![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চরিত্রলিপি..........................................................................................................
১. জাহিদ............................
২. সুপ্রভা............................
৩. মিতু...............................
৪. তানিম............................
৫. রনি................................
----------------------------------------------------------------------------------------------------
দৃশ্য : ১
চরিত্র : জাহিদ, সুপ্রভা
..................................................
মোবাইলের ভিডিও অন করে জাহিদ। সামনে এসে বসে।
জাহিদ : বন্ধুরা, চলে যাবো। তবে যাবার আগে সব মানুষই যা করে, আমিও তাই করছি। আমার আত্মস্বীকৃতিটা রেকর্ড করে রাখছি। কিন্তু
যাবো যে, আসলে কোথায় যাবো? আচ্ছা পৃথিবীর কোথাও কী এমন কোনো জায়গা আছে যেখানে গেলে দু’দন্ড শান্তি মিলতে পারে? তবুওতো তার সন্ধানে যেতে হবে-
এসময় সুপ্রভার ভিডিও কল আসে। বিরক্তি নিয়ে রেকর্ডিং অফ করে কল রিসিভ করে জাহিদ।
জাহিদ : সুপ্রভা কি ব্যাপার ফোন দিলি কেন? কাজ করছিলাম।
মুখ বাঁকা করে সুপ্রভা।
সুপ্রভা : কাজতো করবিই। তোরতো সারাক্ষণই কাজ। কাজ ছাড়া তোকে পাওয়া যায় কখন বল? তুইতো ঘুমাতে ঘুমাতেও কাজ করিস। সারাক্ষণ শুধু জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। বুদ্ধিজীবি মানুষ।
জাহিদ : হ্যাঁ, তাহলে বাবা কাজের কথাটাই বলো?
সুপ্রভা : লকডাউন তো তুলে নিচ্ছে রে। মার্কেট সব খুলে যাচ্ছে। ঈদ শপিং হবে না? কতদিন মার্কেটে যাই না।
জাহিদ : তোর মরতে ইচ্ছে হয়, তুই যা। তবে এমন মার্কেটে যাস যেন সেখানে কেনাকাটা করলে কাফনের কাপড়টা ফ্রি দেয়।
সুপ্রভা : আরে কি বলিস, করোনা তো আস্তে আস্তে বিদায় নিচ্ছে। কোনো সমস্যা হবে না। আসলে তুই সাথে না থাকলে কবে ঈদ শপিংয়ে গেছি বল? তোকে ছাড়া কোনো মজা নেই। মরে তো মানুষ যে কোনো যেতে পারে।
জাহিদ : এমন মৃত্যুতে আমার আগ্রহ নেই, যেটা শুধু পরিসংখ্যানে মাপা হয়। আমাকে মাফ করো।
সুপ্রভা : আরে ভাইরাস তোকে ধরবে না। আর এ ভাইরাস আমাদের কিছুই করতে পারবে না। কত ভাইরাস দেখলাম। আমরা হলাম বাঙালি জাতি। সব হজম হয় আমাদের।
জাহিদ : তুই হলি টিপিক্যাল বাঙালি চরিত্র। সবকিছুই গায়ে ঠেলিস।
সুপ্রভা : ও মা! গায়ে ঠেলার কী আছে? পরিসংখ্যান দেখ? গত দিনগুলোর রেজাল্ট দেখ? সারা দুনিয়ার সাথে মেলা।
জাহিদ : শোন, উগান্ডায় কোনো করোনা ভাইরাস নেই জানিস।
সুপ্রভা : তাতে আমাদের কী?
জাহিদ : কেন নেই শোন। সেদেশের প্রেসিডেন্টকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেছিলো- এটা কিভাবে সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেছিলেন- আমাদের তো করোনা পরীক্ষা করার কোনো যন্ত্রপাতিই নেই, তাই করোনাও নেই।
সুপ্রভা হেসে ওঠে।
জাহিদ : অত হেসো না। পৃথিবী কি অবস্থায় আছে সে ধারণা যেহেতু তোমার নেই সুতরাং মিথ্যে পরিসংখ্যানের লাশ হতে আমার কোনোই আগ্রহও নেই। যেখানে মানবজাতি হুমকির সম্মুখীন লক্ষ লক্ষ মানুষের একবেলা খাবার জুটছে না সেখানে তুমি আছো ঈদ শপিংয়ের আনন্দ নিয়ে। মানুষ পারেও। তোমরাই সভ্যতার উৎকৃষ্ট নিদর্শন। তুমি এখন বিদায় নিতে পারো।
জাহিদ লাইন কেটে দেয়।
দৃশ্য : ০২
চরিত্র : জাহিদ, মিতু
............................................
মোবাইলের ভিডিও অন করে জাহিদ। এসময় আবার মিতুর ভিডিও কল
মিতু : জাহিদ ভাই-
জাহিদ : কি ব্যাপার মিতু? আজ অফিসে যাওনি?
মিতু : আমাদের এলাকা নতুন করে আবার লক ডাউন জাহিদ ভাই। কিভাবে যাবো? ভাবলাম আপনাকে জানাই।
জাহিদ : হুম.., খুবই বাজে অবস্থা মিতু। বাদ দাও, অফিসে যেও না।
মিতু : অফিস কামাই করলেতো বেতন কাটা যাবে। এমনিতেই পুরো বেতন দেবে কিনা তাই নিয়ে টেনশানে আছি। বলতে পারেন উভয় সংকট। বাইরে বেরোলে করোনায় মরো আর ঘরে থাকলে না খেয়ে মরো।
জাহিদ : হলে কী আর করবে? যাও?
মিতু : আপনি যাবেন না জাহিদ ভাই?
জাহিদ : না। বিশ্ব জুড়ে ছেলেখেলা চলছে না, ছেলেখেলা চলছে এখানে। তামাশা আর কি। একটা জগাখিচুড়ী অবস্থা। একদিকে চলছে লকডাউন আর অন্যদিকে খুলে দেয়া হয়েছে শপিংমল, দেদারসে চলছে গাড়িঘোড়া। একদিকে নিরন্ন মানুষ আর অন্যদিকে আনন্দের নানান আয়োজন। উদরপূর্তির উৎসব লেগে গেছে কিছু মানুষের।
মিতু : আচ্ছা জাহিদ ভাই। রাখছি।
জাহিদ : আমাকে জানিও কী হলো।
জাহিদ ফোন রেখে চিন্তিত। এ সময় ব্যাংকের লোক ভিডিও কল দেয়।
তানিম : জ্বী,জাহিদ সাহেব..ব্যাংক থেকে তানিম বলছিলাম-
জাহিদ : হ্যাঁ, তানিম সাহেব, কি খবর?
তানিম : এইতো ভাই আছি। কেটে যাচ্ছে করোনার ভয়ে ভয়ে। ব্যাংকের কাজ বোঝেনই তো।
জাহিদ : তা কি ব্যাপার? কোনো কাজে? প্রণোদনার-
তানিম : আরে প্রণোদনার উন্মাদনা তো বহুদুর, এ মাসের ব্যাংক লোনের কিস্তির টাকাটা তো জমা দিলেন না ভাই।
জাহিদ : জমা দেবো মানে!! সব ধরনের লোনের সুদতো ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
তানিম : আরে ভাই সেটাতো মুখে মুখে। ঝোপ বুঝে কোপ হবে বুঝলেন না। তাছাড়া কাগজে-কলমে এমন কিছু এখনও হয় নাই।
জাহিদ : বলেন কি!! আমিতো আরো নিশ্চিন্তে কিস্তির টাকাটা অন্য কাজে খরচ করে ফেলেছি। বৈশ্বিক সংকট বোঝেনইতো। পরিবার চালাতে হয়। এদিকে অফিসও বেতন আটকে রেখেছে।
তানিম : ভাই, কিচ্ছু করার নাই। যেভাবে পারেন কিস্তির টাকা জমা দেন। তা না হলে বোঝেনইতো...
তানিম লাইন কেটে দেয়। মাথায় হাত জাহিদের।
জাহিদ : (স্বগত) যারা কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে রেখেছে, যারা মেরে খাচ্ছে জনগণের টাকা তাদের তো কিছু বলছেন না। এরা পারবে শুধু নিরীহ আর বিপদে পড়া মানুষদের সাথে।
এসময় রনির ভিডিও কল।
রনি : ভাইয়া
জাহিদ : হ্যাঁ রনি বল। কি খবর ওদিকের? আমার বাড়ি ফিরতে আরো কয়েকদিন লাগবে।
রনি : ইয়া, বাবার অবস্থা ভালো না।
জাহিদ : বলিস কি! কেন কি হয়েছে বাবার?
রনি : বুকে ব্যাথা।
জাহিদ : বুকে ব্যাথা তো হাসপাতালে নিস নাই?
রনি : অন্তত দশটা হাসপাতাল ঘুরে এসেছি ভাইয়া। কোথাও কোনো চিকিৎসা মেলেনি।
জাহিদ : কেন?
রনি : কোথাও অন্য কোনো ট্রিটমেন্ট নেই। সবাই বলে আগে করোনা চেক করে আনেন। অথচ একটা লোক বুক খামচে ধরে পড়ে আছে। সে আমার বাবা। কোনো হাসপাতালেই করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট শো না করলে অন্য কোনো রোগী ভর্তি নিচ্ছে না।
জাহিদ : তোরা এখন কোথায়?
রনি : বাসায় ফিরে এসেছি ভাইয়া।
জাহিদ : বাবার অবস্থা এখন কেমন?
রনি : নেই।
জাহিদ : নেই মানে!!!
রনি এবার কান্নায় ভেঙে পড়ে।
রনি : বাবা বেঁচে নেই ভাইয়া। আমরা এখন কোথায় যাবো ভাইয়া। তুমি এসো ভাইয়া।
জাহিদ একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসতে থাকে।
জাহিদ : বাবা নেই। করোনায় না, করোনার কারণে বাবা নেই। আগামী পৃথিবীর জন্য ভয়াবহ বার্তা নিয়ে সারা পৃথিবী জুড়ে সংক্রমিত হচ্ছে নভেল করোনা ভাইরাস। মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায়, স্বাস্থ্য রক্ষায় আজ ব্যর্থ দাম্ভিক সভ্যতা। পূঁজিবাদ আর ভোগবাদের তাড়নায় মানুষ লুণ্ঠন করছে, শোষণ করছে সর্বংসহা ধরিত্রীকে। আর কতো সহ্য করবে ধরিত্রী? এ হচ্ছে তার প্রতিশোধ। কিন্তু আমরা এখন কোথায় যাবো? হা হা হা... সাবধান, মানুষের হাতে ক্ষয় হয়ে যাওয়া সভ্যতার কাছে নিগৃহীত পৃথিবী মেরামতের কাজ চলছে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিরাপদে থাকুন। ভাবুন আগামীর ভাবনা।
(হাসতে থাকে পাগলের মতো)
সমাপ্ত
©somewhere in net ltd.