![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সা ভা র ট্র্যা জে ডি র পো স্টা র ড্রা মা
আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে। ....
উপস্থাপক : অনেক স্নেহ, অনেক ভালোবাসা, অনেক মমতা, অনেক আন্তরিকতাকে ব্যর্থ করে দিয়ে সাভারের রানা প্লাজায় আটকে পড়ে যারা তিলে তিলে মরণযন্ত্রনা ভোগ করে চিরবিদায় নিয়েছেন, যারা অর্বণনীয় কষ্ট ভোগের পর উদ্ধার হয়েছেন, মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে জীবন বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন যেসব সাহসী মানুষেরা। তাদের সকলের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা,সহমর্মিতা এবং সমবেদনা— তাদের প্রতি উৎসর্গ করছি আমাদের প্রদর্শনী। সাভার ট্র্যাজেডি নিয়ে পোস্টার ড্রামা মেড ইন বাংলাদেশ।
একটি প্রতিবাদী ভাস্কর্য। আনন্দময় খেলা।
কোরাস : প্রজাপতি প্রজাপতি
কোথায় পেলে ভাই এমন রঙ্গীন জামা।
টুকটুকে লাল নীল ঝিলিমিলি অঁাকাবাঁকা।।
কোথায় পেলে ভাই এমন রঙ্গীন জামা।
কোরাস-১ : একটি জামা, একটি পোষাক, একটি পরিচ্ছদ, একটি বিখ্যাত ব্র্যান্ড। তার প্রতিটি পোষাকে সুতোর কি নিশ্ছিদ্র বন্ধন। রঙের কী বর্ণিল আভা। মসৃণ ত্বকের মত নিভাঁজ পোষাক। ফ্যাশনেবল কাটিং।
কোরাস-৪ : দামী কাপড়, ডলারে বিক্রি। দামী ক্রেতা -বিক্রেতা। অথচ এর পোষাক সৃষ্টির পেছনে কত শত শ্রমিকের অবিরত শ্রম, ঘাম, রক্ত মেশা, মেশা আছে কত মৃত্যুর মহাকাব্য।
কোরাস-২ : উন্নত দেশের, উন্নত মানুষের, উন্নত সমাজের, উন্নত বিলাসিদের, উন্নত পোষাক যা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশেরই কোনো দরিদ্র পরিবারের মেয়ে কিংবা ছেলের হাতে। যাদের সখ, সুখ, দুঃখ, আনন্দ গন্ডিবাঁধা সময়ের খাঁচায়। যাদের ঘরে কখনো সূর্যের আলো প্রবেশ করে না। যাদের জীবনে অমাবশ্যা পূর্ণিমার সন্ধান পায় না। বিশ্বাস হয় না? তাহলে একটু কষ্ট করে খুঁজে দেখবেন সেই দামী পোষাকের কোনো এক কোণে ছোট্ট করে লেখা আছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’
কোরাস : মেড ইন বাংলাদেশ’ ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ‘মেড ইন বাংলাদেশ’
কোরাস : স্বপ্ন আকাশে পায়রা ওড়ে
স্বপ্ন রঙিন মন
স্বপ্ন ঘেরা জগত জুড়ে স্বপ্নের জীবন।।
যুবক-১ : আমাদের স্বপ্ন ছিল, স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা ছিল বহুদুর। ভালোবাসার স্বপ্ন ছিলো ছিলো হাসিখুশি জীবনের মধুর স্বপন।
যুবক -২ : আমাদের জীবন ছিল সীমার মাঝেও অনেক অনেক আনন্দময়।
ক্লাসের ঘন্টা বাজে। সবাই হৈ হৈ করে ওঠে।
যুবক- ৩ : সেই এক ভোর। ব্যস্ত শহর।
যুবক -৪ : সেই এক সকাল। সময় দুষ্কাল।
যুবক-৫ : সময়টা ধূসর, কিছু কিছু মানুষের জটিল চলাফেরা। বিভ্রান্ত শ্রমিক। আগের দিনই ছিল অশনিসংকেত। কাজে যাব কি যাবো না জানি না। অস্বস্তিকর হলুদ হলুদ মূহুর্ত।
সবাই জড়ো হয়ে দাঁড়ায়।
গার্মেন্ট মালিক : অই, কি কই কানে যায় না? যা—সব ভিতরে ঢোক। কোনো সমস্যা নাই।
ভবন মালিক : আরে খালি আমরা কই? সরকারি লোক আইসা কালকা দেইখা বইলা গেল, কত কত টিভিআলারা দেখাইল। যা সব ভিতরে যা। কথা কানে না নিলে বিপদে পড়বি।
সবাই গুঞ্জন করে।
যুবক- ৬ : মালিকের আদেশ, যেতেই হবে কাজে। নয়তো কাটা যাবে বেতন। হাতে গোনা কয়টা টাকা তার থেকেও যদি কাটা যায় তাহলে খাবে কী?
যুবক-৭ : ভয় ভয় ভাবনা। ইচ্ছা না থাকলেও যেতেই হল সবাইকে। মালিকের হুমকিধামকিতে সবাই কাজে যেতে বাধ্য হলো।
যুবক-৮ : সে এক সকাল। ভয়ংকর কাল। আহ্।
যুবক-১ : বীভৎস
যুবক-২ : অকল্পনীয়
যুবক-৩ : তখন সকাল ৯টা। সকল শ্রমিকেরা যার যার কাজের জায়গায় ব্যস্ত। হঠাৎ ভারী কিছু শব্দ হলো। কেঁপে উঠলো ভবনটা। মনে হলো পৃথিবীতে শুরু হয়েছে কেয়ামত। তারপর শুধু অন্ধকার। শুধু হাহাকার। আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস।
সবাই এক সাথে চিৎকার করে পড়ে যাবে।
এবং এক এক করে উঠে সংলাপ বলবে।
যুবক-১ : অসীম অন্ধকার
যুবক-২ : যেন মরণ ফাঁদ
যুবক-৩ : চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ
যুবক-৪ : আহত শত শত মানুষ চাপা পড়ে আছে ধসে যাওয়া ভবনের বিশাল কংক্রিটের নিচে। চারদিকে মৃত্যুর বিভীষিকা।
যুবক -৫ : শত শত মানুষের আর্ত চিৎকার, শত শত মানুষের বাঁচার আকুতি।
যুবক-৭ : আমরা বাঁচতে চাই। আমরা বাঁচতে চাই। আমরা বাঁচতে চাই।
যুবক-৮ : বাইরে তখন চলছে অসংখ্য নাটক।
সবার অট্টহাসি।
যুবক-১ : কতিপয় হরতাল বিরোধী বিল্ডিং ধরে নাড়া দিয়েছে। তাই ভেঙ্গে গেছে।
যুবক-২ : কিছু চোর বিল্ডিংয়ে ঢুকেছিল জিনিসপত্র চুরি করতে।
যুবক-৩ : রানা আমাদের দলের কেউ নয়
যুবক-৪ : তদন্ত কমিটি গঠন হচ্ছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে তার সাজা হবে।
যুবক-৫ : উদ্ধার কাজে ধীরগতি সরকার ব্যর্থ। আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই।
যুবক-৫ : আমরা কোথায় যাবো?
যুবক-৭ : আমরা বাঁচতে চাই।
কোরাস- : আমরা অসহায়, আমরা বাঁচতে চাই......
কাঁদতে কাঁদতে এক বৃদ্ধের আগমন হাতে তার ছেলেমেয়ের ছবি।
বৃদ্ধ : আমি এহন কই যামু, কার কাছে যামু.......মা................ও মা, বাবা...........ও বাবাকেউ নাই— কেউ নাই..
কাঁদতে থাকে। যুবক-১ আসে।
যুবক-১ : ২০০৫ সালে গন্ধটা ধাক্কা মেরেছিল বাইপাইলের স্পেকট্রাম গার্মেন্ট ভবন ধসে পড়ার পর, পঁচা লাশের গন্ধ। ২০০৬ সালে গন্ধটা ফিরে এলো তেজগাঁওয়ের ফিনিক্স ভবনে। সেই গন্ধটাই ফিরে এলো কয়েক মাস আগে। আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনে আগুন লাগার পর ছাইচাপা পোড়া লাশের গন্ধ তীব্রতর হয়ে ওঠে। কিন্তু আমাদের যান্ত্রিক নির্দয় মন মেনে নেয় সব। ভুলে যাই সব । অতি তাড়াতাড়ি। আর এখন.. সাভারের রানা প্লাজার ভেতরে লাশ পচা গন্ধ আরও বেশি তীক্ষ্ণ আরো বেশি তীব্র। আহ কী অসহ্য কী অসহ্যÑ
বৃদ্ধ : মঙ্গলবার রাইতে আমার পোলায় আমারে ফোন কইরা কইল— বাবা, রবিবার ছুটি নিছি, বাড়ীত আইমু, এইবার বাড়ীত আইয়া তোমারে ডাক্তার দেখামু। সালমাও আমার লগে যাইব। কিন্তু-
কোরাস : বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ
১.
৩.
৪.
৫.
৬.
৭.
৮
বৃদ্ধ : বুধবার দুফুরে একজন ফোন কইরা কইলÑগার্মেন্টস বিল্ডিং ভাইঙ্গা পড়ছে। —ভাইঙ্গা পড়ছে... যেন আসমান ভাইঙ্গা পড়ছে——। ছুইটা আসলাম-..। কই? আমার বাজান? আমার মা? চাইরদিকে হাজার হাজার মানুষ। তখন মানুষ বিল্ডিংয়ের ভিতর থিকা যারা বাইচা আছে তাগো বাইর করার চেষ্টা করতাছে....। আহত মানুষের আহাজারি। রক্ত চাই রক্ত। আমিও রক্ত দিলাম।
যুবক-৫ :এ যেন মানবতার মহাকাব্য, রক্তের সম্পর্ক নেই, একেবারেই অচেনা মানুষটিকে রক্ত দিতে দ্বিধাহীন কত শত মানুষ। লাশ জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়া অচেনা বৃদ্ধকে সান্তনা দেয়ার ভাষা জানা নেই, তবু নিজের মায়ের মতই তাকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা।
বৃদ্ধ : রবিবার পর্যন্ত তাগো সাড়া পাওয়া গেছে। আমার মাÑ আমার বাজান- তারপর..... নাই.. নাই... নাই। কই যামু ? কার কাছে যামু ? এ কোন দেশ? আমার এক মাইয়া আগুনে পুইড়া মরল কোনো বিচার নাই। এক ছেলে এক মেয়ে বিল্ডিংয়ের নিচে চাপা পইড়া মরল। কোনো দয়া নাই, কোনো বিচার নাই। সব শেষ, স্বপ্ন শেষ, জীবনের আশা শেষ.. দেখার কেউ রইল না। এখন আছি- লাশের অপেক্ষায়, আছি- লাশের অপেক্ষায়- এখন আছি লাশের অপেক্ষায়........।
কোরাসের চিৎকার।
যুবক-২ : আহ চোখে দেখা যায় না, বুকের ভেতর শূন্যতা ভর করে। কী বীভৎস কী করুণ। ধংসস্তুপের ভেতর থেকে বেরিয়ে আছে মেহেদী রাঙা তরুনীর নির্জীব হাত, কারও কপালে লাল টুকটুকে টিপ। কারও পায়ে নূপূর। কারও চোখে কাজলের রেখা, কারও খেঁাপায় তখনও ফুলের গোছা। কারও হাতে কাঁচের চুড়ি। আর বাতাসে লাশের গন্ধ। বাতাসে লাশের গন্ধ।
বৃদ্ধ : কার দোষ ? কেন এমন হয় ? লাশের মিছিলে আরো আরো লাশের ভিড়। ভিড় বাড়ে। বাড়ে অসহায় মানুষের আহাজারি। রাজনীতির বিষফোঁড়া বড় হয় কিন্তু মানুষের কোন মূল্য নাই, জীবনের কোন মূল্য নাই, মনের কোনো মূল্য নাই?
কোরাস : বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ ১.
৩.
৪.
৫.
৬.
৭.
৮
যুবক-১ : উদ্ধার করা লাশের হাতে একটি চিরকুট... আব্বা—আম্মা আমারে মাফ কইরা দিও। তোমাদের আর ঔষধ কিনে দিতে পারব না। ভাই আব্বা—আম্মার দিকে খেয়াল রাখিস।... কী অসাধারণ দায়িত্ববোধ, কী অসম্ভব ভালোবাসা। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এমন কথা লেখার শক্তি, সাহস দেখে মুনাফালোভী ওই নর পিশাচদের মনে কি একবারও মানুষ হওয়ার ইচ্ছা জাগে না ?
যুবক-৪: না, আমরা এত মৃত্যুর খবর জানতে চাইনি। বাঁচা মরার লড়াইয়ের এমন করুণ মর্মান্তিক দৃশ্য আমরা দেখতে চাইনি। স্বজন হারানোর গগন বিদারি আহাজারি শুনতে চাইনি। আমরা কেমন করে মেনে নেব, কেন মেনে নেব এই নিষ্ঠুর ও নৃশংস মৃত্যুকে ?
বৃদ্ধ : তবুও বাঁচি সেই সব মানুষের জন্য, যারা নিজের জীবন বাজি রাইখা উদ্ধার কইরা নিয়া আসছে মানুষ। ভাঙ্গে ঘরবাড়ি, ভাঙ্গে আশা, ভাঙ্গে স্বপ্ন। ভাঙ্গে মানুষের মন। এই ভাঙ্গন যেন আরো ভাঙ্গন আনে। সেই ভাঙ্গনে জন্ম নিব নতুন জীবন, নতুন আশা, নতুন ভোর।.......
কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বৃদ্ধ।
কোরাস : যে আসে তারে ধৈর্য্য দিও, সত্য প্রহর যেন তার না ফুরায়.....
©somewhere in net ltd.