নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভুল জগতের অনুভূতি

মাসুম সোহাগ

আমার সম্পর্কে কি লিখবো বুঝতে পারছিনা। একটা জিনিস বলতে ইচ্ছা করছে যে আমার ভুলে যাওয়ার রোগ আছে। কোন মানুষের সাথে কয়েকমাস দেখা সাক্ষাত না হলে আমি তাদের নাম ভুলে যাই। আরো বেশী সময় দেখা সাক্ষাত না হলে তাদের চেহারাও ভুলে যাই। আর আমি বই পড়তে ভালবাসি। বলতে গেলে আমি বুক আয়ডিক্টেড। এইতো ........

মাসুম সোহাগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিঠি

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩২

আমার ঘরে আমি ছাড়া কেউ কখনো ঢোকে না। তবে আজ আমি আর মা ছাড়া আরও তিনজন আমার ঘরে। তিনজনের দলটির দলপতির ভূমিকায় যিনি অবতীর্ণ, তিনি হাসি হাসি মুখে সিগারেট টেনে যাচ্ছেন। খুব সস্তা কোনো সিগারেট বোধহয় না। সস্তা সিগারেটের কড়া গন্ধে ঘর ভরে উঠছে না। লোকটির গায়ে চেক লুংগির সাথে সাদা সার্ট। মাথার কাঁচা পাকা চুলে জবজবে তেল দেওয়া। তিনি সারা ঘরে নির্দ্বিধায় চোখ বুলিয়ে যাচ্ছেন। মাঝে মাঝে বাকি দু'জনকে তারাতারি কাজ শেষ করার তাগিদ দিচ্ছেন।

'আপা ড্রেসিং টেবিলটাও বেইচা দেন আমার কাছে। মাইয়াটার ড্রেসিং টেবিলের খুব শখ। নতুন কিনার ট্যাকা পামু কই?'
মা লোকটির কথায় বেশ বিরক্ত হলেন। কথার উত্তর না দিয়ে আমার খাটটির দিয়ে তাকিয়ে আছেন। লোক দুটি খাটটা প্রায় খুলেই ফেললো। স্ক্রু গুলো খুলতে তাদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। পুরোনো খাট। স্ক্রু গুলো চেপে গেছে বেশ।

আমার খাটটি বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। নতুন আরেকটা কেনা হবে। খাট বিক্রি করা পুরাতন পেপার বিক্রি করার মতই সাধারণ ঘটনা। কিন্তু আমার খানিকটা কষ্ট হচ্ছে। খাটটা আমার প্রিয়। শৈশব কৈশোর পেরিয়ে খানিকটা যৌবনেও খাটটা আমায় সংগ দিয়ে গেছে, আপনজনের মত। জানি ব্যাপারটা হাস্যকর শোনাবে। তাই আমি নির্লিপ্ত ভংগিতে খাট খোলা দেখছি।

খাটটা নিয়ে গেলে ঘরের শোভার কোনও পরিবর্তন হবে না। কিন্তু আমি খুব কাছের একটা আপনজন হারাবো।খাটের দেয়ালে বেশ কিছু নকশা। নকশাটা আমার খুব মুখস্ত। এক পাতা কাগজ ধরিয়ে দিলে আমি চট করে নকশাটা এঁকে ফেলতে পারবো। একবার আমার টাইফয়েড হলো। আমি আধমরার মত খাটে পরে থাকতাম। মাঝে মাঝে চোখ খুলে খাটের নকশা দেখতাম। নকশাটা প্রতিবারই নতুন মনে হ'ত। আমি বিষ্ময়ে নতুন নকশায় চোখ আটকে রাখতাম। নকশার সাথে কথা বলতাম। খাটের সাথে কথা বলতাম। তখন কথা বলার কেউ ছিল না। মা বাবা যার যার কাজে। আমি নকশার সাথে কথা বলতাম। শুধু যখন আয়া আসতো আমি চুপ করে নকশা দেখতাম। নকশাটা ডাল পালা ছড়িয়ে আমার সাথে খেলতো। আমি আধবোজা চোখে তাকিয়ে থাকতাম। খারাপ লাগতো না।

সবই ছিলো হেলুসিনেশন। তবে খাটটা আমার ভালো লাগতো। মায়ের মতো জড়িয়ে ধরতো আমায়। যদিও মা ধরতো না। আমি কষ্টে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকতাম খাটে। খাটের ড্রয়ারে লুকিয়ে রাখা চিঠি গুলো দেখতাম। সবগুলো চিঠিই রিমাকে লেখা। চিঠিগুলো আমি কখনো পাঠাই নি। সুন্দর অক্ষরে লেখা চিঠিগুলো শুধু আমিই পরতাম। মাঝে মাঝে জোড়ে জোড়ে পরতাম, খাটটাকে শোনানোর জন্য।

চিঠিগুলো এখনও ড্রয়ারে আছে। তালামারা ড্রয়ারের চাবি লোকটা চায়নি। খাটের সাথে চিঠিগুলোও চলে যাবে। রিমা বিষ খেয়েছে গত বছর, চিঠিগুলোর কথা কিছু না জেনেই। চিঠিগুলো চলে গেলে মন্দ হবে না। আমি নতুন খাটে শুয়ে রিমার কথা ভাববো, কোনো চিঠি লিখবো না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৩

সালেহ মতীন বলেছেন: আপনার লেখাটি ভালো লেগেছে, ধন্যবাদ।

২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৪

মাসুম সোহাগ বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.