![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথমেই সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরীর 'বইপড়া' লেখা থেকে কিছু উদ্ধৃত করছি- 'আমাদের মনে হয় এ দেশে বই পড়ার সার্থকতা হাসপাতালের চাইতে কিছু কম নয় এবং স্কুল-কলেজের চাইতে একটু বেশি। একথা শুনে অনেকে চমকে উঠবেন। কেউ কেউ আবার হেসেও উঠবেন; কিন্তু আমি জানি, আমি রসিকতাও করছিনে, অদ্ভুত কথাও বলছিনে; যদিও এ বিষয়ে লোকমত যে আমার মতের সমরেখায় চলে না, সে বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ সচেতন। অতএব আমার কথার আমি কৈফিয়ত দিতে বাধ্য।আমার বক্তব্য আমি আপনাদের কাছে নিবেদন করছি তার সত্য মিথ্যার বিচার আপনারা করবেন। সে বিচারে আমার কথা যদি না টেকে তাহলে রসিকতা হিসেবেই গ্রাহ্য করবেন।' 'আমি বই পড়াকে স্কুল কলেজের ওপরে স্থান দিই এই কারণে যে, এ স্থলে লোকে স্বেচ্ছায় স্বচ্ছন্দচিত্তে স্বশিক্ষিত হবার সুযোগ পায়; প্রতিটি লোক তার স্বীয় শক্তি ও রুচি অনুসারে নিজের মনকে নিজের চেষ্টায় আত্মার রাজ্যে জ্ঞানের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। স্কুল কলেজ বর্তমানে আমাদের যে অপকার করছে সে অপকারের প্রতিকারের জন্য শুধু নগরে নগরে নয়, গ্রামে গ্রামে বই পড়ার প্রতিষ্ঠা করা কর্তব্য। আমি পূর্বে বলেছি যে, বই পড়া হাসপাতালের চাইতে কম উপকারী নয়, তার কারণ আমাদের শিক্ষার বর্তমান অবস্থায় বই পড়া হচ্ছে একরকম মনের হাসপাতাল। অতঃপর আপনারা জিজ্ঞাসা করতে পারেন যে, বই পড়ার পক্ষ নিয়ে এ ওকালতি করবার, বিশেষত প্রাচীন নজির দেখাবার কী প্রয়োজন ছিল? বই পড়া যে ভালো, তা কে না মানে? আমার উত্তর সকলে মুখে মানলেও কাজে মানে না। মুসলমান ধর্মে মানবজাতি দুই ভাগে বিভক্ত। যারা কেতাবি, আর এক যারা তা নয়। বাংলায় শিক্ষিত সমাজ যে পূর্বদলভুক্ত নয়, একথা নির্ভয়ে বলা যায় না; আমাদের শিক্ষিত সম্প্রদায় মোটের ওপর বাধ্য না হলে বই স্পর্শ করেন না। ছেলেরা যে নোট পড়ে এবং ছেলের বাপেরা যে নজির পড়েন, দুই-ই বাধ্য হয়ে, অর্থাৎ পেটের দায়ে। সেইজন্য সাহিত্যচর্চা দেশে একরকম নেই বললেই হয়; কেননা, সাহিত্য সাক্ষাৎভাবে উদরপূর্তির কাজে লাগে না। বাধ্য হয়ে বই পড়ায় আমরা এতটা অভ্যস্ত হয়েছি যে, কেউ স্বেচ্ছায় বই পড়লে আমরা তাকে নিষ্কর্মার দলেই ফেলে দিই; অথচ একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না, যে জিনিস স্বেচ্ছায় না করা যায়, তাতে মানুষের মনের সন্তোষ নেই।'
ইলেকট্রনিক যন্ত্র এখন শিক্ষিত তরুণ সমাজের দিনরাত্রির সঙ্গী। মননশীলতার চর্চার অভাবে সুকুমার বৃত্তিগুলো যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। কিছুকাল আগেও এ দেশের গ্রামে ও শহরে শৈশব ছিল মোটের ওপর আনন্দদায়ক। সে সময় বিদ্যালয়গুলোতে ছিল বড় বড় মাঠ, মাঠের পাশে থাকতো পুকুর। ফুটবল, ভলিবল, হাডুডু ইত্যাদি নানারকম খেলাধুলা হতো। হতো নাটক ও গানবাজনার অনুষ্ঠান। ছিলো পাঠাগার।
কিন্তু এখন কি তেমনটি দেখা যায়? খেলাধুলার কথা নাহয় বাদই দিলাম কিন্তু বই? অথচ একটি সহনশীল ও মানবিক সমাজ গঠনে বই পড়ার বিকল্প নেই। এ জন্য জরুরীভাবে পাড়ায়-মহল্লায় পাঠাগার ও পাঠচক্র গড়ে তোলার আন্দোলন শুরু করা দরকার। এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা মোটেও কম নয়। কিছু প্রস্তাবনা দেয়া যেতে পারে যেমন-বড় শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে কয়েকটি বইয়ের দোকানের শর্ত জুড়ে দেওয়া যেতে পারে। এমনকি ছোট ছোট চায়ের দোকানকে কেন্দ্র করেও পাঠাগার ও পাঠচক্র গড়ে তোলা যেতে পারে। স্কুল-কলেজগুলোতে সরকারি উদ্যোগে বইপড়া কর্মসূচি শুরু করা যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, বিল গেটস প্রতি বছর প্রায় ৫০টি বই পড়েন! সফল বিনিয়োগকারী এবং বিলিয়নিয়ার হিসাবে প্রশংসিত ওয়ারেন বাফেট এখনও প্রতিদিন প্রায় ৬ ঘণ্টা বই পড়ার পেছনে ব্যয় করেন। ইলন মাস্ক প্রতি সপ্তাহে একটি এবং জাকারবার্গ প্রতি দুই সপ্তাহে একটি বই পড়া শেষ করেন। ডেভিড কবেনস্টাইন সপ্তাহে ৬ টি বই পড়েন। এরা সবাই বিলিয়নিয়ার! সুতরাং বই কিনুন বই পড়ুন বই উপহার দিন। : ছবি- নেট থেকে।
©somewhere in net ltd.