নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মামুন তালুকদার

মামুন তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

খোদাভীরু নেতা অপচয় করেন না

১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৫

খোদাভীরু নেতা অপচয় করেন না

লেখাঃমাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

ইসলাম মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ কর্তৃক
নির্ধারিত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এ
বিশ্বজাহানে এমন কোনো বিষয় নেই যা
ইসলামে নেই বা আল্লাহর মনোনীত
বিধানে নেই। নেতা ও নেতৃত্বের মতো
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিও আল্লাহর নির্দেশিত
জীবনব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত। পরিবার, সমাজ ও
রাষ্ট্রে নেতা এবং নেতৃত্ব থাকবে,
অনুসারী থাকবে ও নীতিনির্ধারক থাকবে-
এ তো ইসলামি বিধানেরই অংশ। আল
কুরআনে ঘোষিত হয়েছে, ‘আর আমরা
তাদেরকে (ইসহাক ও ইয়াকুব) ইমাম
বানাইয়া দিলাম’ (সূরা আম্বিয়া-৭৩)।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে নেতা কে? সবাই তো
নেতা হতে পারেন না। কেউ হন, কেউ হন
না। নামাজের জামাতে সবাই ইমাম বা
নেতা হন না। যিনি যোগ্য তাকে নামাজ
পরিচালনার নেতৃত্ব দেয়া হয়। কাজেই
যিনি নেতা হন বা নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন,
তাকে বহু গুণের অধিকারী হতে হয়।
জন্মসূত্রে কেউ নেতা হতে পারেন না।
যারা নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা রাখেন তারাই
প্রকৃত নেতা। যিনি ইসলামে নির্দেশিত
গুণাবলি অর্জন করবেন, তিনিই নেতৃত্ব
দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। নেতৃত্ব
যাকে দেয়া হবে, তিনি নিতে চাইবেন না।
কারণ, নেতৃত্ব একটি বিশাল দায়িত্ব।
একজন মুসলিম নেতার প্রথম গুণই হলো তিনি
আল্লাহ ভীরু ও রাসূলভক্ত পূর্ণাঙ্গ মুসলমান
হবেন। এ নেতা আল্লাহর নির্দেশ ও প্রিয়
রাসূল সা:-এর জীবনাদর্শ মেনে চলার জন্য
প্রতিনিয়ত উদগ্রীব ও উৎকণ্ঠিত থাকেন।
তিনি রাসূল সা:-এর আদর্শের আলোকে
আলোকিত থাকতে চান, তিনি ইসলামের
জ্যোতি ছড়ান অহরহ। তার জীবনের সব
কাজের লক্ষ্য হলো মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি
অর্জন। আল কুরআনে আল্লাহ পাক যা করতে
বলেছেন, নেতা তাই করবেন। রাসূল সা:
যেভাবে করতে বলেছেন, সেভাবে করবেন।
ইসলাম অনুমোদিত নেতার কাজে-কর্মে
সঙ্গতি থাকবে। যা বলবেন তা করবেন এবং
যা করবেন তা বলবেন। ইসলামি নেতা হবেন
স্বচ্ছ বা ট্রান্সপারেন্ট। তিনি যা ইচ্ছে
তা-ই করতে পারবেন না। তাকে শুধু ভালো
কাজ করতে হবে। কারণ, ভালো কাজই তার
ঈমানের প্রতিনিধিত্ব করে। আল কুরআনে
ঈমান ও ভালো কাজ সম্পর্কে ষাটবার
উল্লেখ করা হয়েছে। ঈমান থাকলেও মন্দ
কাজ করার দরুন তিনি নেতা হওয়া বা
নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা হারাবেন।
ইয়াজিদেরও আল্লাহর প্রতি ঈমান ছিল,
কিন্তু ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ড
চালিয়ে হজরত ইমাম হোসেন রা:কে শহীদ
করে সে নরপশুতে পরিণত হয়ে যায়।
ঈমানের দৃঢ়তা অর্জনের স্বার্থে এবং
কাজকর্মে ঈমানের প্রতিফলন ঘটানোর জন্য
মুসলমানদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
মূর্খকে দিয়ে নেতৃত্ব দেয়া যায় না। রাসূল
সা:-এর প্রতি আল্লাহর প্রথম অহি হলো,
‘ইক্বরা’ অর্থ পড়। প্রিয় রাসূল সা: নিরক্ষর
ছিলেন কিন্তু মূর্খ ছিলেন না। তিনি
ছিলেন জ্ঞানী ও জ্ঞানের উৎস, যা
আল্লাহ পাক তাঁকে দান করেন। যে বিষয়ে
তিনি অবহিত ছিলেন না, জ্ঞান রাখতেন
না, সে বিষয়ে অহির মাধ্যমে বা বিভিন্ন
দৃশ্য ও অদৃশ্যের মাধ্যমে আল্লাহ পাক তাঁর
সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে তাঁকে
মহাজ্ঞানী করে তুলেছেন। তাই তো তিনি
বিশ্বজাহানের সব সৃষ্টির নেতা, ইহকালের
চিরঞ্জীব নেতা এবং পরকালের নেতা।
তাঁর নেতৃত্ব ইহ ও পরকালে ব্যাপৃত। তিনি
আমাদের জীবনের প্রতিটি ব্যাপারে
সর্বক্ষণের নেতা।
তাই নেতৃত্ব দেয়ার জন্য নেতাকে জ্ঞান
অর্জন করতে হবে। সময় অতিক্রান্তের সাথে
নতুন জ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্ভব হয়। আজকের
নেতাদের কম্পিউটার জানতে হয়। বিভিন্ন
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে জ্ঞান
রাখতে হয়। নেতাকে দোলনা থেকে কবর
পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন করতে হয়। এ জ্ঞান শুধু
ব্যবহৃত হবে জনগণের স্বার্থে, উন্নতির জন্য।
নেতা জ্ঞানপাপী হতে পারবেন না, দেশ ও
বিদেশে সন্ত্রাস করতে পারবেন না।
ইসলামে জ্ঞানপাপী নেতার অস্তিত্ব
নেই। কারণ, ইসলামি নেতা হন অতি উত্তম
চরিত্রের অধিকারী। এ চরিত্রের অধিকারী
ছিলেন প্রিয় রাসূল সা:, যিনি আল্লাহ পাক
‘নৈতিকতার অতি উচ্চ মর্যাদায়
অভিষিক্ত’ (সূরা আল কালাম-৪) বলে
ঘোষণা করেছিলেন। জনগণকে স্বীয়
কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সুফল পাইয়ে দেয়ার
জন্য নেতার চরিত্র নৈতিকতায় ভরপুর
থাকতে হবে। নেতার নৈতিক স্খলন জাতির
জন্য দুর্ভোগ বয়ে আনে।
নেতার কাজ হবে সঙ্গতিপূর্ণ। ক্ষমতার
বাইরে থাকলে এক কথা, ক্ষমতায় এলে অন্য
কথা, নেতার চরিত্র এরূপ হতে পারে না।
নেতা কখনো প্রতারক হতে পারেন না।
কথা দিয়ে কথা না রাখা নেতার কাজ নয়।
নেতাকে সত্য কথা বলতে হবে এবং
সত্যাশ্রয়ী হতে হবে। আল্লাহর ঘোষণা
হলো, ‘মুনাফিকরা চরমভাবে
মিথ্যাবাদী’ (সূরা মুনাফিকুন, আয়াত-১)।
মুনাফিকদের অন্তরে এক কথা, মুখে অন্য
কথা থাকে। নেতার চরিত্রে এ বদাভ্যাস
বা দ্বিচরিত্র থাকবে না।
মানুষকে হিংস্র বা হায়েনার মতো করে
তোলে এমন ভাষাও নেতা প্রয়োগ করতে
পারবেন না। ‘অমুকের চামড়া তুলে নেব
আমরা, একটা দুটা অমুক ধরো, সকাল-বিকাল
নাস্তা করো, ওখানে আগুন দাও, দু-একটা
লাশ এনে দাও, শুধু আমরাই ভালো লোক,
ওরা সব ওদের বাচ্চা, ওদের শেষ করে দাও’Ñ
এ জাতীয় কোনো বক্তব্যই নেতার মুখ থেকে
নিঃসৃত হতে পারে না। ঘৃণা, হিংসা,
বিদ্বেষ, হানাহানি ও রক্তারক্তিতে
উৎসাহ জোগায় এমন বক্তব্য নেতার মুখ
থেকে আসবে না। কারণ, তিনি উত্তম কথা
বলেন এবং জনগণকে এ উত্তম কথা দিয়েই
নেতৃত্ব দেবেন।
ওয়াদা তথা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা নেতার
একটি প্রধান কাজ। নেতা যা বলবে ও যা
করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন, তা করবেন।
আল্লাহর নির্দেশ হলো, ‘হে ঈমানদারগণ!
তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূরণ করো’ (সূরা
মায়েদা-১)। নির্বাচনের আগে নেতা যে
ওয়াদা করেন বা নির্বাচনী ইশতেহারে যা
করবেন বলে ওয়াদা করেন, নির্বাচনে
জিতে নেতাকে সে অঙ্গীকার পূরণ করতে
হবে। শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যা অসম্ভব
বা যা করতে পারবেন না তার প্রতিশ্রুতি
দেয়া নেতার কাজ নয়। এজন্য নেতা শুধু
ক্ষমতায় আসার জন্য আকাশ-কুসুম ওয়াদা
দিয়ে জনগণকে প্রতারিত করতে পারেন না।
নেতা যা করতে পারবেন শুধু তাই ওয়াদা
করবেন। আল্লাহ পাক বলেন, ‘প্রকৃত পুণ্যবান
তারাই যারা ওয়াদা করলে তা পূরণ
করে’ (সূরা বাকারা-১৭৭)। সন্ত্রাস দমনের
ওয়াদা করে ক্ষমতায় এসে যে নেতা
সন্ত্রাস দমন করেন না বরং সন্ত্রাস লালন
করেন, সে নেতা পুণ্যবান নেতা নন। নেতার
কাজ হবে সব ধর্ম-বর্ণ-দল নির্বিশেষে
সবার সাথে উত্তম ব্যবহার করা। আল্লাহর
নির্দেশ হলো, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত
করবে ও কোনো কিছুকে তার শরিক করবে
না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন,
ইয়াতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী,
দূরপ্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং
তোমাদের অন্তর্ভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি
উত্তম ব্যবহার করবে’ (সূরা নিসা-৩৬)।
নেতাকে ধৈর্যশীল এবং দায়িত্বশীল হতে
হবে। মহানবী সা: বলেছেন, ‘তোমরা
প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল এবং
তোমাদের প্রত্যেককেই তোমাদের
দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা
হবে’ (সহিহ বোখারি)।
প্রিয় নবী সা:-এর উপদেশ হলো, নেতৃত্ব
কখনো চেয়ে নিও না। নেতৃত্ব চেয়ে নিলে
তুমি একাকী হয়ে যাবে (আল্লাহর সাহায্য
তোমার ওপর থাকবে না)। আর যদি চাওয়া
ব্যতিরেকে তোমার ওপর নেতৃত্ব চলে আসে,
তাহলে তোমার দায়িত্ব পালনের
ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য থাকবে (সহিহ
মুসলিম)।
নেতা কখনো নেতৃত্বের লোভে দলকে খণ্ড-
বিখণ্ড করবেন না, নিজের অনুসারীকে অন্য
প্রার্থীর ওপর লেলিয়ে দেবেন না, নেতৃত্ব
না পাওয়ার কারণে দলের একটি অংশকে
নিয়ে আরেক দল গঠন করবেন না। বস্তুত
মুমিনের দল হচ্ছে একটাই- এ মুমিনরাই
শলাপরামর্শ করে যোগ্য ব্যক্তিকে
নেতৃত্বে বসাবেন। যারা নেতা হতে
পারলেন না, তারা ইসলামের আলোকে
আরো ঈমানদার, আরো যোগ্য হওয়ার চেষ্টা
করবেন।
খোদাভীরু নেতার একটি প্রধান গুণ এই যে, এ
ধরনের নেতা নেতৃত্ব নিতে চান না, এরা
স্বৈরাচারী হন না। অর্থাৎ শলাপরামর্শের
ভিত্তিতে কাজ করাই খোদাভীরু নেতার
চরিত্র। আল্লাহর ঘোষণা হলো, ‘আর যারা
নিজেদের খোদার হুকুম মান্য করে,
সামগ্রিক ব্যাপার নিজেদের পারস্পরিক
পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পন্ন করে’ (সূরা
আশ সূরা-৩৮)।
একজন খোদাভীরু নেতা যখন ক্ষমাশীল হন,
অতীতের দুঃখ-কষ্ট তাকে পীড়া দেয় না।
তিনি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হন। জাতিকে এগিয়ে
নেয়ার জন্য তিনি দূরদৃষ্টি উৎক্ষেপণ করে
উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ করেন। এ ধরনের
নেতা হন সহানুভূতিসহকারে শ্রবণশীল।
এরা শোনেন বেশি, বলেন কম। অযোগ্য
নেতা বলেন বেশি, শোনেন কম। খোদাভীরু
নেতার সময়জ্ঞান অতি উঁচুস্তরের। নেতা
যদি সময়ের সদ্ব্যবহার না করেন, সময়ের
প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হন, সমগ্র জাতি
সময়ের মূল্য দেবে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে
স্কুলের শিশুদের প্রখর রোদে দাঁড় করিয়ে
রেখে অভ্যর্থনা নেয়া নেতার কাজ নয়,
রাস্তা বন্ধ করে মানুষের পথ আটকে তাদের
সময় নষ্ট করা, রিলিফের লোভে সারা দিন
মানুষকে বসিয়ে রাখা, অনাবশ্যকীয় আচার-
অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে, ফিতা কাটা সময়ের
সদ্ব্যবহারকারী নেতার পক্ষে সম্ভব নয়।
নেতা সময়ানুবর্তী না হলে দেশ আগাবে
না, সময় নষ্ট করা জাতীয় কৃষ্টি হিসেবে
গড়ে উঠবে।
খোদাভীরু নেতা কখনো অপচয় করেন না।
আল্লাহর নির্দেশ হলো, ‘খাও ও পান করো
এবং অপব্যয় করো না। তিনি
অপব্যয়কারীদের পছন্দ করেন না’ (সূরা আল
আরাফ-৩১)। আল্লাহর এ নির্দেশ মেনে
চললে খোদাভীরু নেতার পক্ষে বেহুদা বা
অপচয়মূলক প্রকল্প অনুমোদন দেয়া সম্ভব হয়
না। ইসলামের প্রকৃত অনুসারী নেতা সব সময়
আল কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে জাতিকে
দিকনির্দেশনা দেবেন।
প্রিয় রাসূল সা: তাঁর ঐতিহাসিক বিদায়
হজের ভাষণে বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে
একজন ক্রীতদাসকেও যদি নেতা বানিয়ে
দেয়া হয়, সে যদি আল্লাহর হুকুম ও রাসূলের
সুন্নাহ অনুযায়ী সবকিছু পরিচালনা করে,
তাহলে তাকে মান্য করবে।’
জনগণ যেন মদ, ব্যভিচার, জুয়া প্রভৃতি জঘন্য
কাজে লিপ্ত না হতে পারে সেজন্য
ইসলামি নেতাকে সার্বক্ষণিক দৃষ্টি
রাখতে হবে। আল কুরআনে আল্লাহর ঘোষণা
হলো, ‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া,
প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারকসমূহ
শয়তানের অপবিত্র কাজ বৈ আর কিছু
নয়’ (সূরা আল মায়েদা-৯০)।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.