নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনাকে লালন করি স্বদেশি হাওয়ায়

মাজহার পিন্টু

একজন মানুষ

মাজহার পিন্টু › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভিযাত্রীর মহাকাব্য

১৭ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৫০

বঙ্গবন্ধু একটি বহতা নদীর মতো, প্রতিদিন নিত্যনতুন রূপে বাংলাদেশসহ বিশ্বের দেশে দেশে তাঁকে নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে। প্রকাশিত হচ্ছে নতুন নতুন বই। প্রকাশিত হচ্ছে ছড়া কবিতা সুর সঙ্গীত। বিভিন্ন ভাষায় বঙ্গবন্ধুর উপর প্রকাশিত সর্বশেষ বইয়ের সংখ্যা কত এ হিসেব করা কষ্টসাধ্য। কারণ প্রতিদিনই বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাঁর ওপর বই বের হচ্ছে। এক কথায় বঙ্গবন্ধু বিশ্ব পরিমন্ডলে এক অমূল্য সম্পদ। তাঁকে নিয়ে বিশ্বের দেশে দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে গবেষণা হচ্ছে, তাঁর দেয়া বিভিন্ন বক্তব্য, বিবৃতি, ভাষণ প্রভৃতি থেকে বিশ্ব নেতারা গবেষণা করে তথ্যউপাত্ত নিজেদের জীবনে, রাজনীতিতে, রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রয়োগ করছেন। এখানেই জাতির পিতার সার্থকতা। বিশ্ব রাজনীতিতে তিনি একজন দার্শনিক, শিক্ষাগুরু, পথপ্রদর্শক। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালির নিজস্ব একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখন্ড প্রতিষ্ঠার জন্য যে মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটেছিল তিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলা ভাষায় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যত কবিতা লেখা হয়েছে তার নিকটতম তুলনা দিতে গেলে বঙ্গবন্ধুর নামটিই উল্লেখ করতে হয়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং তার অবিসংবাদিত নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবদ্দশায় যেমন, তেমনি তাঁকে ঘাতকেরা নৃশংসভাবে হত্যা করার পরও বন্দিত হন কবিতা, গান ও ছড়ার পাশাপাশি সৃজনশীল অন্যান্য মাধ্যমের কারুকারদের রচিত নানা মাত্রার কাজের মাধ্যমে। এখনো সে ধারা অব্যাহত। তাকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালে বা পরবর্তী সময়ে আরো অসংখ্য কবিতা ও গান রচিত হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম দেখেছেন, যুদ্ধ করেছেন কিংবা কোনো না কোনোভাবে এ সংগ্রামে সংশ্লিষ্ট থেকেছেন কিংবা সমর্থন জানিয়েছেন, দুই বাংলার এমন প্রায় সব কবিই তাদের কোনো না কোনো কবিতায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেছেন।
'আইউব ব্যাটা মুরগি চোর,
ব্যাড়া ভাইঙ্গা দিলো দৌড়।
ধরলো ক্যাডা, ধরলো ক্যাডা?
শেখ মজিবর, শেখ মজিবর'।
প্রবল জনরোষের মুখে '৬৯ সালের ২৪ মার্চ পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইউব খান পদত্যাগ করলে দেশব্যাপী বয়ে যায় স্বতস্ফূর্ত আনন্দের বন্যা। জনতার মুখে মুখে তখন এই ছড়া, কোথাও কোথাও পোস্টার ও লিফলেটেও। কেউ জানে না কে তার রচয়িতা। সেই ছড়াতেও বঙ্গবন্ধুর নাম।
ইলিশ মাছের তিরিশ কাটা
বোয়াল মাছের দাড়ি
ইয়াহিয়া ঝাড়– দেয়
শেখ মুজিবের বাড়ি।
সাতচল্লিশ পরবর্তী গণ আন্দোলনের স্লোগান, প্ল্যাকার্ড, পোস্টারেও আমরা পাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে।
'মুজিব বাইয়া যাওরে
নির্যাতিত দেশের মাঝে
জনগণের নাওরে মুজিব
বাইয়া যাওরে
ও মুজিবরে, ছলেবলে চব্বিশ বছর রক্ত খাইল চুষি
জাতিরে বাঁচাইতে যাইয়া
মুজিব হইল দূষীরে...
৭০ এর নির্বাচনের সময় গ্রামোফোন রেকর্ডে ধারণ করা হয় এই ঐতিহাসিক গান, যার বদৌলতে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি ঘরে সুরে ও ছন্দে পৌঁছে যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। এ গানের আবেদন মানুষের কাছে এখনো অবিস্মরণীয়। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গান হয়ে ওঠে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ ও প্রেরণাদৃপ্ত করার অপরিমেয় উৎস। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ছিল আমাদের সেই উত্তাল সময়ের সেইসব গানের সম্প্রচারে শক্তিশালী হাতিয়ার। এর বেতার তরঙ্গে যেমন মুক্তিযুদ্ধ, তেমনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত গানও আকাশ-বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সাড়ে সাত কোটি মানুষের আর একটি নাম/ মুজিবর, মুজিবর, মুজিবর/ সাড়ে সাত কোটি প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেলাম..., এই গান শুনলে, এখনও মন চলে যায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সেই উদ্দীপ্ত দিনগুলোতে। স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে ওই সময় গাওয়া 'আমার নেতা শেখ মুজিব/ তোমার নেতা শেখ মুজিব' গানটিও উদ্দীপ্ত করে মুক্তিপাগল দেশবাসীকে। শিল্পী আব্দুল জব্বার স্মৃতি কথায় বলেছেন, ‘বাবা একদিন আমাকে ডেকে বললেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এমন একটা গান বানা যেমন একুশে ফেব্রুয়ারিকে নিয়ে আছে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’। যেই কথা সেই কাজ। বাবার আদেশ পালন করতে ছুটে গেলাম কবি ফজল-এ-খোদার কাছে। লেখা হলো মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সেই অমর গান ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’। সুর করে গানটি বাবার সামনেই গাইলাম। বাবা বিস্ময়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, কি চাস তুই আমার কাছে। মন্ত্রী হবি? আমার উত্তর ‘না’। বেতারের বড় একটা চেয়ার দেই? এবারো আমার উত্তর ‘না’। তখন বাবা বলেছিলেন, তাহলে তুই কি চাস? উত্তরে আমি বলেছিলাম, আমার এখনো অনেক গান গাওয়া বাকি। আমি সারা জীবন গানই গাইতে চাই। বাবা তখন আমার মাথায় হাত রেখে বললেন, ওরে পাগলা তুই গানই গা সারাজীবন।’ (বাংলা ইনসাইডার, ৩০ আগস্ট ২০১৮)। এই স্নেহভাজন শিল্পীকে বঙ্গবন্ধু তাঁকে ডাকতেন ‘পাগলা’ বলে। তিনি বঙ্গবন্ধুকে বাবা ডাকতেন আর বঙ্গমাতাকে মা ডাকতেন। বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম বঙ্গবন্ধুর ‘করিম ভাই’। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তিনি গানও লিখেছেন। বিভিন্ন জনসভায় বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের পূর্বে গান গাইতেন তিনি। ১৯৬৯ সালে সুনামগঞ্জের জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘আমি করিম ভাইয়ের গানের খুবই ভক্ত। শেখ মুজিব বেঁচে থাকলে করিম ভাইও বেঁচে থাকবেন। করিম ভাই যেখানে শেখ মুজিব সেখানে।’ ১৯৭২ সাল। বিডিআর দরবার হলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি গান পরিবেশন করেন সায়দুর রহমান বয়াতি । গান শুনে মুগ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধু তাকে একটি ঘড়ি উপহার দেন। ১৯৬৭ সালের নববর্ষ। বঙ্গবন্ধু তখন কারাবন্দী। অন্য রাজবন্দীদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু নববর্ষ উদযাপন করেন। ‘আজ বাংলা নববর্ষ, ১৫ই এপ্রিল। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি নূরে আলম সিদ্দিকী, নূরুল ইসলাম আরো কয়েকজন রাজবন্দী কয়েকটা ফুল নিয়ে ২০ নম্বর সেল ছেড়ে আমার দেওয়ানীতে এসে হাজির। আমাকে কয়েকটা গোলাপ ফুল দিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাল। বিকেলে পুরানো বিশ সেলের সামনে নূরে আলম সিদ্দিকী, নূরুল ইসলাম ও হানিফ খান কম্বল বিছাইয়া এক জলসার বন্দোবস্ত করেছে। বাবু চিত্তরঞ্জন সুতার, শুধাংশু বিমল দত্ত, শাহ মোয়াজ্জেমসহ আরো কয়েকজন ডিপিআর ও কয়েদি, বন্দী জমা হয়েছে। আমাকে যেতেই হবে সেখানে, আমার যাবার হুকুম নেই, তবু আইন ভঙ্গ করে কিছু সময়ের জন্য বসলাম। কয়েকটা গান হলো, একজন সাধারণ কয়েদিও কয়েকটা গান করল। চমৎকার গাইল।”(কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা নম্বর ২২২-২২৩)। প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে রানু মুখোপাধ্যায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘একজনের কথা বলতেই হবে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। শুনেছি, জেলবন্দি অবস্থায় বাবার গান গাইতেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেই আমরা যখন সপরিবারে সেখানে যাই, মনে আছে বাবাকে দেখে তাঁর চোখে জল।’ (জেলে বাবার গান গাইতেন শেখ মুজিব/রানু মুখোপাধ্যায়)।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান গেয়েছেন অমর শিল্পী আবদুল আলীম, আবদুল জব্বার, অংশুমান রায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, অমর পাল প্রমুখ। বঙ্গবন্ধুর অত্যধিক প্রিয় ছিল রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি। যে গানটিকে পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত করেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘নাটক নয়, উপন্যাস নয়, কবিগুরুর গান ও কবিতাই আমার বেশি প্রিয়। সব মিলিয়ে এগারো বছর কাটিয়েছি জেলে। আমার সব সময়ের সঙ্গী ছিল এই সঞ্চয়িতা। কবিতার পর কবিতা পড়তাম আর মুখস্থ করতাম। এখনও ভুলে যাইনি। এই প্রথম মিয়ানওয়ালি জেলের ন’মাস সঞ্চয়িতা সঙ্গে ছিল না। বড় কষ্ট পেয়েছি। আমার একটি প্রিয় গানকেই ‘আমার সোনার বাংলা’ আমি স্বাধীন দেশের জাতীয় সঙ্গীত করেছি। আর হ্যাঁ, আমার আর একটি প্রিয় গান ডি এল রায়ের ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’। দুটি গানই আমি কাজের ফাঁকে গুনগুন করে গেয়ে থাকি।’ (সোনার বাংলা তোমায় ভালোবাসি/মুহম্মদ সবুর)। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশের রণসঙ্গীত হয় কাজী নজরুল ইসলামের ‘চল চল চল’। কবি কাজী নজরুল ইসলামকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছেন। ১৯৭২ সালে তাঁকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।
বঙ্গবন্ধুর আরেকটি প্রিয় গান ছিল ‘মা আমার সাধ না মিটিলো, আশা না ফুরালো’। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, এ গানটির কথা। বঙ্গবন্ধু পান্নালাল ভট্টাচার্যের গাওয়া এই শ্যামা সঙ্গীতটি শুনতেন প্রায়ই। জননেত্রীকে নিয়ে নির্মিত ‘হাসিনা: এ ডটার্স টেল’ সিনেমায় এ গানটি বারবার ব্যবহৃত হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাবা করাচি থেকে ঢাকা ফিরে এলেন। তখন এই গানটা, পান্নালালের গাওয়া ‘মা আমার সাধ না মিটিল, আশা না ফুরাল, সকলি ফুরায়ে যায় মা’ ওইসময় দেখতাম আব্বা বারবার এ গানটা শুনে যাচ্ছেন। বারবার শুনে যাচ্ছেন। প্রতিদিন এ গানটি কতবার যে বাজানো হতো তার ঠিক নেই।’ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাংলা ভাষা, বাঙ্গালী সংস্কৃতি। আজ তিনি নেই, আছে তার আদর্শ। তারই পৃষ্ঠপোষকতায় আজ বিশ্বের মাঝে বাঙ্গালী বাংলা সংস্কৃতি স্থান করেছে। আসুন আমরা বঙ্গবন্ধুর মত বাঙ্গালী সংস্কৃতি হৃদয়ে ধারণ করে, জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শিল্পে, পোশাকে, জীবনাচারে বাঙ্গালী সংস্কৃতি চর্চা করি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে অনেক গান লেখা হয়েছে, কিন্তু ১৯৭১ সালে লেখা গানগুলিই অন্যরকম। ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গান লিখেছিলেন ওপার বাংলার প্রখ্যাত কবি, ছড়াকার কাহিনিকার ও গীতিকার লক্ষীকান্ত রায়। তাঁর লেখা সেই গানটিই শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা প্রথম বাংলা গান ছিল বলে সম্প্রতি তিনি অভিমত প্রকাশ করেছেন। লক্ষীকান্ত রায়ের লেখা “স্বাধীনতাকামী ‘বাংলাদেশের’ পরিত্রাতা কে? / সাড়ে সাত কোটি বাঙালির আজ ভাগ্য বিধাতা কে? / একটি সুরেতে কে দিয়েছে বেঁধে বাঙালির অন্তর? / সেতো শেখ মুজিবুর! ধন্য হে মুজিবুর!!” গানটি লেখার আটাশ দিন পরে অংশুমান রায়ের অনন্য ও অত্যন্ত সুপরিচিত গান “শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণী বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।” গানটি লেখা ও রেকর্ড করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন বিমানে লন্ডন থেকে বঙ্গবন্ধুর সহযাত্রী হয়েছিলেন ভারতীয় কূটনীতিক শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জি। তিনি তার ‘বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় সঙ্গীত’ বইয়ে লিখেছেন, ‘১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে এলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁকে স্বাগত জানালেন ব্রিটিশপররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিভাগের কর্মকর্তা ইয়ান সাদারল্যান্ড ও লন্ডনে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার আপা বি পন্থ। আমাকে দেখে শেখ মুজিব বলেন, ‘ব্যানার্জি, এখানেও আছেন!’ সেসময় ইন্দিরা-মুজিব টেলিফোনে আলাপ হয়। এরপর আমরা রওনা দেই বাংলাদেশের পথে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানি নিয়ে বিমানটি উড়ছে। বঙ্গবন্ধু জানালা দিয়ে শ্বেতশুভ্র মেঘের দিকে অপলক তাকিয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ পর গাইতে লাগলেন, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। তার চোখে জল। পৃথিবীর ইতিহাসে এক অমর মহাকাব্যের নাম বঙ্গবন্ধু। বাইগার আর মধুমতীর জলে সিক্ত হয়ে যে খোকা একদিন কেঁদে উঠেছিলো টুঙ্গীপাড়ায় সেই খোকাই সময়ের নদীর স্রোতে বেড়ে উঠে হয়ে যায় সকলের বঙ্গবন্ধু। ঊনিশশো ঊনসত্তর সালের উত্তাল দিনগুলোতে, চারদিকে যখন আগুনের ফুলকিতে তিলে তিলে মাতৃগর্ভে তৈরি হচ্ছিল মুক্তি, তখনই চট্টগ্রামের সন্তান ছাত্রনেতা রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাকের দেওয়া উপাধিতে ইতিহাসের খ্যাতিমান খোকা নিমিষেই হয়ে উঠে সকলের ‘বঙ্গবন্ধু’। 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে টেকনাফ হতে তেঁতুলিয়া ছাপিয়ে হিমালয়-আন্দিজ। বাইগার-মধুমতীর স্রোত মিশে যায় সুদূর হাডসন আর টেমসের স্রোতে। একজন শেখ মুজিব অবিরল স্রোতে বঙ্গবন্ধু হয়ে বঙ্গোপসাগর পার হয়ে পৌঁছে যান আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের কূলে। পৃথিবীর আরেক কীর্তিমান ক্যাস্ট্রোর কাছে বঙ্গবন্ধুই হয়ে উঠেন হিমালয়ের প্রতীক। সাত মার্চের অনবদ্য ভাষণে নিউইয়র্কের নিউজ উইক ম্যাগাজিনের মূল্যায়নে তিনিই হয়ে উঠেন পৃথিবীর প্রথম 'পোয়েট অব পলিটিক্স'। লেলিন ছাড়া দ্বিতীয় আর কেউ নেই যার নাম বঙ্গবন্ধুর সমান উচ্চতায় স্বনিত হতে পারে। তাই মুজিব কেবল একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস নয়, মুজিব মানেই পৃথিবীর বহমান প্রেরণা, মুজিব মানেই পৃথিবীর অদ্বিতীয় বজ্রকণ্ঠ। শাহাদাত বরণের আগে ও পরে মুজিবকে নিয়ে সৃজনে-মননে ঘটেছে বিপ্লব। এই সৃজন বিপ্লবের শস্যরূপে আমরা পেয়েছি প্রায় পঞ্চাশের অধিক মুজিবাশ্রয়ী গল্প, পেয়েছি অজ কবিতা, উপন্যাস ও গান। পেয়েছি নাটক, চলচ্চিত্র ও কাব্যনাট্য। ছড়া ও শিশুতোষ সাহিত্যে মুজিবের জীবন এসেছে বিভিন্ন আঙ্গিকে। গানে-প্রবন্ধে মুজিব ছড়িয়ে পড়েছেন মননশীল জগৎ হতে বিনোদন ও দেশাত্মবোধের অপ্রতিম সাম্রাজ্যে। প্রতিদিন আজও মুজিবকে নিয়ে নতুন কিছু না কিছু কেউ না কেউ সৃষ্টি করে চলেছেন। মুজিব আজ এক অনন্য সৃজন-বিপ্লবের নাম। মুজিবকে নিরন্তর সৃজনশস্যে আবিষ্কারের প্রয়াস আজ বর্ণিলভাবে বহমান।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাকে নিয়ে ৭১ থেকে গান, কবিতা রচনা হয়ে আসছে,এখনো হচ্ছে ভবিষ্যতেও হবে। গানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে যেমন স্মরণ করেন গীতিকার, সুরকার, শিল্পী, তেমনি মনে করেন সাধারণ জনগনও। যারা এ দেশ, দেশের মানুষ, দেশের মাটি, দেশের স্বাধীনতাকে মনে করেন তারা বঙ্গবন্ধুকেও মনে করেন। আর তাকে মনে করার মধ্যে দিয়ে তৈরি করেন ছড়া কবিতা সুর ও সঙ্গীত।

তথ্যসূত্র : কারাগারের রোজনামচা। জেলে বাবার গান গাইতেন শেখ মুজিব/রানু মুখোপাধ্যায়। সোনার বাংলা তোমায় ভালোবাসি/মুহম্মদ সবুর বাংলা ইনসাইডার, ৩০ আগস্ট ২০১৮ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.