নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনাকে লালন করি স্বদেশি হাওয়ায়

মাজহার পিন্টু

একজন মানুষ

মাজহার পিন্টু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আগ্রাসী অঙ্গারে

১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:১৪

সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী পথনাটক
আগ্রাসী অঙ্গারে



চরিত্রলিপি............
১. সাংবাদিক রতন :
২. বন্ধু রফিক :
৩. জব্বার :
৪. মাধবী রানী :
৫. স্ত্রী মালতী দেবী :



কোরাস গান গাইতে গাইতে ঢোকে।
সবাই : আগুন জ্বলেরে নিভানের মানুষ নাই।
কাইজার বেলা আছে মানুষ
মিলের বেলা নাই
মনে আগুন জ্বলেরে।।
হঠাৎ সবাই আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে করতে দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে।
সবাই : আগুন আগুন আগুন।
সবাই : কই কই আগুন, কোথায় আগুন।
ভিড়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে রফিক।
রফিক: আগুন লিবিয়ায়, আগুন লেবাননে আগুন সিরিয়ায় আগুন ইউক্রেনে আগুন প্যালেস্টাইনে আগুন এইখানে এই দেশে। পৃথিবীর সর্বত্র আজ আগুন জ্বলছে চলছে আগুন সন্ত্রাস। আজ এমনই এক আগুন সন্ত্রাসের গল্প শোনাবো আপনাদের। ২০০৪ সালের কোনো একসময় এদেশের কোনো এক অঞ্চলে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়ে প্রাণ হারায় রজত নামে এক যুবক। আরো অনেকের সাথে পুড়িয়ে দেয়া হয় তার বসতভিটা দোকানঘর। হায়নার মত ঘিরে থাকে রাজনীতির নামধারী সেইসব নরপশুরা। কি হয়েছিলো সেসময় কি হচ্ছে আজ? স্থানীয় সাংবাদিক রতনের আমন্ত্রণে শহর থেকে সরেজমিন তদন্তে এসেছে সহিংসতা প্রতিরোধে জনতার আন্দোলনের প্রতিনিধি রফিক।
কোরাস গান গাইতে গাইতে বেরিয়ে যায়।
সবাই : আগুন জ্বলেরে নিভানের মানুষ নাই।
কাইজার বেলা আছে মানুষ
মিলের বেলা নাই
মনে আগুন জ্বলেরে।।
সাংবাদিক রতন এগিয়ে আসে।
রফিক: রতন, আর কত দুর রজতের বাড়ি?
রতন : এই তো এটাই রজতের বাড়ি।
রফিক: ওহ, কিছুই তো প্রায় নেই বলা যায়। আচ্ছা দোকানটা কোথায় ছিলো?
রতন : এই ভিটার মধ্যেই। কিন্তু তার চিহ্ন এখন আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
রফিক : তাই তো মনে হচ্ছে। আচ্ছা কোনো মামলা হয়নি?
রতন : হয়েছিলো একটা কিন্তু সাক্ষীর অভাবে মামলা খারিজ হয়ে গেছে। এখানে সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ কোনো বিষয়ে মুখ খোলে না।
রফিক : কিন্তু রজতের মা? তিনিও সাক্ষ্য দেননি?
রতন : নাহ্
রফিক: কিন্তু কেন! কারণ কী?
রতন : বন্ধু সেটাই তো প্রশ্ন।
এসময় চিৎকার করতে করতে আবুল আসে।
আবুল : কি চাই, ওই মিয়ারা কি চাই? অনুমতি ছাড়া এইখানে ঢুকছেন ক্যান?
রতন : রজতের মা’র সাথে দেখা করতে চাই।
আবুল : বিষয়ডা কি? আপনেরা কারা?
রতন : আমরা সাংবাদিক। রজতের ঘটনাটা নিয়ে একটু কথা বলবো।
আবুল : ওই মিয়ারা পুরান প্যাচাল বাদ দেন। এইসব নিয়া এখন আর কথা কওনের টাইম নাই। যান এইখান থিকা।
রতন : আমরা তো আপনার কথায় যাবো না। ওনাকে ডাকেন কিছু কথা বলে চলে যাবো। আর আপনার পরিচয় কি?
আবুল : আমার পরিচয় দিয়া কামকি? আপনেরা এইখানে দাড়ান, আমি ডাইকা আনতাছি। ও মাসিমা, মাসিমা।
ডাকতে ডাকতে ভেতরে চলে যায় আবুল।
রফিক: লোকটার আচরণ কেমন সন্দেহজনক। তাই না?
রতন : হ্যাঁ আসলেই সন্দেহজনক।
রফিক: চারদিক কেমন ভীতিকর পরিবেশ।
রতন : হ্যাঁ ঠিক বলেছ।
রজতের মা পেছনে রজতের স্ত্রী প্রবেশ করে। নমস্কার বিনিময় হয়। তাদের পেছনে আবুল ঢোকে।
রতন : মাসিমা আমি স্থানীয় সাংবাদিক রতন আর ও আমার বন্ধু রফিক, সহিংসতা প্রতিরোধে জনতার প্রতিনিধি হিসেবে আপনাকে দেখতে এসেছে।
রফিক: শুধু দেখতে নয় মাসিমা জানতেও এসেছি কেন এরকম হলো? কেন?
আবুল তেড়ে আসে।
আবুল : ওই মিয়ারা কইলাম না এইসব প্যাচাল বাদ দেন।
বন্ধুও রেগে যায়।
রফিক: এই তুমি কে এখানে কথা বলার?
আবুল : আমি কে না? দেখামু আমি কে।
মা আবুলকে বাধা দেয়। আবুল এককোণে সরে যায়।
মা : বাবা, আমার ছেলে রজত মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোন অন্যায় করেনি। তবু, তবু তাকে আগুনে পুড়ে মরতে হলো-
মা কেঁদে ফেলে। রাগত বন্ধু।
রফিক : এখন কাঁদছেন! অথচ হত্যাকারীদের বিরূদ্ধে আপনি নিজেও তো সাক্ষ্য দিতে যাননি। কেন? কিসের এত ভয় আপনার?
মা: ভয়, কিসের ভয়? নিজেকেই প্রশ্ন করে দেখো। ঘটনা ঘটে যাবার কয়েক মাসের মধ্যেও তো তোমাদের দেখা পাইনি। কেনো? বল কেনো? আজ তুমি প্রশ্ন করছো কেন সাক্ষ্য দিতে যাইনি। সাক্ষ্য দিলেও রায়ের কোনো হেরফের হবে না, সেই সত্য আমি জানি বলেই যাইনি। সাক্ষ্য দিলে আমার মৃত্যুও হতে পারতো।
আবুল : মাসিমা আমি একটু বাজারথিকা আসি। এই আপদ তাড়াতাড়ি বিদায় করেন। অরা তো বিপদ এহনও টের পায় নাই। আর কথাবার্তা একটু সাবধানে বইলেন। বুঝলেন তো?
মাথা নাড়ে। আবুল বেরিয়ে যায়।
রফিক: ওই অদ্ভুত লোকটি কে মাসিমা?
ভীত মা ওদের অনুরোধ করে।
মা: বাবা তোমরা এখানে থেকো না। ওরা খবর পেলে তোমাদের যে কোনো বিপদ ঘটতে পারে। আমাদেরও বিপদ ঘটবে। তোমরা দয়া করে এখান থেকে চলে যাও বাবারা।
রফিক: মাসিমা। আমরা এখানে ভয় পেতে আসিনি ভয় দুর করতে এসেছি। আপনি বলুন লোকটা কে?
মা: ওর নাম আবুল। গ্রামের সকলে ওকে আবুইল্যা বলেই ডাকে। গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান আমাদের বাড়ীতেই বড় হয়েছে। কাজের ছেলে হলেও নিজের সন্তানের মতই যতœ করেছি ওর কিন্তু-অতি বিশ্বাসী কাজের লোক ওই আবুলই প্রথম রজতের দোকানে আগুন দিয়েছিল।
রফিক: কী বলছেন!
মা: হ্যাঁ, সাদউল্লাহ নামে একজন নেতা নামধারী সন্ত্রাসী এখানকার রাজনীতি সন্ত্রাস সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের ভিটামাটির ওপর ওদের নজর ছিল। প্রকাশ্যে বাড়ি থেকে উৎখাত করার জন্য হুমকি দিয়ে আসছিল সাদউল্লাহ। আমরা জানতাম না আমার ঘরে বেড়ে ওঠা এই আবুলই হচ্ছে ওর ডান হাত।
রতন : কি বলছেন! স্থানীয় প্রতিনিধিদের একথা জানান নাই?
মা : হ্যাঁ, সেদিন রজত জানিয়েছিল বলেইতো বিপদটা ঘটলো।
মালতী: হ্যাঁ, সেদিন কেউ ছিল না আমাদের পাশে। আমি রজতের স্ত্রী মালতি। সেদিন আমারই চোখের সামনে আমার স্বামীকে পুড়িয়ে মেরেছে সন্ত্রাসীরা। সেদিন রজত শহর থেকে দোকানের সদাই এনেছিল বলে রাতে সে দোকানেই ছিল। খবর পেয়ে সাদুল্লার বাহিনী দোকানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুরো এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করে ওরা। গ্রামবাসীরা কেউ কাছে আসার সাহস করেনি।
রফিক: তারপর?
মা কান্নার জন্য আর কথা এগুতে পারে না।
রতন : শোন বন্ধু, স্থানীয় সাংবাদিক হিসেবে আমি যতটুকু জেনেছি- রাজনীতি করার জন্য নয় আসলে রজতের জমিজমা ও ভিটার ওপর নজর ছিল সন্ত্রাসী সাদুল্লার। রাজনীতি এখানে উছিলা মাত্র।। সেই রাতে সাদুল্ল্যা বাহিনী একদিকে রজতের পরিবারের সবাইকে ওই গোয়াল ঘরে আটকে রাখে। অন্যদিকে রজতকে দোকানের ভিতরে আটকে রাখে।
বন্ধু: রজত তখন কী করল?
স্ত্রী : রজত তখন মই বেয়ে দোকান ঘরের বেড়া কাটার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। বাইরে তখন সাদুল্ল্যা বাহিনী উল্লাস করছে।
রতন : ওদিকে বন্দী রজতের মা ও বউ চিৎকার করে গ্রামবাসীদের ডাকছে। কিন্তু কেউ সাড়া দিচ্ছে না। চালের বেড়া কেটে মাথা ও বুক বের করে যখন রজত দেখে তারই বিশ্বাসী কাজের লোক আবুইল্ল্যা সন্ত্রাসী সাদুল্ল্যার দলের সাথে। আবুইল্ল্যা নারায়ে তাকবির বলে কেরোসিন ঢেলে দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। রজত নিথর হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। অসহায় রজত। কোথাও কেউ নেই! কার কাছে সাহায্য চাইবে সে? গ্রামের মানুষ কি তবে ভয়ের কাছে নত হয়ে গেল? এরই মধ্যে রজতের গায়ের কাপড়ে আগুন ধরে যায়। কিন্তু, আগুন নেভানোর কোনো চেষ্টা করে না সে। একবার চিৎকারও করলো না, সাহায্যও চাইলো না, কোন দয়াভিক্ষাও করলো না। শুধু দু’হাত বাড়িয়ে আগুনটাকে জাপটে ধরলো।
রফিক: আশ্চর্য!, এমন একটা ঘটনার পর আপনারা কিভাবে, কোন যুক্তিতে আবুলকে ক্ষমা করে নিজ বাড়ীতে আশ্রয় দিয়ে রেখেছেন? ছেলের খুনীকে ক্ষমা করে দেবেন? বলুন? না না না এটা হতে পারে না। এরাই অরাজকতা সৃষ্টি করে দেশের শান্তি নষ্ট করছে জনগণকে পুড়িয়ে মারছে আগুনে। এদের বিরুদ্ধে না দাঁড়ালে-
দ্রুত প্রবেশ করে আবুল।
আবুল : কি ব্যাপার, আপনেরা অহনও যান নাই? মাসিমা সাদুল্ল্যা ভাইয়ের লোকেরা এই পথে আসতেছে, আপনি ভিতরে চইলা যান। জানেনই তো অগো তো বিবেক বলতে কিছু নাই, কখন কি কইরা বসে।
সকলেই থমকে যায়। সাংবাদিক, বন্ধু ও মা একে অন্যের দিকে তাকায়।
মা: ভগবান-এমন এক দুর্ভাগা সময় , অতিথিকে ঘরের দরজা থেকে বিদায় করে দিতে হয়! বাবা, ওনাদের কি হবে বাবা?
আবুল : তাগো ব্যবস্থা আমি করতাছি। আপনেরা ভিতরে যান। যান। সাদুল্ল্যার বাহিনী এইখানে আসলে কেলেঙ্কারী হইয়া যাইব।
মা ও স্ত্রী চলে যায়। আবুল ওদের দিকে ফেরে।
আবুল : ওই মিয়ারা বাচতে চাইলে আপনেরা যান এইখান থিকা।
রফিক: আমরা তো তোমার কথায় যাবো না আবুল। কোনো সন্ত্রাস আমাদের ফেরাতে পারবে না। আমরা প্রতিরোধ করতে এসেছি।
আবুল রেগে যায়।
আবুল : আপনারা এখানে আসছেন কোন সাহসে? জানেন কোথায় হাত দিছেন? কে আপনাদের এইখানে আসতে বলছে? আর একটা কথা বলবেন না। সোজা হাঁটেন। যান এইখান থেকে। বাচতে চাইলে ভাগেন।
রফিক: আমরা জাগ্রত জনতা। আমরা যাবো না। আমরা প্রতিরোধ করবো।
রফিক আবুলের গালে চড় মেরে দেয়।
রফিক: হারামির বাচ্চা, সাদুল্যার ভয় দেখাস্ ওরা এখন পুলিশের ভয়ে আছে। তোদের মত সন্ত্রাসীদের জন্যই আজ দেশের বিপদ।
সাংবাদিকও আবুলের উপর হাত তোলে।
আবুল : আমারে মাফ করেন। আমারে মাফ করেন।
রফিক: এইবার আর মাফ নাইরে হারামির বাচ্চা, এইবার মাফ নাই। এই বাংলায় তোদের মত সন্ত্রাসীর কোন মাফ নাই। চলো ওই বাহিনীকে আমরা রুখবো। মানুষ পুড়িয়ে মারার অপ-রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। প্রতিবাদ যথেষ্ট না হলে প্রয়োজনে প্রতিরোধ করতে হবে। নিজের দেশ বাঁচাবার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে আমাদেরকেই।
রতন : পৃথিবী থেকে নির্মূল হবে সন্ত্রাস। বন্ধ হবে অপরাজনীতি। মানুষ ফিরে পাবে নিরাপদ জীবন যাপন। এই আমাদের প্রত্যাশা।
সবাই গান ধরে আমরা করবো জয়।

সমাপ্ত....

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.