![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অজুহাত সন্ধানী ভঙ্গুর কোনো মনোভাবের নাম 'মনোবল' নয়, বিপদে ঘুরে দাড়ানোর নাম 'মনোবল'; হোক সে জীবনে বা ক্রিকেটের মাঠে।
ইস্কুলে পরতাম, বয়েস কত ছিল মনে নেই। শুধু মনে আছে, সুমন নামে একটা ছেলে বল করছে, ব্যাট করছে তখনকার ডাকসাইটে ব্যাটসম্যান লিটন। একসপ্তাহ আগে যিনি সেঞ্চুরি করে ঢাকা আবাহনীকে জিতিয়েছেন। আমাদের বিরুধ্হে খেলছেন ময়মনসিংহের স্থানীয় লিগে। আমরা খেলছি ছোট একটা দলে। টপাটপ ৩ জন খেলোয়ার বিদায় নিলেন। লিটন ভাইয়ের ৮ রান, দলীয় রান ১৪/১৫ হবে। অনায়াসে বেধকর পেটানোর জন্য বোলার মহলে লিটন ভাইয়ের বিশেষ সুনাম। আর আমাদের নবম শ্রেনীর সুমন, বেচারা আগে থেকেই ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে আমাদের কাছে। শীতের সকাল, আমাদের ময়মনসিংহের পিচ ‘ওভালের পিচ’ হয়ে যায়। সুমনের বল ভারী বাতাসে out-swing করলো লিটন ভাইয়ের প্রত্যাশার চেয়ে একটু বেশি। সুমনের বলে কট-বিহায়ন্ডের জোরালো আবেদন নাকচ করে দিল আম্পায়ার। লিটন মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলেন ২/৩ সেকেন্ড, তারপর হাটা ধরলেন পাভ্যালীয়নের দিকে। আমরা অবাক হয়ে দাড়িয়ে রইলাম, শিখলাম ক্রিকেটের তথা খেলাধুলার প্রথম শিক্ষা। সততা? না; নিজের অপারকতা মেনে নেয়া। কারণ, 'ভুল' জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষক। হাজার এমন শিক্ষক থাকলেও শিখিনি আমরা কিছুই। সেই লিটন ভাই আবাহনী ছাড়িয়ে জাতীয় দলের হযেও খেলেছেন বহুবার। ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠে খেলা থাকলে এমনকি রিকশাওয়ালারা কাজ ফেলে দাড়িয়ে থাকতেন; 'অহন যাইতাম না, লিটন বাই যেই লাগাত আসে খেলা দেইখ্যা লই'।
রিক্সাওয়ালা থেকে কার্জনির্বাহির জনপ্রিয়তা আর ভালবাসায় একটু একটু করে বাংলাদেশ ক্রিকেট আজ ব্রিটিশ সাম্রাজ্য কাপিয়ে দিয়ে এলো। প্রতিভার বিচারে আমাদের ছেলেরা আজ প্রথম সারির। কিন্তু আমাদের মনোভাব আজও সহস্র প্রশ্নবিধ্হ। মন্ত্রীপাড়ার দুর্নীতি থেকে হয়ত মুক্তি পেয়েছে ক্রিকেট, কিন্তু আমাদের হিংসাত্মক মনোভাবের দাবানলে পুড়ছে ভবিষ্যত ক্রিকেটারের প্রজন্ম।
ভারতীয় ক্রিকেটের সাথে আমাদের পার্থক্য হলো attitude. ভারতে ক্রিকেটকে ধর্ম মানে, অস্ট্রেলিয়াতে ক্রিকেট মানে বিজ্ঞান, ওয়েস্ট-ইন্ডিজে স্টাইল, ইংল্যান্ডে লাইফস্টাইল আর আমরা মানি হুজুগ। পরিপূর্ণতা পাবার আগেই হই-চই করে নষ্ট করে ফেলি সব। জয়ী হবার স্বপ্নে বিভোর আর পরাজিত হলেই মারদাঙ্গা !! নিধিরাম সর্দারের মত সামাজিক ইন্টারনেট সাইট গুলোতে যা চলছে তাতে নতুন প্রজন্মের সামনে মাথা নত হয়ে যাচ্ছে। অন্যের মা-বোন সম্পর্কিত গালিগালাজ আমার মা-বোনদের ছোট করে মাত্র। ক্রিকেটের বল ভারতীয় মা-বোনদের ইজ্জত লুটে নিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে ভারতের বলিউড পারি দিয়ে ঢুকেছে লোক-সভাতে। তবুও সন্তুষ্ট নই আমরা, নোংরামি আর নোংরা কথা এখানে লাইফ-স্টাইল হয়ে গেছে। অন্যের মা নিয়ে দেয়া গালি যদি কোনদিন আমার মা আমার মুখ থেকে শোনে, লজ্জায় দুজন দুজনের চোখে চোখ রাখবো কি করে?
ফিরে আসি ক্রিকেটে; ১৭ ওভারে ৫ উইকেট পতন হলেও ১৭৫ করে খেলা জিতিয়েছেন একজন ক্রিকেটার। ফলো-অন থেকে ৪ দিনের মাথায় বা পঞ্চম দিনের লাঞ্চের আগেই খেলা জিতিয়েছেন বহু জুটি। এরকম বহু উদাহরণ আছে গুগল'এ আর কিছু আমার স্মৃতিতে। ভারত বাংলাদেশ খেলাতে এরকম একটা প্রতিভার বিস্ফোরণ আশা করেছিলাম। বুক বেধে ছিলাম; একটা জুটি, আধা ঘন্টার পরিপক্ক ব্যাটিং উপহার দিবে। আম্পায়ার আর ভ্যাম্পায়ারদের জোরালো জবাব দেবে। পার্থক্য রয়ে গেল ১০৯ রানের। রোহিত শর্মার নো বল নাকি মন বল ভেঙ্গে দিয়েছে! কিন্তু আমার আফসোস রয়ে গেল; একজন বাঙালি ছিল না একটা স্কোর অন্তত ২৫০ তে নিয়ে যাবার মত? যেমন কপিল দেব করেছিল, ১৭৫, ৫ উইকেট ঘরে ফেরার পরেও।
এই সব কথা বলার জন্য আমার ১৯৮৮ সালের বান্ধবী আমাকে ধমকি দিল আজ, লিখলো ‘i am sorry i can''t be friends with you anymore ... indian fanatic supporters cannot stay as my friends’. আমি হতভম্ব, কি বলবো? বললাম 'i love you too'. তিনি দয়ার সাগর, আমাকে ব্লক করেনি ফেইসবুকে। ধন্যবাদ।
ভারতীয় ক্রিকেটের আমি ভক্ত, যেমন আমি ভক্ত স্প্যানিশ ফুটবলের। কিন্তু, 'বাংলাদেশী' আমার পরিচয়। শচিনের চেয়ে আমি ময়মনসিংহের রিয়াদের অনেক বড় ভক্ত। আমি লাল-সবুজের ওই পতাকা কারো চেয়ে কম ভালবাসিনা।কারো ক্রিকেটকে দাবিয়ে নয়, সবাইকে ছাড়িয়ে একদিন সেরা হব আমরাই।
আর আমি, ক্ষমাপ্রার্থী। আমি ক্ষমাপ্রার্থী ক্রিকেটের কাছে, আমার পরবর্তী প্রজন্মের কাছে।
©somewhere in net ltd.