![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নোটিশ বোর্ডের লেখাটা পড়ে আচমকা বুকের ভিতরটা ধরাশ করে উঠলো। ভৃত্য? চাকর? বোঝার চেষ্টা করলাম computer প্রযুক্তিবিদ্যার অপব্যবহার করত কেও কি অন্য কারো বদনাম করার চেষ্টা করছে? শিক্ষিত মানুষের সমাজে এই শব্দগুলো এখনো বিদ্যমান আছে? কালো টাকায় গাড়ি কেনে ঠিকই কিন্তু চালানোর মত সময়, জ্ঞান বা পারিপার্শিকতা থাকেনা বলে অল্প টাকায় গরিব দেশের গরিব এক মানুষকে নিয়োগ দেন। কাজের বাইরে আরো ১০ রকম কাজ তাকে দিয়ে করিয়ে নিয়েও ডাকেন 'ড্রাইভার সাহেব' বলে। যদি কোনো শেয়ার ব্যবসায়ীর গাড়ি চালক হন তিনি, তাহলে প্রতিউত্তরে কি বলবেন 'জ্বি দালাল সাহেব'। আমি'ও তো কাজ করেছি বিজ্ঞাপনী সংস্থায়, আমি একজন 'বিজ্ঞাপন দালাল'।
দিনের পর দিন সরকারকে ঠকিয়ে, সিস্টেম হয়ে গেছে খারাপ। অল্প পয়সার ড্রাইভার, আর ড্রাইভার ছাড়া চলেও না। (ড্রাইভার + গাড়ির পাহারাদার) বৈদেশিক ঋণ আর স্বদেশী দোষ; সব সরকারের।
ধন্যবাদ যে আপনারা 'ক্রীতদাস' শব্দটি ব্যবহার করেন নাই।
বিলেতে যখন প্রথম এসেছিলাম, কাজ করতাম এক ভোজনশালায়। মানুষের খাবারের অর্ডার নিতাম, খাবার প্রস্তুত হলে তা পরিবেশন করতাম। একদিন ফোন করলাম এক বন্ধুকে।
: কি রে, কি খবর? কোথায়?
: আর বলিস না, খেতে এসেছি এক জায়গায়। শালা বেয়ারা'টা এখনো আসেনা খাবার অর্ডার নিতে।
নিজের জন্য নয়, খারাপ লেগেছিল সারাদিন সেই মানুষগুলোর জন্য। আর আমার বন্ধুর জন্য।
সেদিনই রাতে একটা পরিবার এলো ভজনশালায় খেতে । ভদ্রলোক, ভদ্রমহিলা, কিশোর দুটি ছেলে, একটি ১২/১৪ বছর বয়েসী মেয়ে। মেয়েটির সাথে বাবার একটু বেশি আহ্লাদ, যেরকম সবসময় হয় আর কি? অনেক খাবার উচ্ছিষ্ট রেখে খাওয়া শেষ করলো । নোংরা থালাবাটি উঠিয়ে নেবার সময় জিজ্ঞাসা করলাম 'খাবার গুলো কি করব'? (এটা সাধারণ ভদ্রতা, ইংরেজরা সাধারণত উত্তরে বলে 'আমি দঃখিত খাবার নষ্ট করার জন্য, আমাকে একটা থলেতে দিয়ে দাও, কাল সকালে নাস্তায় খাবো' ভদ্রলোক কিছু বলার আগেই মেয়েটি বলল 'তুমি সব খেয়ে নাও', বলে সশব্দে হেসে উঠলো। পাশের টেবিল থেকে হালকা একটা আওয়াজ শুনলাম 'ঊঊউ'।
টেবিল পরিষ্কার করে বিল দিতে গেলাম। মেয়েটি মৃদুস্বরে বলল 'দুঃখিত'।
বাবাটি বলল 'আরো জোরে বলো, আমি শুনতে পাইনি'।
আমি বললাম 'না না, ঠিক আছে'।
বাবাটি বলল 'না, ঠিক নেই, আবার বলো এবং এইবার জোরে বলো যেন এখনে উপস্থিত সবাই বুঝতে পারে যে আমি বর্ণবাদ সমর্থন করিনা এবং মানুষে মানুষে ভেদাভেদ মানিনা। উপনিবেশবাদের সময়ও শেষ বলে আমি বিশ্বাস করি এবং এবার তুমি সেটা দাড়িয়ে বলবে।'
মনে পরে গেল আমার কৈশোরে বাসায় মেহমান এলে আব্বা বলত 'তুমি পরে খেও, অনেকজন গাড়ি চালক আছেন আমাদের পরে খাবে তারা, বাসার কেও তাদের সাথে না খেলে এটা খারাপ দেখায়।' বিপ্লবী সালাম জানাই এই দুই বাবাকে।
এবার আসি ভৃত্য প্রসঙ্গে;
বাসায় যিনি রান্না করেন, জরিনা'বু। হাতে তুলে সে ভাত খাওয়াত কত ছোট বেলা থেকে মনে নেই? অনেকদিন পর দেখা হয়েছিল, আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদছিল আর বলছিল; আমার বাবু এত বড় হইলো কবে? ভাবছিলাম ইউরোপ থেকে একটা ব্যতিক্রমী উপহার পাঠাবো তার জন্য। আমাদের দু-ভাই বোনকে দেখাশোনা করার জন্য অল্প অল্প করে অনেক বেতন নিয়েছে, অনেকদিন। তারপরও আমাকে একটু ঋণী করে রেখে চলে গেল পরজীবনে। মা, বাবা, দাদা, দাদী, নানা, নানী, চাচা, মামা ... প্রেম, ভালবাসা আর আত্মীয়তার এই কালপঞ্জিতে জরিনা'বুর নাম কি অনেক পিছনে লিখব আজ।
তাকে এই জনমে যদি 'ভৃত্য' বা 'বুয়া' বলে ডাকি, পরজন্মে কি বলে ডাকবো? ঋণ তো অনেক!
একটু একটু করে অনেক সভ্য হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকানরা। কৃষ্ণবর্ণ এক নেলসন মান্দেলাকে রাষ্ট্রপতি বানিয়ে বিদায় দিলো। আর আমরা, আজও, মোহনদাস'কে ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দেই, প্রতিদিন।
অপ্রাসঙ্গীক; আসামের ভূপেন হাজারিকাও চিত্কার করতে করতে মরে গেলেন 'বল কি তোমার ক্ষতি, দুর্বল মানুষ যদি, জীবনের অথৈ নদী, পাড় হয় তোমাকে ধরে'।
২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:০২
রাজীব আহসান বলেছেন: ভাই আনোয়ারুল কালাম, মানুষ'কে শ্রদ্ধা করা আর মানুষের কাছ থেকে শ্রদ্ধা পাওয়া; এর চেয়ে আনন্দের কি আছে ভাই? আপনার আশীর্বাদের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনার'ও সার্বঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৩
আনোয়ারুল কালাম বলেছেন: অসম্ভব সুন্দর লিখা যা মণ ছুঁয়ে যাওয়ার মতো, বোঝা যায় লেখকের বিশাল একটা ভালোবাসার মতো মন আছে, আমি তার দির্ঘায়ু কামনা করি।
লেখককে মরুভূমির দেশ থেকে উষ্ম শুভেচ্ছা।
from Jeddah, The Bride of Red Sea