নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুখোশ

রাজীব আহসান

Photographer

রাজীব আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্যাংকক\'এ একদিন,

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৪০

বহুদিন আগে একদিন, ব্যাংকক'এ।

রাত আড়াইটা তিনটা হবে। এক বন্ধুর সাথে সমুদ্র সৈকতের পাড় ধরে একটা রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। হালোজেন লাইটে শহর আর জোছনায় আলোকিত আকাশ। গরম আবহাওয়ায় মৃদু ঠান্ডা আর আদ্র বাতাস। কাঁধে একটা ক্যামেরা, কিন্তু সেই ছবি তোলার ক্ষমতা আমার নেই। হাতে এক কৌটা যবসুরা, তার মৃদু নেশা আর মৃদু হাওয়া; ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল ব্যাংককের সমুদ্র তীর ধরে বার্মা হয়ে কক্স'বাজার, আমার বাংলাদেশ। আমার মেয়ে দুটি কি করছে? বিভোরে ঘুমাচ্ছে? নাকি জেগে জেগে উঠছে বার বার। ব্যাংকক আসার সময় ছোট মেয়েটা অসুস্থ ছিল, থেকে থেকে মনে হচ্ছিল। ভাবছিলাম, আহারে মেয়ে'দুটি যদি সাথে থাকতো। (ছেলেটা তখনও জন্মেনি) যদিও মেয়ে বাচ্চা নিয়ে বেড়াতে আসার জন্য ব্যাংকক কোনো আদর্শ কোনো দেশ নয়।

সমুদ্রের গর্জন বলবো না, বলবো গুন গুন, ভাঙ্গতে পারছিলনা মৌনতা। মৌনতা ভাঙ্গলো এক দম্পতি, অবোধ্য এক ভাষায় কি তীব্র আবেগের বিনিময় করছিল জানিনা কিন্তু তাদের বাচ্চাটি ভয়ে কাঁদছিল চিত্কার করে। মৌনতার সাথে শেষ হলো আমার শান্তি। অনেক দ্বিধাবোধ, আর একান্ত অনিচ্ছায় তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপারটিতে অনধিকার হস্তক্ষেপ করেই ফেললাম। বললাম 'দেখ ভাই, তোর বাচ্চাটা অনেক ভয় পাচ্ছে তোদের এই চিত্কার চেচামেচি দেখে, বাদ দে, ঘরে ফিরে যা।’ আর আমার বন্ধুটি বলেই চলেছে 'বাদ দে রাজিব, বাদ দে রাজিব, ওরা বাংলা বোঝেনা'। আমি বুঝিনা থাই ভাষা, তাহলে বলব কি? মহিলাটিও থামছেনা। ত্রিমুখী এই ভুলবোঝাবুঝির এক পর্যায়ে লোকটি গলা টিপে ধরল মহিলার, বাচ্চাটির কান্না জোছনার আকাশকে চুম্বন করলো। মহিলাটিকে বাচাতে লোকটির হাত মুচড়ে ধরলাম। আর প্রতিদানে মহিলা আমাকে যা দিলেন তার নাম 'চপেটাঘাত’, আমার মাথার ভূকম্পন যন্ত্রের পরিমাপে তা জাপানের যে কোনো রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছিল। খোশখেয়াল আর যবসুরা’র সামগ্রিক মত্ততা কেটে গেলো এক চপেটাঘাতে। জীবনে শেষ কবে কোন নারী এভাবে থাপ্পর দিয়েছিল? আম্মা থাপ্পর দিয়ে নিজেই হাতে ব্যথা পেতো। তাই বলতাম 'কতবার না বলেছি গায়ে হাত তুলবা না! ওই, কেও একটা ডাল ঘুটনি দে, শান্তিতে দুইটা বাড়ি দিক।' আম্মা বলত 'তোর মত শয়তান একটা ছেলে আল্লাহ তোর ঘরেও দেক।'
আর এক নারী একবার কিঞ্চিত জোড়েই থাপ্পর মেরেছিল; থাক সে কথা।

অনেকটা সিনেমার মত পুলিশ এলো। মহিলার জবানবন্দী নিলো, আমারটা শুনলো। তারপর বলল 'তুমি যা বলছো, মহিলা বলছে তার পুরোপুরি উল্টো কাহিনী। তার স্বামী তাকে মারেনি, তুমি মেরেছ তার স্বামীকে'। আমি আমার সাফাই গাইলাম 'আমি কেন ওর স্বামীকে মারবো বলো? আমি শুধুমাত্র মহিলাটিকে সাহায্য করেছিও, তাও বাচ্চাটির জন্য'। পুলিশ অফিসার ওদের সাথে কথা বলল, তারপর আমার কাছে ফিরে এলো, বলল 'ওদেরকে আমি বুঝিয়েছি, ওরা স্থানীয় জেলে। সারারাত মদ খায়, মাছ কেনাবেচা করে। প্রতিদিন ঝগড়া মারামারি করে, আবার বছরে দুইবার বাচ্চা এবরশন করে। ওদের ভালবাসা তুমি বুঝবেনা মিস্টার ফটোগ্রাফার। দু-একটা বাচ্চা যদিও বা পৃথিবীর আলো দেখে, কিন্তু ওগুলো ওভাবেই বড় হয়। যাইহোক, আমি ওদের বুঝিয়েছি, ওরা তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেনা। তুমিও কর না। তোমার ভিসা আছে আর দুদিন, নিজের দেশে ফিরে যাও'। বাচ্চাটা ততক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে।

ট্যাক্সি করে হোটেলে ফিরে আসছি, ভোর বাজে ৫'টা। বাংলাদেশে ফজরের আজান হচ্ছে; আস সালাতু খায়রুম মিনান নাওম, নিদ্রা হতে নামাজ উত্তম। আর আমি নেশার ঝোকে এক বিদেশী বাচ্চার কান্না সহ্য করতে না পেরে, এক বিদেশীর সাথে শারীরিক শক্তির অপপ্রয়োগ করে, এক মহিলার থাপ্পর খেয়ে, পুলিশের সাথে বক বক বক বক করে, হোটেলে ফিরছি? আর ভাবছি, কিসের থেকে আমার কি উত্তম ছিল আজ?

দু-তিন ট্রাফিক সিগনাল পরে এসে সেই পুলিশের গাড়ি, পুলিশ আমার পাশে এসে দাড়ালো, বলল 'একটা থাপ্পর হজম করতে হয়েছে বলে কোনদিন কোনো বাচ্চার কান্না সহ্য করোনা'। আস সালাতু খায়রুম মিনান নাওম।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৪৪

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: একটা থাপ্পর হজম করতে হয়েছে বলে কোনদিন কোনো বাচ্চার কান্না সহ্য করোনা - মানবতা। দেশে হোক কিংবা বিদেশে।

২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৫৭

রাজীব আহসান বলেছেন: মানবতার কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা নেই ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.