স্বাধীনতা : অনুভব করি বলেই আমাদের যন্ত্রণা দেয়

২৫ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৯

‘কথা ছিল একটি পতাকা পেলে/আমি আর লিখব না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা/কথা ছিল একটি পতাকা পেলে/ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস/ব্যর্থ চল্লি­শে বসে বলবেন, ‘পেয়েছি, পেয়েছি’/কথা ছিল একটি পতাকা পেলে/পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে/ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।’ কবি হেলাল হাফিজ যে পতাকা ও স্বাধীনতার কথা বলেছেন সেই স্বাধীন দেশের পতাকা, সেই স্বাধীনতা এসেছে এ বাংলায়। সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে আজ আমরা স্বাধীনতার ৫৪ বছরে। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে হাজার বছরের পরাধীনতার শেকল ভেঙে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি। আর সেই ঘোষণার পথ ধরেই ৩০ লাখ শহিদ আর চার লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশ। এ অর্জন কালের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার। এ গর্ব বাঙালির। বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই বিশ্বের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার এক দেশ। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিশ্বের বুকে এক স্বনির্ভর রাষ্ট্র। আজকের দিনে জাতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করে দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী বীর সন্তানদের। স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় নেতা, গণহত্যার শিকার লাখো সাধারণ মানুষ এবং সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের। জাতি স্মরণ করে দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করা প্রতিটি মানুষকে। শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শুরু করে পৃথিবীর ইতিহাসের নিষ্ঠুর গণহত্যা। সেই কালরাত থেকেই শুরু হয় মৃত্যু, ধ্বংস, আগুন আর আর্তনাদ, পৈশাচিক বর্বরতা। কিন্তু ওই ঘোরতর অমানিশা ভেদ করেই দেশের আকাশে উদিত হয় স্বাধীনতার চিরভাস্বর সূর্য। শত্রু সেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে জীবনপণ সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বীর বাঙালি। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম অর্জন- মহান স্বাধীনতা। আজকের দিনে দেশের মানুষ বার বার স্বাধীনতার মর্মবাণীটি অনুধাবণ করবে। আরও একবার শপথ নেবে সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে চলার।
আমরা অনুভব করি পরাধীনতার প্রতিটি সময়কে আর অনুভব করি বলেই আমাদের যন্ত্রণা দেয় যারা আজো পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ তাদের প্রতি। জীবন এখন সংখ্যাসর্বস্ব। এমনকি মৃত্যুও। তাই সংখ্যা দেখে যেমন আমরা উৎফুল্ল হই, তেমনই শিউরেও উঠতে হয় যখন খবর আসে-গত বছর অক্টোবরের শেষ থেকে এ বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪ মাসে গাজায় ইজরায়েলি হামলায় মারা গেছে ১২,৩০০ এর বেশি শিশু। যে কোনও অবস্থায় একটি মাত্র শিশুর মৃত্যুও যেখানে চরম বেদনাবহ, সেখানে গাজায় শিশুমৃত্যুর এই বিরাট সংখ্যাটি আমাদের শুধু যন্ত্রণাই দেয় না, স্তব্ধ করে। যে শিশুরা মারা গেলো তারা তো যুদ্ধে যায়নি। গাজায় যে ইতিহাস নিরন্তর লেখা হয়ে চলেছে তা শুধু যুদ্ধের তাৎক্ষণিক বীভৎসতার নয়, এক সুদূরপ্রসারী ক্ষতির ইতিহাস। সেখানে লেখা থাকছে গুঁড়িয়ে যাওয়া শহরের তলায়, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে থাকা শিশুদের কথা। লেখা থাকছে নিখোঁজ শিশুদের কথা; যুদ্ধের জন্য খেতে না-পাওয়া, চূড়ান্ত অপুষ্টিতে ভোগা ‘জীবিত’ শিশুদের কথা: হাসপাতালের এক-একটি ওয়ার্ড এমন শিশুতে ভরে থাকা সত্ত্বেও গোটা হাসপাতাল নীরব, কেননা চিৎকার করে কাঁদতে হলেও যেটুকু স্নায়বিক শক্তির প্রয়োজন, এই শিশুদের সেটুকুও নেই, যুদ্ধজনিত ট্রমায় হারিয়েছে বাক্‌শক্তি। যুদ্ধের পিছনে ছায়ার মতো হাজির অনাহার ও দুর্ভিক্ষ, হয়তো মুছে যাবে আরও বহু প্রাণ। শিশুমৃত্যুর সংখ্যা কোন উচ্চতা স্পর্শ করলে যুদ্ধও লজ্জায় মুখ ঢাকবে, তারই অপেক্ষা এখন হে স্বাধীনতা।

০ টি +০/-০