![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাঙালি জাতির একটি সংস্কৃতি, একটি উৎসব, একটি শেকড় সেটা হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। এটাই বর্তমান সময়ে প্রধান একটি দিন বাঙালি জাতির জন্য। একজন বাঙালির বাঙালিয়ানা উঠে আসে এই দিনটির মাধ্যমে। অনেকে নিজেকে একজন বাঙালি হিসেবে ভুলে গেলেও এই দিন যেন আবার মনে করিয়ে দেয়, ‘ওহে তুমি বাঙালি’বাংলা সন বা বঙ্গাব্দকে আজকের আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক রূপ দেওয়ার কৃতিত্ব অবশ্য বাংলা একাডেমির। ১৯৬৬ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি কমিটি বাংলা সনের বিভিন্ন মাস ও ঋতুতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সাংস্কৃতিক জীবনে কিছু সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাকে নির্ণয় করেন। যার মধ্যে ছিল বাংলা সনের ব্যাপ্তি গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির মতোই ৩৬৫ দিনের। যদিও সেখানে পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণের পরিপূর্ণ সময়কেই যথাযথভাবে নেওয়া হয়েছে। এই প্রদক্ষিণের মোট সময় ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট এবং ৪৭ সেকেন্ড। এই ব্যবধান ঘোচাতে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির প্রতি চার বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়। তবে বাংলা সনে অতিরিক্ত এই দিনটি রাখা হয়নি। এই সমস্যাগুলোকে দূর করতে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কমিটি প্রস্তাবনায় বাংলা একাডেমি বাংলা সন আধুনিকায়ন ও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। সিদ্ধান্ত হয়, বছরের প্রথম পাঁচ মাস অর্থাৎ বৈশাখ ভাদ্র হবে ৩১ দিনের। পরের মাসগুলো অর্থাৎ আশ্বিন হতে চৈত্র হবে প্রতিটি ৩০ দিনের মাস। প্রতি চতুর্থ বছরের ফাল্গুন মাসে অতিরিক্ত একটি দিন যোগ করে তা হবে ৩১ দিনের। একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত হয়, বঙ্গাব্দের দিন গণনা শুরু হবে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই। ইংরেজি সন (খ্রিস্টাব্দে) দিন গণনা হয় রাত ১২টা থেকে। বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের একটা বড় পার্থক্য হলো, ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন করা হয় ঠিক রাত ১২টা থেকে আর বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হয় সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। নবর্বষ, এর মানে আমরা বুঝি নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া। এটা প্রাচীনকাল থেকে হয়ে আসছে। ঠিক তেমনি বাঙালি জাতিরও পহেলা বৈশাখ নবর্বষ। এটাই আমাদের নতুন বছর। কিন্তু আমাদের কাছে আজ এটা কেমন যেন হয়ে গেছে। কারণ আমাদের কাছে পহেলা জানুয়ারি মানেই নতুন বছর! আমরা যে তাদের সংস্কৃতিকে নিজের সংস্কৃতিতে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এটাই আমাদের চরম ভুল। আমাদের বছর বাংলা, আমাদের সাল বাংলা কিন্তু আমরা চলি ইংরেজি সালে। অনেককেই যদি জিজ্ঞেস করা হয়, আজ বাংলা সনের কত তারিখ। সে দেখবেন আপনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তারখি তো দূরের কথা কত সন সেটাই বলতে পারবে না। কিন্তু সবাই আবার বর্ষবরণ করে। দেখতে একটু অন্যরকম লাগে। আমরা বাংলা সন অনুযায়ী চলি না, বলি না, করি না। অথচ আমরা এসা হে বৈশাখ এসো হে... করে গাইতে থাকি। তাহলে কি এটা আমাদের লোক দেখানো? কাউতে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, বাংলা নববর্ষ কখন? সে পহেলা বৈশাখ না বললেও ১৪ এপ্রিল ঠিকই বলবে। কারণ বাংলা মাস, বাংলা তারিখ এসব আমাদের কাছ থেকে এখন অনেকদূরে চলে গেছে। আমরা শুধু এখন লোক দেখানো একদিনের উৎসব করি। প্রকৃত বাঙালি হয়ে উঠতে পারছি না। কিন্তু আমরা জানি না যে এই দিনটাই বাঙালির প্রাণ। আমরা যেভাবে এগুচ্ছি তাতে একদিন এই দিনটিও অর্থহীন হয়ে পড়বে। বাংলা র্চচা করি না ঠিকই কিন্তু ইংরেজি শেখার জন্য অনেক অনেক টাকা খরচ করে ফেলি। আমরা ইংরেজি শিখতে শিখতে এমন হয়ে পড়েছি বাংলায় আবার ইংরেজিও মেশাতে শুরু করেছি। আর যারা বাংলার সঙ্গে ইংরেজি মিশ্রণ করে কথা বলে, সমাজে তারাই আধুনিক। কিন্তু আমিতো আধুনিক হতে চাইনি। আমি একজন প্রকৃত বাঙালি হতে চেয়েছি। এ সমাজ বোধহয় সেটা আমাদের হতে দেবে না। একটি জাতি যখন তার নিজ সংস্কৃতিতে বলিষ্ঠ হয় তখন তাকে কোনো অপসংস্কৃতি, কু-সংস্কার গ্রাস করতে পারে না। তাই নিজ সংস্কৃতির সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসা শিল্পগুলোর নিয়মিত চর্চার প্রয়োজন। যে কোনো জাতির কাছেই তার নিজ সংস্কৃতিই সেরা এবং আপন। বিশ্বায়নের এই যুগে নিজেদের সংস্কৃতির রক্ষায় এবং বিস্তারে আমাদের নিজেদের সংস্কৃতির ছায়াতলে অবস্থান নিতে হবে। অন্যান্য সংস্কৃতির সঙ্গেও আমরা পরিচিত হব, তবে তার আড়ালে যেন ঢেকে না যায় আমাদের স্বকীয়তা। কিন্তু বর্তমানে আমরা যেন সে পথেই হাঁটছি। বাঙালি হিসেবে নিজ সংস্কৃতির প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা থাকাও জরুরি। অন্যথায় পহেলা বৈশাখ, ২১ ফেব্রুয়ারি কিংবা বাঙালির যে কোনো উৎসব হবে অর্থহীন। বাঙালির প্রাণ পহেলা বৈশাখকে আরও অর্থবহ করতে হলে প্রয়োজন বাঙালির স্বকিয়তা ধরে রাখা। তবেই বাঙালির প্রাণ বাঁচবে।
©somewhere in net ltd.