নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাসুম মাহবুব

মাসুম মাহবুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি মানুষের জন্য....

২১ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ৯:৪৩

একটা যুদ্ধ, তা যতই অপরিমিত হোক তার কিছু আস্ফালন রয়ে যায়চিরকালের জন্য। মনের গভীরে প্রতিনিয়ত আমরা যে যুদ্ধকে টের পাই একটু অবকাশে তার আদিম উৎস আবার ফিরে পাই কখনও কখনও। একসময় যে মানুষটাকে নিয়ে ছিল আমার সকল ধ্যানজ্ঞান আজ তাকে দেখে মোটেও পুলকিত হইনি, বরং হতাশ হয়েছি খুব। তার সেই চেহারা নেই, নেই আগের স্বাস্থ্য, নেই অন্যকে আকৃষ্ট করার নিয়মিত কৌশল। শুধু ঠিকরেপড়া চোখদুটোতো কোনও পরিবর্তন চোখে পড়েনি। আর আপ্যায়নে...

কিন্তু কেন আমি এতো হতাশ হলাম? বাল্যপ্রেমের এ সখিকে দেখে? সেকি তার চেহারার বিবর্তনে, আমি কি তার অবয়বটাকে ভালোবেসেছিলাম? ছি: কি মিথ্যে ভালবাসা ছিল আমার! অতচ কত চড়াই উৎড়াই আর বাবা মায়ের নিষেধ উপেক্ষা করে রাতবিরাতে দেখা করেছি তার সাথে....সেওতো ভয় আর উৎকণ্ঠা নিয়ে জেগে থাকতো, সঙ্কেতে চলে আসতো বাথরুমে।....



সেটাইতো ভালো হলো সবকিছু করেও আমরা পাইনি এক অপরকে...

ওকে একপলক দেখার পর আর কোনও আবেগ তোলপাড় তোলেনি বুকের ভেতর। কী অদ্ভুত আমাদের জীবন চক্র! ভেবে খুব অবাক হই।



এটা অনেকদিন আগের।

গতকাল তার একটা ফোন আমাকে আবার বিচলিত করলো। ও হাসপাতালে। হার্ট ফাউণ্ডেশনে। আমি যেন তড়পাতে তড়পাতে গিয়ে হাজির হলাম ওর পাশে। বন্ধু তুমি আমায় ডেকেছ? তোমার এমন দুর্দিনে? বন্ধু বলো আমাআর কী করার আছে?

নগদ ৩০ হাজার টাকার অর্থসহযোগিতা দিয়ে আর প্রায় তিনটি ঘণ্ট ব্যায়করে বাসায় ফিরে একটা তৃপ্তি আর রোমহর্ষক একটা আনন্দে পশম কাটা দিয়ে উঠলো। মনে হলো আমি আজও মানুষ আছি। আজও আমি আমার বন্ধুদের ভালোবাসার মানুষদের ভালোবাসী।

ওর পরিবারের কেউ আমাকে সহ্য করতে পারতো না। প্রথম দিকে আমার দোষ ছিল আমি ওর সঙ্গে প্রেম করেছি তাই,

এরপর আমি কেন বিয়ে করলাম অন্য মেয়েকে

আসলে তারা কী চাইতো? আমার জন্যই, আমার কাছ থেকে আলাদা করতেই তারা ওকে সরিয়ে নিয়েছিল সেই সুদূরে! যেখানে পৌঁছানোর সাধ্য আমার ছিল না।



হাসপাতাল থেকে এলেও মনটা পড়ে থাকলো ওখানেই। ওর চোখেমুখে আমি বিদায়ের আভাস পাই। ওকি সত্যিই চলে যাবে?

একবার ভেবে দেখতে চাই ওর সঙ্গের আগাগোড়া স্মৃতি!



স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি...

ঘুমটা ভাঙার পর আমার কেবলই মনে হচ্ছিল আমি বোধয় ছোট হয়েগেছি। ফিরে এসেছে আমার বাল্যকাল। আমার বাইসাইকেল। পৃথিবীর আর সব মনে হলো মিথ্যে। আমার স্ত্রী, আমার মেয়ে... সব মনে হলো টাইমমেশিনে আসা কোনও ভবিষ্যৎ।

আমার আচরণে সেই ছেলেমানুষী। আম্মাকে খুব ফিল করছি। ইশ! মা যদি থাকতো এসময়? তার কোলে মাথা রেখে বলতাম মা কিছু আনতে হবে কাকীদের বাসা থেকে?

খুব ইচ্ছে করছিল সেই ছেলেবেলাটা ফিরে পেতে। মাকে ফোন দিলাম। কিন্তু পারলাম না ছেলেমানুষী করতে। ফোন রেখে জানালার কাছে এলাম। পাশের একটা ছাদ দেখে হারিয়ে ফেলি নিজেকে। এরকম একটা ছাদে রোদকে থোরাইকেয়ার করে ওর জন্য ওয়েট করতাম। স্কুলের ড্রেসপড়া সেই মানুষটিকে যেন দেখতে পাচ্ছি। দেখার কি এমন স্বাধীনতা ছিল! নিজেকে আড়ালে রেখে, কেউ আমাদের দেখাদেখি দেখছে কি না সবদিকে খেয়াল রাখতে হতো। ও দূর থেকে ইশারায় বলতো নামতে, আমি নামতাম না। ওর বলায় যেন আরও শক্তি পেলাম! ও বারাবার বলে আমি বলি ইশারায় দেখাই চুমুখাও...ও এদিক ওদিক তাকায়..বাধ্য হয়ে পাঠায় ফ্লাইং............................................................................................



রুমে এসে সেই গানগুলো চালু করতেই কেমন যেন করে উঠলো। বউকে মনে হলো উৎপাত। ওতো ছিল না সেসময়, এখন কেন এলো? ছোটভাইটাকে চাচ্ছিলাম কাছে, ওই আমাকে হেল্প করতো। ভাবি ডাকত ওকে।





গান শুনতে শুনতে চোখ দিয়ে পানি পড়ল টপটপ! ওকি বাঁচবে না? ওকি শেষদেখা করতে এসেছে?

ফোনটা বেজে উঠতেই ছোমেরে ধরলাম। ওর ফোন। কণ্ঠ আমার ভরে গেছে আবেগে, বললাম এখন কেমন আছ?

ও বলে ভালো। কখন আসবেন?

একবার তুমি করে বলো

ভাবি কী ভাববে? কারও ভাবায় কিছু যায় আসে না। বলোতো!

তোমার কী হয়েছে, গতবার যখন দেখা হয়েছিল তখনতো এমন করোনি!

আমি অবাক হলাম, ওকি টের পেয়েছিল আমার অবজ্ঞা? তার জন্যইকি এতাদিন আর যোগাযোগ করেনি?

আমি বললাম তোমার কি মনে আছে? আমি ছাদে উঠে দাঁড়িয়ে থাকতাম তোমাকে যেন অনেক দূর থেকে দেখতে পাই..... তুমি ক্লান্ত মুখে ফিরতে স্কুল থেকে।

বেদনাকে খুঁড়ে খুঁড়ে বের করো না। আমি একটা কথা বলবো রাখবে?

বলো

আমার সব স্মৃতি মুছে ফেলো।

সম্ভব নয় বলে পারছি না।

শোনো অযথা সংসারে অশান্তি করো না। ভাবি নাকি খুবই সেনসিটিভ?

হু! সে তোমাকে দেখে খুব খুশি! সেবার। আমাকে বলে এই মেয়ের সাথে তোমার প্রেম ছিল? এই চেহারা?

সত্যিইতো!

কিন্তু ও কি সেসময়ের তোমাকে দেখেছে? আর তোমার জন্য আমার হৃদয়ের যে বিহ্বলতা ছিল, তার যে আনন্দ তাতো আমি এতোদিনের সংসারের জীবনটাতেও পাইনি। তোমার একটুকরো চিঠির মাঝে যে স্বার্থপরের মতো আনন্দ ভালোলাগাকে লুটকরে নিয়েচিলাম সে আনন্দ আজ আমি কোথায় পাবো? কে দিতে পারবে আর সেই ভালোলাগা! সেই সময়ের আনন্দটুকুর মূল্য যদি তুমি আমার জীবনের দামেও নিতে চাও আমি রাজি। আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও সেই কৈশোরে। আমি আবার জন্মাবো তোমার ভিতর..........................

বেশি ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছ।

হয়তবা, আগ গান শুনতে শুনতে চোখদিয়ে পানি পড়ছিল............................আমি হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে। এমন করে না। জান। আমিতো চলে যাচ্ছি। আমার সবটুকু ভালোবাসা তোমারই ছিল, তোমারই থাকবে। এখন আমাকে একটা সুখ তুমি এনে দাও! খালাম্মাকে একবার আনবে আমার কাছে? খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। তার ভালোবাসা যে পেয়েছে তার আর অন্য কোথাও মন ভরবে না।



আমি সঙ্গে সঙ্গে কনফারেন্সকরে মাকে ফোন দিলাম, আম্মা সাথীর সাথে কথা বলেন;

সাথী কে? বউর ফুফু? আরে না আমার প্রথম বউমা।

অমুক?

হ্যা, খালাম্মা আমি,আসসালামু আলাইকুম। ............................

আম্মু ওর কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারে ও খুব অসুস্থ। আম্মু আসতে চায় ঢাকা। আব্বুও রাজি। শুনে আপুও রাজি অথচ এই মানুষগুলোকে কোনও অজুহাতেই ঢাকায় আনতে পারি না।

তিনদিনের দিন এসে সবাই হাজির। সদলবলে দেখতে যায়। আমি অতেটাকা দিয়েছি শুনে আম্মু বুঝতে চায় আমি এখনও ওকে কতোটুকু ভালোবাসি।

ওর অবস্থা দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। যে কোনও মুহূর্তে হার্ট ব্লক হয়ে যেতে পারে। কিছুই করার নেই।



সেদিন আমার রাতে অফিস ছিল। রাত দুইটায় কাজ শেষকরে গাড়ি নিয়ে সরাসরি চলে গেলাম হাসপাতালে। ও আমাকে পেয়ে যেন কী পেলো। আমারা ঘুমিয়ে আছি ভেবে কাউকে ফোন দিতে দেয় নি। হার্ট অর্ধেক ব্লকড। ডাক্তার বলে দিয়েছে দোয়াদরুদ পড়েন, মন থেকে ক্ষমা করে দেন, কাঁদবেন না। কাঁদলে কষ্ট আরও বাড়বে। ধার্মিক ডাক্তার সান্ত্বনা দেয়। আমি ওর মাথার কাছে বসি। ও কি যেন ইশারা করে। আমার বুঝতে কষ্ট হয়। ওর মা আন্টি বলে মাথাটা একটু তুলতে বলছে বোধয়, আমি মাথা তুলে বালিশ দেই, ও আস্তে বালিশ থেকে পড়ে যায় আমার কোলে। এবং তার কিছুক্ষণ পরই নিস্তব্ধ হয়ে যায়। ডাক্তার বলে আর বসে থাকবেন না...প্লিজ!

আমার মাথা ঘুরছিল। বমি পাচ্ছিল। কোনও রকম উঠতে গিয়ে টের পেলাম ওর শরীরের শীতলতা।







পরদিন ডায়েরির পাতাগুলো ওল্টাতে ওল্টাতে চোখে পড়লো ১৯৯৬ সালের একটা স্বপ্নের বিবরণ, ও স্বপ্ন দেখেছে আমার কোলে মাথা রেখে ও মৃত্যুবরণ করেছে। রেখাটা ডায়েরিতে লিখে সেই ডায়েরিটা বিদায়ের সময় দিয়ে যায়। ডায়রিটা আমি বহুবার পড়েছি সেসময়, যেন প্রতিটি লাইন ছিল হৃদয় নিংড়ে লেখা।

নতুন জীবনে আসার পর আর এটা পড়া হয়নি; আজকের মতো।

মানুষ চলে যায়, কিন্তু তার ইঙ্গিত সে পায়, হয়ত বোঝে না। কোনও না কোনওভাবে সেই ইঙ্গিত থেকে যায় মাটিতে, অন্যকারও স্মৃতিতে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.