![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গির্জার ভিতর মসজিদে ইবাদতের কাহিনী।
__________________________
২৪ শে আগস্ট, ২০১৩: সকাল আনুমানিক ১১'টা।
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে পার্কিং'এর দিকে যাচ্ছি। সাথে আমার চাচা আর ফুপু। অপরদিক থেকে মানুষ আসছে, একজন, দুজন, তিনজন, চারজন। সবাই নিজেরদের মধ্যে আলাপচারিতা চালাচ্ছে, আমরাও। একটা পাঁচজনের পরিবার পাশ দিয়ে হেটে যেতে যেতে ভদ্রমহিলা আমাকে হাত ধরে থামালেন, জড়িয়ে ধরলেন, আসতে করে একটা চুমু দিলেন। শুরুতে একটু হকচকিয়ে গিয়েও সামলে নিলাম।
বললাম 'ঠিক আছ তুমি আজ?'
নিরপেক্ষ ইশারায় মাথা ঝাকিয়ে চলে গেল সে, এবং তারা। তার পরিবার আর আমার পরিজনদের চোখে মুখে কৌতুহল রয়েই গেল। অজানা রয়ে গেলেন আজও তিনি, তার নাম, তার কন্ঠস্বর আর তার বেদনা।
২২ শে আগস্ট, ২০১৩: সকাল ৯'টা।
আদিয়ান শুয়ে আছে ট্রলিতে, ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কথা বলতে শেখেনি আমার নবজাতক। কি বলতে চাইছে কে জানে? 'বাবা, আমাকে একা যেতে দিওনা'? সহকারী চিকিৎসক বললেন 'তুমি চাইলে অপারেশন থিয়েটারে থাকতে পারো, দেখতে চাও অপারেশন?' অত সাহস আমার ৩ মিলিয়ন জিনের কোনো কোড'এ কোথাও ছিল না, মাথা নেড়ে 'না' করলাম। ছেলেটা তাকিয়েই ছিল। নার্স জানালো হাসপাতালের কোনায় কোথাও নাকি একটা গির্জা আছে। চললাম ঈশ্বরের সন্ধানে।
হাসপাতালের করিডোর ধরে সাইনবোর্ড অনুসরণ করতে করতে ১০০ মিটার হেটে চলা শত ঘন্টার পথ পেরিয়ে খুজেও পেলাম ঈশ্বরের গির্জাটি। ঢুকলাম। ভিতরে শুনশান নিরবতা। বেহেস্তি ঝর্না বা জাহান্নামের আগুনের গর্জন, কোনটারই শব্দ এখানে আসেনা। ভোররাত্রি নয়,নয় গোধুলি। তবুও ঈশ্বরের সাথে মিথ্যার অঙ্গীকার করতে বসবো, একটা কোনা চাই। গির্জার কোনায় পর্দা দিয়ে ঘেরা ২০ ফুট বাই ২০ ফুট একটা কোনাও পেয়ে গেলাম।
পর্দা সরাতেই চক্ষু চরক গাছ! কে করেছে এই নাফরমানির কাজ? কার অনুমতি নিয়েছে? লা হাউলা ওলা য়ালা কু-আত ........ । কাফিরের গির্জার ভিতরে, পর্দার অন্তরালে জায়নামাজ? একটা না, দুইটা না, ১৪'টা জায়নামাজ? আর একটা পবিত্র কুরআন শরিফ! তোমাকে পেতে, তোমার পুত্র যিশুর গির্জার ভিতর দিয়ে আসতে হলো? তাওরাত, যাবুর আর বাইবেলের ভিতর দিয়ে যেমন মানব সভ্যতায় এসেছে তোমার বাণী, ঠিক কি তেমনি? কিছু কাফির মানুষ আজ সভ্য হয়েছে ঈশ্বর, তোমার ভাষা ওরা বোঝে। কি বাণী আমাকে পাঠালে? হারাম আর হালাল দিয়ে বিভক্ত করলাম তোমার দুনিয়া।
আমি বসলাম, প্রার্থনায়। আজ অন্তত আমার প্রার্থনা গ্রহণ কর, আমার ছেলের জীবন ফিরিয়ে দাও। আমি ভালো হয়ে যাবো। ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি, পারছিনা। অত পাপ কি ধুয়ে যাবে একদিনে?
৩ ঘন্টা, মসজিদের বাইরে গির্জার নিরবতা একটু একটু করে ভাঙ্গতে লাগলো, মৃদু স্বরে কাদছে কেও। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদলো কতক্ষণ, তারপর শুরু হলো ডুকরে ডুকরে কান্না। অনেকক্ষণ হলো, কান্না থামে না। আমার চোখের পানি অনেক্ষণ শুকিয়ে গেলেও বুক ভারী করে দিচ্ছিল তার কান্নার আওয়াজ। ঈশ্বরকে অপেক্ষায় রেখে মসজিদ থেকে গির্জায় প্রবেশ করলাম। কান্নার আওয়াজ অনুসরণ করতে করতে পৌছে গেলাম গির্জার অন্য কোনায়। মা মরিয়মের কোলে শিশু যিশু, প্রতিমার সামনে বেঞ্চে বসে সেখানে বসে কাদছে এক মহিলা, একা। পাশে গিয়ে দাড়ালাম। কিছুক্ষণ আমার হাত ধরে কাদলেন। মা মরিয়মের অনুসারী বিধর্মী এক মা’র স্পর্শে আমার মুসলমানি অজু ভেঙ্গে গেছে কিনা জানিনা, তবে ঈশ্বর জানেন আমার নিয়ত ভাঙ্গেনি একটুও।
ইশারায় বললাম 'পানি চাও একটু?'
মহিলাকে পানি দিয়ে আমি ফিরে এলাম জায়নামাজে।
আমার নানাভাই তার জীবদ্দশায় দু'দুটো সন্তান হারিয়েছিলেন ঈশ্বরের কাছে। একটি শৈশবে, আরেকটি তার বোকা সন্তান। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শেষ বর্ষে এসে পূর্ব পাকিস্তানের নাম বদলের ধোকা খেলায় প্রাণ দিয়ে দিল, অকারণ। রঙিন বাহারি পোশাক আর চাক্চিক্কের মায়া ছেড়ে নানাভাই বাকি জীবন বির বির করে পরতেন 'রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া ..... ..... '। তার দুই ছেলের জীবনকাল আমার ছেলেকে আজ ফিরিয়ে দাও, আমাকে তুমি বিশ্বাস করো বা নাই করো।
অদিয়ান, সবার আশির্বাদে এখন সুস্থ। থেমে যাওয়া জীবন আমার আবার গতি পেয়েছে। থেমে যাওয়া জীবনে গতি দিয়েছে মসজিদ আর গির্জার প্রণেতা। প্রার্থনা শোনেন তিনি, আশির্বাদ দিতে এক টুকরো ঈশ্বর আসে মাঝে মাঝে এই পৃথিবীতে।
_________________________________________________________________________
২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:৪৪
রাজীব আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:৫০
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: তিনি শোনেন সর্বদাই!
আমরাই যে ডাকতে পারিনা আকুল হয়ে....
যখন সে আকুলতা ছুঁয়ে যায়
ঠিকই পেয়ে যাই সত্য সন্ধান
আপনার আবেগগুলো ছূঁয়ে গেল