করতে হবে এবং
যার যতটুকু প্রাপ্য, তা তাকে দিতে হবে।
এসব বিষয়ে জনগণের মধ্যে কোনো
পার্থক্যকে সহ্য করা হয় না। সবার মাঝে এ
সমতা ও সাম্য অতুলনীয় ও দৃষ্টান্তহীন।
ইসলামের অন্যতম মৌল বিশ্বাস হচ্ছে সব
নাগরিক সমান। মানুষের বংশপরম্পরা
বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত হলেও তাদের মধ্যে
কোনো দিক দিয়ে পার্থক্য বা তারতম্য ল
করা যায় না। মানুষের মধ্যে মানবিক
চেতনা, চাহিদা ও অনুভূতি ইত্যাদি যত দিন
একই রকম থাকবে, তত দিন তারা সবাই এক
আল্লাহর বান্দা, তাদের মধ্যে কোনো
প্রকার পার্থক্য ও বিভাজন গ্রহণযোগ্য নয়।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে
মানুষে মানুষে পার্থক্য অস্বাভাবিক নয়;
কিন্তু এর ওপর ভিত্তি করে মানবিক
মর্যাদার মধ্যে পার্থক্য করা মোটেও
সমীচীন নয়।
আইনের দৃষ্টিকোণ থেকেও কাউকে
অগ্রাধিকার দেয়া ইসলামে সমর্থনযোগ্য
নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে সব নাগরিক আইনের
চোখে সমান। ধনী-দরিদ্র বিবেচনায়
আইনের দৃষ্টিতে কোনো পার্থক্য নেই। কেউ
অপরাধ করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে
অর্থ-বিত্ত ও মতার জোরে, আবার একই
অপরাধে কেউ শাস্তি ভোগ করবে- এ
বিষয়টি মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়।
সবার প্রতি সদাচারের নির্দেশ দিয়ে
মহান আল্লাহ বলেন.‘তোমরা সুবিচার করো,
তা তাকওয়ার অধিক নিকটতর’ (সূরা আল-
মায়িদা, ৫ : ৮)।
পপাতিত্ব করে প্রবৃত্তির অনুগামী হতে
নিষেধ করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা
ন্যায়বিচার করতে কুপ্রবৃত্তির অনুগামী
হয়ো না’ (সূরা আন-নিছা, ৪ : ১৩৫)।
মহানবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রকৃত
সত্যকে জানতে পেরেও ফয়সালা করার
ব্যাপারে অবিচার ও জুলুম করেছে, সে
জাহান্নামে যাবে’ (আবু দাউদ, ইবনে
মাজাহ)।
আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে সুবিচার :
সামাজিক জীব হিসেবে মানবজীবনের
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অর্থ। ইসলামী
জীবনদর্শনে ধর্ম, কৃষ্টি, সভ্যতা ও
অর্থনীতি একই সূত্রে গাঁথা। ইসলাম
মানুষের জন্য শুধু একটি উন্নত ও আদর্শ
সমাজব্যবস্থায়ই উপস্থাপিত করেনি,
মানুষের অর্থনৈতিক জীবনকে সুষ্ঠুরূপে গঠন
করার জন্য এক নির্ভুল ও উজ্জ্বল
অর্থব্যবস্থাও পেশ করেছে।
আর্থসামাজিক উন্নয়ন না হলে মানুষ
ঠিকমতো মহান আল্লাহর ইবাদাতও করতে
পারে না। তাই সব নবী-রাসূলই মানুষের
মর্যাদা, নৈতিক মান এবং আর্থসামাজিক
উন্নয়নের ওপর বিশেষভাবে জোর
দিয়েছিলেন।
সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে
হলে পারস্পরিক আদান-প্রদান ও লেনদেন
হতে হয় স্বচ্ছ। অন্যায়ভাবে কারো অর্থ-
সম্পদ ভোগদখল করা সংগত নয়। প্রতারণার
আশ্রয়ও নেয়া যাবে না। নিজ অনুকূলে রায়
আনার জন্য বিচারকার্যকে প্রভাবিত করা
যাবে না।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা
নিজেদের মধ্যে একে অন্যের ধনসম্পদ
অন্যায়ভাবে ভোগদখল কোরো না এবং
জ্ঞাতসারে মানুষের ধনসম্পত্তির কিছু
অংশ জেনেবুঝে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ
করার উদ্দেশ্যে বিচারকের সামনে উৎকোচ
পেশ কোরো না (সূরা আল-বাকারা, ২ :
১৮৮)।
ইসলাম সমাজে অর্থের প্রবাহ স্বাভাবিক
রাখতে চায়, যাতে সমাজে ধনী-দরিদ্রের
ব্যবধান হ্রাস পেয়ে একটি আদর্শ সমাজ
গড়ে ওঠে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অর্থসম্পদ
যেন কেবল তোমাদের মধ্যকার ধনীদের
মধ্যেই আবর্তিত না হয়’ (সূরা আল-হাশর,
৫৯ : ৭)
সমাজের দরিদ্র লোকও যেন ভালোভাবে
জীবন ধারণ করতে পারে সে দিকে ল রেখে
মহানবী সা: বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে
আল্লাহ মুসলমান ধনী লোকেদের ধনসম্পদ
থেকে এমন পরিমাণ দিয়ে দেয়া ফরজ
করেছেন, যা গরিবদের প্রয়োজন পূরণে
যথেষ্ট হতে পারে’ (তাবারানির আসসগির
ও আল আওসাত)।
দলমতনির্বিশেষে ন্যায়বিচার : নাগরিকের
রাজনৈতিক স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়। দলমতনির্বিশেষে নাগরিক হিসেবে
প্রত্যেকে দেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে
অংশগ্রহণ, যোগ্যতা ও সুযোগ মোতাবেক
রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানে কোনো পদে
দায়িত্ব পালনের অধিকার লাভ করবে।
যৌক্তিক আচরণে এটি তার মৌলিক
অধিকার। এ থেকে তাকে বঞ্চিত করা যায়
না। ন্যায়ের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রীয় মতা, পদ বা
দায়িত্ব বিশেষ শ্রেণী, বংশ বা স্থানের
লোকের জন্য সংরণ করে রাখা বৈধ নয়।
শ্রেণী, বংশ বা দলবিশেষের জন্য বিশেষ
সুযোগ-সুবিধা সংরণ করা ইসলাম সমর্থন
করে না।
ইসলাম দলমতনির্বিশেষে সবার মধ্য থেকে
যোগ্য ব্যক্তিকে নেতা নির্বাচিত করার
নির্দেশ দেয়। দলীয় কোনো লোক অযোগ্য
হলে তার বিপরীতে যোগ্য ব্যক্তিই
নেতৃত্বলাভের উপযোগী বলে বিবেচিত হয়।
মহানবী সা:-এর বাস্তব কার্যধারায় এর
প্রতিফলন দেখা যায়। মক্কা বিজয়ের পর
মহানবী সা: অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ সাহাবি
উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও হজরত ইতাব ইবনে
উসাইদ রা:-কে মক্কার শাসক নিযুক্ত করেন।
এ নিযুক্তির কারণ ছিল যুবক হওয়া সত্ত্বেও
ইতাব রা: ছিলেন এ পদের জন্য যোগ্যতর
ব্যক্তি’ (ইসলামী আইন ও আইন বিজ্ঞান)।
ইসলাম আইনের চোখে মানুষকে মানুষ
হিসেবে দেখতে চায়। এখানে সাদা-
কালো, আরব-অনারব, মুসলিম-অমুসলিম,
ধনী-গরিব, সরকারি-বেসরকারি বিবেচ্য
বিষয় নয়। মহানবী সা: তাঁর বিদায় হজের
ভাষণে বলেছেন, ‘জেনো রাখো! অনারবের
ওপর আরবের কিংবা আরবের ওপর অনারবের,
কালো মানুষের ওপর লাল মানুষের কিংবা
লাল মানুষের ওপর কালো মানুষের কোনো
শ্রেষ্ঠত্ব নেই। যার ভেতর আল্লাহভীতি
আছে সে-ই শ্রেষ্ঠ’ (মাতবা’আ মা’আরিফ)।
ইসলাম দলমতনির্বিশেষে সবার ওপর মানুষ
আর মানবতাকে প্রাধান্য দেয়। হাদিস
শরিফে বর্ণিত আছে, একবার এক কুরাইশ
বংশীয় সম্ভ্রান্ত মহিলা চুরির অপরাধে
ধরা পড়ল। মহানবী সা: তার শাস্তির
বিধান করলেন। আভিজাত্য ও বংশমর্যাদার
কথা উল্লেখ করে সেই মহিলার শাস্তি
লাঘব করার জন্য তাঁর কাছে সুপারিশ করা
হলে তিনি তা বলিষ্ঠভাবে প্রত্যাখ্যান
করেন।
এভাবেই ইসলাম সবাইকে সমান চোখে
দেখে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভুমিকা
পালন করেছে।
দুর্নীতি প্রতিরোধে ইসলাম : সমাজে
সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে সর্বাগ্রে
প্রয়োজন সব পর্যায় থেকে দুর্নীতি
প্রতিরোধ করা। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ
প্রতিষ্ঠায় সুশাসন অন্যতম শর্ত।
ইসলামের দৃষ্টিতে নীতিবিরুদ্ধ যেকোনো
কাজই দুর্নীতি এবং তা মারাত্মক অপরাধ।
দুর্নীতি প্রতিরোধ প্রসঙ্গে ইসলামের
সাথে সংশ্লিষ্ট সব বিষয় বিশেষ গুরুত্বের
সাথে বিবেচনা করে থাকে। কোনো
ব্যক্তি হয়তো এ চেতনায় দুর্নীতি করে যে,
তার অপরাধের কোনো সাক্ষী নেই, অথবা
তার বিরুদ্ধে কেউ স্যা প্রদানে সাহস করবে
না, অথবা কোনো ব্যক্তি বা সম্পর্কের
মাধ্যমে ও প্রভাবে সে দুর্নীতির অপরাধ
থেকে অব্যাহতি লাভে সমর্থ হবে। আর যদি
শাস্তি হয়েই যায়, তবে তার কৃত অপরাধ বা
সে যে পরিমাণ দুর্নীতি করেছে, তার
চেয়ে কম শাস্তি হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত
সমাজে এ চিন্তা ফলপ্রসূ হলেও ইসলামের
দৃষ্টিতে সে অপরাধী হিসেবে বিবেচিত
হবে। প্রকৃতপে যে ব্যক্তি মহান আল্লাহকে
ভয় করে এবং আখেরাতের জবাবদিহিতার
প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে, সে কখনো
দুর্নীতি করতে পারে না। সে বিশ্বাস করে,
ঘোর অন্ধকার বা কোনো নিভৃত জায়গা বা
প্রকোষ্ঠে কিংবা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে
দুর্নীতি করে দুনিয়ার দুর্নীতি দমন
কর্তৃপক্ষ, পুলিশ বা লোকচুকে ফাঁকি দিতে
পারলেও মহান আল্লাহর নিযুক্ত বাহিনীকে
সে কখনো ফাঁকি দিতে পারবে না। সুতরাং
দুনিয়ার শাস্তি থেকে রেহাই পেলেও
আখেরাতের শাস্তি তার জন্য অবধারিত।
মনে রাখতে হবে, দুনিয়ার জীবনের প্রতিটি
মুহূর্ত ও প্রতিটি কাজের রেকর্ড রাখা
হচ্ছে। এ বোধ ও ঈমানি চেতনাই মানুষকে
দুর্নীতি থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারে।
তার পরও যদি কেউ দুর্নীতি করে, তখন
ইসলাম দুর্নীতির প্রকৃতি এবং এর সাথে
সংশ্লিষ্ট সব বিষয় বিবেচনা করে শাস্তির
ব্যবস্থা করে। এ জন্য ইসলাম প্রথমত
ব্যক্তির মনমানসিকতায় এ প্রত্যয় সৃষ্টি করে
যে, যত সংগোপনেই দুর্নীতি করা হোক না
কেন মহান আল্লাহ তা দেখছেন। এ সম্পর্কে
আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি ধারণা করে যে,
আমি তাদের গোপন বিষয় ও মন্ত্রণার খবর
রাখি না? অবশ্যই রাখি। আমার
ফেরেশতাগণ তো তাদের কাছে থেকে সব
কিছু লিপিবদ্ধ করে’ (সূরা আজ-জুখরুফ, ৪৩ :
৮০)।
উপসংহার : ইসলাম সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও
দুর্নীতি প্রতিরোধে কোনো ধরনের বৈষম্য
করেনি। ন্যায্যতা ও ন্যায়পরায়ণতার নীতি
অবলম্বনের মাধ্যমে মানুষকে নিরাপত্তার
নিশ্চয়তা দিয়েছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ
নির্বিশেষে সবাইকে যথার্থ মানবিক মূল্য
১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪০
মামুন তালুকদার বলেছেন: আপনাকে ও অনেক অনেক ধন্যবাদ।।।
ভাল থাকবে সবসময় এটাই কামনা
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৮
প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ