![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেক দিন পরে.... দুজন মুখোমুখি।
গাছের নিচে দাঁডিয়ে, গাছের ব্যাজ থেকে
ঝরে পড়ছে কথা। কেমন আছ, কথাময়ী?
প্রশ্নটা গাছ হেলানো। কেউ না জানুক
..... তো জানে আমাকে।।
তুমুল বাতাসে ডাল লতাপাতাসহ হেলে
যাই, ওটাই আমার ইমোশনাল বয়স। কিন্তু
ভেঙে পড়ি নাম আর সেটাই আমার
ইন্টেলেকচুয়াল বয়স। আমি ঝরে পড়া কথার
হলদে পাতাটা নিয়ে উত্তর করি—যেমন
চেয়েছ।
কেমন ছিলে? তার দ্বিতীয় প্রশ্ন।
সবুজ রঙের একটা পাতা ছিঁড়ে বলি,
যেমন রেখেছিলে।
কোথায় আছ?
তার তৃতীয় প্রশ্নটা আমাকে মেরে
ফেলে প্রতি রাতে। আমি লাল বর্ণের
একটা পাতা হাওয়ায় উড়িয়ে বলি, যেখানে
তুমি নেই।
ময়ী, চিরকালই তোমার ধারে কাটা
স্বভাব। একদম বদলাওনি আমার
উইন্ডসোয়েপ্ট।
আমি আমার কৃষ্ণচূড়া রঙের চোখের দৃষ্টি
তার চোখের বাগানে সরাসরি রেখে
বলি, হুম। আমার বদলে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী
হয়ে ওঠেনি; যেমন হয়ে উঠেছিল আমার
কাছ থেকে তোমার সরে যাওয়া।
তার সাদা সেলোয়ার গলার কাছের
ওড়না । গরম লাগছে ওর।
আগুনে পড়লেই কেবল
মানুষের মরণ হয় এই কথা যেমন সত্য, বরফে
পড়লেও হতে পারে, এটাও মিথ্যে নয়। আমি
মরছি ময়ী তোমার মুখের কথার শীতল
দহনে।
হঠাৎ করে দহনের শিস দিয়ে গেল একটা চির
বিরহী পাখি।
আজ এত বাতাস এই গাছের আঁচলে।
আমি কোমর সমান চুলগুলো একঝলকে মুচড়ে
ফেলি। তুলে রাখি খোঁপা নামের
কারাগারে। ওসব ওর এত পছন্দ ছিল!
খোঁপাতে ঘ্যাঁচ করে কাঠি মতন একটা ফলা
আটকে রাখতে রাখতে বলি, হাহ! শীতল
দহন। তাই কি? লাগছে গায়ে, খুব?ওই
শোনো, প্রেমের আগুনে পড়লে কেউ পুড়ে
নিঃশেষ হয়। কেউ ঝলসে ওঠে। কেউ মরে
যায়। একদম মরে যায়। কেউ বেঁচে থেকে
জানিয়ে দিতে জানে, সম্পর্ক মরে,
ভালোবাসা মরে না। সম্পর্কে বিচ্ছেদ হয়।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার ভেতরের যে
ভালোবাসাটুক অবশিষ্ট থাকে, তা
ব্যবচ্ছেদ করবার সাধ্য তো কারও নেই।
কত দিন পরে আমরা দুজন আবারও একসঙ্গে।
গাছের পাতারা টুপটাপ করে ঝরছে
অবিরাম। পাতা ঝরার দৃশ্যের সঙ্গে স্মৃতির
নিবিড় একটা সাদৃশ্য আছে। ঝরে পড়া
পাতা দেখলেই জীবন থেকে ঝরে পড়া
মানুষের কথা মনে পড়ে। আনমনে অতীত
স্মৃতিবিধুরতার কোল হতে উছলে পড়ে কিছু
কথা।
আমি নাকের ডগা থেকে শিশিরের মতো
টলমল করা ঘাম মুছতে মুছতে বলি,
ওই মনে আছে তোমার? আমার ঝলসে
ওঠা স্বভাবই একদিন আকৃষ্ট করেছিল
তোমাকে। বখাটেকে থাপ্পড় দেওয়া একটা
বিকেল তখন ঘরে ফিরছিল, রাত্রিকে
সময়ের মালিকানা দিয়ে। সেটাই ছিলাম
আমি।। কীভাবে
বদলায় নিজেকে বলো? মরণকে আনতে শুধু
শান বসানো ছুরি আর উত্তপ্ত বাক্য লাগবে
কেন, ওই? একদিন তোমার ডিপ ফ্রিজ
খুলে দেখ। দেখবে, বরফগুলো তেরছা করে
ধরলে সেটা দিয়েও মানুষ হত্যা করা যায়।
নরম মাটি যেমন পুড়ে কঠিন ইট হয়। তোমার
প্রেমের বিরহ বিষে নীল হয়ে গেছি।
তুমি চেয়েছিলে ভালো থাকি
আমি। আমাকে প্রাচুর্যের মধ্যে দেখতে
হিমাগারে রেখেছিলে আমাদের
ভালোবাসা। বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে
না, দূরেও ঠেলিয়া দেয়, শরৎ বাবুর এই মহান
উক্তিকেই আলিঙ্গন করেছিলে। কেন? বোকা তুমি জানলেই না বর্ষার
ঢলে যে জল উথলে পড়ে তা তৃষ্ণার জল না
হয়ে কাঁদনও হতে পারে।
তুমি নদীর মতো ভরাট কণ্ঠ। সে জানে
কখন আমার গান শুনতে হয়। ছলছল ঢেউয়ে
বেজে ওঠে ওর স্বর। সে গেয়ে ওঠে,
আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের
আশায়, আমি তার লাগি পথ চেয়ে আছি
পথে যে জন ভাসায়...।
আমি কেমন সম্মোহনের সমুদ্রে ডুবে
যাচ্ছি।
তাকে বলি, গানটা এখনো আমার প্রিয়।
আলো-আঁধারির সন্ধিক্ষণে এই গান শুনে কী
ভীষণ কাঁদি। আমার জন্য তোমার কল্পিত
সুখে থাকার সেই সোনার পালঙ্কে বসে।
জানো , অনিদ্রা রোগে আক্রান্ত
আমি। ইনসমনিয়া! প্রতিরাতে ঘুমের সব
চেষ্টায় বিফল হয়ে পত্রিকায় চোখ রাখি।
কত কী পড়ি। এইতো সেদিন পড়লাম,
ব্রাজিলের এলিস্যানি বিশ্বের সবচেয়ে
লম্বা কিশোরী মেয়েটি প্রেম করছে ৫ ফুট ৪
ইঞ্চি উচ্চতার ফ্র্যান্সিনাল্ডো নামের
ছেলেটার সঙ্গে। ওরা একে অপরকে চুমু
দিতে কি ঝামেলায় না পড়বে ভাব একবার!
কোন উচ্চতায় মাপবে তুমি তাঁদের? বাহ্যিক
নাকি হৃদয়ের?
আমাকে কথিত সমাজের সুখের কাছে
বিসর্জন দিয়ে কোন উচ্চতায় যেতে
চেয়েছিলে তুমি? , আমার না ঘুম হয়
না। কেবল মনে হয় অকিঞ্চন খাটেই ঘুমটা
বুঝি গাঢ় হয়। শান্তির হয়। তোমার সেই
খাটটা কি বিক্রি করে ফেলেছ?
তার সাদা শার্ট ভিজে টুপটুপ। যেন
বৃষ্টি উত্তাল। অথচ এই শহরে কত দিন বৃষ্টি
হয় না! সে উত্তর করে, হুম। খুব সস্তায়।
এত গাড় ওর গলার স্বর। বৃষ্টি নেই কোথাও।
অথচ বুক ভেঙে যাচ্ছে তুমুল বজ্রপাতে।।।
©somewhere in net ltd.