নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনাকে লালন করি স্বদেশি হাওয়ায়

মাজহার পিন্টু

একজন মানুষ

মাজহার পিন্টু › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুরণন

০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:০১

অতীন বন্দোপাধ্যায়ের ‘কাফের’ গল্পের ছায়ায় ছায়ায় পথনাটক ' অনুরণন'
নাট্যকার : মাজহারুল হক পিন্টু

প্রাসঙ্গিক
অবিভক্ত বাংলার কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি। রূপকথার মতন সেই সময়টিকে শ্রেষ্ঠ বলে মায়েরা দাদুরা গল্প করতেন। গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ আর মায়ের মুখের পান সুপারির সাথে মন ভুলানো স্নিগ্ধ হাসি। এ গল্প কার না শোনা? সেই মা বুড়ো হয়ে গেছেন আর গল্পেরাও শুকোতে শুরু করেছে। সাতচল্লিশে ব্রিটিশরা ভারত ছেড়েছে আর মায়ের বাড়ি বাপের বাড়ি বিভক্ত হয়ে গেছে ধর্মের নামে। মাকে জন্মস্থানটা ছেড়ে যেতেই হয়েছিলো কারণ বিভক্তির আগুনে তখন গোটা উপ মহাদেশ পুড়ছিলো। সেই আগুন এখনো জ্বলছে। আজও মানুষ সেই আগুন থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আজকের ঘটনা মনে করিয়ে দেয় অতীতকে। সময়কাল ১৯৪৭। দাঙ্গা শুরু হয়ে গেছে।


অনুরণন........
একদল কোরাস আসে।
কোরাস: আ হ্ আমাদের আলো দাও দাও আলোকিত প্রাণ, বলে দাও পথের নিশান। আলো দাও আলো দাও-
বৃদ্ধ হাসিম আলী লাঠি ভর দিয়ে আসে। এক জায়গায় বসে পড়ে।
হাসিম: নেতার গালে চুমু খেলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহর চান। ধুর ফাইজলামি মারাইননা খবর। আইজকাল পরতিকায় এইসবই লেখে। পাবলিক মনে হয় এইসব খবরই পছন্দ করে। কুমিল্লার একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে। বাঙালির সবথেকে বড় অনুষ্ঠান দুর্গা পুজোতেই এবার ঘটেছিল এক অপ্রীতিকর ঘটনা। কুমিল্লায় পূজামন্ডপের এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে ভয়ানক সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব। এরপরেই নানাভাবে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। হামলার প্রতিবাদে শাহবাগে গণঅবস্থান।
হাসিমের অভিব্যক্তি পাল্টে যেতে থাকে।
হাসিম: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে। এইটা কত সাল? ২০২৪ সাল। নতুন শতাব্দিরও তেইশ বছর শেষ।
চিৎকার করে ওঠে হাসিম।
হাসিম: না না শেষ হয় নাই। সাতচল্লিশে ব্রিটিশরা ভারত ছাড়ছে আর মায়ের বাড়ি বাপের বাড়ি বিভক্ত হইছে ধর্মের নামে। বিভক্তির আগুনে তখন গোটা উপমহাদেশ পুড়ছিলো। সেই আগুন এখনো জ্বলতাছে। আইজও মানুষ সেই আগুন থিকা রেহাই পায় নাই। আজকের দিনের ঘটনা মনে করাইয়া দেয় অতীতরে। সময়কাল ১৯৪৭। উত্তর দক্ষিণে সোনারগাঁও, পুবে পশ্চিমে মহেশ্বরদি আর শীতলক্ষ্যার দুই তীর। আমি আর পরাণ পরাণের দোস্ত আমরা সেই ল্যাংটাকাল থিকা। কত দৌড়াইছি খেলছি খালে নাইমা ঝাপাইছি দিনরাত। কত মাখামাখি কত গলাগলি। আহা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদী গাইতাম... সেইখানে আমার ঘর আমার বাড়ি আমার ফসলের ক্ষেত, স্বজন আছে বন্ধু আছে, জাবিদা আছে কিরণী আছে আমি আছি পরাণ আছে সংসার সমেত। হঠাৎ ধর্ম আইসা আঘাত হানে মানুষের উপর। তারপর-ভয়াবহ দাঙ্গা। দাউ দাউ কইরা জ্বলতাছে সমস্ত গ্রাম। কে যে কই গেলো কোনো খবর নাই। দাঙ্গাবাজরা ঘোড়া ছুটাইয়া অকাতরে মানুষ হত্যা করতাছে। সুপারীর শলা পেটে ঢুকাইয়া চিরা ফেলতাছে মানুষ। আর্তনাদ আর পোড়া মাংসের গন্ধে হাহাকারের এক ছবি প্রেতের মতন ভাইসা বেড়ায়। আমার খেলার সাথী আমার দোস্ত আমার আত্মার আত্মীয় পরাণ, পরাণরে-
পরাণকে ডাকতে ডাকতে বেরিয়ে যায় হাসিম।
চিৎকার চেঁচামেচি, হৈ চৈ, লাঠি হাতে ছুটাছুটি করছে মানুষ।
বাইরে ধর ধর মার মার নানারকম আওয়াজ হচ্ছে।
কয়েকজন যুবক একজন যুবককে ধরে টেনে নিয়ে যায়।
একদল শরণার্থীকে ক্লান্ত শ্রান্ত দেহে চলে যেতে দেখা যায়। সূত্রধর আসে।
সূত্রধর: অন্ধকার মাঠ, ঘাট, বন বাদাড় ছাড়িয়ে পালাবার জন্য মানুষ ছুটছে। ছুটছে আতঙ্কিত পরাণ। সে তার স্ত্রী কিরণীকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। যুবতীদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিরণীকেও খুঁজে পাচ্ছে না পরাণ। অনেক আদরের অনেক ভালোবাসার স্ত্রী কিরণী। আদরে সোহাগে ভরা ছিলো পরাণের সংসার, আনন্দ ছিলো সুখ ছিলো কিন্তু কোনো ধর্ম ছিলো না বিভেদ ছিলো না। ছিলো ভালোবাসা ছিলো বন্ধু ছিলো মন ছিলো অন্তরের আত্মীয়স্বজন। কিন্তু এখন-
ধু ধু বালুচর শূন্য বালুচর
খা খা করে ওঠে
পরাণের গহীন ভিতর
কোথায় কিরণী?
পরাণের সোহাগী কইতর।
চিৎকার করে কিরণীকে ডাকতে ডাকতে আসে পরাণ।
কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সে।
এসময় কয়েকজন দাঙ্গাবাজ পরাণকে ঘিরে ধরে।
কোরাস: এইবার এইবার এইবার।কে বাচায় তরে। মার মার মার
রুখে দাঁড়ায় পরাণ।
পরাণ : না কিরণী রে ছাড়া আমি যামু না। কিরণী-
একজনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে পালিয়ে যায় পরাণ।
সবাই তার পেছনে দৌড়ায়।
সূত্রধর: নদীর জলে ভেসে পড়ে পরাণ। কিরণীকে খুঁজে পেতেই হবে তার। দ্রুত সাঁতরায় পরাণ। একসময় গিয়ে থামে প্রাণের বন্ধু হাসিমের বাড়ির ঘাটে। শেষ পর্যন্ত নির্ভর করে বাল্যবন্ধু হাসিম আর জাবিদার ওপর। যারা বার বার তার প্রাণ রক্ষা করেছে।
আজান শোনা যায়।
হাসিম নামাজ শেষ করে জায়নামাজটা জাবিদার হাতে দেয়।
জাবিদা: অবস্থা বিশেষ ভালো মনে হইতাছে না।
চিন্তিত হাসিম।
হাসিম: হুম
জাবিদা: অরা বাড়ি বাড়ি মানুষ খুঁজতাছে।
চিন্তিত হাসিম।
হাসিম: খুঁজুক। হারামির দল।
এসময় বাইরে পরাণের ডাক শোনা যায়।
হাঁপাতে হাঁপাতে ভেতরে আসে পরাণ।
পরাণ : হাসিম, দোস্ত আমারে বাচা।
হাসিম: কি হইছে পরাণ?
পরাণ : আমার কিরণী নাই।
কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে পরাণ।
হাসিম : কস কি!
পরাণ : আইজ তিন দিন ধইরা দাঙ্গা চলতাছে। কোনোদিকে যাবার উপায় নাই। খাবারদাবার শেষ। কি করি। বিহানবেলা। সব যখন সুনসান, জগার দোকানের ঝাপ অর্ধেক খোলা। দেখি জগা দোকান ঘরের মাঝখানে উপুড় হইয়া পইড়া আছে। আবার বাড়িতে ফিরা আসলাম। দেখি কিরণী নাই। আমার আদরের কিরণী আমার ভালোবাসার কিরণী আমার কইতরি কিরণী। কিরণী রে ধইরা নিয়া গেছে। কারা নিছে কই নিছে কিছু জানি না।
জাবিদা : পরাণ দা শান্ত হন। এত কাতর হইয়েন না। আমরা তো আছি।
পরাণ : কিরণী রে ছাড়া আমি থাকুম কেমনে।
হাসিম : ধর্ম হায় রে ধর্ম। সব শেষ কইরা দিলো।
পরাণ : আমি ধর্ম মানি না, আমি দাঙ্গা জানি না। আমি শুধু ভালোবাসতে জানি। কিরণী রে কিরণী-
বাইরে অনেক হট্টগোল শোনা যায়।
পরাণ : ওই যে আইসা পড়ছে। আমি যাই। আমি কিরণী রে খুঁজি।
বাইরে থেকে শোনা যায়।
কোরাস-১ : হাসিম ভিতরে কোন কাফের আছে বাইর কর।
কোরাস-২ : ভিতরে কেউ থাকলে বাইর হইয়া আসো।
পরাণ হাসিমের পেছনে লুকায়।
জাবিদা বেরিয়ে যায়।
জাবিদা : ভিতরে কেউ নাই।
কোরাস-১ : মিছা কথা। কাফের আছে আমি নিজে ঢুকতে দেখছি।
কোরাস-২ : বাইর কর।
জাবিদা : খবরদার, এক পাও ভিতরে দিবি তো মাথা কাইটা ফালামু।
হট্টগোল মিলিয়ে যায়। জাবিদা ভেতরে আসে।
পরাণ যেতে নেয়
পরাণ : আমি যাই।
হাসিম বাধা দেয়।
রুখে দাঁড়ায় হাসিম।
হাসিম : যাবি কই? মাঠে? আমি তোর দোস্ত ছোটবেলার খেলার সাথী সুখদুঃখের ভাগীদার। আমি তো এখনও মরি নাই। তুই ভিতরে যা আরাম কর। আমি দেখি কি করা যায়।
ক্লান্ত পরাণ ভেতরে যায়।
উত্তেজনায় পায়চারী করে হাসিম।
হাসিম : কি করি? কই লুকাইয়া রাখি? যদি পরাণ ধরা পড়ে তাইলে একা আমি কি করতে পারি? না না কি করি- কি করি
জাবিদা : আমি একটা পথ কই?
হাসিম : ক-
কানে কানে বলে জাবিদা। হাসেম মাথা নাড়ে। এরপর দু;জন বেরিয়ে যায়।
বাইরে হট্টগোল শোনা যায়। একদল কোরাস আসে।
কোরাস : আ হ্ আমাদের আলো দাও দাও আলোকিত প্রাণ বলে দাও পথের নিশান। আলো দাও আলো দাও-
সূত্রধর আসে।
সূত্রধর : স্ত্রী জবিদার বুদ্ধিতে বন্ধু পরাণকে নিয়ে রওনা হয় হাসিম।
কোরাস-১ : দুরত্বটা কম নয়। নদী পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে তারপর নদীর জলে ডুবে ডুবে পথ কাটবে পরাণ।
কোরাস-২ : সঙ্গে থাকবে একটা পাতিল।
কোরাস-৩ : পাতিলটা জলের ওপর ভেসে যাবে।
কোরাস-৪ : জলের নিচে থাকবে পরাণের মুখ। পাতিলের নিচে মুখ রেখে শ্বাস নেবে পরাণ।
কোরাস-৫ : মাছের মতন জল কেটে শহরে পৌছে যাবে সে।
কোরাস-৬ : ঘাস, পাখি সবুজ গন্ধময় মাঠ সব পিছনে ফেলে চলে যাবে কিরণীর কাছে। কিরণী-
সূত্রধর : নদীর পাড় ঘেঁষে হেঁটে যাবে হাসিম। সঙ্গে থাকবে বাঁশের লাঠি, ছোট এক পুটলি চিড়া।
কোরাস : ক্রমশ ক্রমশ ক্রমশ...
কোরাস-১ : পাহাড়ের মত উঁচু নদীর পাড় বেয়ে হেঁটে যায় হাসিম আর জলের নিচে পাতালপুরীর ঘোড়ায় ছুটে চলে পরাণ।
কোরাস-২ : দুই হিন্দু মুসলমান বন্ধুর কোনো ভয় নেই আতঙ্ক নেই আছে আনন্দ আর সুন্দর করে বাঁচার স্বপ্ন।
কোরাস-৩ : ঝোপ জঙ্গল
কোরাস-৪ : টুনি ফুলের লতা
কোরাস-৫ : চরের শশ্মাণ গোরস্থান
কোরাস-৬ : ধুক ধুক
কোরাস-১ : ঠক্ ঠক্
কোরাস-২ : জলের নিচে পরাণের ঝিনুক খোঁজা।
কোরাস-৩ : যেতে হবে বহুদুর
কোরাস-৪ : শক্তি যখন ক্রমশ নিঃশেষ হয়ে আসে। দু’জনে দু’জনার নির্ভর হয়।
কোরাস-৫ : কিন্তু হঠাৎ
কোরাস : আচমকাই ঘটে যায় ঘটনা।
কোরাস-১ : দুই দাঙ্গাবাজ যুবক টের পেয়ে যায় এক গেরস্থ মুসলমান হাসিমআরেক গেরস্থ হিন্দু পরাণকে রক্ষা করে নিয়ে যাচ্ছে শহরে। হাসিম বাঁচাতে চাইছে পরাণকে।
দুই যুবক ঢুকে উঁকিঝুকি মারে।
যুবক-১ : ও- ই, নদীতে হাঁড়ির ভিতর কি যায়?
যুবক-২ : জলিল, তরে কইছি না, ওর মধ্যে মানুষ আছে। শালা মার, কাফের মার। ও ই থাম।
এসময় হাসিম দৌড়ে আসে।
হাসিম : ভাই, ওইটা আমার মাছের হাড়ি। বড় বড় মাছ ওঠে এই নদীতে। তাই হাড়িটাও বড়।
যুবক-১ এগিয়ে আসে।
যুবক-১ : তুমি- তোমারে চেনা চেনা লাগে।
হাসিম : আমি হাসিম। গাজীর পালা করি। দেখছ তো আমারে। শোনো একটা গীত গাই।
হাসিম নেচে নেচে গাজীর গান শোনায়।
কিন্তু যুবকদের দৃষ্টি দুরে।
যুবক-২ : জলিল, ওইটা মানুষ। মার মার শালারে।
যুবক দুজন চিৎকার দিয়ে বেরিয়ে যায়।
হাসিম পিছন থেকে ডাকে কিন্তু ওরা শোনে না।
সূত্রধর : ওরা সুুপারীর শলা নিয়ে জলের দিকে পাতিল লক্ষ করে ছুঁড়ে মারে শলাটা।
কোরাস-১ : পাতিলের ভিতর দিয়ে সেটা পরাণের ব্রহ্মতালুতে ঢুকে পালকের মতন খাড়া হয়ে থাকে।
কোরাস-২ : বুকে পিঠে রক্তের ফোয়ারা, চোখ দুটো লাল।
চিৎকার ভেসে আসে পরাণের।
চিৎকার করে হাসিম।
পরাণ : কিরণী রে পাইছি কিরণী রে পাইছি কিরণী রে পাইছি। হাসিম, দোস্ত পাইছি রে পাইছি।
কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে হাসিম।
যুবক দু’জন বাইরে থেকে
কাফের কাফের বলে চিৎকার করে।
হাসিম দৌড়ে পালায়।
যুবক দুজন হাসতে হাসতে হাসিমরে পেছনে যায়।
আর বলতে থাকে কাফের যায়, কাফের যায়।
কোরাস-১ : হাসিম পাগলের মত পালাবার জন্য ছুটছে। আর পেছন পেছন ছুটছে দুটো নরপশু।
কোরাস-২ : ওরা হা হা করে হাসে আর বলে কাফের যায় কাফের যায়।
কোরাস-৩ : এক শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য।
কোরাস-৪ : মাঠের ভেতর, খাড়া পাড়ের ভেতর সেই কাফেরকে ধরার জন্য লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটছে তারা।
কোরাস-৫ : গম ক্ষেতের ভিতর হাসিম ছুটে যায়।
কোরাস-৬ : পাখিরা ঘরে ফেরে কিন্তু হাসিম লুকিয়ে থাকে গমক্ষেতে।
সূত্রধর : তন্ন তন্ন করে কাফেরটাকে খুঁজে মরে ওরা।
কোরাস-১ : মাটিতে বড় বড় ফাটল।
কোরাস-২ : মৃত্যুভয়ে অস্থির এক যুবক।
কোরাস-৩ : সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে।
কোরাস-৪ : ওরা লাফ দিয়ে লাফ দিয়ে ফটিল পেরতে চাইলো।
কোরাস-৫ : হঠাৎ করেই লাঠি দিয়ে ফাটলের মাঝখানে পথটা আটকে দিলো হাসিম।
কোরাস-১ : ওরা পিছলে নিচে পড়ে যেতে থাকলো।
কোরাস-২ : এবার হাসিমের হাসবার পালা।
হাসতে হাসতে মঞ্চে আসে হাসিম।
হাসিম : কি মিয়ারা? আসমান দ্যাখ, নদী দ্যাখ কি রকম লাগে। দোজখের পথটা চোখে পড়তাসেনি?
বাইরে থেকে যুবকদের
কাতরানোর শব্দ ভেসে আসে।
হাসিমের হাসি বাড়ে।
হাসিম : আমারে কস কাফের? হা হা
চিৎকার করে হাসিম।
হাসিম : দুই কাফের জীবন্ত কবরে যায়।
কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে হাসিম।
হাসিম : পরাণ পরাণ রে। দোস্ত আমার। পরাণের পায়রাগুলা বকবকম উড়ে। আহারে পরাণ। স্বপ্নগুলা শেষ হইয়া গেল।
কোরাস : স্বপ্নরা সব কোথায় গেলো? কেন গেলো? পায়রাগুলো কোথায় গেলো? কেন গেলো?
হাসিম : কে কাফের? কে কাফের? কে কাফের?
একদল শরণার্থীকে ক্লান্ত শ্রান্ত দেহে
চলে যেতে দেখা যায়।
বৃদ্ধ হাসিম কাঁদতে কাঁদতে ফিরে আসে।
হাসিম : কিছুই বদলায়নাই। খালি সময় বদলাইছে।
কোরাস আসে।
কোরাস-১ : ধর্ম নয়, ধর্মান্ধতাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের মূল
কোরাস-২ : বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সত্যিই বেদনাদায়ক
কোরাস-৩ : সম্প্রতি কক্সবাজার জেলার রামু, উখিয়া এবং চট্টগ্রামের পটিয়ায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে।
কোরাস-৪ : রামু, উখিয়া ও পটিয়ায় বৌদ্ধমন্দির এবং পল্লীগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।
কোরাস-৫ : পটিয়ায় একটি হিন্দু মন্দিরও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
কোরাস-৩ : সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্মান্ধ, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলা পরিকল্পিত ছিল।
কোরাস-৪ : রাজনীতিকরা সংখ্যালঘুদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন
কোরাস-১ : এই ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে আজ সরব হঢেছে সারাদেশের মানুষ।
কোরাস- ২ : সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষের ফল ভোগ করতে হবে আর কতোদিন?
সূত্রধর আসে।
সূত্রধর : দেশভাগ আর তার সাথে জন্মস্থান থেকে উৎখাতের তীব্রতার সূত্র ধরেই হয়েছিলো ইতিহাসের সবচাইতে জঘন্য এবং ঘৃণ্য হিন্দু
মুসলিম দাঙ্গার। হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গে থাকতে পারে না এই ধারণা কখনও কি বাঙালিদের নিজস্ব চিন্তা ছিলো? ছিলো না। ভাষা-ধর্ম-সংস্কৃতির এক মহা সাম্যের দেশই চেয়েছিলো তারা। কিন্তু কোথায় গেলো সেই সাম্যের দেশ? ধর্ম বার বার ঘুরে ঘুরে ফিরে ফিরে আসে। আর বার বার দাঙ্গা হয়। বিভক্তিটা আসলে কারা চায়? আসলেই কি সাধারণ মানুষ বিভক্তি চেয়েছিলো কোনোদিন? যাপিত জীবনে দাঁড়িয়ে থাকা সভ্যতাকে এই প্রশ্ন করি উপযুক্ত জবাবের প্রত্যাশায়।


অনুরণন.........

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.