নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার এক মাত্র অপরাধ, আমি মানুষ হয়ে জন্মেছি।

এস. এম. মাসুদ রহমান

প্রতিটি সাধারণ মানুষ যেমন, আমিও তেমন একজন অতিসাধারণ মানুষ। অবসর সময় কাটে একাএকা, কখনো কলম হাতে বসে থাকি নিশ্চুপ। বৃষ্টি প্রচন্ড পছন্দ আমার, বৃষ্টি নামলেই হাত দিয়ে বৃষ্ট ধরি। পূর্ণিমার রাতে মন খুব খারাপ থাকলে রূপালী জোছনা গায়ে মেখে ব্যস্ত নগরীর পথে প্রান্তে হেঁটে বেড়াই !

এস. এম. মাসুদ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিমু এবং আমি

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৪৫

আজ ভ্যালেন্টাইন’স ডে। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। আমার সব বন্ধুদেরকে ভালোবাসার সব অসাধারণ এসএমএস পাঠাচ্ছি। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি যে আমি তাদের আমার জানের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। আসলেই কি তাই ? ঠিক জানি না। আমরা এই দিনটি এলেই মিছেমিছি ভালোবাসার অভিনয় করে যাই। যদি সত্যিই ভালোবাসতাম তাহলে এরকম একটি দিনের কি প্রয়োজন ছিল ? সত্যিই ভালোবাসলে তো প্রতিদিনই ভালোবাসতাম। সেই ভালোবাসাটাকে আবার প্রকাশ করতে একটি নির্দিষ্ট দিনের প্রয়োজন হবে কেন ? আমি বুঝি না। হয়তো আমরা অভিনয় করতেই বেশি ভালোবাসি। আর এই পৃথিবীটা তো অভিনয়েরই। যে যার চরিত্রে আপন মনে অভিনয় করে যাচ্ছে। কি আজব, কি বিচিত্র এই পৃথিবী !

আজ প্রায় ভোরের দিকে আমার ঘুম ভাঙলো। মোবাইলের দিকে তাকিয়েই দেখি চারটা এসএমএস এসেছে। এসএমএস গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। তারপর সেগুলোর উত্তর পাঠিয়ে দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু ঘুম আর আসছে না। আমার পাঠানো এসএমএস পেয়ে এক বন্ধু কল ব্যাক করলো। কল রিসিভ করলাম। অনেক কথা হলো। এমনিতেই দু’জনার ডিজুস সিম এবং দু’জনারই ৩০ পয়সা মিনিটের সুবিধা আছে। প্রসঙ্গ ক্রমে আমরা হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্র হিমুকে নিয়ে কথা বলছিলাম। হিমুকে নিয়ে একটু সমস্যা সৃষ্টি করেছেন স্যার হুমায়ূন আহমেদ। সেই সমস্যাটা নিয়ে আমরা কথা বলছিলাম। সমস্যাটা হলো তিনি তার ‘হিমু সমগ্রের দ্বিতীয় খন্ড’ বইয়ে কোনো এক গল্পে সম্ভবত ‘হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম’ গল্পে বাদলকে দেখিয়েছেন হিমুর ফুপাতো ভাই হিসেবে। অর্থাৎ বাদলের বাবা মা হিমুর ফুপা ফুপু। কিন্তু ভেজালটা তৈরি হয়েছে ‘হিমু রিমান্ডে’ বইয়ে এসে। স্যার এখানে বাদলকে দেখিয়েছেন হিমুর খালাতো ভাই হিসেবে। ইংরেজীতে একটি মাত্র শব্দ ব্যবহার করে খালা-খালু, ফুপা-ফুপু বোঝানো যায় কিন্তু বাংলার বেলায় তো তা আলাদা। আমি যতটুকু জানি সেটা হলো বাবার বোন হবেন আমার ফুপু আর মার বোন হবেন আমার খালা। লেখক এখানে কেন এমন গুলিয়ে ফেললেন এইটা বের করতেই আমাদের কথাবার্তা চলতে লাগলো। কারণ আমার দু’জনই হিমু খুব পছন্দ করি। এরকম ভুল তো আমাদের পে মেনে নেয়া সম্ভব না। হিমুকে নিয়ে লেখা প্রথম বই ‘ময়ূরা’িতে হিমুকে আমার যতটা হিমু বলে মনে হয়েছে ‘দরজার ওপাশে’ ও ‘হিমু’ বইয়ে হিমুকে আমার ঠিক ততোটা হিমুর মতো মনে হয়নি। সেই ব্যাপারটা নিয়েও কথা হচ্ছিল। এই বই দুটোতে কি যেন নেই। হিমুর কোনো একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য সেখানে অনুপস্থিত। ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলছি। আমাদের দু’জনেরই হিমু হবার খুব শখ। কিন্তু তা সম্ভব না। কথা বলা শেষ হলো একসময়। ফোন রেখে দিয়ে ঘুমাবার চেষ্টা করছি। অল্প অল্প ঘুম আসছে। তন্দ্রা ভাব এসেছে। আমি একটা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি।

‘জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণা ধারায় এসো।’ ‘আজ হিমুর বিয়ে’ বইতে এই কথাটা আছে। হিমুর বিয়ে ঠিক করে তার মাজেদা খালা একজন মেয়ের সাথে (মেয়েটার নাম ঠিক মনে নেই)। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিমুর আর বিয়ে হয় না। হিমু তার নিজস্ব একটা প্লানে সেই মেয়েটার সাথে তার পছন্দের মানুষের মিলন করে দেয়। হিমু থেকে যায় জেলে। শেষ পর্যন্ত তার এই উপকারটার কথা কেউ আর মনে রাখে না। হিমুকে ছেড়ে চলে যায় সবাই। নিঃস্বার্থ হিমু রয়ে যায় কারাগারে। আর দোয়া করে সেই মেয়েটির জন্য যেন তার জীবনে কখনো স্রষ্টার করুণার কোনো অভাব না হয়। তাকে যেন কখনোই স্রষ্টার কাছে তার অশেষ করুণাধারার জন্য প্রার্থনা করতে না হয়। এই হিমু কেন এতো নিঃস্বার্থ ? কেন সে নিজেকে কষ্ট দিয়ে মানুষের উপকার করে ? অথচ তার উপকারের কথা কেউ মনে রাখে না। তারা বুঝতেও পারে না যে এই হিমু নিঃস্বার্থ ভাবে তাদের উপকার করে যাচ্ছে। অথচ সে তাদের কাছেই প্রতিনিয়ত অবহেলিত হয়! এসব কথা আমার ঘুমের মধ্যেই আমার মনে ঘোরাফেরা করছে। আমি বলছি, ‘হিমুকে কেউ দেখলো না! যে হিমু প্রতিনিয়ত মানুষের উপকার করে প্রতিনিয়ত য়ে য়ে যায় সেই হিমুকে কেউ দেখলও না! কেন দেখলো না ? দেখলো না কেন ?’ আমার ঘুম ভেঙে গেল। উঠে দেখি আমি কাঁদছি। একি আমি কাঁদছি কেন ? আমার তো কাঁদার কথা না। হিমু তো বাস্তব না। সে তো হুমায়ূন আহমেদ স্যারের সৃষ্ট অপূর্ব কাল্পণিক এক চরিত্র মাত্র। আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। আমি জানি না কেন এমন হচ্ছে। আমার তো এমন হবার কথা নয়। আমি কি হিমুকে ভালোবাসি ? সত্যিই ভালোবাসি ? নাকি এও আমারই ভালোবাসার অভিনয়েরই একটা অংশ ? সবাই যেমন অভিনয় করে আমিও কি সেরকম অভিনয় করছি ? মানুষ ঘুমের মধ্যেও কি অভিনয় করতে পারে ? কাঁদতে পারে অভিনয় করেই ঘুমের মাঝে ? আমি জানি না। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। যে দিনটা আজই প্রথম আমার কান্না দিয়ে শুরু।

আজ থেকে আমার পুরোনো ডায়েরির পাতাটা খুললাম। লিখতে শুরু করলাম হিমুকে নিয়ে। বাজারে বই বের করার উদ্দেশ্যে নয়। কিংবা জনপ্রিয় হওয়ার কুৎসিত উদ্দেশ্যেও নয়। লিখতে থাকলাম নিজের জন্য। স্রেফ নিজের জন্য। এরকম একজন নিঃস্বার্থ মানুষের আমাদের খুব দরকার। এরকম একজন মানুষ থাকলে আমরা কাঁদতে পারবো, হাসতে পারবো আর পারবো ভালোবাসতে। যে ভালোবাসাটা অভিনয় নয়, সত্যিকারের ভালোবাসা। আমি লিখে চলি আপন মনে। লিখি আর চমকে উঠি। আমি হিমুকে নিয়ে কী গল্প লিখবো সে-ই আজব আজব সব কান্ড বাঁধিয়ে নিজেই একটা গল্প বানিয়ে বসে আছে। আমি এখনও অধীর হয়ে ভালোবাসা খুঁজে ফিরি, সত্যিকারের ভালোবাসা। যে ভালোবাসা হয়তো এই পৃথিবীতে নেই। সে ভালোবাসাটাকে আমি সৃষ্টি করতে চাই আমার গল্পে। নিজের সৃষ্টি অদ্ভুত জগৎটাতে। যে গল্পটা হয়তো কোনোদিনই প্রকাশিত হবে না। থেকে যাবে আমার ডায়েরির পাতায়। শত অযতেœ ধুলোয় জমে ওঠা সেই ডায়েরিটা একদিন হারিয়েও যাবে হয়তো। নিঃশেষ হয়ে যাবে আমার ভালোবাসার অপূর্ব জগৎটা!

সবাইকে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-২

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:০৩

হাসিব বলেছেন: ফ্লাডিঙ বন্ধ করেন দয়া করে

২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:০৬

শাব্বির আহমদ বলেছেন: লিখেন ভাই। হুমায়ুনের চেয়ে বড় লেখক হোন।

৩| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১২:৫৯

এস. এম. মাসুদ রহমান বলেছেন: শাব্বির ভাই, আপনিও কি আমার মতো চাপা ছাড়লেন ?

৪| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৪:৪৫

শাব্বির আহমদ বলেছেন: ধুর ভাই চাপা না। সত্যি যা মনে ছিল তাই বলছি ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.